নাসার মতে- প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের প্রতিভা নষ্ট করে দেয়

মানুষের সৃজনশীলতা কি জন্মগত যোগ্যতা? নাকি একে অর্জন করা সম্ভব? সৃজনশীল মানুষদের কাতারে যাদের নাম দেখি তাদের অনেকেরই একাডেমিক সাফল্য তেমন ছিল না। তাহলে কি সৃজনশীলতার উপর একাডেমিক পড়াশোনার কোনো নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে? নাসার একটি বিশেষ প্রয়োজনে ড. জর্জ ল্যান্ড সৃজনশীলতা যাচাইয়ের একটি পদ্ধতি তৈরি করেন। পরে ড. জর্জ আরও বেশি গবেষণা করে উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পান। পরে এটিকে স্কুল শিক্ষার্থীদের উপর প্রয়োগ করেন।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }

TEDxTucson এ ড. জর্জ ল্যান্ড স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে বিস্ময়কর ফলাফল বলে বোমা ফাটান! নাসা ড. জর্জ ল্যান্ড এবং বেথ জার্মানকে নাসার রকেট বিজ্ঞানীদের জন্য একটি বিশেষ পরীক্ষা (Highly Specialized Test) তৈরি করার আমন্ত্রণ জানায়। যে পরীক্ষার মাধ্যমে সহজে নাসায় কর্মরত বিজ্ঞানীদের সৃজনশীলতার লেভেল সম্পর্কে জানা যাবে।

TEDxTucson এ ড. জর্জ ল্যান্ড স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর এই পদ্ধতিটি প্রয়োগের বিস্ময়কর ফলাফলটি বলেন।  Image source – Youtube.com

পরীক্ষাটি নাসার প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হয়। কিন্তু তবুও বিজ্ঞানীদের মনে কিছু প্রশ্ন থেকেই যায় – সৃজনশীলতার উৎস কী? মানুষ কি এটি জন্মগতভাবেই পায় নাকি এটি শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে বিজ্ঞানীরা একই পরীক্ষা ১৬০০ জন স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপর করেন যাদের বয়স ৪ থেকে ৫ বছর এবং পরীক্ষার ফল তাদের খুবই অবাক করে।

Image source – nurturey.com

সমস্যায় পড়লে তা সমাধানের জন্য আমাদের নতুন, ব্যতিক্রম ও উন্নত আইডিয়া উদ্ভাবনের ক্ষমতা পরিমাপ করা হয় এই পরীক্ষার মাধ্যমে। আপনাদের কী মনে হয়? কতভাগ শিক্ষার্থী এই পরীক্ষায় প্রতিভাবানের দলে থাকে? পুরো ৯৮% !

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }

এখানেই শেষ নয়। বিজ্ঞানীরা এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে, তারা আরো বেশি গবেষণা করার সিদ্ধান্ত নেন। একই বাচ্চাদের উপর উক্ত পরীক্ষাটি পাঁচ বছর পর আবার করেন যখন তাদের বয়স দশ বছর হলো। ফলাফল কী হল জানতে চান? মাত্র ৩০%  শিশু কল্পনাশক্তি ও সমস্যা সমাধানের মাপকাঠিতে প্রতিভাবান এর দলে। ১৫ বছর বয়স হবার পর তাদের আবার পরীক্ষা করে দেখা গেলো এই ফল ১২% এ নেমে এসেছে। এই পরীক্ষায় প্রাপ্তবয়স্কদের কী অবস্থা?

প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ফলাফল কী?  Image source – Business insider

এই পরীক্ষায় প্রাপ্তবয়স্কদের কী অবস্থা? দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষ করার পর প্রাপ্তবয়স্কদের মাত্র ২% জিনিয়াস দলভুক্ত থাকেন। ৯৮% থেকে ৩০% তারপর ১২% এবং এরপর ২%!

গ্যাভিন নাসিমেন্তোর বর্ণনামতে,

“শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি আমাদের সৃজনশীলতাকে দমিয়ে দেয়। এর কারণ অনুমান করা খুব বেশি কঠিন নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের প্রয়োজন মেটানো। কিন্তু তা না হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত সমাজের শাসক শ্রেণীর প্রয়োজন মেটায়। স্পষ্টতই, তথাকথিত এলিট সমাজের বিলাসিতা ও ব্যয়বহুল জীবনযাত্রা বজায় রাখতেই বেশি সাহায্য করে।  যেখানে তারা এই সমাজের জন্য কাজ করে কম কিন্তু কাজের ফলাফল মূলত এরাই ভোগ করে। তারা এটি ভালমতোই বুঝতে পেরেছে – বাচ্চাদের শুরুতেই নির্বোধ করে ফেলতে পারলে তাদের কৃত্রিম ভয় ধরানো সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা সহজ হবে।”

জিনিয়াস বাচ্চাদের অনেকাংশেই দমিয়ে ফেলে এই শিক্ষা পদ্ধতি।  Image source – Medium.com

এখন কথা হচ্ছে আমরা কি নিজেদের সৃজনশীলতা আবার পুনরুদ্ধার করতে পারি? মি. ল্যান্ডের মতে, চাইলে ৯৮% পর্যন্ত আগের অবস্থায় যাওয়া সম্ভব। বাচ্চাদের উপর এই পরীক্ষা করে তারা জানতে পেরেছেন আমাদের মস্তিষ্কে দুই ধরণের চিন্তা-ভাবনা কাজ করে। দুটিই মস্তিষ্কের দুটি ভিন্ন অংশ ব্যবহার করে থাকে এবং আমাদের মনে এই চিন্তাগুলো কীভাবে তৈরি হয় তার উপর ভিত্তি করে এগুলোও সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। একটি হলো ডাইভারজেন্ট – এটি  হচ্ছে কল্পনা, যা নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে।

অন্যটিকে বলে কনভারজেন্ট – কেউ যখন কিছু বিচার-বিবেচনা করে, সিদ্ধান্ত নেয়, কিছু যাচাই করে, কোন বিষয়ের সমালোচনা করে তখন কাজ করে এই কনভারজেন্ট। তার মানে ডাইভারজেন্ট আমাদের কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়, আমাদের মস্তিস্কে এক্সেলেটরের মত কাজ করে এবং কনভারজেন্ট আমাদের কাজগুলোতে বিরতি দেয়, ব্রেকের মতো।

Image source – pbs.org

ল্যান্ডে বলেন, “আমরা যদি শিশুদের আদৌ শিক্ষিত করতে চাই তাহলে, এই দুই চিন্তার ধরণই শেখানো উচিত। না হলে শিক্ষা পরিপূর্ণ হবে না।” যখন কেউ নতুন আইডিয়া বা ধারণা দিতে বলে তখন আপনি নতুন কোন পরিকল্পনা, ধারণা দিতে গিয়ে স্কুলে শেখা বিষয়গুলো ব্যবহার করতে গেলেই  ত্রুটিগুলো বুঝতে পারবেন।

ল্যান্ড বলেন-

“আমাদের অসাধারণ মস্তিস্কের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালে আমরা দেখতে পাবো, মস্তিস্কের নিউরনগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এবং মস্তিষ্কের সত্যিকার শক্তিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। কারণ আমরা প্রতিটি কাজের শুরুতেই সব সময় সমালোচনা, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, অতিরিক্ত বাছাই করতে থাকি। এমনকি কাজ শুরুর আগে থেকেই কাজটি সম্পর্কে মনের মধ্যে সমালোচনাই প্রকট হয়ে যায়। ভয় যদি আমাদের চালিত করে, তাহলে মস্তিষ্কের কাজের পরিধি অনেক কমে যায়। উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনাই আমাদের মস্তিষ্কের সঠিক কর্মক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়।”

তাহলে এর সমাধান কি? আমরা সেই ৫ বছর বয়সের জীবনে ফিরে যেতে চাই। সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু চাইলে সেই সময়ের মতো সৃজনশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

“আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখতে দেখতে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে হবে।” – ড. জর্জ ল্যান্ড

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *