অভিনন্দন! আপনাকে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্বাচিত করেছি। যখন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এই ধরণের একটি অফার লেটার বা প্রস্তাবপত্র পাবেন, নিশ্চই আপনি খুবই উচ্ছ্বাসিত হবেন। সাধারণত একটি প্রস্তাবপত্র বা জব অফার লেটারের জন্য প্রত্যেক চাকরি প্রার্থীই মুখিয়ে থাকেন। তবে আপনাকে অবশ্যই মনে রাখা উচিত যে, প্রত্যেক কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর দ্বারা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম কানুনগুলো ব্যাপারে চুক্তিপত্রে সই করিয়ে নেয়।

চুক্তি করার পূর্বে লক্ষ্য করুন পার্টটাইম নাকি ফুল্টাইম; Source: jobstd.com

তাই প্রতিষ্ঠান সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পূর্বে অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের আইন কানুনগুলো বুঝুন এবং প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ব্যাপারে আপনি কতোটুকু আগ্রহী বা নিয়ম কানুনগুলো মেনে কাজ করতে পারবেন কিনা! এগুলো ভাবুন, কেননা চুক্তি করার আগে অবশ্যই আপনার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে আপনার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার। তাই চুক্তিপত্রে সই করার পূর্বে অবশ্যই আপনার উচিত প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুনগুলো ভালো করে বুঝে নেওয়া। অফিসিয়ালভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পূর্বে অফার লেটার সম্পর্কে বুঝতে ও পর্যালোচনামূলক ধারণা পেতে নিচে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

একটি অফার লেটারে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে

  • পার্টটাইম বা ফুলটাইম চাকরির বিষয়ে
  • ঘণ্টা চুক্তি বা মাসিক চুক্তিতে বেতনের বিষয়ে
  • চাকরিতে বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে
  • চাকরিতে থাকার সর্বনিম্ন স্থায়িত্বকালের চুক্তির বিষয়ে
  • প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় বিষয়গুলো গোপন রাখার চুক্তির বিষয়ে
  • প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্টদের তথ্য গোপন সংক্রান্ত বিষয়ে
  • প্রতিষ্ঠানের সালিসি পলিসির সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে
  • একটি অ-প্রতিযোগিতামূলক ধারার বিষয়ে

আপনি যা প্রত্যাশা করেন তা পরিদর্শন করুন

সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রার্থীদের জন্য অফার লেটার ইস্যু করে থাকে প্রার্থীদের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে। যেমন প্রার্থীর কাজের ধরন, প্রার্থী কবে থেকে চাকরিতে যোগদান করতে পারবে, অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি।

আপনার চাহিদাগুলো প্রতিষ্ঠানকে অবহিত করুন; tips24easy.com

যদি অফার লেটার পাওয়ার পর অফার লেটারে উল্লেখিত বিষয় ছাড়াও আপনি অন্যান্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে প্রতিষ্ঠানকে জানানো উচিত। কেননা এমনটাও হতে পারে তারা আপনার জানানোর প্রেক্ষিতে অফার লেটার পুনরায় ইস্যু করবে।

অফার লেটারে দেওয়া চাকরির স্ট্যাটাস সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝুন

অবশ্যই আপনাকে প্রথমে অফার লেটার স্পষ্ট করে বুঝতে হবে। অফার লেটারে প্রতিষ্ঠান কী ধরনের প্রার্থী চেয়েছে আসলে। যেমন পার্ট-টাইম বা ফুল টাইমের ব্যাপারে, এছাড়াও বেতনের ব্যাপারে। যেমন বেতন ঘন্টা চুক্তিতে দিবে, নাকি মাসিক চুক্তিতে দিবে। এছাড়াও অফার লেটারে উল্লিখিত আরও অনেক বিষয়াবলী থাকতে পারে, যা আপনাকে ভালোভাবে বুঝতে হবে।

পার্টটাইম বা ফুলটাইমের বিষয়ে

পার্ট টাইম চাকরিগুলোতে সাধারণত সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার চেয়েও কম কাজ দেওয়া হয়ে থাকে। ছুটি এবং চিকিৎসা ভাতার মতো সাধারণ সুযোগ-সুবিধাগুলো পার্টটাইম চাকরিতে দেওয়া হয় না। তবে ফুলটাইম চাকরির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার অধিক সময় কাজ করতে হয়। এছাড়াও ছুটি এবং চিকিৎসা ভাতাসহ অন্যান্য আরও অনেক ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়ে থাকে। তাই অফার লেটারে উল্লেখিত পার্টটাইম বা ফুলটাইম স্ট্যাটাস সম্পর্কে আপনাকে সম্পূর্ণ অবগত থাকতে হবে।

ঘণ্টা চুক্তি বা মাসিক চুক্তিতে বেতনের বিষয়ে

পার্টটাইম চাকরিতে সাধারণত ঘণ্টা প্রতি বেতন দেওয়া হয়ে থাকে। ঘণ্টা প্রতি কর্মীরা সাধারণত দিনে ৮ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে ৪০ ঘন্টার চেয়েও কম কাজ পেয়ে থাকেন। বেতনভুক্ত কর্মচারী অর্থাৎ মাসিক বেতনে যারা কাজ করে থাকে, সাধারণত তারা ফুল টাইম কর্মী হয়ে থাকে। ফুলটাইম কর্মীরা সপ্তাহে মিনিমাম ৪০ ঘন্টা কাজ করে থাকে এবং সাধারণত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তাদের ছুটি কাটাতে হয়। তবে পার্টটাইম কর্মীদের ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কেননা তারা ঘন্টা চুক্তিতে কাজ করে থাকে।

চাকরিতে বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার বিষয়ে

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের দ্বারা ওভারটাইম বা অতিরিক্ত কাজ করিয়ে থাকে। এই সুবিধা যেকোনো কর্মী পেতে পারে। এটা কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা আয়ের একটি বিশেষ সুযোগ। তবে আপনাকে অবশ্যই দেখতে হবে অফার লেটারে ওভারটাইমের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে কিনা! কেননা প্রতিষ্ঠান আপনাকে ওভারটাইমের জন্য কী হারে বেতন প্রদান করবে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

চুক্তিপত্র ১টি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই জরুরী; Source: htgobca.com

সাধারণত বেতনের দেড় গুণ অর্থ ওভারটাইমের জন্য প্রদান করা হয়। এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে অফার লেটারে উল্লেখ রয়েছে কিনা, তা অবশ্যই আপনাকে বুঝতে হবে। তবে প্রতিটি দেশেই ওভারটাইম বা অতিরিক্ত কাজের জন্য সরকার কর্তৃক মূল্য নির্ধারণ করা থাকে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার কর্তৃক সেই নিয়ম অনুসারে ওভারটাইমের বেতন দিয়ে থাকে।

চাকরিতে থাকার সর্বনিম্ন স্থায়িত্বকালের চুক্তির বিষয়ে

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কর্মীরা বর্তমান প্রতিষ্ঠানের চেয়ে আরও ভালো সুযোগ সুবিধার কারণে অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। সেটা একান্তই কর্মীদের নিজস্ব ব্যাপার। তবে প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত চায় তাদের কর্মীরা সর্বনিম্ন একটি সময় তাদের প্রতিষ্ঠান কাজ করুক। এক্ষেত্রে অনেক প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন একটি সময়ের জন্য প্রার্থীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে।

প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় বিষয়গুলো গোপন রাখার চুক্তির বিষয়ে

বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি গোপনীয়তা বা অনুরোধের ধারা অন্তর্ভূক্ত থাকবে। এছাড়াও কিছু বাধ্যবাধকতামূলক সালিসি ও প্রতিযোগিতামূলক ধারাগুলোর অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে এই ধারা বা বিভাগগুলো অনেক প্রার্থীরাই ভালোভাবে বোঝেন না বা বোঝার চেষ্টা করেন না। কেননা বিষয়গুলো একটু বিস্তারিত লেখা থাকে। তবে মনে রাখবেন, এসব ক্ষেত্রে অনেকটাই রাষ্ট্রীয় বিধি বিধান বা নীতিমালা যুক্ত করা থাকে, তাই অবশ্যই আপনাকে এগুলো বোঝা উচিত। সহজ কথায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন গোপনীয় নীতিমালা বা ব্যবসায়ীক নীতিমালা থাকে।

চাকরির জন্য চুক্তিপত্রে থাকা বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝুন; Source: joboppct.com

আপনি কখনোই তা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে বা প্রতিযোগিতামূলক কোনো কোম্পানির নিকট সে তথ্যগুলো প্রকাশ করতে পারবেন না। এই বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠানের গোপনীয় নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের একটি নিজস্ব সালিসি পদ্ধতি থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোর সমাধান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত এই বিষয়ে প্রার্থীদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে, কেননা প্রার্থী যেন প্রাতিষ্ঠানিক সালিসি মানতে বাধ্য থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে আদালতে না যায়।

যেমন বলা যেতে পারে, অনেক প্রার্থী তাদের পারফরম্যান্স বা ভুলের কারণে চাকরীচ্যুত হন। চাকরীচ্যুত করার ব্যাপারটি শুধুই প্রতিষ্ঠানের সালিসি ব্যাপার। এছাড়াও বেতন বাড়ানো এবং বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ অনেক কিছুর সমাধান করে থাকে প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সালিশ ব্যবস্থা। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বড় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে সালিসি কমিটি করা হয়ে থাকে।

বেতনের ধরণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝুন; Source: workhints.com

তাই একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রার্থীর সাথে তাদের নিজস্ব সালিসি ব্যবস্থার ব্যাপারে চুক্তি করে নেওয়া, যেন পরবর্তীতে কর্মীরা তাদের অভ্যন্তরীণ সালিস ব্যবস্থার অনুগত থাকে। এছাড়াও আরও কিছু বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রার্থীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে, যেমন প্রার্থী যদি কোনো কারণে প্রতিষ্ঠান থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যায়, তাহলে প্রতিষ্ঠানের কোনো তথ্য বা পদ্ধতি অন্য কোথাও প্রয়োগ করতে পারবে না।

যেমন প্রতিষ্ঠান যে প্রোডাক্টগুলো নিয়ে কাজ করে থাকে, প্রার্থী চাইলেই একই ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করতে পারবে না। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কাছে প্রতিষ্ঠানের অনেক ক্লায়েন্টদের তথ্য থাকে। প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাওয়ার পর যেন কর্মী সেসব ক্লায়েন্টদেরকে ম্যানেজ করে অন্য কোনো কোম্পানিতে নিয়ে যেতে না পারে, এজন্য এসব বিষয়ে সাধারণত প্রার্থীদের সাথে প্রতিষ্ঠানগুলো চুক্তিবদ্ধ হয়ে থাকে।

Feature Image Source: lifehacker.com