রাগ প্রতিটি মানুষেরই খুব স্বাভাবিক একটি প্রবৃত্তি। রাগ যদি ভালো কিছুর জন্য হয় তবে সেটি দিনশেষে ভালো। কিন্তু রাগের কারণে যদি কারো সাথে মনোমালিন্য হয়, কাজে ক্ষতি হয়, সর্বোপরি নিজের ক্ষতি হয় তবে তা অবশ্যই খারাপ। যখন আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকবেন তখন অনেক বিষয়ই থাকবে যা সহজে মানা সম্ভব হবে না। কিন্তু সেটি যদি রাগের মাধ্যমে প্রকাশ করেন তাহলে বস থেকে শুরু করে সবার সাথেই সম্পর্ক খারাপ হতে পারে। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে শেখাটাও জরুরি।
চলুন জেনে নিই রাগ নিয়ন্ত্রণ করার কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে।
গণনা করুন
হুট করে রাগ উঠে গেলে সেটি নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সহজ উপায় ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা শুরু করা। মেজাজ যদি বেশি খারাপ থাকে তবে ১০০ পর্যন্তও গুণতে পারেন। যতবার গুণতে থাকবেন ততবার আপনার হার্ট রেট ধীর হতে থাকবে। সাথে সাথে কমে যেতে থাকবে রাগ।
রাগ উঠলে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গণনা করতে থাকুন; image source: Expert Advice
দীর্ঘশ্বাস নিন
রেগে গেলে ঘন ঘন শ্বাস পড়তে থাকে। সেই সাথে রাগ আরও বাড়তে থাকে। তাই রাগ কমাতে শ্বাস নিন ধীরে ধীরে। নাক দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে বাতাস বের করুন সময় নিয়ে। কয়েকবার এমন করলে রাগের মাত্রা কমে আসতে থাকবে।
হাঁটাহাঁটি করুন
ব্যায়াম কিন্তু নার্ভকে শান্ত রেখে রাগ কমাতে সাহায্য করে। হাঁটাহাঁটি করা, বাইক চালানো, গলফ বা টেনিস খেলা এগুলো রাগ কমাতে বেশ সহায়ক। শরীর নাড়িয়ে দেহমনকে শান্ত রাখতে ব্যায়াম বেশ উপকারি। চাইলে মেডিটেশনও করতে পারেন।
রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেডিটেশনেও মিলবে উপকার; image source: Chicago Health
বুলি আওড়ানো
রাগ উঠলে কোনো জায়গায় মন নিবদ্ধ করা জরুরি। সেক্ষেত্রে কোন একটি কথা বা বুলি বারবার আওড়াতে পারেন। ‘রিল্যাক্স’, ‘স্বাভাবিক হও’, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে’ এই কথাগুলো রাগের সময় বারবার আওড়ানো যায়।
স্ট্রেচ
শরীর এবং আবেগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইয়োগার মতো করে কয়েকবার ঘাড় নাড়ানো যায়। এতে আলাদা করে কোনো যন্ত্রপাতি লাগবে না। ক্লান্তি কমে যায় এতে।
মানসিক শান্তি
ধরুন কোনো কারণে খুব বেশি রাগ উঠলী আপনার। তখন চেষ্টা করুন সেই পরিবেশ থেকে একটু দূরে আসতে। সম্ভব হলে কোনো একটি নিরিবিলি রুমে গিয়ে বসুন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটি সুনসান জায়গায় ভাবুন। সে অবস্থাতেই কিছু দৃশ্য কল্পনা করুন। ভাবুন তো, পানির রঙ কী? পাহাড়ের উচ্চতা কত হয়? পাখিরা কীভাবে ডাকে? বলা হয়, এই দৃশ্যগুলো হচ্ছে মনকে শান্ত রাখার দৃশ্য। তাই রাগ উঠলে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে দেখতে পারেন কিন্তু!
রাগ উঠলে শান্ত কোনো দৃশ্যের কথা ভাবুন; image source: Patch
গান শুনুন
রাগের সময় সবচেয়ে বেশি করতে হয় প্রিয় কাজ। গান শোনা অনেকের কাছে প্রিয় তো বটেই রাগের সময়েও গান চিন্তা কমায়। আপনার অনুভুতির সাথে মিলে যখন গান বাজতে থাকবে তখন বুঝতে হবে আপনার রাগ কমার ওষুধ কিছুটা হলেও লুকিয়ে আছে গান শোনার মাঝে।
কথা না বলা
রেগে গেলে মানুষ সবচেয়ে বেশি হিতাহিত জ্ঞান হারায়। আর তখনই অন্যজনের উদ্দেশে বলা হয়ে যেতে পারে খারাপ কোনো কথা। আর কথা কিন্তু একবার বলে ফেললে তা কখনোই আর ফিরিয়ে নেয়া সম্ভব না। তাই রাগ হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য যতটা সম্ভব মুখ বুজে থাকতে হবে। এতে করে পরিবেশ গরম হওয়ার বদলে দ্রুতই শান্ত হয়ে যাবে কিন্তু!
রাগ উঠলে পরিস্থিত শান্ত করতে আগে কিছু সময় চুপ থাকুন; image source: Vermont Public Radio
বিরতি নিন
মাঝে মাঝে নিজেকেও কিছু আলাদা সময় দেয়া জরুরি। বিরতির এই সময়ে, আপনার মন ভালো থাকে এমন অনেক কিছুই করতে পারেন আপনি। সিনেমা দেখা, বই পড়া, ঘুরতে যাওয়া অথবা কোনো জায়গায় চুপচাপ একা বসে থাকা-যে কোনো কিছু করেই প্রতিদিনের জীবন থেকে কিছুটা সময় নিজেকে দিতে হবে। এতে করে একঘেয়েমি কাটবে। সহজে রাগ উঠবে না।
লিখুন
অনেকে রাগ প্রকাশ করতে পারে না। ভিতরে ক্ষোভ জমতে জমতে সেটি হয়ত আরও খারাপ হয়ে যায়। তাই কোনো বিষয় নিয়ে রাগ হলে কাগজে লিখুন। রাগ নিয়েই লিখতে হবে এমন নয়। যে কোনো বিষয় নিয়ে যততটুকু ইচ্ছে হয় লিখুন। দেখবেন এক সময় রাগ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
কারো সাথে কথা বলা
যার উপর রাগ উঠেছে তাকে হয়ত রাগের সময়ে দেখতে ইচ্ছে করে না কিন্তু কারও না কারও সাথে কথা বলে রাগটা কমাতেও ইচ্ছা হয়। তাই রাগ উঠলে কোনো বন্ধু, কলিগ বা আপন কারো সাথে কথা বলতে পারেন। আপনাকে বুঝবে এমন কেউ হলে বেশি ভালো।
মন খারাপ শেয়ার করুন আপন কারও সাথে; image source: lifestyles.com
হাসা
মন খারাপকে ভালো করার জন্য হাসি ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। তাই রাগ হলে মন ভালো করতে পারে এমন কিছু নিয়ে ভাবুন। মজার সিনেমা দেখতে পারেন, বাচ্চাদের সাথে খেলতে পারেন, কৌতুক পড়তে পারেন।
রাগ প্রকাশ করুন
এতক্ষণ বলা হলো রাগ কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে তাই নিয়ে। এর মানে কিন্তু এই নয় যে আপনার খারাপ লাগলে, রাগ উঠলে সেটি আপনি প্রকাশ করবেন না। অবশ্যই করবেন। কিন্তু সব জায়গায় নয়। যদি কর্মক্ষেত্রে কারও উপর রাগ হয় তখন চুপচাপ সেখান থেকে বের হয়ে আসুন। প্রিয় কোনো মানুষের সাথে বসে সময় কাটান। তাকে শেয়ার করুন আপনার মনের অবস্থা। হয়ত বলা শেষে দেখলেন শুরুতে যে খারাপ লাগাটা ছিল সেটি তখন কাজ করছে না। রাগ প্রকাশ করুন। নইলে পরে এ থেকেই বেড়ে যাবে ক্ষোভ। আর অবশ্যই সেটি প্রতিষ্ঠানসহ কারো জন্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।
Feature image: Spirituality & Health