চাকরি জীবন শুরু করার ক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে ঢোকা যতটা না কঠিন তার চেয়ে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং বিষয় থাকে আপনি যখন কাজ শুরু করবেন তখন কিভাবে আপনার বসের সাথে মানিয়ে চলবেন। শুরুতেই যখন আমরা কোন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করি তখন হয়তো বসের সাথে কিভাবে চলবো বা বস আমার থেকে বয়সে বড় হবে এই বিষয়গুলো আমাদের ভেতরে থাকে। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আপনার চাকরির বয়স বাড়বে বা কর্মক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকবে অথবা হতে পারে আপনার প্রথম চাকরি সেক্ষেত্রে আপনার বসের সাথে আপনার কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে সে বিষয়টি আপনাকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
হতে পারে আপনার বস আপনার চেয়ে বয়সে ছোট বা বড়। একজন বস যিনি আমাদের চেয়ে বয়সে বড় তার সাথে মানে চলার ক্ষেত্রে সাধারণত আমাদেরকে কম ভাবতে হয় কেননা বস আমাদের চেয়ে অভিজ্ঞতা এবং বয়সে বড় হবে এ বিষয়টি সাধারণত আমরা দেখে থাকে থাকি।
কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট অনেকটাই পরিবর্তিত হয়েছে। সবসময় আপনার চেয়ে বয়সে বড় হবে এমনটা নাও হতে পারে। আপনার চাকরি ক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা আপনার বসের চেয়েও বেশি হতে পারেন কিন্তু বয়সে আপনার বস আপনার চেয়ে ছোট হতে পারেন। এটি ভাবার কোন অবকাশ নেই আপনার বস কেন আপনার চেয়ে বয়সে ছোট। কেননা সে যে অবস্থানটির জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠানের অবশ্যই তাকে তার সেই যোগ্যতাটাকে মাথায় রেখে তাকে সে অবস্থানটি দিয়েছে। আর তাই আপনার বস আপনার চেয়ে বয়সে কেন ছোট আর আপনি তাকে কেন মেনে চলবেন এই ধরনের ভাবনা মনের না রাখাই শ্রেয়।
কর্মক্ষেত্রে কর্ম ক্ষেত্রে আপনার বয়স আপনার বস এর চেয়ে বেশি হতে পারে, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার দিক থেকেও আপনি আপনার বসের চেয়েও বেশি অভিজ্ঞ হতে পারেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে বয়সে ছোট বসের সাথে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে তা জানতে হবে। গতানুগতিক যে দৃশ্য আমাদের সামনে রয়েছে তা হলো বস আমাদের চেয়ে বয়সে বড় হবে আর আমরা তাকে মেনে চলব। কিন্তু বর্তমান দৃশ্য,প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়েছে। এখন কর্মক্ষেত্রে আপনার বস আপনার চেয়ে ছোট হতে পারে। জেনে নিতে পারেন বয়সে ছোট বসের সাথে কিভাবে কর্মক্ষেত্রে কিভাবে মানিয়ে চলতে হবে তার কিছু সহজ সমাধান।
১. প্রকাশভঙ্গি এবং চালচলনের প্রতি মনোযোগী হোন
এমন হতে পারে আপনার কম অভিজ্ঞ বস এমন একটি আইডিয়ার কথা বললেন, যেখানে আপনি প্রায় ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত যে সেই আইডিয়াটি ভালো কাজ করবে না। কিন্তু আপনার বসের কথা শুনে আপনার চোখ যদি কপালে উঠে যায় অথবা আপনি যদি আপনার বসের সাথে এমন কোনো আচরণ করে বসেন যেটাতে প্রকাশ পায় যে আপনি বিরক্ত তাহলে কিন্তু আপনার বসের সামনে আপনার ভাবমূর্তি নেতিবাচকভাবে প্রকাশিত হবে।
তাই বসের যে কোনো সিদ্ধান্তে অত্যান্ত নম্রতার সাথে আচরণ করার চেষ্টা করবেন। হতে পারে সে আপনার চেয়ে বয়সে ছোট কিন্তু যেকোনো ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সে যথেষ্ট পরিমাণ যোগ্য বলেই প্রতিষ্ঠান তাকে সেই অবস্থানে রেখেছে। আর তাই কর্ম ক্ষেত্রে বয়সে ছোট বসের সাথে মানিয়ে চলার ক্ষেত্রে অবশ্যই নম্রতার সাথে আচরণ করা শ্রেয়।
২. ভাষার প্রতি সংযত হন
বয়সে ছোট বসের সাথে আপনি যেভাবে কথা বলছেন তার সাথে কোন ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার ব্যবহিত ভাষার প্রতি সংযত থাকাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আপনার ভাষায় যদি প্রকাশিত হয় যে আপনি তার চেয়ে বয়সে বড় এ বিষয়টি আপনার কর্মক্ষেত্রের অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। আপনি কখনোই আপনার বসকে বলবেন না আমি আপনার বয়সে এরকম করেছি বা আমি আপনার বয়সে যখন ছিলাম তখন এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি অথবা আপনার অভিজ্ঞতা কম তাই হয়তো আপনি বুঝতে পারছেন না।
এই ধরনের যেকোনো নেতিবাচক ইঙ্গিতে কথা বলা অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা বারবার কথার মাধ্যমে এটি প্রকাশ করা যাবে না যে আপনি তার চেয়ে বয়সে বড়। আপনি বয়সে বড় হলেও আপনার বস কিন্তু বসের অবস্থানেই আছেন। আর তাই অবশ্যই তার কথা সম্মানের সাথে গ্রহণ করতে হবে এবং কোন আপনার কোন ভাষার মাধ্যমে তাকে এটা প্রকাশ করা উচিত হবে না যে আপনি তার চেয়ে বয়সে বড়।
৩. মেনে নিতে হবে আপনার বস তার কাজের জন্য যোগ্য
বয়সে বড় হওয়ার কারণে আপনার জীবন অভিজ্ঞতা এবং আপনার কর্ম অভিজ্ঞতা আপনার বসের চেয়ে বেশি হতে পারে কিন্তু তাই বলে আপনার বস যে কোন অযোগ্য অবস্থানে রয়েছে তা ভাবাটা একেবারেই অনুচিত। কেননা হতে পারে আপনার চেয়ে আপনার বস কোনো না কোনো দিকে বিশেষ গুণ রয়েছে যা তাকে এই অবস্থান দিয়েছে। আপনার বস কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেটিকে পুরোপুরি আগ্রাহ্য করবেন না যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার কাছে সঠিক কারণটি রয়েছে।
আর যদি কোনো কারণে বসের কোনো সিদ্ধান্তের সাথে আপনার দ্বিমত পোষণ করতেই হয় তাহলে অবশ্যই আপনার সঠিক কারণটি নিয়ে আপনার বসের সাথে আলোচনা করে নেবেন। অবশ্যই অন্যান্য কর্মীদের সামনে তাকে ভুল প্রমানের চেষ্টা করবেন না।
৪. পেশাদারি মনোভাব বজায় রাখার চেষ্টা করুন
আপনার জীবন এবং কর্ম অভিজ্ঞতা অনেক বেশি হওয়ার সুবাদে আপনার বস এখন যে অভিজ্ঞতাগুলো দিয়ে যাচ্ছে হতে পারে আপনি সেগুলো অনেক আগেই জেনে এসেছেন। তাই বলে আপনার বসকে কোনো ধরনের উপদেশ দিতে যাবেন না। বসের কোনো কিছু ভালো না লাগলে সেটা অবশ্যই তাকে যুক্তিযুক্ত কারণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। কিন্তু কখনোই উপদেশের সুরে বসের সাথে কথা বলবেনা না। এছাড়া হতে পারে আপনার বস নতুন কোনো সম্পর্ক বা নতুন মা অথবা বাবা হয়েছে বা এরকম তার আরও অনেক ব্যক্তিগত কারণ থাকতে পারে যার জন্য প্রতিষ্ঠানে সে ছুটি নিতে পারে বা একটু কম সময় কাজ করতে পারে।
তিনি যাই করুন আপনার জীবনে হয়তো সেই অভিজ্ঞতাগুলো আপনি আরো অনেক দক্ষতার সাথে পার করেছেন তাই বলে আপনি আপনার বসকে কোনো ধরনের উপদেশ দিতে যাবেন না। অবশ্যই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা নন। আর তাই চেষ্টা করবেন বসের সাথে উপদেশের সুরে কথা না বলে বরং নিজের ভাবনাগুলো যুক্তিযুক্তভাবে তার সামনে উপস্থাপন করার। এছাড়া সবসময় পেশাদারিত্ব মনোভাব বজায় রাখার চেষ্টা করবেন ব্যক্তিগত কোন কিছুই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়াবেন না।
৫. বয়সে বড় হওয়ার সুবাদে আলাদা সুবিধা নেবার চেষ্টা করবেন না
আপনি হয়তো আপনার প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এতে করে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র কর্মী, তাই বলে আপনার চেয়ে বয়সে এবং অভিজ্ঞতার ছোট বসের কাছ থেকে আলাদা কোনো সুবিধা পাবার চেষ্টা করবেন না। আপনার কাজ এবং যোগ্যতা দিয়েই নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করুন যে যেকোনো ধরনের সুবিধা পাবার জন্য আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণ যোগ্য। সাধারণত আমাদের মাঝে এক ধরনের মানসিকতা কাজ করে যে দীর্ঘদিন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি আমি কেন এই সুবিধাটি পাবো না বা আমার বস কেন আমাকে এই সুবিধাটি দিচ্ছে না।
মনে রাখবেন আপনি যদি যোগ্য হয়ে থাকেন অবশ্যই আপনার বস আপনাকে আপনার প্রাপ্য সুবিধা টুকু দিবে। আর তাই বয়সে বড় হবার সুবাদে আলাদা করে কোনো সুযোগ সুবিধা পাবার চেষ্টা করবেন না।
৬. আলাদা কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবেন না
বয়সে বড় হবার কারণে প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে কোনো প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করবেন না। এমন হতে পারে প্রতিষ্ঠানের একজন সিনিয়র কর্মী অথবা বয়সে বড় হবার সুবাদে আপনি আলাদা একটি প্রভাব আপনার অন্যান্য কর্মীদের সাথে খাটানোর চেষ্টা করছেন। ব্যাপারটি কখনোই একটি ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে না। কেননা যখন আপনার বস আপনার ব্যাপারে অন্যান্য কর্মীদের কাছ থেকে নেতিবাচক কোনো কথা শুনবে তখন আপনার প্রতি তার ধারণাটি নেতিবাচক দিকে মোড় নিবে।আর তাই চেষ্টা করবেন আপনি নিজে যেমন সেভাবেই প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাবার।
আপনার বস আপনার চেয়ে বয়সে ছোট হলেও আপনি যদি আপনার যোগ্য কাজ ঠিকমতো করতে পারেন তাহলে অবশ্যই আপনার সাথে আপনার বসের সু-সম্পর্ক গড়ে উঠবে।