হতে চাইলে সাইকোলজিস্ট

একজন সাইকোলজিস্ট মানুষের চিন্তা, অনুভূতি, ইচ্ছা ও আচরণ পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা নিরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন মানসিক সমস্যার সমাধানে পরামর্শ দিয়ে থাকেন তিনি। একজন সাইকোলজিস্ট কাউন্সেলিং, সাইকোথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে আপনিও মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে পারেন এবং গড়তে পারেন সম্মানজনক ক্যারিয়ার।

Image Source: kohasport.net

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ২০১৬ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ মানসিক সমস্যায় ভোগছে। অথচ চাহিদার তুলনায় বাংলাদেশে সাইকোলজিস্টের সংখ্যা কম।

নিয়ম অনুযায়ী কেবল ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হাসপাতালে মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে সাইকোথেরাপি দিতে পারেন। তবে আমাদের দেশে তাদের সংখ্যা কম থাকায় সাধারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সাইকোলজিস্টরাই এ কাজ করে থাকেন।

একজন সাইকোলজিস্টের গুণাবলী

একজন দক্ষ সাইকোলজিস্টের নিম্নলিখিত গুণাবলী থাকতে হবে

  • যোগাযোগ করার দক্ষতা।
  • ধৈর্যশীলতা।
  • পরিশ্রম করার মানসিকতা।
  • সহানুভূশীলতা।
  • রোগীর ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার মন মানসিকতা।
  • রোগীর চিন্তা ও আচরণ পর্যবেক্ষণের সময় ব্যক্তিগত অনুভূতি সরিয়ে রেখে যৌক্তিকভাবে তার মানসিক অবস্থার পরীক্ষা নিরিক্ষা, বিশ্লেষন ও পর্যবেক্ষন করা।

কাজের ধরণ

একজন সাইকোলজিস্ট তার ক্লায়েন্টের মানসিক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব না হলেও সমস্যা যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন।

সাইকোলজির বেশ কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে। আপনি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো ক্ষেত্র বেছে নিতে পারেন।

ক্ষেত্র অনুযায়ী একজন সাইকোলজিস্টের কাজের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে,

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট

অনেক হাসপাতালে মনোরোগ চিকিৎসকের পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টরা কাজ করে থাকেন। তারা কথা ও যুক্তির মাধ্যমে মানুষের চিন্তা ভাবনা, অনুভূতি ও ব্যবহার পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন। এছাড়াও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে রিসার্চ করে থাকেন তারা।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

রোগীর সঙ্গে কথা বলে, তার মনের গভীরে পৌঁছে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা তাদের কাজ। অ্যাডজাস্টমেন্ট ডিজঅর্ডার, হতাশা, বিষণ্ণতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যায় কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হয়।

এডুকেশনাল বা স্কুল সাইকোলজিস্ট

পড়ার চাপের ফলে ছাত্রছাত্রীদের যেন কোনো মানসিক সমস্যা দেখা না দেয়, সে ব্যাপারে তারা খেয়াল রাখেন। এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক পরিবর্তনের সময় সাহায্য করেন।

এছাড়াও শিক্ষার কার্যকরী পদ্ধতি অনুসন্ধান, উদ্ভাবন, উপযোগী শিক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন, শিক্ষাক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা, শিক্ষাক্ষেত্রে মানসিক ও বিকাশমূলক প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট

বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্রে কর্মীদের নানা মানসিক সমস্যার সমাধান ও তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং সুস্থ কাজের পরিবেশ তৈরি করাই এদের কাজ।

স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট

খেলোয়াড়দের মাঠে মানসিক দৃঢ়তা ও মনোবল বাড়ানো এবং সঠিকভাবে অনুপ্রাণিত করার কাজটাই করে থাকেন একজন স্পোর্টস সাইকোলজিস্ট। সব ধরণের খেলোয়াড়দের দলে এরা থাকেন।

Image Source: spineuniverse.com

চাইল্ড সাইকোলজিস্ট

চাইল্ড সাইকোলজিস্ট বা শিশু মনোবিজ্ঞানী শিশুর বিকাশ ও বৃদ্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করে থাকেন। মাতৃগর্ভে ভ্রূণের জন্ম মুহূর্ত থেকে শুরু করে যৌন পরিপক্বতা অর্জনর পূর্ব পর্যন্ত শিশু মনোবিজ্ঞানের বিস্তৃতি।

এছাড়াও আপনি চাইলে সমাজ মনোবিজ্ঞানী, সমাজ মনোবিজ্ঞানী, বিকাশ মনোবিজ্ঞানী, প্রকৌশল মনোবিজ্ঞানী, উপদেশ ও নির্দেশনা মনোবিজ্ঞানী প্রভৃতি ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।

শিক্ষাগত যোগ্যতা

আপনাকে মনোবিজ্ঞানের উপর ৪ বছর মেয়াদী বি.এস.সি. ও এরপর মনোবিজ্ঞানের বিশেষায়িত কোন বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে হবে। যেমন, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসাবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে সাইকোলজিতে ৪ বছরের বি.এস.সি. ডিগ্রির পর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এম.এস.সি. ও এম.ফিল. ডিগ্রি বাধ্যতামূলক।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের ক্ষেত্রে ডিগ্রি বাধ্যতামূলক নয়। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কোর্স করে পারদর্শী হলে যে কেউ এ পেশায় আসতে পারেন।

কোথায় পড়ানো হয়

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে।

কাজের সুযোগ

এমফিল ডিগ্রি অর্জনের পর একজন শিক্ষার্থী ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। সরকারি ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনা মানসিক হাসপাতালে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও বিভিন্ন সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন, আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ উদ্বাস্তু, শিশু, নারী ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের নিয়ে কাজ করা আরো অনেক এনজিওতে সাইকোলজিস্টদের চাহিদা রয়েছে।

Image Source: idealmedical.com

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, জাতীয় মানসিক হাসপাতাল, জাতীয় ট্রমা সেন্টার, ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে সাইকোলজিস্টরা কাজ করেন।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন – চট্টগ্রামের কাউন্সেলিং ইউনিটসহ রাজধানীর বড় বড় স্কুল-কলেজে রয়েছে স্কুল সাইকোলজিস্টের পদ। অন্যদিকে বিভিন্ন ন্যাশনাল, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে।

পাশাপাশি সাইকোলজির ডিগ্রিধারীরা বেসরকারি ক্লিনিক, কাউন্সেলিং সেন্টার, মেন্টাল হেলথ সেন্টার বা রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এর বাইরে স্বাধীনভাবে চেম্বার করার সুযোগ তো থাকছেই।

আয়

সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন দেয়া হয়। বেসরকারি নামিদামি হাসপাতালগুলোতে অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতন কয়েক লাখ টাকাও হতে পারে।

খন্ডকালীন কাজের ক্ষেত্রে শুরুতে একজন সাইকোলজিস্টের মাসিক আয়  ১৫,০০০-২০,০০০ আর পূর্ণকালীন কাজের ক্ষেত্রে তা ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা হয়ে থাকে।

সাইকোলজি পেশায় দুই তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে বিভিন্ন এনজিও, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চাকরি করে বেতন ৪০,০০০-৫০,০০০ টাকা আয় করতে পারবেন।

Featured Image: applydirect.com.au

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *