আমাদের জীবন এখন যন্ত্রের মত হয়ে গেছে। আর দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে সময়ের মূল্য তত বেড়েই চলেছে। সময়, জীবন, ব্যস্ততা সবকিছু পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পৃথিবী বলতে গেলে এখন অত্যাধুনিক। তাই এখন ঘরে বসে সিনেমা দেখা থেকে শুরু করে দোকানের হিসেব পর্যন্ত অর্থাৎ আমাদের বড়–ছোট প্রায় সব কাজ কম্পিউটার কেন্দ্রিক হয়ে গেছে। আমরা অনেক দিন আগে থেকেই কম্পিউটারের সাথে পরিচিত। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি কম্পিউটার কিভাবে এই কাজগুলো করে? কম্পিউটার তো মানুষের ভাষা বোঝে না। মানুষ শব্দের মাঝে এমন কি লজিক প্রয়োগ করে যে কম্পিউটার তৎক্ষণাৎ এর যথাযথ সময়ে সঠিক উত্তর দিতে পারে? নিশ্চয়ই এর কোন জবাব আছে। হ্যাঁ; মানুষ কম্পিউটারকে নিজেদের ভাষা বোঝানোর জন্য যে সকল লজিক এবং কৌশলসমূহ প্রয়োগ করে তার নাম হল কোডিং। আর চাকরি ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই আপনি যদি একজন ভাল কোডার অথবা প্রোগ্রামার হতে পারেন তাহলে দেখবেন চাকরির জগতে কতভাবে আপনার জন্য দ্বার উন্মুক্ত করা আছে। আর এই জন্য আপনাকে অবশ্যই কোডিং সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকতে হবে।
কোডিং কি:
কোড অথবা কোডিং শব্দের অর্থই হল “সংকেতলিপি”, “বিধিবদ্ধ আইনসমূহ”। অর্থাৎ কোডিং হল একটি বিষয় এবং এর সাথে সম্পৃক্ত মানুষ, অন্যান্য সত্তা অবধি সমস্ত কিছুর তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ করার একটি উত্তম মাধ্যম। আপনি যে কোন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোড করতে পারেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আমরা আমাদের কম্পিউটারে যা দেখি সবকিছুই কোডিং এর ফলাফল। আর এই কোডিংগুলো বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজে লিখা হয়। যেমনঃ সি, সি++, জাভা ইত্যাদি।
কোডিং এর ধরন:
কোডিং এর বিভিন্ন রকমের ধরন আছে। কারণ এক একটা সফ্টওয়্যার একেক ধরনের চাহিদা প্রদান করে এবং কাজ করার সুবিধার্থে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কোডিং করে থাকে। যেমনঃ
১) ফাংশনাল প্রোগ্রামিংঃ এখানে নির্দেশনা সঞ্চালনের চেয়ে প্রোগ্রামিং এর রাশিমালা এবং বাক্যের ধরনকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।
২) মডুলার প্রোগ্রামিংঃ এটি হল অনেকগুলো ফাংশনের ক্রম অথবা ধারা। এই প্রোগ্রামিং এর মাধ্যমে অনেক রকমের অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়।
৩) অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিংঃ এটি একটি প্রত্যয় যা বিভিন্ন রকমের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে কম্পিউটার প্রোগ্রামের উন্নতি সাধন করেছে। এটি মডুলার প্রোগ্রামের ভিন্ন একটি রূপ। বর্তমানে প্রোগ্রামিং জগতে এর ব্যাপ্তি সবচেয়ে বেশি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হল, কোডিং এর ক্ষেত্রে এর ধরনগুলো খুব ভাল করে বুঝে এবং এর নির্দেশনাবলী দেখে কাজ করা উচিত। কারণ নির্দেশনায় ভুল থাকলে আপনার কোড কাজ করবে না। যেমনঃ
- কিভাবে কমেন্ট করতে হয়
- লিখার মাঝে কতগুলো ট্যাব অথবা স্পেস দিতে হয়
- ভেরিয়েবল এবং ফাংশনগুলো ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে।
- কোডের ধরন ঠিক আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
কোডিং এর জন্য ব্যবহৃত ল্যাংগুয়েজ:
কোডিং এর ধরন, প্রোগ্রামারের চিন্তাধারা, কাজের সুবিধা এসব কিছুর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
- অ্যারে ল্যাংগুয়েজ
- এসেম্বলি ল্যাংগুয়েজ
- অথোরিং ল্যাংগুয়েজ
- কমান্ড লাইন ইন্টারফেস ল্যাংগুয়েজ
- কম্পাইল্ড ল্যাংগুয়েজ
- কনকারেন্ট ল্যাংগুয়েজ
- ডাটা ওরিয়েন্টেড ল্যাংগুয়েজ
- ডাটা স্ট্রাকচার ল্যাংগুয়েজ
- স্ক্রিপ্টিং ল্যাংগুয়েজ
- ভিজ্যুয়াল ল্যাংগুয়েজ
- এক্সএমএল–বেইসড ল্যাংগুয়েজ ইত্যাদি
কোডিং এর প্রকারভেদ:
ল্যাংগুয়েজ এবং অ্যাপ্লিকেশনের উপর ভিত্তি করে কোডিং বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে।
- ওয়েব ল্যাংগুয়েজঃ আপনি যদি প্রফেশনাল প্রোগ্রামার নাও হোন তবুও আপনি ওয়েব ডেভলাপার হিসেবে কাজ করতে পারেন এবং ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। এর জন্য আপনি এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহার করতে পারেন।
- উইনডোজ কোডিংঃ উইনডোজ এক্সপ্লোরারে রাইট–ক্লিক করার মত উইনডোজের উন্নতি সাধনে যেকোনো কাজই মোটামুটি উইনডোজ কোডিং নামে পরিচিত। এই ধরনের কাজ যারা করে সেসব প্রোগ্রামারদের চাহিদা অনেক বেশি। সি++, সি#, ভিবি.নেট উইনডোজ অ্যাপ্লিকেশন লিখতে কাজে লাগে। সি++ ভাল জানা থাকলে সি#, ভিবি.নেট শিখতে সহজ হয়।
এছাড়াও কিছু ভিন্ন প্রকারের ল্যাংগুয়েজ আছে যেগুলোর ব্যবহার খুব একটা চোখে না পড়লেও বড় বড় অ্যাপ্লিকেশন লিখার ক্ষেত্রে কাজে আসে। যেমন অ্যাকশনস্ক্রিপ্ট, ভিবিএ ইত্যাদি। এগুলো ওয়ার্ড, এক্সেল, গেমিং এর মত অ্যাপ্লিকেশন লিখার কাজে আসে।
কিভাবে কোডিং শিখবেন:
আপনি যেকোনো উপায়ে কোডিং শিখতে পারেন। আজকাল কোডিং বা প্রোগ্রামিং শিখানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও আপনি ঘরে বসে অনলাইন থেকে প্রোগ্রামিং শিখতে পারেন। এর জন্য বেশকিছু ভাল ওয়েবসাইট আছে। যেমনঃ
- কোড স্কুল
>> এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভা, রুবি
- কোড একাডেমী
>> পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, পাইথন
- কোড এভেঞ্জারস
>> এইচটিএমএল৫, সিএসএস৩
- লার্নস্ট্রীট
>> জাভা, রুবি, পাইথন
তবে যেখানে শিখুন আর যেভাবেই শিখুন আপনাকে মাথা ঠাণ্ডা রেখে ধৈর্যের সাথে কাজ করতে হবে।
প্রোগ্রামিং শেখার প্রয়োজনীয়তা:
প্রোগ্রামিং শেখার উপকারিতা অপরিসীম। কারণ এটি আপনার যোগ্যতার মাত্রাকে আরও উপরে নিয়ে যাবে। তাই আপনি চাকরি জগতে যেমন সফলতার সাথে এগিয়ে যাবেন তেমনি নিজেও নানাবিধ কাজ করতে পারবেন।
- নিজের ওয়েবসাইট খুলতে পারবেন এবং এখানেই আপনি নিজের শিখান ল্যাংগুয়েজ অন্যকে শিখিয়ে টাকা আয় করতে পারবেন।
- নিজের ব্যবসা করতে পারবেন। যেমনঃ
>> আপনার তৈরি ভাল মানের সফটওয়ার বিক্রি করতে পারবেন
>> ভাল মোবাইল অ্যাপ্স বিক্রি করতে পারবেন।
- এছাড়াও আপনি ফ্রি লেন্সিং এর কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারবেন।
- তাছাড়া নিজে সফটওয়ার কোম্পানি খুলতে পারবেন।
বর্তমান বিশ্বে কম্পিউটার যত বেশি উন্নত হচ্ছে প্রোগ্রামারদের চাহিদা ততবেশি বাড়ছে। তাই আপনিও প্রোগ্রামিং জগতে প্রবেশ করে নিজে দক্ষতা অর্জন করে নতুন কিছু সৃষ্টি করুন।