বারংবার আবেদন করেও চাকরি না পেলে কী করণীয়?

আপনার একটা চাকরি খুব প্রয়োজন। তাই বারংবার বিভিন্ন চাকরির জন্য আবেদন করছেন, সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন, কিন্তু নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে খুশির বার্তা নিয়ে কোনো ফোন কল পাচ্ছেন না। ক্রমাগত এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা সত্যিই খুব কঠিন। কেননা বেকার মানুষের কাছে দীর্ঘদিন ধরে চাকরি খোঁজার মতো পীড়াদায়ক কাজ আর কিছু হতে পারে না।

Source: Job Diagnosis

চাকরি না পাওয়ার এই অবস্থা ‘অ্যাপ্লিকেশন ব্ল্যাক হোল’ নামে পরিচিত, অর্থাৎ বারংবার অ্যাপ্লিকেশন করেও ফল হয় না। চাকরি প্রার্থী হিসেবে এমন অভিজ্ঞতা আপনার হতেই পারে। কিন্তু এই পরিস্থিতি অনেক আত্মবিশ্বাসী ও আশাবাদী আবেদনকারীদেরও হতাশ করে দেয়।

আপনিও যদি এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন তবে নিরবতার এই দিনগুলোতে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখুন। আপনাকে সহযোগিতা করতে এখানে কিছু পরামর্শ আলোচনা করা হলো।

গতি ধরে রাখুন

চাকরি পান আর না পান, নিয়মিত অনুসন্ধান করা এবং আবেদন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে ক্রমাগত চাকরির আবেদন করে যেতে হবে। কখনো আবেদনের সংখ্যা গণনা করে হাঁপিয়ে উঠবেন না। কত সংখ্যক বার আবেদন করবেন সেটা নির্ধারণ করার দরকার নেই, বরং দৃঢ় প্রত্যয় রাখুন আপনাকে চাকরি পেতেই হবে। তার জন্য যত হাজারবার প্রয়োজন হয় আবেদন করবেন।

Source: Business News Daily

চাকরি খোঁজা আপনার প্রতিদিনকার প্রধান কাজ হিসেবে বিবেচনা করুন। তার জন্য দৈনিক, সাপ্তাহিক, এবং মাসিক রুটিন তৈরি করুন। প্রতিদিন কত সময় নতুন চাকরি অনুসন্ধানে ব্যয় করবেন, এবং সপ্তাহে কতগুলো আবেদন করবেন তার সংখ্যা নির্ধারণ করুন। নিয়ম করে প্রতি সপ্তাহে পর্যাপ্ত সংখ্যক আবেদন পত্র জমা দিন। প্রয়োজনে আবেদনের সাপ্তাহিক তালিকা প্রস্তুত করুন। তালিকা অনুযায়ী সাক্ষাৎকার এবং অন্যান্য বিষয়ের খোঁজ খবর রাখুন।

আপনি যদি পুরোপুরি বেকার হয়ে থাকেন তবে স্থানীয় কোনো কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে আপনি কোনো বেতন পাবেন কিনা সেটা মুখ্য বিষয় নয়, বরং নিজের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবসর সময় অতিবাহিত করার উপায় হিসেবে স্থানীয় কাজে যুক্ত হোন। প্রয়োজনে চাকরির আবেদন এবং সাক্ষাৎকার পরবর্তী অবসর সময় নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে স্থানীয় ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে সাংস্কৃতিক বা খেলাধুলার ক্লাব গড়ে তুলুন।

আপনার প্রচেষ্টা হালনাগাদ করুন

কাঙ্ক্ষিত চাকরি প্রাপ্তির জন্য আপনার প্রচেষ্টা হালনাগাদ করুন। নতুন নতুন চাকরির সন্ধান দিয়ে থাকে এমন ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসগুলো সব সময় পর্যবেক্ষণ করুন। প্রয়োজনে সেইসব সাইটের নোটিফিকেশন অন করে রাখুন। যেসব চাকরি অনুসন্ধান সাইট রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেয়,

Source: YouTube

সেসব সাইটে রেজিস্ট্রেশন করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করুন। এবং সাইটগুলোকে ইমেইলে চাকরির বিজ্ঞাপন করার সুযোগ দিন। প্রতিদিন এসব নোটিফিকেশন মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন এবং সবার আগে নতুন চাকরির আবেদন করার চেষ্টা করুন।

নিয়ম নীতি জানুন

অনেক সময় যোগ্য আবেদনকারী হওয়া সত্ত্বেও সঠিকভাবে নিয়ম নীতি না জেনে আবেদন করার কারণে আপনার আবেদন বাতিল হতে পারে। নতুন কোনো চাকরির আবেদন করার পূর্বে ভালোভাবে নিয়ম নীতিগুলো পড়ুন এবং সব চাকরির আবেদনে একই বায়োডাটা এবং কভার লেটার পাঠানো বন্ধ করুন।

ভিন্ন ভিন্ন চাকরির জন্য ভিন্ন ভিন্ন আবেদন পত্র এবং কভার লেটার প্রস্তুত করুন। চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা নিয়মনীতি অনুসরণ করে সুনির্দিষ্ট চাকরির জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু কিওয়ার্ড এবং বক্তব্য আপনার আবেদন পত্র, বায়োডাটা এবং কভার লেটারে যুক্ত করুন।

Source: Tech Republic

বর্তমানে অধিকাংশ কোম্পানি নতুন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন ট্রাকিং সিস্টেম ব্যবহার করে। এই সিস্টেমের আওতায় তারা একটি বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন ফরমেট আবেদনকারীদের জন্য সরবরাহ করেন। যেখানে আবেদনকারীর দক্ষতা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি তথ্য ইনপুট করার সুযোগ থাকে।

যত দ্রুত সম্ভব আপনার আবেদনপত্রটি অ্যাপ্লিকেশন ট্রাকিং সিস্টেমের আওতায় সাবমিট করুন। আপনার আবেদনটি কাজের বিবরণে উল্লেখিত কীওয়ার্ডের উপর ভিত্তি করে দ্রুত মূল্যায়ন করা হবে এবং আপনাকে ফলাফল জানানো হবে। সুতরাং কীওয়ার্ড দেখে সঠিক চাকরির জন্য আবেদন করুন।

কোম্পানি গবেষণা

আপনি যদি সুনির্দিষ্ট কোনো ক্ষেত্রে চাকরি পেতে চান তাহলে কাঙ্ক্ষিত কোম্পানি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করুন। সেই কোম্পানি সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য জানার চেষ্টা করুন। কোম্পানির ব্লগ, প্রেস রিলিজ এবং ওয়েবসাইট ভালভাবে পড়ুন। পত্রিকায় প্রকাশিত তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করুন। তাদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করুন। কোম্পানির বার্ষিক আয় ব্যয়ের হিসাব, কর্মীসংখ্যা, কাজের পরিধি এবং সাফল্য ব্যর্থতা সম্বন্ধে বিস্তারিত গবেষণা করুন।

Source: Indeed

গুগল সার্চ করে উক্ত কোম্পানি নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং সংবাদ পড়ুন। কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসরণ করুন।

তাদের নতুন চাকরির বিজ্ঞাপন দেখামাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে কথোপকথন শুরু করুন। কোম্পানির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আপনার আগ্রহের কথা প্রকাশ করুন। সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং নিয়ম মেনে চাকরির আবেদন করুন।

নেটওয়ার্কিং এবং মনোযোগ

কাঙ্ক্ষিত চাকরি পেতে নেটওয়ার্কিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। তবে নেটওয়ার্কিং নিয়ে আমাদের মধ্যে কিছু ভুল ধারণা আছে। আমরা সাধারণত নেটওয়ার্কিং মানে কর্পোরেট জগতে সমমনা কর্মী এবং ব্যক্তির সাথে যোগাযোগকে বুঝি। কিন্তু আসলে নেটওয়ার্কিং মানে শুধু সমমনা ব্যক্তি এবং কর্মীর সাথে যোগাযোগ নয়।

Source: Morgan Consulting Resources

আপনি যেহেতু চাকরি খুঁজছেন, তাই আপনাকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। আপনি হয়তো যাকে অগুরুত্বপূর্ণ ভাবছেন তার হাত ধরেই পেয়ে যেতে পারেন কাঙ্ক্ষিত চাকরি। তাই নেটওয়ার্কিংয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। ক্যারিয়ার এবং ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিন এবং নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করুন। এভাবে নিজের পরিচিতি বাড়াতে থাকলে আপনি নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান খুঁজে পাবেন, যারা আপনার স্বপ্নের চাকরি নিশ্চিত করবে।

বেকার অবস্থায় চাকরি খোঁজা সত্যিই খুব কঠিন কাজ। কিন্তু আপনাকে ধৈর্য ধরে ক্রমাগত এ কাজ করতে হবে। মনে রাখবেন ধৈর্য্যের ফল মিঠা হয়।

Feature Image: Business News Daily

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com