পড়ালেখা চলাকালীন সময়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করার গুরুত্ব অপরিসীম। দিনে দিনে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ফলে, শুধুমাত্র নিয়োগকর্তারাই লাভবান হচ্ছে না, বরং কর্মীরাও বিভিন্নভাবে লাভবান হচ্ছে।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118876064-1024x684.jpg)
Source: gknpm.com
কর্মীদের কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সফল ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে চাকরি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। কেন শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করবেন? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ আমি এই আর্টিকেলটি আলোচনা করবো, যে পাঁচটি কারণে অবশ্যই শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করা উচিত।
১. শেখা অবস্থায়ই অর্থ উপার্জন
আপনি যদি আপনার পড়ালেখা চলাকালীন সময়েই অর্থ উপার্জন করতে চান, তবে আপনাকে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পড়াশোনা চলাকালীন সময়ে অর্থ উপার্জন করা বেশ কঠিন সাধ্য কাজ। কিন্তু এই কঠিন ব্যাপারটিকে সহজ করে দিতে পারে শিক্ষানবিশ চাকরিসমূহ।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118480669.jpg)
Source: awe.co.uk
শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার ফলে, আপনি বিভিন্ন অভিজ্ঞ কর্মীদের সান্নিধ্য লাভ করবেন, এতে তাদের থেকে বিভিন্ন দক্ষতাগুলো শেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে। একদিকে আপনার শেখাও হবে, অপরদিকে অর্থ উপার্জন করাও হবে। যদিও শিক্ষানবিশ হিসেবে অভিজ্ঞ কর্মীদের মতো মজুরি পাবেন না, কিন্তু বেশ ভালো মানের উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। কারণ ন্যূনতম মজুরি প্রদানের জন্য নিয়োগকর্তারা আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতার সম্মুখীন হয়ে থাকে। এছাড়াও কিছু কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে ন্যূনতম মজুরির চেয়েও বেশি অর্থ প্রদান করে, শিক্ষানবিশদের নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118786458-1024x614.jpg)
Source: studential.com
শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে, আপনি প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় ১৭০ পাউন্ড থেকে ২১০ পাউন্ড পর্যন্ত আয় করতে পারবেন। যা বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে প্রায় ১৮ হাজার টাকা থেকে প্রায় ২৩ হাজার টাকা। এভাবে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে আপনি একদিকে শিখতে পারবেন, আবার অর্থও উপার্জন করতে সক্ষম হবেন।
২. অভিজ্ঞতা অর্জন
ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষানবিশ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে, এমন ধরনের কৌশল গ্রহণ করে, যাতে শিক্ষানবিশ কর্মীরা বিভিন্ন অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীদের সঙ্গ লাভ করতে পারে। শিক্ষানবিশ কর্মীরা কাজ ও দক্ষতাগুলো শিখবে, এমনটি ধরে নিয়েই তাদেরকে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ দিয়ে থাকে। আপনি আপনার পড়ালেখার চলাকালীন সময়ে, যদি কোনো ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান, তবে আপনি আপনার পড়ালেখা চলাকালীন সময়েই, ঐ কাজের উপর এমন দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন; যারা শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করে নাই, তাদের জন্য এই দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা অসম্ভব ব্যাপার।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118911911.jpg)
Source: devonlive.com
তারপর যখন পড়ালেখা শেষ হবে, তখন চাকরির প্রতিযোগিতায় শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেনি এমন চাকরি প্রার্থীদের থেকে, আপনি অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন। কারণ আপনি শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার ফলে, কাজের উপরে আপনার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা পূর্বেই অর্জিত হয়েছে। আর প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই অভিজ্ঞ ও দক্ষদের নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। আপনি সফল ক্যারিয়ার গঠন করতে চাইলে কিংবা স্বপ্নের চাকরিটি অর্জন করতে চাইলে, কাজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা জরুরী। আর শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে, আপনি এই সুযোগটি সহজেই পেতে পারেন।
৩. সক্রিয়ভাবে ক্যারিয়ার গঠনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি
সাধারণত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষানবিশ চাকরির পদগুলোতে, কর্মীদের স্বল্পমেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি স্বল্পমেয়াদী কিংবা খন্ডকালীন হিসেবে চাকরি করলেও, আপনার পড়ালেখা শেষ হওয়ার পর, আপনি অন্য কোনো স্থায়ী চাকরিতে স্থানান্তরিত হতে চাইলে, আপনাকে কোনো প্রকার নেতিবাচক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে না। বরং আপনি খুব সহজেই অন্য কোনো স্থায়ী চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে যাবেন।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118467581.jpg)
Source: reed.co.uk
আবার যে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করবেন, এই প্রতিষ্ঠানেও আপনাকে স্থায়ীভাবে চাকরিতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করবে। কারণ আপনি এখানে অনেক দিন কাজ করেছেন, ফলে এই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ায়, আপনি যতোটুকু ভূমিকা রাখতে পারবেন, অন্য কোনো নতুন কর্মী ততটুকু ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে না। এভাবে শিক্ষানবিশ চাকরি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই আপনার কর্মজীবন গঠন করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
৪. যোগ্যতা অর্জন
শিক্ষানবিশ হিসেবে কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কাজ করার মাধ্যমে, আপনার শুধু দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাই অর্জন হবে না, বরং আপনি যোগ্যতাও অর্জন করতে সক্ষম হবেন। কিছু কিছু কোম্পানি তাদের শিক্ষানবিশ কর্মীদের কাজের যোগ্যতার উপরে সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। চাকরি ক্ষেত্রে এসব সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা, কিছু কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগত ডিগ্রির চেয়েও বেশি।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118816623-1024x491.jpg)
Source: gknaerospace.com
আপনার যদি শিক্ষানবিশ চাকরির বিষয়ে কোনো সার্টিফিকেট থাকে, তবে চাকরির প্রতিযোগিতায় অন্যান্য চাকরিপ্রার্থীর থেকে আপনি অনেক বেশি এগিয়ে থাকবেন। তাই দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা অর্জনের জন্য আপনার উচিৎ শিক্ষানবিশ হিসেবে কোনো কোম্পানিতে চাকরি করা।
৫. ঋণ থেকে মুক্তি
সাধারণত উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে হলে, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই উচ্চহারে টিউশন ফি প্রদান করতে হয়। টিউশন ফি ও অন্যান্য খরচসহ একজন স্টুডেন্টকে মোটামুটি বড় অংকের একটি অর্থ ব্যয় করতে হয়। আর অধিকাংশ পরিবারের পক্ষই এই ব্যয় বহন করা সম্ভব হয় না। ফলাফলস্বরূপ, ছাত্রছাত্রীদের ঋণের দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু আপনি যদি শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করেন, তবে আপনাকে কখনই স্টুডেন্ট লোনের জন্য আবেদন করতে হবে না। আপনি আপনার উপার্জিত অর্থ দিয়েই সমস্ত ব্যয় বহন করতে পারবেন, এমনকি পরিবারকেও সাহায্য করতে সক্ষম হবেন। তাই ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হলেও আপনার শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করা প্রয়োজন।
![](https://youthcarnival.org/bn/wp-content/uploads/2019/02/image_search_1551118667367-1024x657.png)
Source: britisengines.co.uk
শিক্ষানবিশ চাকরির শুধুমাত্র এই ৫টিই উপকারিতা নয়, বরং শিক্ষানবিশ চাকরির বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। আপনি শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি করলে, শিক্ষানবিশ চাকরির গুরুত্ব খুব সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। তাই পড়ালেখা চলাকালীন অবস্থায় শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরি শুরু করুন এবং সফল ক্যারিয়ার গঠনের দিকে অগ্রসর হোন।
Featured Image:Noobpreneur.com