কখন এবং কীভাবে ভিডিও আপলোড করলে ইউটিউবে বেশি ভিউ পাওয়া যায়?

ইউটিউবিং নিয়ে আমি ধারাবাহিক ভাবে অনেক গুলো নিবন্ধ লিখেছি। ইতিমধ্যে জানিয়েছি ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের উপায়, ইউটিউবিং শুরু করার আগে যে বিষয়গুলো জানতে হবে, কিভাবে ইউটিউব সমালোচক হওয়া যায়, ইউটিউবে ব্লগিং করার উপায়। এছাড়াও ভিডিওর ওয়াচ টাইম বাড়ানোর কৌশল, কনটেন্টের মান এবং সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা বাড়ানোর উপায়, এবং অভিনব কিছু ইউটিউব কন্টেন্ট আইডিয়া নিয়ে লিখেছি।

photo: youtube

আমি জানি, উপরিউক্ত নিবন্ধ গুলো পড়ার পরও অনেক কিছু অজানা থেকে যায়। অনেক ইউটিউবার অভিযোগ করেন, ‘আমি সম্পূর্ণ নতুন কনটেন্ট আইডিয়া নিয়ে কাজ করি। ভালো এডিটিং জানি। তবুও আশানুরূপ ভিউ পাচ্ছি না।’

তাদের জন্য বলতে চাই, বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে: “সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়”, অর্থাৎ ইউটিউবে সফল হতে হলে সময় জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আজকের নিবন্ধে আলোচনা করবো ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করার সময়জ্ঞান নিয়ে। অনেক ইউটিউবার আছে ভালো কনটেন্ট তৈরি করা সত্ত্বেও সফল হতে পারেন না। আশা করি আজকের নিবন্ধটি তাদের কাজে আসবে।

১. সঠিক সময়ে ভিডিও প্রকাশ করা

ইউটিউবে সফল হতে হলে আপনার মধ্যে যথেষ্ট সময়জ্ঞান থাকতে হবে। আপনার কাঙ্ক্ষিত দর্শকের সময় বিবেচনা করে ভিডিও প্রকাশ করতে হবে। অসময়ে ভিডিও প্রকাশ করলে যত ভালো কনটেন্টই হোক না কেন সেই ভিডিও ভালো র‌্যাংক করবে না।

ধরা যাক, আপনি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত শিক্ষামূলক ভিডিও প্রকাশ করতে চান। আপনার ভিডিওর মান নিঃসন্দেহে অনেক ভালো। কিন্তু এই ভিডিওটি যদি আপনি স্কুল চলাকালীন সময়ে প্রকাশ করেন, তবে নিশ্চয়ই ভিডিও দেখার মতো কোনো শিক্ষার্থী আপনি খুঁজে পাবেন না!

photo: digiday

কাজেই আপনাকে বিবেচনা করতে হবে শিক্ষার্থীরা কখন ফ্রি থাকে এবং ইন্টারনেটে ভিডিও দেখার অবসর পায়। শিক্ষার্থীদের সময় বিবেচনা করে আপনাকে শিক্ষামূলক ভিডিও আপলোড করতে হবে।

আবার আপনি হয়তো এমন কোনো কনটেন্ট প্রকাশ করবেন, যা মূলত পশ্চিমা বিশ্বের মানুষকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছে। এমন ভিডিও যদি আপনি বাংলাদেশে ভর দুপুর বেলা প্রকাশ করেন, তবে পশ্চিমের মানুষজন তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকবে! কাজেই আপনার পশ্চিমা বিশ্বের মানুষকে দেখানোর জন্য তৈরি করা কনটেন্ট বাংলাদেশের মানুষ দেখবে! সুতরাং দর্শকের সময় বিবেচনা করে সঠিক সময় ভিডিও আপলোড করুন।

২. নিয়মিত ভিডিও প্রকাশ করা

ইউটিউবে সাফল্যের আরেকটি গোপন সূত্র হলো, নিয়মিত এবং ধারাবাহিকভাবে ভিডিও প্রকাশ করা। আপনি সপ্তাহে ১২ টি ভিডিও আপলোড করেন, নাকি একটি ভিডিও আপলোড করেন সেটা মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হলো নিয়মিত আপলোড করেন কিনা। নিয়মিত ভিডিও প্রকাশের অর্থ বেশি বেশি ভিডিও প্রকাশ করা নয়, বরং নির্দিষ্ট সময় পরপর একই নিয়মে ভিডিও প্রকাশ করা।

photo: youtube

ধরা যাক, একজন ইউটিউবার প্রতি সপ্তাহের রবিবার ঠিক রাত ৮ টায় একটি করে ভিডিও প্রকাশ করেন। আর অন্য একজন ইউটিউবার কোনো সপ্তাহে ৫টি, আবার কোনো সপ্তাহে মাত্র দুইটি ভিডিও আপলোড করেন। সংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয়জন এগিয়ে থাকলেও, প্রথমজনের সাফল্যের সম্ভাব্যতা বেশি। কেননা প্রথমজনের সাবস্ক্রাইবাররা নিশ্চিত ভাবেই জানেন প্রতি রবিবার ঠিক রাত আটটায় নতুন ভিডিও প্রকাশ হবে। ভক্ত, দর্শক-শ্রোতারা ঠিক রাত আটটার অপেক্ষায় বসে থাকেন এবং ভিডিও প্রকাশ করা মাত্রই খুব দ্রুত দর্শক-শ্রোতারা দেখতে শুরু করেন। এই কারণে স্বভাবতই এই ভিডিওটি  ইউটিউবে সার্চ লিস্টে  উপরের সারিতে চলে আসে।

কিন্তু দ্বিতীয় জন একাধিক ভিডিও প্রকাশ করলেও তার এমন কোনো নিয়মতান্ত্রিকতা নেই। সুতরাং তার সাবস্ক্রাইবাররা বিশেষ কোনো মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করেন না। আর তাই একাধিক ভিডিও প্রকাশ করলেও কোনো একটি ভিডিও বিশেষভাবে সার্চ লিস্টে উঠে আসে না। সুতরাং ভিডিওর সংখ্যা বৃদ্ধি মুখ্য বিষয় নয়। তাই এখন থেকে ধারাবাহিকভাবে একই নিয়মে ভিডিও প্রকাশ করা শুরু করুন।

photo: performance 360

এমনকি আপনি যদি নির্দিষ্ট কোনো দিনে ভিডিও প্রকাশ করতে ব্যর্থ হন, তবে তা অবশ্যই ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার দর্শক-শ্রোতার উদ্দেশ্যে বিশেষ ভাবে প্রচার করুন। এতে সাবস্ক্রাইবারদের কাছে আপনার দায়িত্ববোধ প্রকাশ পায়।

তাছাড়া নিউজ চ্যানেল বা বড় মিডিয়া গ্রুপ ছাড়া সাধারণ ইউটিউবারদের ক্ষেত্রে সপ্তাহে সাত বারের বেশি ভিডিও আপলোড করা উচিত নয়।

৩. প্রকাশের পর সম্পাদনা না করা

ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রকাশের পর খুব দ্রুত যদি দর্শক-শ্রোতারা ভিডিওটি দেখতে শুরু করে, তবে দ্রুত সেই ভিডিও ইউটিউব সার্চ লিস্টে চলে আসে। কিন্তু আপনি যদি ভিডিও প্রকাশের কিছু সময় পর নতুন করে আবার ভিডিওর শিরোনাম এবং বিবরণ পরিবর্তন করেন তবে ইতিমধ্যে সৃষ্ট এসইও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আপনার ভিডিওর র‌্যাংক কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

photo: techrepublic

তবে ভিডিও প্রকাশের পর যে কোনো প্রকার সম্পাদনা করা যাবে না, এমন কোনো নিয়ম নেই। আপনি ইচ্ছামত ভিডিওর শিরোনাম, বিবরণ,  থাম্বনেইল, এবং ট্যাগ পরিবর্তন করতে পারেন। কিন্তু বারংবার এই পরিবর্তন আপনার ভিডিওর জন্য শুভবার্তা বয়ে আনে না। সুতরাং ভিডিও প্রকাশের পূর্বেই সকল প্রকার সম্পাদনা শেষ করুন। সম্ভাব্য সকল ট্যাগ, আকর্ষণীয় শিরোনাম আগেই নির্ধারণ করুন।

এভাবে কাজ করলে ভিডিও খুব দ্রুত ইউটিউব সার্চ লিস্টে চলে আসবে, এবং ইউটিউবের রোবট আপনার ভিডিও দেখার জন্য অন্যদের প্রলুব্ধ করবে।

উপরিউক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে ভিডিও আপলোড, এবং প্রকাশ করলে দ্রুত সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। আপনার ইউটিউব যাত্রার জন্য শুভকামনা।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com