বিল গেটস ও মার্ক জাকারবার্গের মতে যে ৯টি বই সবার পড়া উচিত

বিল গেটস এবং মার্ক জাকারবার্গ বিশ্বের সবচেয়ে সফল ও ধনী মানুষদের মধ্যে অন্যতম। মাইক্রোসফটের সাবেক প্রধান নির্বাহী বিল গেটস ২০১৫ সালে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে একটা সাক্ষাৎকারে বছরে ৫০টি বই পড়ার কথা জানান। ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ একটি অনলাইন বইয়ের ক্লাব খুলেছেন যেখান থেকে প্রতি দুই সপ্তাহে ১টি বই পড়া হয়। যদি পৃথিবীর সফল মানুষদের জীবন বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে তাদের অধিকাংশ মানুষকেই পাবেন যারা বইপ্রেমী ছিলেন। আমাদের অনেকেরই আদর্শ বিল গেটস এবং মার্ক জাকারবার্গ এর ব্যতিক্রম নন। আজ তাদের সাজেস্ট করা কিছু বইয়ের নাম দেওয়া হলো।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

১. ‘Creativity, Inc.’ by Ed Catmull

Image source – iamedtoau.cf

Creativity Inc. Pixar এর গল্প, লিখেছেন কম্পিউটার এনিমেশন জায়ান্টের একজন প্রতিষ্ঠাতা  Ed Catmull। বইয়ে তার বর্ণনাকে ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোক্তার মূল্যবান প্রজ্ঞা দিয়ে অনেক বেশি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার মতে, যেকোনো কোম্পানীর উচিত সচেতনভাবে কর্মীদের স্বাভাবিক সৃজনশীলতার ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা। মার্ক জাকারবার্গ বলেন –

“আমি Pixar এর মতো অসাধারণ কোম্পানীর শুরুর গল্প এবং এর মাধ্যমে সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনকে লালন করার গল্পগুলো পড়তে খুবই পছন্দ করি।”

২. ‘The Gene: An Intimate History’ by Siddhartha Mukherjee

Image source -goodreads.com

জিনতত্ত্ব সাধারণত সাধারণ মানুষের আগ্রহের বিষয় হয় না কিন্তু বিল গেটস এর মতে এই বইটাতে লেখক সিদ্ধার্থ মুখার্জি জিনতত্ত্বকে বাস্তব জীবনের সাথে মিলিয়ে বর্ণনা করেছেন এখানে। তিনি বড় কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যেগুলো আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠনের সাথে সম্পর্কিত এবং যা আমাদের নিজস্বতা তৈরি করেছে। বিল গেটস বলেন –

 মি. মুখার্জি বইটি সাধারণ মানুষের কথা ভেবেই লিখেছেন, কারণ জিনতত্ত্বের নতুন সব আবিষ্কার আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে ব্যপকভাবে প্রভাবিত করছে।

গেটসের মতে, মি. মুখার্জি একজন “Quadruple Threat” – কারণ তিনি একজন ডাক্তার, শিক্ষক, গবেষক এবং একইসাথে লেখকও।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

৩. ‘Better Angels of Our Nature’ by Steven Pinker

Image source – thedailybeast.com

জাকারবার্গ স্বীকার করেন, হার্ভার্ডের একজন সাইকোলজিস্টের লেখা এই ৮০০ পৃষ্ঠার তথ্যবহুল বইটি প্রথমে দেখে ভয় লাগতে পারে। কিন্তু লেখার ভঙ্গিটা অনেক সহজ, পড়তে কোনো অতিরিক্ত চেষ্টা করা লাগে না। জাকারবার্গ মনে করেন, সময়ের ধারায় নির্যাতন বা ভায়োলেন্স কীভাবে কমে আসছে সেসব নিয়ে এই বইয়ে খুব সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া এবং পত্রপত্রিকায় ভায়োলেন্সের খবরই বেশি গুরুত্ব দিয়ে ছাপা হয়, কিন্তু এটি নিয়ে pinker এর গবেষণা একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। যা জীবন উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়।

বিল গেটসের মতে, এই বইটি তার পড়া উল্লেখযোগ্য একটি বই। যদি অল্প সময়েই বইটি সম্পর্কে ধারণা পেতে চান তাহলে Business Insider এ বইটির সার-সংক্ষেপ পড়তে পারেন।

৪. ‘Gang Leader for a Day’ by Sudhir Venkatesh

Image source – idoc.co

Venkatesh কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক। তিনি সমাজবিজ্ঞানের একটি পরীক্ষা করার জন্য ১৯৯০ সালে শিকাগোর একটি দলে অংশ নেন।

জাকারবার্গ বলেন – “অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাধা থাকা সত্ত্বেও মানুষের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে Professor Venkatesh এর কাজটি খুবই অনুপ্রেরণামূলক। আমাদের প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা প্রকাশের জন্য মাধ্যম যত বেশি থাকবে, তত বেশি আমরা অন্যের অধিকারকে সম্মান করতে শিখবো।”

৫. ‘Sapiens: A Brief History of Humankind” by Yuval Noah Harari

Image source – sapnaonline.com

উৎপত্তির পর থেকেই পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র মানব প্রজাতি নই।  প্রায় একলক্ষ বছর আগে ছয়টি মানব প্রজাতি ছিলো, কিন্তু একমাত্র Homo sapiens এখনও টিকে আছে। কীভাবে?

বিল গেটস বলেন, “মেলিন্ডা ও আমি দুজনই বইটি পড়েছি এবং খাবার টেবিলে এটি অসাধারণ কিছু আলোচনার সূত্রপাত করেছে। লেখক  Yuval Noah Harari এর জন্য এটি খুবই কঠিন একটি চ্যালেঞ্জ ছিলো; মাত্র ৪০০ পৃষ্ঠার মধ্যে পুরো মানব জাতির ইতিহাস বলেছেন।”

কিন্তু লেখক শুধু অতীতেই থাকতে চান না। তিনি মানুষের ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে চান যেখানে জিন প্রকৌশল এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মত বিষয়গুলো মানুষের সংজ্ঞাকে অনেক বেশি বদলে দেবে। বিল গেটস আরও বলেন

  যারা মানুষের অতীত ইতিহাস ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে আগ্রহী আমি তাদের Sapiens বইটি পড়ার পরামর্শ দেবো।

৬. ‘Shoe Dog’ by Phil Knight

Image source – klcc.org

Phil Knight জনপ্রিয় ব্র্যান্ড Nike এর একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা। গত বছরের শুরুতে বিশ্ববিখ্যাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শুরুর দিকের গল্প বলেন এই বইটির মধ্য দিয়ে। বিল গেটসের মতে, বইটি আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে, সাফল্যের পথ সোজা নয়, খুবই জটিল পথ এটি। এই পথ বিরোধীতা, দ্বন্দ্ব এবং বেদনাদায়ক নানান অনুভূতিতে ভরা এই পথ। জটিল এবং দীর্ঘ। বিল গেটস বলেন,

এই কয়েক বছরের মধ্যে আমার অল্প কয়েকবারই Phil Knight এর সাথে দেখা হয়েছে। তিনি অসাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু তিনি খুবই ঠান্ডা মেজাজের মানুষ, তাকে বোঝা তেমন সহজ নয়। এই বইয়ে লেখক কিছু কোম্পানির প্রধান নির্বাহীরা কী করতে চাচ্ছেন সেগুলো আমাদের চোখের সামনে এনেছেন।”

৭. ‘The Structure of Scientific Revolutions’ by Thomas S. Kuhn

Image source – press.uchicago.edu

যদি পড়ার মত পদার্থবিজ্ঞানীর লেখা কোনও দর্শনের বই থেকে থাকে তাহলে সেটি হচ্ছে ,’The Structure of Scientific Revolutions.’

Stanford Encyclopedia of Philosophy – এর মতে, ১৯৬২ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এটি সব সময়ের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি একাডেমিক বই। বইটিতে সময়ের ধারাবাহিকতায় বিজ্ঞানের বিবর্তন এবং আধুনিক যুগে উপর এর প্রভাব আলোচনা করেছেন। জাকারবার্গ মনে করেন, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলো কীভাবে সমাজিক উন্নয়নের জন্য কাজে লেগেছে সে সম্পর্কে জানলে সেটি সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি শক্তি হিসেবে কাজ করবে।

এই বইটি আমাদের একটি বিশেষ শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে, সেটি হচ্ছে ‘Paradigm Shift বা দৃষ্টান্ত স্থানান্তর ‘ যখন একটি বিষয় সম্পর্কে মানুষের ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে যায় তখন একে ‘Paradigm Shift’ বলে । যেমন নিউটনিয়ান মেকানিক্স বদলে গিয়ে তার স্থানে এসেছে কোয়ান্টাম ফিজিক্স।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

৮. ‘String Theory’ by David Foster Wallace

Image source – amazon.com

না, বইটি ফিজিক্সের স্ট্রিং থিওরি নিয়ে নয়। বইটি প্রয়াত লেখক David Foster Wallace – এর প্রবন্ধ সংকলন। বইটি লেখা টেনিসকে কেন্দ্র করেই। বিল গেটসের মতে, তিনি কিছু পেশাগত কাজ শেষে খেলার জগতে ফিরে যেতে চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু পারেননি। বিল গেটস বলেন –

বইটি পছন্দ করার জন্য টেনিস খেলা বা দেখা কিছুরই প্রয়োজন নেই। লেখক David Foster Wallace রজার ফেদেরারের রেকেট চালানোর মত দক্ষতায় কলম চালিয়েছেন।

বইটি এতই অসাধারণ যে পড়তে পড়তে মনে হবে আপনি পড়ছেন না, খেলা দেখছেন।

১০. ‘The Three-Body Problem’ by Cixin Liu

Image source – markusmcdowell.com

The Three-Body Problem বইটি ২০০৮ সালে প্রথম চীনে প্রকাশিত  হয়েছে। এর ইংরেজী অনুবাদ ২০১৫ সালে সেরা সায়েন্স ফিকশন উপন্যাস হিসেবে Hugo Award জিতেছে। বইটি মাও সে তুং এর সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় থেকে শুরু করেন। সেই সময়ে চলে যান যখন চীনা সরকার ভুলবশত মহাশূন্যে একটি সংকেত পাঠানোর পর এলিয়েনদের একটি দল পৃথিবীতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেয়। জাকারবার্গ এর মতে, তার বইয়ের ক্লাবে খুব জটিল কিছু বই পড়ার পর এই বইটি তার কাছে একটি মজার বিরতির মতো।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

Featured Image Source – timedotcom.files.wordpress.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *