অনেকের ইচ্ছে আছে দেশের বাইরে গিয়ে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার। বিদেশে চাকরি করলে অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি অনেক মূল্যবান দক্ষতা অর্জন করা যায়, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায় সেইসাথে ঘোরাঘুরি করার সুযোগ তো রয়েছেই। তবে বিদেশে চাকরি করার আগে অনেক জিনিস বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়। আজকের নিবন্ধে বিদেশে যাওয়ার আগে কী কী বিষয় আপনাকে ভালোভাবে বিবেচনা করতে হবে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো,

১. পাসপোর্ট, ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

আপনি যে দেশেই যেতে চান না কেন, প্রথমেই প্রয়োজন নিজের পাসপোর্ট ও ভিসা। এগুলো ছাড়া কোনো দেশে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায় না। এছাড়াও বিদেশে কাজের জন্য যেতে হলে ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন হয়।

পাসপোর্ট , Image Source: tipssavy.com

তাই প্রথমেই পাসপোর্ট, ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট কীভাবে তৈরি করতে হবে, কী কী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে, কত টাকা লাগবে, কত দিন সময় লাগবে, এসকল কাগজপত্রের সাহায্যে আপনি কয়দিন বৈধভাবে বিদেশে থাকতে পারবেন, এসব সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। 

২. দেশটি সম্পর্কে ভালোভাবে জানার চেষ্টা করুন

বিদেশে যাওয়ার আগে ভালোভাবে সে দেশ সম্পর্কে গবেষণা করে নিন। কোন বন্ধুরা কোথায় আছে, আত্মীয়স্বজন কোথায় আছে, কে কী করে, নতুন দেশটার আইনকানুন, পড়াশোনার সুযোগ, খরচ, আন্তর্জাতিক অ্যাসোসিয়েশন, চাকরির বাজার, চাকরি হারালে নতুন চাকরির সুযোগ কতখানি, কোথায় কোথায় কী কী আছে ইত্যাদি যত রকম তথ্য সব সংগ্রহ করে একটি ডায়েরিতে লিখতে থাকুন।

৩. ভাষা শিখুন

বিশ্বের এমন কিছু দেশ আছে যেগুলোতে শুধু ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হলে হবে না, স্থানীয় ভাষাও দক্ষ হতে হবে। তাই বিদেশে যাবার আগে সেখানকার স্থানীয় ভাষা ভালো করে রপ্ত করে নিন। এতে করে সেখানকার স্থানীয় মানুষদের সাথে আপনি সহজেই ভাব বিনিময় করতে পারবেন। এছাড়াও স্থানীয় ভাষা জানা থাকলে ভালো চাকরি, বেতন ও দ্রুত পদোন্নতি পেতেও অনেক সুবিধা হবে।

৪. জীবনযাত্রার খরচ ও বেতন সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন

বিদেশে চাকরি করে আপনি মাসে কত টাকা আয় করতে পারবেন তা হয়তো দেশে বসে সঠিকভাবে জানা সম্ভব নয়। তবে আপনি যে শিল্পক্ষেত্রে চাকরি করবেন সেখানে কাজ করে আনুমানিক আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন সে সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন।

বেতন সম্পর্কে খোঁজ খবর নিন, Image Source: seek.com.au

আপনার উপার্জিত টাকা দিয়ে জীবনযাত্রার খরচ মেটানো সম্ভব হবে কিনা, সমস্ত মাসিক খরচ (ভাড়া, বিল, কর, ইত্যাদি) প্রদানের পরে আপনাকে হাতে কত টাকা বাকি থাকতে হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।

৫. কর্মক্ষেত্রের আশেপাশে বাসা খুঁজে নিন

আপনি যেখানে কাজ করবেন তার আশেপাশে কোথায় বাসা খুঁজে নিন। এতে যাতায়াত ভাড়া কম লাগবে। এছাড়াও সেখানকার বাসা ভাড়া কত হতে পারে তা আগেই জেনে রাখুন। সেদেশে আপনার পরিচিত কেউ থাকলে তাদের সাথে বাসা বা রুম শেয়ার করে থাকতে পারেন। এতে আপনি কিছু টাকা বাচাতে পারবেন।

৬. সঠিক জায়গায় চাকরি অনুসন্ধান

আপনাকে সঠিক জায়গায় চাকরির অনুসন্ধান করতে হবে। কিছু এজেন্সি আছে, যারা বিদেশিদের চাকরির বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করে থাকে। এছাড়াও পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলোতে প্রতিদিন চাকরি বিষয়ক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সেইসাথে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন সাইট এবং গুগল থেকেও চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন।

৭. সার্টিফিকেট ও কোর্স সম্পর্কে জানুন

বিদেশে যেতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই ভাষা দক্ষতার প্রমাণপত্র দেখাতে হবে। এজন্য আপনাকে কিছু কোর্স করতে হবে। আপনি যে দেশে চাকরি করতে চান, সেখানে কাজ করতে হলে কী ধরনের কোর্স করতে হবে, কত পয়েন্ট পেতে হবে এসব সম্পর্কে জেনে নিন।

৮. সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানুন

আপনার চাকরির সাথে সম্পর্কিত না হলেও একটি দেশের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারলে আপনার জীবন আরও উপভোগ্য হয়ে উঠবে। এর মাধ্যমে আপনি সে দেশের মানুষের সাথে আরও ভালোভাবে মিশতে পারবেন। শুধুমাত্র কাজের প্রতি মনোযোগী হলে আপনার জীবন বিরক্তিকর ও একঘেয়ে হয়ে উঠবে। তাই তাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুন এবং নিজেকে তাদের সংস্কৃতির সাথে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন। তাহলে বিদেশে থাকলেও  দেশ থেকে নিজেকে ততোটা বিচ্ছিন্ন মনে হবে না।

৯. নেটওয়ার্কিং

যেকোনো ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিদেশে যাওয়ার পর আরো ভালো জায়গায় চাকরি করতে চাইলে, পদোন্নতি পেতে চাইলে আপনাকে নেটওয়ার্কিং করতে হবে। সবসময় মনে রাখা উচিত, বর্তমান যুগে বেশিরভাগ চাকরি বা পদোন্নতি হয় ব্যক্তিগত যোগাযোগ বা সুপারিশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। তাই নেটওয়ার্কিংকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি আপনার বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারেন। এছাড়াও লিংকডইন ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আপনি নেটওয়ার্কিং করতে পারেন। নতুন কারো সাথে যোগাযোগের পূর্বে নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে নিন। কীভাবে কথা শুরু করবেন, কোন বিষয়ে আলাপ করবেন তা আগে থেকে ঠিক করে রাখুন।

নেটওয়ার্কিং, Image Source: talentegg.ca

শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার আরেকটি ভালো উপায় হচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের পেশাগত ইভেন্টে অংশগ্রহণ করা। যেখানে সব পেশার মানুষ একত্রিত হয়ে থাকেন। এভাবে আপনি অনেক মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারবেন এবং তাদের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারবেন। ভবিষ্যতে এ সম্পর্কগুলো আপনার কাজে লাগতে পারে।

১০. স্থানীয়দের মতো করে সিভি লিখুন

স্থানীয়রা যে ভাষায় ও ফরম্যাটে সিভি লিখে আপনাকেও সেভাবে সিভি লিখতে হবে। সিভি অবশ্যই সুন্দর,সংক্ষিপ্ত, গোছানো হতে হবে। আপনি যদি কোন উচ্চপদস্থ পদে চাকরির আবেদন করে থাকেন তাহলে আপনাকে দুই পৃষ্ঠার সিভি জমা দিতে হবে। আর যদি মধ্যম বা নিম্নপদস্থ কোন পদের জন্য আবেদন করে থাকেন, তাহলে এক পৃষ্ঠার সিভি জমা দিলে হবে। সিভির সাথে অবশ্যই পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ফরমাল ছবি দিতে হবে। অনেকেই না বুঝে সিভির সাথে যেকোনো ধরনের ছবি দিয়ে দেয়। এরকম করা যাবে না।

Featured Image: kingleyandpartner.com