বেঁচে থাকতে ও জীবন চালাতে রোজ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয়। আর এইসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা সেবা কিনতে প্রয়োজন হয় টাকার। আর টাকা আসে ব্যবসা বা চাকরি থেকে। আমাদের চারপাশে অনেক ধরনের চাকরি বা ব্যবসা বর্তমান। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, আমরা কয়টা চাকরি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানি?
আমি ইয়ূথ কার্নিভালের পাঠকদের জন্য গত কয়েক দিন ধরে বেশ কিছু চাকরি, কাজ বা পেশা সম্বন্ধে লিখেছি। আজ এই সিরিজের শেষ পর্ব হিসাবে আপনাদের আরও কয়েকটি পেশার সন্ধান দিব। তবে যে পেশার কথাই বলি না কেন, ধরণ বুঝে সব পেশায় কিছু না কিছু যোগ্যতা ও দক্ষতা লাগে। এই সিরিজের অন্য লেখাগুলো পড়ে আসতে পারেন, তার জন্য প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় লিংক অনুসরণ করুন। এইসব পেশা থেকে যোগ্যতা আর পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন আপনার কাঙ্ক্ষিত পেশা আর স্বাবলম্বী হয়ে পারিবারের মুখ উজ্জল করুন।
১. অগ্নিনির্বাপক কর্মী
অগ্নিনির্বাপক কর্মী হওয়া একটি ব্যতিক্রমী, সাহসী ও আত্মবিশ্বাসের পেশা। অগ্নিনির্বাপক বা দমকলকর্মীর কাজ নিশ্চয় শুধু গাছের মগডাল থেকে বিড়াল নামানো নয়, তাদের দায়িত্ব আরও অনেক বেশি। বিপদজনক ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে মানুষকে রক্ষা করা তাদের জন্য খুবই সম্মানজনক পেশা যারা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করে।
তবে শুধু ঝুঁকির কথা ভাবলে চলবে না, এই পেশায় আছে আরামদায়ক কাজের সময়সূচি। যেহেতু প্রতিদিন শহরে আগুন লাগে না। তাই সপ্তাহব্যাপী পোশাক পরে সুসজ্জিত ও প্রস্তুত অবস্থায় থাকতে হলেও কোনো কোনো সপ্তাহ কেটে যায় কোনো কাজই করা লাগে না। সুতরাং সেই বিবেচনায় অগ্নিনির্বাপক কর্মীর পেশায় প্রচুর অবসর সময় পাওয়া যায়, যখন কার্যত কোনো কাজ করা লাগে না। কিন্তু মাস শেষে ঠিকই নির্দিষ্ট অঙ্কের বেতন পাওয়া যায়।
আপনি যদি সাহসী, আত্মপ্রত্যয়ী ও মানুষের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন তবে অগ্নিনির্বাপক কর্মী হতে পারেন। ২০১৩ সালের হিসাব মতে, উন্নত বিশ্বে অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের গড় মাসিক বেতন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
২. প্রকল্প ব্যবস্থাপক
যখন কোন কোম্পানি কোনো সুনির্দিষ্ট কাজের পরিকল্পনা বা কোনো প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা ভাবে তখন তারা সব কিছুর আগে একজন দক্ষ প্রকল্প ব্যবস্থাপকের সন্ধান করেন। এই প্রকল্প ব্যবস্থাপক কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ, সমস্ত সরঞ্জাম ব্যবস্থাপনা ও সঠিক সময়ে যথাযথভাবে কাজ সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক তার নিজ কাজের ক্ষেত্রে অনেক বেশি অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন, অন্য কথায় অভিজ্ঞদেরই কোম্পানি প্রকল্প ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ দেন। এটি আসলে কোনো দায়িত্বশীল কর্মকর্তার নিজ ক্ষেত্রে কাজের দ্বিতীয় পর্যায়।
যেমন, একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী পদোন্নতি পেয়ে একজন প্রকল্প ব্যবস্থাপক হতে পারেন, তারপর আরও পদোন্নতি পেয়ে তিনি সিনিয়ার সফটওয়্যার প্রকৌশলী হতে পারেন। এই পদোন্নতি আসলে কর্ম ভেদে নিজ নিজ কাজে নির্দিষ্ট কয়েক বছরের কাজের অভিজ্ঞতার পরেই পাওয়া যায়।
প্রকল্প ব্যবস্থাপকের কাজ সাধারণত যোগাযোগ এবং অফিসিয়াল কাগজপত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কাজ পরিচালনা। এই ক্ষেত্রে কাজের সম্মানীও সন্তোষজনক। ২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, উন্নত বিশ্বে প্রকল্প ব্যবস্থাপকদের গড় মাসিক সেলারি ৮৯ থেকে ৯৫ হাজার মার্কিন ডলার।
৩. স্পিচ প্যাথলজিস্ট
অনেক মানুষের কথা বলায় সমস্যা আছে। তারা সুন্দরভাবে সাবলীল কথা বলতে পারে না। এই রোগের সমাধানে স্পিচ প্যাথলজিস্ট একটি চমৎকার পেশা। স্পিচ প্যাথলজিস্টরা তাদের রোগীদের সুন্দর সাবলীল কথা বলা ও স্বাভাবিক যোগাযোগ করার সকল অন্তরায় দূর করা নিয়ে কাজ করেন। স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে যে সব সমস্যায় মানুষ পড়েন তা খুব গভীর থেকে পর্যবেক্ষণ করে তারা সমাধান দিয়ে থাকেন।
উন্নত বিশ্বে স্পিচ প্যাথলজিস্টরা সাধারণ বড় বড় কোম্পানিতে কাজ করেন। বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই পেশা খুব একটা প্রচলিত না। তবে এই ক্ষেত্রের রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। কোনো বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ না করেও কেউ চাইলে নিজে ব্যক্তিগতভাবে রোগী দেখতে পারেন। উন্নত দেশগুলোতে এই কাজের গড় মাসিক সেলারি ৬৯ থেকে ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার।
৪. অনলাইন শুল্ক উপদেষ্টা
প্রতিবছর নিয়ম মেনে সকল বিষয় বিবেচনা করে সঠিক শুল্ক বা কর দেওয়া অনেকের জন্য কঠিন কাজ। এই কাজের জন্য বিত্তশালীরা আলাদা আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সাথে সাথে কেউ যদি বাড়ি থেকে কোনো ছোট ব্যবসা পরিচালনা করেন বা ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করেন তবে তাদের ক্ষেত্রে কেমন হারে কর নির্ধারিত হবে – এসব নিয়ে মানুষের মনে আছে নানান প্রশ্ন। আবার পূর্ব প্রস্তুতি হিসাবে কী কী উপায় অবলম্বন করলে বছর শেষে করের পরিমাণ কম হবে, এটাও অনেকের জানার আগ্রহ।
একজন অনলাইন শুল্ক উপদেষ্টা হিসেবে আপনি বাড়িতে বসে সেবা প্রত্যাশীদের আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে অনেকে অনলাইনে তার সব তথ্য জানিয়ে পরামর্শ নেওয়া অনিরাপদ মনে করতে পারেন। তাদের কথা মাথায় রেখে আপনি কিছু দিনের মধ্যে একটি পরামর্শ কেন্দ্র চালু করতে পারেন।
উন্নত দেশগুলোতে পেশাদার শুল্ক উপদেষ্টাদের গড় মাসিক বেতন ৬৫ থেকে ৭৯ হাজার মার্কিন ডলার।
৫. একাউন্ট ম্যানেজার
একজন একাউন্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হল ক্লায়েন্টের সকল একাউন্ট নিরাপদ রাখা ও সময়ের সাথে সাথে একাউন্ট সম্পর্কিত সকল সার্ভিস আপডেট রাখা। একাউন্ট ম্যানেজাররা সাধারণত বড় কোনো কোম্পনিতে ফুল টাইম কাজ করে থাকেন। তবে উন্নত বিশ্বে ফ্রিল্যান্স্যার হিসেবেও কাজ করা যায়। এই চাকরি যথেষ্ট আরামদায়কও বটে।
২০১৩ সালের এক পরিসংখ্যান মতে, ইউরোপ, আমেরিকার দেশে মাসিক গড়ে ৫০ থেকে ৯০ হাজার মার্কিন ডলার সম্মানী পাওয়া যায় এই কাজে।