বতর্মানের বিভিন্ন নিত্যনতুন প্রযুক্তির মধ্যে ব্রেইন হ্যাকিং টেকনোলজির অবস্থান রয়েছে সবার উপরে। নিউরোটেকের ইলন মাস্ক এবং কার্ণেলের ব্রায়ান জনসন বিশ্বাস করেন এই ধরনের টেকনোলজি মানুষের ব্রেইন আর বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাথে সংযোগ ঘটাবে এবং মর্ধবর্তী মাধ্যম হিসাবে কাজ করে সহায়ক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। চলুন জেনে নেওয়া যায় ব্রেইন হ্যাকিং টেকনোলজিতে এগিয়ে থাকা কোম্পানিগুলোর নাম এবং তাদের কাজ সম্পর্কে।
নিউরোলিংক
ইলন মাস্কের মতে, মানুষ আর মেশিনের মধ্যে সবথেকে বড় বিপত্তি হচ্ছে যোগাযোগের নিম্ন ব্যান্ডউইডথ। এখানে নিম্ন পরিমাণ ব্যান্ডউই্ডথ দিয়ে বোঝানো হয়েছে টাচস্ক্রিনে বা কিবোর্ড দিয়ে ডেটা ইনপুট করা যেটা আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতির তুলনায় যথেষ্ঠ ধীর প্রসেস বলা চলে। মাস্কের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই ধীর প্রসেসের পরিবর্তে উচ্চ ব্যান্ডউইডথ ক্ষমতাসম্পন্ন পদ্ধতির চালনা করা।
যার মাধ্যমে মানুষ মেশিনকে সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে পারবে এবং উচ্চ গতিতে নির্দেশনা প্রদান করতে সক্ষম হবে। এই উদ্দেশ্য তারা তৈরি করেছেন নিউরোলেস এবং নিউরো ডাস্ট নামে দুইটি প্রযুক্তি। তবে সেই প্রযুক্তি দেখতে কেমন হবে সেটা এখনো প্রকাশিত করা হয়ন।
নিউরোলিংক মূলত একটি মেডিক্যাল রিসার্চ কোম্পানি। তাই তাদের এই প্রযুক্তির অন্যতম উদ্যেশ্যে হচ্ছে এই প্রযুক্তির সাহায্যে বিভিন্ন মস্তিষ্কজাত রোগের চিকিৎসা করা। এছাড়া মানুষের মধ্যে টেলিপ্যাথির মতো যোগাযোগের প্রযুক্তিও আবিষ্কারও তাদের লক্ষ্যের মধ্যে একটি। ইলন মাস্ক সংবাদ মাধ্যমে ঘোষনা দিয়েছেন যে, চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তি তারা বাজারে ছাড়তে পারবেন। তবে সেগুলোর মূল্য কেমন হবে সে বিষয়ে তারা স্পষ্ট কিছু বলেননি।
ফেসবুক
ইলন মাস্কের ঘোষনার কিছুদিন পরেই ফেসবুক তাদের নতুন প্রযুক্তির কথা উল্লেখ করে। ফেসবুকের সিক্রেটিভ বিল্ডিং আটের গবেষণা দলের প্রধান রেজিনা ডুগান রিপোর্টারদের কাছে জানান, তাদের এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীকে প্রতি মিনিটে ১০০ শব্দ টাইপ করার ক্ষমতা দিবে। এছাড়া মাউসের / কারসরের সব ধরনের কাজও করতে সক্ষম হবে।
ফেসবুক তাদের নতুন এই প্রযুক্তি কেমন হবে সে বিষয়ে তেমন খোলসা করেনি। তবে নিউরোলিংকের মত মস্তিষ্কে কোন চিপ জাতীয় কিছু না বসিয়ে তারা ক্যাপের মত ডিভাইস এই কাজে ব্যবহার করবে এটুকু প্রকাশ করেছে। কারন দীর্ঘ সময় ব্যবহারের হিসাবে এই নিউরোলিংকের মত প্রযুক্তি তাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়নি। তাদের তৈরি এই ক্যাপ অপটিক্যাল ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করবে।
তবে এই প্রযুক্তির প্রটোটাইপ ফেসবুক এখনো শেষ করতে পারেনি। ফেসবুক এই বিষয়ে বলেছে তাদের তৈরি প্রথম প্রটোটাইপ ২ বছরের মধ্যেই বাজারে আসবে, যেটা চিকিৎসা ক্ষেত্রে নিয়ে আসবে বিশাল পরিবর্তন।
কার্ণেল
ইলন মাস্কই একমাত্র ধনী ব্যক্তি নয় যে ব্রেইন হ্যাক টেকনোলজিতে আগ্রহী হয়েছে। অনলাইন ব্যাংক ব্রেইনট্রির উদ্যোক্তা ব্রায়ান জনসন প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কার্ণেল গঠন করেছেন। এই কোম্পানির মূল লক্ষ্য হচ্ছে এমন ধরনের একটি ইলেক্ট্রনিক চিপ নির্মাণ করা যেটা কিনা বিভিন্ন তথ্য রেকর্ড করতে পারে আর প্রয়োজন অনুসারে সেসব তথ্য মস্তিষ্কে প্রেরণ করতে পারে। তারা এই গবেষণাটি সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সায়েন্টিস্ট এবং বায়ো মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার থিওডোর বার্জারের গবেষণা থিসিস নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইলন মাস্কের মতো নিজেদের প্রযুক্তির বিষয়ে তেমন গোপনীয়তা রাখেননি ব্রায়ান জনসন। তিনি উল্লেখ করেন তাদের তৈরি এই প্রযুক্তি মস্তিষ্কে প্রতিস্থাপন করা হবে। যেটা কিনা নিউরন থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে আর বিভিন্ন সিমুলেশন করতে সক্ষম হবে। এছাড়া হতাশা সহ বিভিন্ন মস্তিষ্কজাত সমস্যা এই প্রযুক্তি দূর করতে সক্ষম হবে।
ইমোটিভ
ব্রেইন হ্যাক প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা অন্যান্য কোম্পানিগুলোর থেকে ইমোটিভ একটু আলাদা বটে। কারন তারা এই ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করছে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেছে। যেগুলো মধ্যে ইলেক্ট্রোএনসেফ্যালোগ্রাফি উল্লেখযোগ্য। তাদের এই প্রযুক্তি মস্তিষ্কের কার্যবিধি রেকর্ড করতে সক্ষম।
যদিও নিউরোলিংকের মতো মস্তিষ্কে সাথের মেশিনের নিয়ন্ত্রণের যোগাযোগ খুব বেশি শক্তিশালী নয় তবে ভালো দিকে হচ্ছে ইমোটিভ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য অপারেশনের কোন প্রয়োজন নেই। তাদের তৈরি পণ্য ইপিওসি প্লাস বাজারে পাওয়া যায় ৮০০ ডলার আর ওরিয়েন্টেড হেডসেট বিক্রি করা হয় তিনশো ডলার। যেসবের মাধ্যমে মস্তিষ্কের সক্ষমতা আর সুস্থতা পরীক্ষা ছাড়াও কম্পিউটারে ত্রিমাত্রিক ডিজাইন, ড্রোন এবং রোবট চালনা করা সম্ভব। এছাড়া ভিডিওগেমও খেলা যায় এই প্রযুক্তির মাধ্যমে।
ডার্পা: ইউ.এস মিলিটারি ডিফেন্স এডভান্স রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি
ডার্পা কোন ব্যাক্তি বিশেষ কোম্পানি নয়। এটি ইচ্ছে আমেরিকান সামরিক বাহিনীর গবেষনা কেন্দ্র। দুই বছর পুর্বে ২০১৬ সালে ডার্পা ৬০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে নিউরাল ইম্পেলিমেন্ট নামে প্রজেক্ট দাঁড়া করায়। যার উদ্যেশ্যে হচ্ছে এমন একটি ডিভাইস তৈরি করা যেটা কমপক্ষে ১ মিলিয়ন নিউরনের কার্যবিধি রেকর্ড এবং সিমুলেশন করতে সক্ষম হবে। এই ডিভাইসটিকে হতে হবে তারবিহীন আর আকৃতিতে আমেরিকনার পাঁচ সেন্ট মুদ্রা থেকে বেশি বড় হতে পারবে না। সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে আবিষ্কারের সময় হিসাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে চার বছর মাত্র। এমআইটির ভাষ্যমতে, এমন একটি প্রযুক্তি আবিষ্কার জন্য এটা খুবই কম সময়।
তাদের এই প্রযুক্তি নিউরন রেকর্ড এবং সিমুলেশন ছাড়াও আর কি কি ধরনের কাজে ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে কোন ধরনের তথ্য প্রকাশিত করা হয়নি। তবে সব ঠিকমতো চললে ২০২০ সালে আমরা এই প্রযুক্তি দেখতে পারবো।