Source: london play wrights blog

পেশা যখন টেলিভিশন প্রোগ্রাম লেখক

আমাদের বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে টেলিভিশন। যদিও বর্তমানের ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়াতে অসংখ্য মানুষ ইউটিউব এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আসক্ত। তবে টেলিভিশনের বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের চাহিদা এখনো কম নয়। অন্যদিকে এই বিনোদনধর্মী অনুষ্ঠান চাহিদার বেশি হওয়ায় অনেকেই নিজের কর্মস্থান হিসাবে বেছে নিয়েছেন টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের ‘প্রোগ্রাম রাইটার’ পেশাটিকে। তবে এই পেশাটি আপনার জন্য কিনা অথবা নিজেকে কতটুকু সফল করতে পারবেন, সে বিষয়ে যদি আপনার দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে,তাহলে নিচের  টিপসগুলো অনুসরণ করতে পারেন।

১. টিভি রাইটার পেশাটি আপনার জন্য সঠিক?

টেলিভিশন পর্দার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের লেখক হিসাবে নিজের পেশা গড়ে তোলার পূর্বে বিবেচনা করুন, এই পেশাটি আপনার জন্য কিনা। আর এই পেশার সাথে আপনার প্যাশনের সম্পর্ক কতটুকু, তা ভেবে দেখুন।

Source: Good in a Room

এই পেশাটি আপনার জন্য কিনা, সেটা যাচাই করতে এই প্রশ্নগুলো নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

অনুষ্ঠান নির্মাণের নতুন কোন আইডিয়া আপনার রয়েছে ?

যখন লেখক হিসাবে নিজের কোন অনুষ্ঠান নির্মাণ করতে চাইবেন, তখন সবার পূর্বে যে প্রশ্নটি আসে সেটা হচ্ছে, নতুন অনুষ্ঠানের জন্য আপনার কাছে কী ধরনের আইডিয়া  রয়েছে?

Source: DeviantArt

আপনার অনুষ্ঠানটি যেমন আকর্ষণীয় হতে হবে, তেমনি দর্শকদের ধরে রাখার মতো ক্ষমতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে দর্শকদের কাছে কী ধরনের অনুষ্ঠান অথবা গল্পের চাহিদা রয়েছে, সে বিষয়ে আপনার ধারণা থাকতে হবে।

ভাষার উপর আপনার কতটুকু জ্ঞান বা দক্ষতা  রয়েছে?

আপনি যখন কোন অনুষ্ঠানের সম্পর্কে লিখবেন, তখন ভাষার উপর দক্ষতা থাকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সংলাপে কথাগুলো সুন্দরভাবে ব্যবহার করলেই হয়না। সেগুলোর বিভিন্ন অর্থের বিষয়টিতেও গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

কোনো অনুষ্ঠানের লেখক হিসাবে কাজ শুরু করার পূর্বে ভাষার বিভিন্ন দিক যেমন, বাগধারা, সমাস আর স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। তাই আপনার যদি ইতিমধ্যে ভাষার উপর যথাযথ জ্ঞান না থাকে, সেক্ষেত্রে প্রথমে নিজেকে ঝালাই করে নিন। কারণ ভাষাগত সামান্য ভুল আপনার এই ক্যারিয়ার ধ্বংসের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

অনুষ্ঠানের ক্রম সাজিয়ে নেওয়ার দক্ষতা কতটুকু রয়েছে?

আপনি যখন কোন অনুষ্ঠানের লেখক হিসাবে কাজ করবেন, তখন অনুষ্ঠানটির বিভিন্ন অংশ আপনাকে ক্রমানুসারে সাজিয়ে নিতে হবে। আপনার কাছে বিষয়টি সহজ মনে হলেও এই কাজটি করতে বেশ দক্ষতার প্রয়োজন হয়।

Source: london play wrights blog

কারণ উপস্থাপনা সাজিয়ে নিতে যদি আপনি ভুল হয়, সেক্ষেত্রে পুরো অনুষ্ঠানটি অসামঞ্জস্য হয়ে উঠবে। আর দর্শকদের চাহিদা মিটাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হবে।

দর্শকদের চাহিদা বোঝার ক্ষমতা

আপনি যখন কোন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করবেন, তখন নির্দিষ্ট একটি শ্রেণীর দর্শক বাছাই করতে হবে। আর এই দর্শকদের তাদের চাহিদা পূরণ হচ্ছে কিনা, সে বিষয়ে আপনাকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর এই কাজটি করার জন্য দর্শকদের চাহিদা সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে। তাই ভেবে দেখুন, দর্শকদের চাহিদা, আকাঙ্ক্ষা আর অনুভূতির বিষয়গুলো আপনি কতটুকু বুঝতে পারবেন।

২. টিভি রাইটার পেশার জন্য প্রস্তুতি

উপরের প্রশ্নগুলো নিজেকে জিজ্ঞেস করার পর আপনি নিশ্চিত হলেন, এই পেশা আপনার জন্য উপযুক্ত। আর ভবিষ্যতে এই পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এখন কথা হচ্ছে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করবেন ? এক্ষেত্রে নিচের দুইটি টিপস অনুসরণ করতে পারেন।

গবেষণা করুন

আপনি যে সেক্টরেই নিজের ক্যারিয়ার গঠন করুন না কেন, গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। আপনি  টেলিভিশনের লেখক হিসাবে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্পর্কে গবেষণা করুন। যেমন, কোন ধরনের অনুষ্ঠান বর্তমানে জনপ্রিয় আর কেনই বা জনপ্রিয়? আর যেসব অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা অর্জন করেনি, সেগুলোর কী কী আছে, সেটাও ভেবে বের করুন।

Source: Wikihow

এছাড়া দেশি বিদেশি ম্যাগাজিনগুলো পড়ুন। নতুন বাস্তবমুখী আইডিয়া পাওয়ার জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।

চর্চা  করুন

ধরা যাক, আপনি গবেষণা করে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করলেন। আর বর্তমান বাজারে নিজের অনুষ্ঠান জনপ্রিয় করতে হলে কী কী বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে, সে বিষয়েও আপনি নিশ্চিত।

Source: london play wrights blog

তবে আপনার জ্ঞানভাণ্ডার যতই শক্তিশালী হোক না কেন,যতদিন বাস্তব কাজের অভিজ্ঞতা আপনার না হবে, ততদিন আপনার এই জ্ঞান কোন কাজেই আসবেনা। কারণ অর্জিত জ্ঞান আর জ্ঞানের বাস্তবিক প্রয়োগ এক বিষয় নয়। তাই একটি গল্প লিখে স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত করুন। আর সেই স্ক্রিপ্টকে অনুষ্ঠানে রূপান্তর করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, আপনার প্রথম কাজে কিছু ভুল থেকেই যাবে। তবে আশাহত না হয়ে এই কাজের অভিজ্ঞতার সাহায্যে আরো ভালো পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।

৩. কীভাবে প্রডিউসারের সাথে যোগাযোগ করবেন?

আপনার লেখা গল্প অথবা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা যতই ভালো হোক না কেন, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য কারো সন্ধান না পেলে আপনার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে। এখন কথা হচ্ছে, কীভাবে যোগাযোগ করবেন?  এখানে দুইটি পদ্ধতি আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যক্তিগত যোগাযোগ

এই ক্ষেত্রে আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে তাদের সাথে  যোগাযোগের ব্যবস্থা করতে পারেন। আপনি যখন এই পেশাতে আগ্রহী, তখন এই পেশার বিভিন্ন মানুষের সাথে নিজের যোগাযোগ বাড়ান। তাদের মাধ্যমে কোন প্রডিউসার অথবা অনুষ্ঠান নির্মাতাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

Source: DeviantArt

অনলাইন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের এই কাজকে অনেকাংশে সহজ করে তুলছে। আপনার গল্প অথবা পরিকল্পনার বিষয়ে আগ্রহী, এমন প্রডিউসার অথবা ডিরেক্টরদের খুঁজে বের করুন। এই কাজে আপনি ফেসবুক ব্যবহার করতে পারেন।

৪. অভিজ্ঞতা অর্জন

দেখা যাবে, আপনি ভালো লিখতে জানলেও অথবা অসাধারণ আইডিয়া দেখালেও কেউ আপনার প্রজেক্টে কাজ করতে আগ্রহী হবেনা। এক্ষেত্রে আপনি নিজের অভিজ্ঞতা বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব প্রদান করুন। বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানের কাজে অংশ নিন। নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি বৃদ্ধি করুন। এই অভিজ্ঞতা এক পর্যায়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান নির্মাণে আপনাকে সহায়তা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *