আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ইদানীং অতিমাত্রায় ভ্রমণ পিপাসু হয়ে উঠেছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে ভ্রমণ এখন শুধু জ্ঞানেরই নয়, জীবনেরও অংশ হয়ে গেছে। সুযোগ পেলেই তারা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিকে বের হয়ে পড়ছে। কিন্তু পর্যটন কেন্দ্রেগুলিতে ঘুরে আসতে গেলে মোটামুটি অনেক টাকাই খরচ হয়। দেশে হাজার হাজার দর্শনীয় স্থান রয়েছে যার সবগুলোতে ঘুরে আসা বেশ ব্যয়বহুল! কিন্তু ট্যুরপাগলারা সবসময়ই ভ্রমণ পিপাসায় কাতর। এই ভ্রমণপিপাসুদের  তৃষ্ণা নিবারণের জন্যই আজকের এই লেখা। আজকের লেখায় আমরা এমন কিছু কৌশল নিয়ে আলোচনা করব যা অনুসরন করলে আপনার প্রতিটি ট্যুরের খরচ ৩০-৬০% পর্যন্ত কমিয়ে দিবে!

image source : https://www.crossroadsinitiative.com/media/articles/faith-as-a-dynamic-journey/

অফ-সীজনে ট্যুরের পরিকল্পনা করুন

আমাদে্র দেশে ভরা মৌসুমে (সাধারণত নবেম্বর-মার্চ) দর্শনীয় স্থানগুলোতে মানুষের হিড়িক পড়ে যায়। এসময়ে হোটেলে সীট-ভাড়া, খাবার, পণ্য সব কিছুই চড়া দাম থাকে। তাই ভরা মৌসুমে না গিয়ে  অফ-সীজনে ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান করুন। হোটেল গুলোতে ১০০০ টাকার সীট  অফ-সীজনে আপনি ৫০০ টাকাতেই পেয়ে যাবেন! খাবার অথবা অন্যান্য পণ্য সবকিছুই মোটামুটি বেশ সস্তায় পেয়ে যাবেন।পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পরিবহণ খরচও (নৌকার কিংবা অন্যান্য যানবাহনের) সীজন অনুযায়ী আপ-ডাউন হয়।

যথাসম্ভব ট্রেনে ভ্রমণ করুন

কমলাপুর রেলস্টেশন।

Source :https://commons.wikimedia.org/wiki/File:Bangladesh_Railway,_Komlapur_Railway_Station.jpg

আপনি যেখানেই যেতে চান না কেন, ট্রেনে যাওয়ার চেষ্ঠা করুন। এতে আপনার পরিবহন খরচ অর্ধেকেরও বেশি কমে যাবে। যেমন ধরুন, ঢাকা হতে কক্সবাজারের বাসভাড়া ৭০০-৯০০ টাকা। কিন্তু ট্রেনে (লোকাল ট্রেনে) ঢাকা-চট্রগ্রামের ভাড়া ৯০ টাকা আর চট্রগ্রাম-কক্সবাজারের বাসভাড়া প্রায় ২০০ এর মত। অতএব ট্রেনে গেলে ভাড়া কি পরিমাণ কমে যায় বুঝতেই পারছেন।

দর-কষাকষির মনোভাব থাকতে হবে

আমাদের দেশের পর্যটন এরিয়াগুলোতে ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগই নতুন পর্যটকদের ঠকানোর ধান্দায় থাকে। অধিকাংশ পর্যটকদের দর্শনীয় স্থানসমুহের হোটেল ভাড়া, বিভিন্ন পণ্যের মূল্য সম্পর্কে কোন ধারণা থাকে না বলে তাদের সহজেই বোকা বানিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে নেয়। এজন্য সবকিছুর দরদাম সম্পর্কে ভাল আন্দাজ রেখে দর-কষাকষি করতে হবে। লোকাল বাস অথবা সিএনজিগুলোতে সাধারণত দ্বিগুনেরও বেশি ভাড়া চাওয়া হয়, তাই সঠিক হিসেব করে ভাড়া দিতে ভুলবেন না। ভাড়া কিংবা পণ্যের দরদাম করাতে মুখ-লজ্জা থাকলে চলবে না নয়তো আপনার টাকার থলি খালি হয়ে যাবে।

প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রী দর্শনীয় স্থানগুলোতে  না কিনা

যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন দর্শনীয় স্থান, পার্ক, রিসোর্ট প্রভৃতি হতে খাবার বা অন্যান্য পণ্যসামগ্রী না কিনতে, কারণ এসমস্ত স্থানে সবকিছুই চড়া মূল্যে বিক্রি করা হয়। একই পণ্য আপনি বাইরে অর্ধেকের চেয়েও কম মূল্যে কিনতে পারবেন। যেমন কক্সবাজারের বিচে চুড়ি-মালা, ঝিনুক মালা কিনতে গেলে ১০০ টাকা লাগলে, বাজারে তা ২০-৩০ টাকাতেই পেয়ে যাবেন।

কমিউনিটি ট্যুরিজমের সাহায্য নিন

দূরবর্তী স্থানে কমিউনিটি ট্যুরিজমের সাহায্য নিতে পারেন। কমিউনিটি ট্যুরিজম মানে স্থানীয়দের ট্যুরিজম সেবা। দেশের সব অঞ্চলে এটি চালু না হলেও রাঙামাটি, বান্দরবন প্রভৃতি অঞ্চলে এই সার্ভিস চালু রয়েছে। এইসমস্ত স্থানে হোটেল সার্ভিস যেখানে ৩০০০-৪০০০ টাকা, কমিউনিটি ট্যুরিজমের সাহায্য নিলে খরচ হবে মাত্র ৪০০ কিংবা ৫০০ টাকা। সেখানকার আদিবাসীদের সাথে যোগাযোগ করলেই তারা আপনাকে থাকার ব্যবস্থা করে দিবে।

দলবদ্ধ ভাবে ঘুরুন

দলবদ্ধ ভ্রমণ।

Source :https://www.crossroadsinitiative.com/media/articles/faith-as-a-dynamic-journey/

দলবদ্ধভাবে কোথাও ভ্রমণে গেলে জনপ্রতি থাকা এবং খাওয়ার খরচ বেশ কমে যায়। যেমন ধরুন হোটেলে ২ জনের জন্য রুম ভাড়া ১০০০ টাকা হলে সেখানে ৬ জনের জন্য  রুম ভাড়া হয় ২০০০-২৫০০ টাকার মত হয়। যত বেশি মানুষের সাথে যাওয়া যায় খরচ ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে তত বেশি সুবিধা পাওয়া যায়। আপনার যদি ভ্রমণ সঙ্গী একেবারেই কম থাকে তাহলে আপনার এলাকার স্থানীয় ট্যুরিস্ট  কমিটির সাথে যোগাযোগ করুন। ইদানিং প্রায় সব এলাকাতেই ট্যুরিস্ট কমিটি রয়েছে, যারা প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্যুরের আয়োজন করে থাকে। তাদের পক্ষ হতে বেশ কম খরচেই দূরবর্তী স্থানে ঘুরতে যাওয়ার অফার দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আপনার হোটেল বুকিং, খাওয়া-দাওয়া ব্যাবস্থা নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না, তারাই সব ব্যবস্থা করে দিবে।

অফারের সুযোগে থাকুন

বছরের বিভিন্ন সময়ে দেখা যায় হোটেলগুলোতে সীট বুকিংয়ে ১০-৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেওয়া হয়।এই সময়টিতে যদি আপনার ট্যুরের পরিকল্পনা করেন তাহলে বুঝতেই পারছেন খরচ কত কমে যাবে। বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরিবহন, হোটেল সার্ভিস ইত্যাদি বিষয়ে অনেক ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়। এজন্য আপনার ট্যুরিস্ট কার্ড থাকতে হবে।এছাড়া ইদানিং ট্যুরিস্ট ক্লাবগুলো অনেক সস্তা বাজেটের ট্যুরের আয়োজন করছে, এগুলোতে জুড়ে যেতে পারেন।

প্রযুক্তির ব্যবহারে সহজ করুন আপনার ভ্রমণকে

আমাদের বেশিরভাগেরই দর্শনীয় স্থানগুলোর সঠিক অবস্থান, পথ-ঘাট তেমন জানাশোনা থাকে না, এর ফলে পড়তে হয় নানান ভোগান্তিতে! অনেক সময় পথ-ঘাট না চেনার দরুণ সামান্য পথের জন্য যানবাহনগুলোতে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়।এক্ষেত্রে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করা আমাদের জন্য খুবই সহায়ক। গুগল ম্যাপে হোটেল, পার্ক, রিসোর্ট প্রভৃতির রোড-ঘাট সব কিছুই স্পষ্টভাবে দেওয়া থাকে, ফলে পথ-ঘাট না চিনলেও চিন্তার কোন কারন নেই। গুগল ম্যাপই আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌছিয়ে দিবে। এছাড়া গুগল ট্রিপট্রিপ এডভাইজার, প্রভৃতি এপসের সাহায্যে আপনি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে তথ্য, হোটেল
এবং অন্যান্য সুবিধা সমন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন। প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আপনার ভ্রমণকে অনেক বেশি আরামদায়ক করে তুলবে এবং খরচও অনেকাংশ কমাবে।

ট্রিপ এডভাইজার। 

Source : http://ipadinsight.com/best-free-ipad-apps-2/best-free-ipad-app-of-the-week-tripadvisor/