খাদ্য সম্পর্কিত সমস্ত ব্যবস্থাপনা ও প্রায়োগিক শিক্ষাই হলো খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান। সারা পৃথিবীতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কারণ খাদ্য ও পুষ্টি ছাড়া মানুষের জীবন কল্পনাও করা যায় না। পৃথিবীর সব চাহিদার মধ্যে খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা সবার আগে। তাই এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো চিন্তার কারণ নেই।
ক্লায়েন্টদের মাঝে পুষ্টি সচেতনতা তৈরি করাই মূলত একজন পুষ্টিবিদের কাজ। এটি একটি সেবামূলক পেশা।
শরীরটাকে ভালো রাখতে প্রথমেই যা প্রয়োজন তা হচ্ছে শরীরে পুষ্টিমান বজায় রাখা। আর এক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদ পারেন আপনার দেহের সুষম পুষ্টির সমন্বয় ঘটাতে। চিকিৎসকদের পাশাপাশি রোগ নিরাময় ও প্রতিরোধে একজন পুষ্টিবিদেরও ভূমিকা রয়েছে।
বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত উপায়ে খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের দেহে স্থূলতা, মেদ বৃদ্ধিসহ নানা ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সেইসাথে পুষ্টিবিদের সাথে দেখা সাক্ষাতও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কিংবা নিজেকে সুস্থ রাখতে অনেকেই এখন দ্বারস্থ হচ্ছেন পুষ্টিবিদের কাছে। একারণে বর্তমানে একজন পুষ্টিবিদের চাহিদা অনেক।
আগে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞানে ক্যারিয়ার নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরণের অনিশ্চয়তা ছিলো। মনে করা হতো, এই বিভাগটি শুধু নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই ভুল ধারণা ভেঙে গেছে। মেয়েদের পাশাপাশি এখন অনেক ছেলেরাও এক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
পুষ্টি ও খাদ্য বিষয়টি এখন আর শুধু রান্নাবান্না বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকর জীবনযাপনের চাহিদা অনুযায়ী নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞানশক্তি কাজে লাগিয়ে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি, পরিমিত উপায়ে খাদ্য গ্রহণ ইত্যাদি বিষয়ের উপর চলছে বিভিন্ন রকমের বিশ্লেষণ। এ কারণেই এ পেশার প্রতি তরুণ প্রজন্মের দারুণ আগ্রহ রয়েছে।
তবে এই বিষয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনা যেমন ভালো করতে হবে, তেমনি ব্যবহারিক দিকেও পারদর্শী হতে হবে। এক কথায়, পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকতে হবে।
যেখানে পড়া যাবে
উচ্চশিক্ষার বিষয় হিসেবে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে নাম ভিন্ন হলেও পড়ার বিষয়বস্তু মূলত একই রকম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি পড়ানো হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স পর্যায়ের কোর্স করানো হয়।
এগুলো ছাড়াও দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে পড়ালেখা ও গবেষণার সুযোগ রয়েছে।
পুষ্টিবিজ্ঞানে যে সব বিষয় পড়ানো হয়
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে যেসব বিষয় পড়ানো হয় সেগুলো হলো, ফুড সায়েন্স, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন, ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, নিউট্রিশন ইন ইমার্জেন্সি, ডেভেলপমেন্ট ফুড কেমিস্ট্রি, হিউম্যান মাইক্রোবায়োলজি, ইন্ট্রোডাকশন টু নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স, মাইক্রো ইকনোমিক্স, হিউম্যান এনাটমি, হিউম্যান ফিজিওলজি, সোশ্যাল নিউট্রিশন, বায়োকেমিস্ট্রি, ম্যাটার্নাল অ্যান্ড চাইল্ড নিউট্রিশন, নিউট্রিশনাল প্রবলেম, নিউট্রিশনাল প্ল্যানিংসহ দরকারি বিভিন্ন বিষয়।
নতুন যারা পুষ্টিবিজ্ঞানে পড়ছে বা পড়তে ইচ্ছুক তাদের এই ক্ষেত্রে পড়াশোনা শুরু করার সময় থেকেই ঠিক করে নিতে হবে কে কোন ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কাজ করতে চান, সেই বিষয়েই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।।
ভর্তি প্রক্রিয়া
শুধুমাত্র বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে চাইলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এসএসসি এবং এইচএসসিতে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে।
কাজের ক্ষেত্র
খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়ালেখা করে বিএসসি এবং এমএসসি পাসের পর দেশে এবং দেশের বাইরে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।
আমাদের দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল রিসার্চ ইন্সটিটিউট, স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটসহ স্বাস্থ্য পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন খুব সহজেই। এছাড়াও বড় বড় ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিগুলো, ন্যাশনাল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি, পাবলিক হেলথ ডিপার্টমেন্ট, ফিটনেস সেন্টার,এক্সারসাইজ ফিজিওলজিস্ট, ফুড সায়েন্স রিসার্চর, হোম ইকোনমিস্ট, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বড় বড় রেস্তোরাঁ, ক্যাটারিং সংস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ রয়েছে।
আপনার কাজের ক্ষেত্রের উপর নির্ভর করবে কাজের ধরন কী রকম হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এনজিও এবং সংস্থাগুলোতেও কাজের সুযোগ রয়েছে। এসব এনজিও এবং সংস্থার মধ্যে রয়েছে ব্র্যাক, আশা, টিএমএসএস, নেসলে, ফাও (FAO), আইসিডিডিআর,বি (IEDDR,B), ইউনিসেফ (UNICEF), হু (WHO) ইত্যাদি। তাছাড়া এই বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর রিসার্চর বা গবেষক হিসেবে ক্যারিয়ারের জন্য বাংলাদেশেও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
একজন চাকরিজীবীর চেয়ে একজন গবেষকের চাহিদা সব জায়গাতেই বেশি। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের সব দেশেই একজন গবেষকের কদর একটু বেশিই। তাই গবেষক হওয়ার ইচ্ছা থাকলে তা ক্যারিয়ারের জন্যেও ভালো। তবে গবেষক হতে চাইলে উচ্চশিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
আয় রোজগার
আমাদের দেশে এমনকি সারা পৃথিবীতে খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান ডিগ্রিধারীদের চাহিদা রয়েছে। বর্তমান সময়ে ডায়েটেশিয়ান এবং নিউট্রিশনিস্টদের চাহিদা অনেক। এছাড়া আপনি যদি এক্ষেত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন, তাহলে চাকরির বাজারে বিভিন্ন পেশায় বেশ ভালো অঙ্কের বেতন পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে।
Featured Image: pwlcincolumbia.com