দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটাতে আমাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। এই অর্থ রোজগারের জন্য আমরা চাকরি বা ব্যবসার উপর নির্ভর করি। অনেক সময় চাকরি বা ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংসারের সকল প্রয়োজন মেটানোর জন্য যথেষ্ট হয় না। এক্ষেত্রে রোজগার বাড়ানোর উপায় কি? এদিকে চাইলেই চাকরির স্যালারি বৃদ্ধি করা সম্ভব না, অথবা রাতারাতি ব্যবসার রোজগার বৃদ্ধি করাও সম্ভব না। তাহলে দ্বিতীয় একটি আয়ের উৎসের সন্ধান করতে হবে। এই দ্বিতীয় আয়ের উৎস হলো আপনার সৃজনশীল দক্ষতা।
এমন কিছু সৃজনশীল দক্ষতা আছে যা ব্যবহার করে চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি বাড়তি অর্থ রোজগার করা সম্ভব। আজকের নিবন্ধে এমন কিছু দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করব যা, ব্যবহার করে অর্থ রোজগারের জন্য নিজের চাকরি বা ব্যবসা ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র অবসর যাপনের সময় ব্যবহার করে বাড়তি রোজগার করা সম্ভব।
১. হস্তশিল্প
সৃজনশীল গুণ সবার মধ্যে থাকে না। আবার যাদের মধ্যে থাকে তার সবাই তা যথাযথভাবে ব্যবহার করার সুযোগ পায় না। আপনার যদি বিশেষ সৃজনশীল দক্ষতা থাকে তবে তা ব্যবহার করে খুব সহজেই আপনি বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
আপনার হয়তো ছোটখাটো কোনো ব্যবসা অথবা কোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি আছে। আপনার ব্যবসা বা চাকরি থেকে দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর মত অর্থ উপার্জন করে থাকেন। কিন্তু চাকরি বা ব্যবসার কাজের বাইরে বাড়তি সময় আপনি কিভাবে ব্যবহার করেন? নিশ্চয়ই পরিবারের সাথে আড্ডা দিয়ে, অথবা অলস জীবন-যাপন করে?
এক্ষেত্রে আপনার যদি কোনো হস্তশিল্পের প্রতি ভালোবাসা থাকে তবে তা কাজে লাগিয়ে আপনি খুব সহজেই চাকরি বা ব্যবসার বাইরে বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন। আপনার যদি অবসরে আঁকাআঁকির হাত থাকে তবে আপনার আঁকা ছবি বিশ্বব্যাপী অনলাইনে বিভিন্ন ছবি বিক্রয় সাইটের মাধ্যমে বিক্রি করে আপনি অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
তাছাড়া রুচিশীল মানুষের কাছে হাতে তৈরি অন্য যেকোনো জিনিসের কদর খুব বেশি। আঁকাআঁকি ছাড়াও অন্যান্য হস্তশিল্প বিক্রির মাধ্যমে আপনি বাড়তি কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারেন। এমনকি শখের এই বাড়তি কাজ একসময় আপনাকে বিরাট কর্মযজ্ঞের মালিক করে দিতে পারে। সুতরাং আজই নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগিয়ে হস্তশিল্প বিক্রির মাধ্যমে বাড়তি অর্থ উপার্জনে নেমে পড়ুন।
২. ছবি বিক্রি
আমাদের মধ্যে অনেক মানুষের ফটোগ্রাফির শখ আছে। কোনো চাকরি বা অর্থ রোজগারের আশায় নয়, শুধুমাত্র শখ থেকে মানুষ ডিএসএলআর ক্যামেরা কেনে এবং তা দিয়ে ইচ্ছামতো ছবি তোলে। বলার অপেক্ষা রাখে না এই মানুষটি নিশ্চিতভাবেই অর্থের জন্য অন্য কোনো ব্যবসা করেন, অথবা কোথাও চাকরি করেন।
কিন্তু আপনি চাইলে আপনার এই শখকে বাড়তি অর্থ রোজগারের উপায় করে তুলতে পারেন। অনলাইনে ছবি বিক্রির অসংখ্য ওয়েবসাইট আছে। আপনাকে শুধু ছবি তোলার পর তা এইসব অনলাইনে বিক্রির জন্য আপলোড করতে হবে।
এভাবে নিছক শখ থেকে তোলা ছবি বিক্রি করে আপনি অনায়াসে বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন, যা একই সাথে আপনার সৃজনশীল কাজের স্বীকৃতি হিসেবে গণ্য হতে পারে।
৩. আইডিয়া
আপনি যদি ভালো আইডিয়াবাজ হয়ে থাকেন তবে এই আইডিয়া বিক্রি করে আপনি প্রচুর অর্থ রোজগার করতে পারেন। বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের কর্মদক্ষতা উন্নতি এবং নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য ভালো আইডিয়াবাজদের ভাড়া করে থাকেন। লেখক সাংবাদিক সহ সব পেশার মানুষ স্ব স্ব ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী আইডিয়া অনুসন্ধান করেন।
আইডিয়া অনুসন্ধানকারীদের কাছে আপনি আপনার আইডিয়া বিক্রি করে অর্থ রোজগার করতে পারেন। এ জন্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে। আপনি চাইলেই এসব সাইট ব্যবহার করতে পারেন। তবে তার আগে নিজের সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং দক্ষতা তৈরি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ আপনার কাঙ্ক্ষিত কমিউনিটির মধ্যে যথেষ্ট পরিচিতি থাকতে হবে।
৪. ভিডিও গেমের দক্ষতা
আপনি বিশ্বাস করেন আর না করেন, ভালো ভিডিও গেমের দক্ষতা চড়া মূল্যে বিক্রি হয়। ইন্টারনেটে ভিডিও গেমের একটা বিশাল বাজার আছে। বিশ্বব্যাপী প্রফেশনাল ভিডিও গেম খেলোয়ার আছে, যারা ভিডিও গেম খেলে প্রচুর অর্থ রোজগার করেন।
আপনি যদি এমন দক্ষ কেউ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার দক্ষতা বিক্রি করে আপনি অন্যান্যদের ভিডিও গেম খেলায় সহযোগিতা করে আয় করতে পারেন। কেননা প্রফেশনাল খেলোয়াড়রা সবসময় দক্ষ ভিডিও গেম মেন্টরদের সহযোগিতা নিয়ে থাকে। আপনি পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে এই কাজটি করতে পারেন। এমনকি অনেকে এই কাজ করে মাসে ৫০ হাজার ডলারের উপরে আয় করে থাকেন।
সুতরাং আজই আপনার ভিডিও গেম খেলার দক্ষতা বিক্রি করে অর্থ রোজগার করা শুরু করুন।
৫. ফটোশপ এবং ভিডিও এডিটিং
আপনার যদি ফটোশপ এবং ভিডিও এডিটিংয়ে ভালো দক্ষতা থাকে তবে আপনি এই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাড়তি অর্থ রোজগার করতে পারেন। এর জন্য শুধু একটি ল্যাপটপ বা কম্পিউটার প্রয়োজন হবে। নিজের কাজের পাশাপাশি অবসর সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছবি বা ভিডিওর কাজ নিয়ে করতে পারেন। এতে এই দক্ষতাগুলো যেমন চর্চা করা হবে তেমনি বাড়তি রোজগারের সংস্থান হবে।
তবে তার জন্য কিছু নমুনা কাজ ক্লায়েন্টদের দেখার জন্য অনলাইনে রাখতে হবে, যেন তারা আগেই আপনার কাজ সম্বন্ধে ভাল ধারণা পায়। এর জন্য আপনি বিভিন্ন ফিল্যান্সিং সাইট ব্যবহার করতে পারেন। সেখানে নিজের প্রফাইল প্রস্তুত করে কাজে নেমে পড়তে পারেন।