সবাইকেই কখনো না কখনো প্রথম দিন অফিস করতে হয়। আর নতুন পরিবেশ, নতুন জায়গা, নতুন মানুষ সবকিছুর ভীড়ে অস্বস্তি লাগাটা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু এই অস্বস্তিকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। প্রথম দিন আপনি সবার সাথে যতটা সহজ হবেন, ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়েও নিতে পারবেন দ্রুত।

চলুন জেনে নিই কীভাবে সামলাবেন অফিসের প্রথম দিন।

হাসিমুখে গ্রহণ করুন পেশাদারিত্ব

নতুন কোনো জায়গায় জয়েন করার পর সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় অন্যদের সাথে কমিউনিকেশনে। নতুন পরিবেশে কার সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে সেটিও বুঝে উঠতে পারেন না অনেকে। প্রথম কিছুদিন বেশ কিছুটা অস্বস্তির মধ্য দিয়েই কাটাতে হয়। তবে এই কাজটা সহজ হয় যদি আপনি একটি হাসিমুখে কাজ শুরু করেন। একটুখানি হাসি পরবর্তী যে কোনো ভালোর জন্য একটা সহজ শুরু বলেই মানেন অনেকে। আপনার হাসিই আপনাকে বলে দেবে আপনি প্রতিষ্ঠানের প্রতি কতটা খুশি।

কাজের প্রথম দিনে হাসিমুখে কথা বলুন সবার সাথে; image source: Swineburne University

যখন কোনো নতুন জায়গায় আপনি জয়েন করবেন তখন কিন্তু আপনার কথা, কলিগদের প্রশ্নের উত্তর, সবার সাথে যোগাযোগ এই সব কিছুই আপনার পরবর্তী কাজের উপর প্রভাব ফেলবে। প্রথমবার কোনো কলিগের সাথে দেখা করার সময় মিষ্টি হাসি দিয়ে কথা শুরু করুন, নিজের পরিচয় দিন। দেখবেন পরিবেশ অনেকখানি সহজ হয়ে এসেছে।

জয়েন তো করলেন, পরিচয় পর্বও হলো। এরপরই কিন্তু সম্পর্কগুলো এগিয়ে যেতে থাকবে। অফিসের বাইরেও তাদের সাথে কথা হতে পারে যে কোনো দরকারে। চেষ্টা করবেন প্রতিটি কথার পূর্ণ রূপ লিখতে। সংক্ষেপ কোনো শব্দ ব্যবহার না করাই ভালো।

জলদি যান, দেরিতে ফিরুন

কথাটি শুনতে কি অদ্ভুত লাগছে একটু? প্রথম দিনই জলদি গিয়ে দেরিতে ফেরার পরামর্শ! এটা বলার কারণ হচ্ছে আপনি যেন অফিসের অবস্থা বুঝতে পারেন। যেহেতু আপনি নতুন, অফিসের সবার সাথে পরিচয়ও নেই, তাই সকালে জলদি এসে একটু দেরি করে গেলে প্রায় সবার সাথেই কথা বলা, পরিচয়টাও হয়ে যাবে।

কিছু সময় বেশি থাকলে অফিসের অনেক কিছু সম্পর্কে জানা যায়; image source:Writers Write

আর সময়মত অফিসে চলে আসা খুব গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতেই যখন কলিগরা আপনার সময় সচেতনতার বিষয়ে জানবে তখন আপনার প্রতি ভালো লাগা তৈরি হবে সকলেরই। আর সকালের ট্রাফিক থেকে বাঁচতে দশ মিনিট আগে অফিসে চলে গেলে কোনো ক্ষতি তো নেইই বরং বেশ সুবিধাই হয়। 

পোশাক হওয়া চাই যথাযথ

আপনি যেখানেই কাজ করতে যান না কেন পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ বুঝা যায় পোশাক দেখেও। যেদিন আপনি ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েছিলেন সেদিনই সেখানে কর্মরত সবার পোশাক দেখেছেন আপনি। তাই কিছুটা ধারণা আপনার অবশ্যই হয়েছে। তাই পোশাক নির্বাচন করুন সে অনুযায়ীই। এরপরও যদি কোনো কনফিউশন তৈরি হয় তাহলে ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। কাজে যোগদানের অন্তত সপ্তাহখানেক আগেই পোশাক নির্ধারণ করে আলাদাভাবে বাছাই করে রাখুন।

কর্মক্ষেত্রে সব সময় পোশাক বিষয়ে সচেতন হতে হবে; image source: eimf.eu

পরিচয় দিন আত্মবিশ্বাসের সাথে

অফিসে প্রথম দিন। চারদিকে নতুন মানুষ। কীভাবে কার সাথে কথা বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এমন অবস্থায় আপনি নিজেই এগিয়ে যান। নিজেকে সবার সাথে পরিচয় করান। এতে আপনার আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। কর্মক্ষেত্রে প্রথম দিনের প্রভাবটা কিন্তু খুব জরুরি। এ দিন সহকর্মীদের সাথে যত দ্রুত আপনি মিশে যেতে পারবেন ততই আপনার কাজের পরিবেশের গুমোট ভাব কেটে গিয়ে পরিস্থিতি সহজ হতে থাকবে।

আত্মবিশ্বাসের সাথে পরিচিত হওয়াটাও জরুরি; image source: Pinterest

হয়ত একসাথে অনেকজন আড্ডা দিচ্ছেন। তখন সেখানে গিয়ে একসাথে সবার সাথে হাত মিলিয়ে নিতে পারলেন না। তখন নিজের পরিচয়টাই জানান শুধু। আগে কোথাও কাজ করেছেন কিনা, পড়াশোনা করেছেন কোন ইউনিভার্সিটিতে। এই ধরনের সহজ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বললেও পরিবেশ বেশ সহজ হয়। আর তখন কোনো সাহায্য লাগলে যে কারও সাথে গিয়েই কথা বলা যায়। আত্মবিশ্বাস বাড়লে আপনার নেটওয়ার্কটাও বাড়বে।

সবার সাথে দ্রুত মিশতে পারলে তারাও আপনাকে নিজ দলে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবে। হতে পারে প্রথম দিন কিছুটা অস্বস্তিকর। কিন্তু মনে রাখবেন, সবাইকেই একদিন না একদিন প্রথম দিনের অফিস করতে হয়! তাই সবার থেকে আপনিও আলাদা নন!   

জেনে রাখুন প্রতিষ্ঠান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

অফিসে এসে যার সাথেই কথা বলুন না কেন বিশেষ করে বসের সাথে চেষ্টা করুন প্রতিষ্ঠান বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জেনে নিয়েই কথা বলতে। অবশ্যই আপনাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে আপনার মাঝে কাজ করার বিষয়গুলো ছিল সেজন্যই। তাই আপনিও তাদের জানান তারা ভুল ছিলেন না। যে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে আগে সে বিষয় নিয়ে ভালোভাবে জেনে মন্তব্য করুন। হ্যাঁ অবশ্যই আপনার পক্ষে শুরুতেই সব জানা সম্ভব নয়। তবে একদম কিছু না জানাটাও কেউ ভালো ভাবে নেবে না!

শুনুন এবং জিজ্ঞেস করুন

প্রথমদিন অফিসে গিয়েই আপনি সব জেনে যাবেন এমনটি কখনোই নয়! আর এটাই স্বাভাবিক! ঠিক এই বিষয়টিই আপনাকে অন্যের কাছে সহজ করে তোলে! যখন আপনি অফিসে নতুন এবং কোথায় কোন জিনিসটি রাখা আছে সে বিষয়ে কিছু জানেন না, তখন আপনার কাউকে না কাউকে জিজ্ঞেস করতে হবে। ভালো হয় আপনি যদি সরাসরি ম্যানেজারকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন। তিনি আপনাকে জানাবেন। এই না জানার বিষয়গুলোই যখন আপনি সুন্দরভাবে জিজ্ঞেস করবেন তখনই দুইজনের মাঝে যোগাযোগটা সহজ হয়ে গেলো। প্রথম দিনের পরিচয়ে এ বিষয়টি বেশ কাজে দেয়।

প্রথম দিন গিয়ে যা জানতে চান ম্যানেজার অথবা সহকর্মীর কাছে জানতে চান; image source; Pinterest

আবার ধরুন আপনার সহকর্মী একটি জিনিস খুঁজছে। আপনি তাকে সেটি খুঁজে দিয়ে হেল্প করলেন। এতেও কিন্তু কিছু কথা হয়ে গেলো। এরপর তার সাথে দেখা হলে আর বিব্রত লাগবে না। বরং যে কোনো সময় গিয়ে সহজেই কথা বলতে পারবেন।

ছোট অর্জনগুলোর দিকে মনোযোগ দিন

অফিসের প্রথম দিনই আপনি তাদের অনেক বড় কোনো সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন না। এর চাইতে বরং নজর দিন ছোট ছোট বিষয়গুলোর দিকে। যেমন যে প্রজেক্টের কাজটি আপনাকে দেওয়া হয়েছে সেটি খুব সুন্দরভাবে করলেন, একটা প্রেজেন্টেশন স্লাইড বানাতে সাহায্য করলেন সহকর্মীকে, অথবা কোনো একটি ফাইলের সমস্যার সমাধান করে দিলেন। এই ছোট ছোট কাজগুলো আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াবে সাথে সাথে সহকর্মীরাও খুশি হবে।

আপনি যেই দলে কাজ করছেন তারা আপনার কাজের প্রতি আগ্রহ দেখেই আপনাকে কাজ বুঝিয়ে দেবে।

ধন্যবাদ জানান

প্রথম দিন যাদের সাথেই কথা হলো, বা যিনি আপনাকে ছোট কোনো সাহায্য করেছেন তাদের আসার সময় ধন্যবাদ জানিয়ে আসুন। টেকনোলজিকাল কোনো বিষয়ে, অথবা অফিসের কোন জায়গায় কী রয়েছে সে বিষয়েও যিনি আপনাকে জানিয়েছেন তাকে ধন্যবাদ জানান। দেখুন প্রথমদিন যতটা অস্বস্তি লাগছিল অফিসে যেতে পরদিন আর ততটা লাগবে না। এভাবেই ধীরে ধীরে সকলের সাথে মিলে কাজ করা সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য। মনে রাখবেন, ‘ধন্যবাদ’ খুব ছোট্ট একটা শব্দ হলেও এর পরিধি কিন্তু অনেক! 

Feature image: nexushub.com