প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধি ঘটেছে সফটওয়্যার ডেভলপারদের। তবে ভালো চাকরি অথবা পদ পাওয়া এত সহজ বিষয় নয়। সফটওয়্যার ডেভলপার হিসাবে আপনার সফলতা অনেককিছুর উপর নির্ভর করে থাকে। ধরুন, আপনি সফটওয়্যার ডেভেলপিংয়ে নতুন। দুশ্চিন্তা করছেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে। সেরা পথ খুঁজছেন নিজের জন্য। আমি আপনাকে বলবো না এই লাইন ধরে এগোতে থাকুন অথবা এই এই ধরনের পজিশনে কাজ করুন। কারন প্রতিটি মানুষই আলাদা আর প্রত্যেকের স্কিলেও রয়েছে নানা ধরনের ভিন্নতা। তবে নিম্নোক্ত টিপসগুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে সেগুলো আপনাকে একজন সফল ডেভলপার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বাড়িয়ে তুলবে।
১. নিজের জীবন উপভোগ করুন এবং মনোবেশন করুন কোডিংয়ে
আপনি দক্ষ একজন প্রোগ্রামার হতে চাচ্ছেন। সপ্তাহে সাতটি দিন লেগে থাকছেন কোডিংয়ে। হ্যাঁ, এটা সত্য ভালো প্রোগ্রামার হতে হলে নিজের সবটুকু সময় প্রোগ্রামিংয়ে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শিখতে প্রচুর সময় ব্যয় করা ছাড়াও যথেষ্ঠ পরিশ্রমের কাজ বটে।
তবে আপনাকে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, ভালো লেখকরা প্রতিদিন লিখে না অথবা সুকণ্ঠী গায়করা সারাক্ষণ গান গায় না। প্রোগ্রামারদের ক্ষেত্রেও এমনটা হওয়া উচিত। প্রতিটি সফল প্রোগ্রামারদের একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, তার নিজেদের জীবনকে উপভোগ করেন সর্বপ্রথম। এরপর কোডিংয়ে মনোবেশন করে থাকে।
যত বেশি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখা সম্ভব শিখে নিন। প্রতিদিন সেগুলো কমবেশি চর্চা করুন। তবে এই কাজের মধ্যে নিজের জীবন উপভোগ করতে ভুলে যাওয়াটা চরম বোকামি।
২. নির্দিষ্ট এক দুইটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়ার চিন্তা বাদ দিন
বেশিরভাগ এক্সপার্ট প্রোগ্রামাররা একটি কথা বলে থাকে। সেটা হচ্ছে, “তুমি যদি প্রোগ্রামিং এ নতুন হয়ে থাকো তাহলে এক দুইটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর নিজেকে বিশেষজ্ঞ বানানোর চেষ্টা করো না।”
কারণ যখন নব্য কোনো প্রোগ্রামার এক দুইটি ল্যাংগুয়েজে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করে, তখন তার বিকাশিত হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। তাছাড়া বিশ্বের এমন কোনো প্রোগ্রামারকে আপনি দেখাতে পারবেন না যে, হাতে গোনা কয়েকটি প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে দক্ষ। আর বাকিগুলোর উপর কোনো আগ্রহই নেই। প্রতিটি সফল কোডার প্রায় সব ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর নিজের জ্ঞান রাখেন।
তাই শুরুর দিকে বাজারের চলতি এবং জনপ্রিয় যত ধরনের প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ আছে সবগুলোর উপর জ্ঞান নেওয়া উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নামতে হবে। যখন আপনি ডজনখানেক প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ জানবেন তখন যেকোনো ধরনের প্রজেক্টে আপনার কাজ করা সহজ হয়ে যাবে। প্রজেক্টের জন্য দ্রুত সবথেকে পারফেক্ট এবং সেরা এমন একাধিক প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ ব্যবহার করা আপনার জন্য সহজ হয়ে আসবে।
৩. বড় বড় ডেভলপার কোম্পানিতে যুক্ত হওয়ার প্রচেষ্টা
একথা সত্য অভিজ্ঞতাই একজন সফটওয়্যার ডেভলপারদের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল করে আর ভালো ভালো পদে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই আপনার সিভিতে যখন বড় বড় ডেভেলপার কোম্পানিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা দেখানো থাকবে স্বভাবতই আপনার চাহিদা বৃদ্ধি হবে। তাই বিভিন্ন বড় বড় ডেভলপার কোম্পানিতে কাজ করার সুযোগ খুঁজতে থাকুন।
তবে তার মানে এই নয় যে, ছোটখাটো ডেভলপার কোম্পানিতে কাজ করার কোনো অর্থ নেই। আপনাকে মনে রাখতে হবে বিভিন্ন ছোট বা মাঝারি ধরনের ডেভেলপারদের অধীনে আপনি যখন কাজ করবেন আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারী হবে। আর যখন আপনার অভিজ্ঞতার পরিমাণ যথেষ্ট হবে তখনই বড় বড় ডেভলপার কোম্পানি আপনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তাই শুরুটা ছোট বা মাঝারি সফটওয়্যার ডেভলপার কোম্পানি দিয়ে শুরু করতে হলেও আশাহত হওয়ার কিছু নেই।
৩. নিজস্ব প্রজেক্ট তৈরি করুন
আপনি ফ্রিল্যান্সার অথবা চাকরই সন্ধানী হয়ে থাকুন না কেন, নিজের ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বা প্রজেক্ট রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কারণ আপনার এই প্রজেক্ট অথবা ওয়েবসাইট দেখে অনেক বায়ার আগ্রহী হবে। সাথে সাথে চাকরির অফার তো রয়েছেই। এছাড়া আপনি যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেখানে আপনার নিজের কোডিংয়ের চাহিদা তারা নাও মিটাতে সক্ষম হতে পারে। নিজের স্বপ্ন আর ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দেওয়াও গুরুত্বপূর্ণ।
৪. অনলাইন কমিউনিটি
সফটওয়্যার ডেভলপারদের অসংখ্য অনলাইন কমিউনিটি রয়েছে। এর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে স্টাক ওয়ারফ্লো, কোডারওয়াল আর হ্যাডনডের মতো বড় বড় প্ল্যাটফর্ম। এইসব কমিউনিটিতে যোগদান করলে নিত্যনতুন আইডিয়া ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান আপনি পাবেন। যা আপনার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ঘটাবে আর সফলতার দিকে এক কদম এক কদম করে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
৬. সফটওয়্যারের পাশাপাশি হার্ডওয়্যারে নিজের কর্মদক্ষতা বাড়ান
বেশিরভাগ কোডাররা তাদের সর্বোচ্চ দিতে থাকেন বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ শেখা আর দক্ষতা বাড়ানোতে। তবে একজন সফল কোডার হতে হলে একাধিক প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে নিজের দক্ষতা থাকলেই হবে না। কারণ ভেবে দেখুন, যদি ২০ জন কোডারের মধ্যে একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়, সেখানে আপনাকে কেন নিবে? যেখানে আপনার সম পরিমাণ প্রোগ্রামিং দক্ষতা বাকি ১৯ জনেরও রয়েছে। নিজের চাহিদা বাড়ানোর জন্য শুধু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে নিজের জ্ঞান থাকলেই চলবে না। হার্ডওয়্যারেও নিজের দক্ষতা বাড়ানোয় জোরদার করুন।
৭. কর্মক্ষেত্রের পরিবর্তন আনুন
বেশিরভাগ চাকুরিজীবীরা বারবার তাদের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে থাকে। একজন প্রোগ্রামারের মধ্যেও যদি একই ব্যাপার থাকে তাহলে তার সফলতার সম্ভাবনা খুবই কমে যায়। মনে রাখবেন, আপনি একটি কোম্পানিতে চাকুরি করে নিজের যতখানি না উন্নয়ন ঘটাতে পারবেন তার থেকে বেশি সফল হবেন যদি কিছুদিন পর পর নিজের কর্মক্ষেত্র পরিবর্তন করে থাকেন। তবে আপনি যদি মাইক্রোসফট, আইবিএম অথবা ফেসবুক গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন তাহলে বিষয়টি ভিন্ন।
সবশেষে বলতে হয় নিজের ক্যারিয়ার দ্রুত গঠন করতে একজন প্রোগ্রামারের ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিকল্প নেই। আরো সফল ফ্রিল্যান্সার হতে হতে তৈরি করতে হবে নিজের নামধাম। তাই নিজের সুনাম বাড়াতে গুরুত্ব দিন এবং সেটা ধরে রাখুন। আর নিজের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা কখনোই বন্ধ করা যাবে না। কারণ আপনার থেকেও দক্ষ আরো অনেক প্রোগ্রামার রয়েছে। তারা যদি পারে, তাহলে আপনিও পারবেন।