অপছন্দের চাকরিতে অস্বস্তি দূর করতে করণীয় বিষয়গুলো

যদি আপনি সত্যিই আপনার চাকরি অপছন্দ করেন, তবে আপনাকে এ ব্যাপারে কিছু একটা করতেই হবে। সমাধানের কোনো চেষ্টা না করে বসে থাকাটা বোকামি। আপনি যদি আমার পূর্ববর্তী ‘অপছন্দের চাকরিও মানুষ কেন বাধ্য হয়ে করে?’ নিবন্ধটি পড়ে থাকেন এবং বর্তমান নিবন্ধটি পড়ার আগ্রহ বোধ করে থাকেন, তবে এটা নিশ্চিত যে, আপনি আপনার চাকরি ঘৃণা করেন এবং আমি আরও জোর দিয়ে বলতে চাই, শুধু ঘৃণা নয়, বরং এক অসহ্য বিষফোঁড়ার মতো এটাকে বয়ে নিয়ে চলেছেন আপনি।

photo: Huffington Post

সমস্যা হলো, আপনি যদি আপনার চাকরি অপছন্দ করেন, আর এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নেন তবে তা আপনার, আপনার অফিস এবং আপনাকে ঘিরে থাকা আর সব মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আমি ইতিপূর্বে যেমনটা বলেছি, আপনি কোনো চাকরি পছন্দ করেন না তার অর্থ হলো, আপনি এই কাজটি সার্বিকভাবে মেনে নিতে পারছেন না। যার ফলে আপনি প্রতিদিনকার কাজ নিয়ে গড়িমসি করছেন, অকারণে বিরক্ত হচ্ছেন, নতুন কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না; আসলে আপনার কাজ, সহকর্মী এবং এমনকি বসের ব্যাপারেও আপনি ক্রমাগত নিজের কাছে অভিযোগ করে যাচ্ছেন! এমন হলে আপনি দ্রুত বসের কাছে যান এবং যেকোন উপায়ে এই চাকরি থেকে অব্যাহতি নিন।

বুঝতে পেরেছি, যত অশান্তি হোক আপনি এই চাকরিটা ছাড়তে চান না! তাহলে চাকরি ছাড়ার চিন্তা বাদ। চলুন সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক পদক্ষেপ কিভাবে গ্রহণ করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করে।

photo: Huffington Post

বলা হয়ে থাকে, আপনি যদি কোন কিছু পছন্দ না করেন তবে তা পাল্টে ফেলুন, আর যদি পাল্টে ফেলতে অসমর্থ হন তবে আপনার মনোভাব পরিবর্তন করুন।

সুতরাং আপনি যদি আপনার চাকরি পছন্দ না করেন তাহলে দুটি কাজ করতে পারেন। প্রথমত, হয় আপনি আপনার চাকরি পাল্টে ফেলুন অথবা এই চাকরির সুনির্দিষ্ট যে বিষয়গুলো আপনি অপছন্দ করেন তা পাল্টে ফেলুন। আর যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে দ্বিতীয় অপশন হলো আপনি এই চাকরির ব্যাপারে আপনার মনোভাব এবং আচরণ পরিবর্তন করুন।

১. সমস্যা কি চাকরি নাকি আপনি নিজে?

নিজের চাকরি অপছন্দ করা বা ঘৃণা করা একটি বাহ্যিক কারণ মাত্র। অবশ্যই এর একটি অন্তর্নিহিত কারণ আছে। আমাদের সেই কারণটি উদঘাটন করতে হবে। আপনি কি সাধারনভাবে অসুখী নাকি আপনার দৈনন্দিন জীবন এবং আপনাকে ঘিরে থাকা ব্যক্তিগত পরিবেশ নিয়ে অসুখী? নাকি শুধুমাত্র আপনার চাকরি নিয়ে আপনি অসুখী?

photo: terradin

যদি আপনি আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবেশ নিয়ে অসুখী হয়ে থাকেন, তাহলে ব্যক্তিগত জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে বন্ধু, পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সহযোগিতা নিন। সার্বিকভাবে নিজের ব্যক্তিগত জীবনের সকল দুশ্চিন্তা, অবিশ্বাস এবং অশান্তি কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন, অর্থাৎ সবমিলিয়ে এখনই আপনার ব্যক্তিগত জীবনকে সুখী করে তুলুন।

২. অসন্তোষের কারণ খুঁজে বের করুন

নিজের চাকরি ঘৃণা করা এবং এ অবস্থায় কি করনীয়, এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সর্বপ্রথম যা করতে হবে তা হলো, এই অসন্তোষ বা ঘৃণার কারণ খুঁজে বের করা। চাকরিতে আপনার বিরক্তি বা অসন্তোষের কারণ কি আপনার বস, নাকি প্রতিযোগিতাপ্রবণ সহকর্মী? নাকি হঠাৎ করে আপনার উপর অর্পণ করা অতিরিক্ত দায়িত্ব, যা আপনার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন, অথবা হঠাৎ করে কাজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া? অথবা অফিস কর্তৃক আপনার কাজের ধরন পাল্টে দেওয়া?

photo: lsfetc

সুনির্দিষ্টভাবে আপনার অসন্তোষের কারণ নির্ণয় করুন। বর্তমান চাকরিতে আপনার পক্ষের এবং বিপক্ষের বিষয়গুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন। তারপর এই তালিকা থেকে নির্ণয় করুন সুনির্দিষ্ট কোন কারনে আপনি কাজের উপর বিরক্ত। এভাবে প্রচেষ্টা চালালে আপনি খুব সহজেই অসন্তোষ বা অশান্তির কারণ নির্ণয় করতে সক্ষম হবেন এবং খুব সহজেই তা সমাধান করতে পারবেন, অবশ্য যদি তা সমাধানযোগ্য হয়।

৩. আপনার সমস্যা নিয়ে বসের সাথে আলোচনা করুন

অনেক সময় চাকরিতে বিরক্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে থাকে বস নিজেই। যেহেতু তারা প্রচুর কাজের চাপে থাকেন, তাই কখনো কখনো নিজের অজান্তেই কর্মীদের অতিরিক্ত কাজের চাপ দিয়ে বসেন। কিন্তু তাদের সাথে খোলামেলা আলাপ করলেই বিষয়টির সমাধান হয়ে যায়।

photo: research aids

সব প্রতিষ্ঠানের বসই আপনার আমার মতো মানুষ। সুতরাং বিনয়ের সাথে যথাযথ কারণ বলতে পারলে নিশ্চয়ই তারা বোঝেন। কাজেই আপনার সমস্যা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন। আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব বা অফিসের সুনির্দিষ্ট অন্য কোনো বিষয়, যা আপনাকে অসন্তুষ্ট করছে, তা তাকে খুলে বলুন। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই সেই বিষয়টির যুক্তিসঙ্গত কোনো সমাধান অথবা আংশিক সমাধান তাকে জানানোর চেষ্টা করুন। বস যেন কোনোভাবেই আপনাকে তার প্রতিদ্বন্দ্বি না ভাবেন। বরং তার সাথে এমনভাবে কথা বলুন যেন তার মনে হয়, আপনাদের সম্মিলিত একটি সমস্যার সমাধান করতে চাইছেন আপনি, যা অফিসের সার্বিক কাজের পরিবেশের জন্য দরকারী।

তবে যদি বসের এমন কোনো বিষয় থাকে যা আপনাকে অসন্তুষ্ট করছে কিন্তু তা বসকে বলার মতো নয়। তাহলে তার সমকক্ষ অন্য কারো সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ব্যক্তি আপনার বিশ্বস্ত হতে হবে। এভাবে আলোচনার ভিত্তিতে সমস্যাটির চমৎকার সমাধান খুঁজে বের করুন।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com