একটি প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা যেমন- ডাটা এন্ট্রি, ফাইলিং, তথ্য সংরক্ষণ, ইনভয়েস দেয়া, ইমেইল করা, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করা, মিটিং, ইন্টারভিউ ইত্যাদির ব্যবস্থা করার দায়িত্ব একজন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকলে যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা এ পেশায় আসতে পারবেন। তবে আপনি যদি কোনো বিশেষায়িত ক্ষেত্রে চাকরি করতে চান তাহলে সেই বিশেষ ক্ষেত্রের ডিগ্রি থাকতে হবে, যেমন আপনি যদি কোনো আইনি প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদে চাকরি করতে চান তাহলে আইনি বিষয়ে আপনার পর্যাপ্ত ধারণা থাকতে হবে।
বড় ও কর্পোরেট অফিসগুলোতে সাধারনত স্নাতক ও মাস্টার্স পাশ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে।
সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
জরুরী টেলিফোন অপারেটিং করা, মিটিংয়ের ব্যবস্থা করা, যোগাযোগ তালিকা বজায় রাখা, চিঠি, ফ্যাক্স, মেমো, ফর্ম, রিপোর্ট ইত্যাদি প্রস্তুত করা, ফাইল সংরক্ষণ করা, অফিসের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অর্ডার করা, প্রেজেন্টেশন তৈরি করা, যারা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্য এবং কার্যক্রম জানতে আগ্রহী তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করা, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যে সঙ্গে সংগতি রেখে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ করা, ভিতরের এবং বাইরের জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা, দেশের বাইরে থেকে কোনো ক্লায়েন্ট আসলে রিসিভ করা এবং থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করা, প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি গড়ে তোলা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থকে সমুন্নত রাখা এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রদত্ত যেকোনো দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা।
একজন সফল সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার যেসব গুণাবলী থাকা উচিৎ
কম্পিউটার জ্ঞান
একজন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার বেশিরভাগ সময় কাটে কম্পিউটারের সামনে বসে, তাই কম্পিউটার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকতে হবে।
বিশেষ করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ডাটাবেজ, স্প্রেডশিট সফটওয়্যার এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে।
সুস্পষ্টতা
আপনার উপর অর্পিত দায়িত্ব কীভাবে সম্পাদন করবেন, সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। শুধুমাত্র একটি পরিকল্পনা পদ্ধতি, একই রকম চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করলে হবে না। কাজ সম্পাদন করার কয়েকটি পদ্ধতি সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে, যাতে করে একটি পদ্ধতিতে ব্যর্থ হলে আরেকটি পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারেন।
সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা
কর্পোরেট জগতে সফল হতে হলে আপনার সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা থাকতে হবে। যেকোনো কাজের পরিকল্পনা, সমস্যার সমাধান এবং জটিল পরিস্থিতি, কাজের চাপ মোকাবেলার জন্য সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতার প্রয়োজন।
তাই একজন সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তার অবশ্যই সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা থাকতে হবে।
যোগাযোগের দক্ষতা
বর্তমান যুগ প্রতিযোগিতার যুগ। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর্পোরেট জগতে বেড়েই চলছে প্রতিযোগিতা। কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালন করলেই হবে না, সেই সঙ্গে পারদর্শী হতে হবে যোগাযোগসহ অন্যান্য দক্ষতায়। কারণ কর্মক্ষেত্রে উন্নতি অনেকটাই নির্ভর করে আপনার যোগাযোগ পারদর্শিতার উপর।
একজন সফল সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আপনার থাকতে হবে দক্ষ যোগাযোগের দক্ষতা। আপনি যদি যোগাযোগ দক্ষতায় পারদর্শী হয়ে থাকেন তাহলে যেকোনো পেশায় কাজ করা আপনার জন্য সহজ হয়ে যাবে।
এছাড়াও যোগাযোগ দক্ষতা আপনার কাজের বিকাশ, নেটওয়ার্ক তৈরি এবং প্রতিযোগিতা পূর্ণ বাজারে আপনার জায়গাটি সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
পেশাদারিত্ব
একজন সফল সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার হতে হলে প্রথমেই যে জিনিসটির প্রয়োজন তা হলো পেশাদারিত্ব। লক্ষ্য এবং গুণাগুণ বজায় রেখে যেকোনো কাজ করাকে বলা হয় পেশাদারিত্ব। যদি কারো মধ্যে কাজের প্রতি শ্রদ্ধা, সৎভাবে কাজ করার উদ্যম, দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা, সময়মতো কাজ শেষ করার প্রবণতা এবং কর্মদক্ষতা থাকে, তাহলে তার মধ্যে পেশাদারিত্ব আছে। যে ব্যক্তি যত বেশি পেশাদার, তার উন্নতি তত তাড়াতাড়ি হয়ে থাকে।
ইতিবাচক মনোভাব
ইতিবাচক মনোভাব আপনাকে প্রাণোচ্ছল রাখতে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সাহায্য করবে। ইতিবাচক মনোভাব যেকোনো নেতিবাচক পরিস্থিতি মোকাবেলার চাবিকাঠি।
সুতরাং যতোই বাঁধা আসুক না কেন, নেতিবাচকতা পরিহার করতে পারলেই আপনি সফল হতে পারবেন।
কঠোর পরিশ্রমী
আমরা সবাই জানি, পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হলে কঠোর পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। সুতরাং সফল হতে হলেই পরিশ্রম করতেই হবে।
একজন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং কাজ। একটানা এবং একসাথে অনেকগুলো কাজ অর্থাৎ মাল্টিটাস্কিং করার দক্ষতা থাকতে হবে।
দলগত কাজে পারদর্শী
বর্তমান যুগে যেকোনো কর্মক্ষেত্রে সফল হতে হলে দলগত কাজেও পারদর্শী হতে হয়। কর্মক্ষেত্রে সকলের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে, সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সাথে কাজ করতে হবে।
সুতরাং দলগত কাজে পারদর্শিতা না থাকলে এখন থেকেই অভ্যাস গড়ে তুলুন। আপনাকে বিনয়ী, কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সকলের ছোটখাটো ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার মন মানসিকতা থাকতে হবে।
নমনীয়তা
একজন জনসংযোগ কর্মকর্তাকে কথায় এবং ব্যবহারে নমনীয় হতে হবে। যেকোনো সময় আপনার উপর যেকোনো কাজের দায়িত্ব এসে পড়তে পারে। তাই আপনাকে সর্বদা কাজের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। যেই সমস্যাই আসুক না কেন, তা কার্যকর উপায়ে মোকাবেলার করার দক্ষতা থাকতে হবে।
কাজের ক্ষেত্র
প্রায় সব ধরণের কোম্পানিতেই সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ রয়েছে। তাই আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো কোম্পানিতে আবেদন করতে পারেন।
আয়
একজন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার বেতন বেশ ভালো। একেবারে ছোট প্রতিষ্ঠানেও একজন সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১০-১৫ হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে বড় প্রতিষ্ঠানে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তার বেতন হয় ৩০-৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
Featured Image: careerbuilder.com