মানবীয় যেসব সৎ গুণাবলী আছে সে সবগুলোর মধ্যে ইমপ্যাথি বা সহানুভূতি অন্যতম। অন্যকারো দুঃখ কষ্ট নিজের মধ্যে অনুভব করে তার প্রতি যতোটা সম্ভব সমবেদনা প্রকাশ করাই হচ্ছে ইমপ্যাথি। শুধু মনস্তাত্ত্বিক জগতেই ইমপ্যাথি কার্যকর ভূমিকা পালন করে না, বরং ব্যবসা বাণিজ্যের ন্যায় বস্তুগত জগতেও ইমপ্যাথি তুলনামূলকভাবে বেশ সুবিধা বয়ে নিয়ে আসে। যে সব উদ্যোক্তারা সফলতার মুখ দেখেছেন, তাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের প্রায় প্রত্যেকেরই একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো ইমপ্যাথি প্রদর্শন।
কাস্টমার ও কর্মচারীদের আকৃষ্ট করার অন্যতম একটি হাতিয়ার হলো ইমপ্যাথি বা সহানুভূতি প্রকাশ করতে পারা। আপনি যদি আপনার ব্যবসা পরিচালনায় সহানুভূতি প্রকাশ করার গুণটি চর্চা করতে পারেন, তবে আপনার ব্যবসা ক্রমাগতভাবে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকবে, যা অনেকটা হলপ করেই বলা যায়। আর আপনার আচরণে যদি কোনো ইমপ্যাথির বহিঃপ্রকাশ না ঘটে, তবে দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার কর্মীদের ও কাস্টমারদের সাথে আপনার ক্রমশ দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। যা একটি পর্যায়ে গিয়ে আপনার ব্যবসার পতন অনিবার্য করে তুলতে পারে। এ আর্টিকেলটি থেকে আমরা জানবো যে ৭ টি মূল কারণে ইমপ্যাথি ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১. বিক্রয় বৃদ্ধি
কাস্টমাররা কেমন ধরনের প্রোডাক্ট পছন্দ করে তা বুঝতে হলে পণ্য উৎপাদনকারীকে কাস্টমারের জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারা শিখতে হবে। উদ্যোক্তা কিংবা ব্যবসায়ীর যদি ইমপ্যাথি প্রকাশ করার অভ্যাস না থাকে, তবে সে কখনো নিজেকে কাস্টমারের জায়গায় নিজেকে ভাবতে পারবে না। ফলে কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্যও উৎপাদন করতে সক্ষম হবে না।
এতে ক্রমাগতভাবে ক্রেতার সংখ্যা কমতে থাকবে। অপরপক্ষে যে সব পণ্য উৎপাদনকারীরা ইমপ্যাথি প্রকাশ করতে পারবে, তারা সহজেই নিজেকে কাস্টমারের জায়গায় ভাবতে পারবে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাক্ট উৎপাদন করতে সক্ষম হবে। যা কাস্টমাদেরকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। এতে স্বাভাবিকভাবেই বিক্রয়ের হার অনেকাংশেই বৃদ্ধি পাবে। তাই আপনার পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে সহানুভূতি প্রকাশ করার দক্ষতা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।
২. রেফারাল বৃদ্ধি
যখন কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সেবাকর্মে কাস্টমাররা সন্তুষ্ট হয়, তখন স্বাভাবিকভাবে গ্রাহকরাই আশেপাশের পরিচিতদেরকে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ক্রয়ের বা সেবা গ্রহণের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এমনটা তখনই সম্ভব হয়, যখন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীরা কাস্টমারদের প্রতি অধিক পরিমাণে ইমপ্যাথি প্রকাশ করে থাকে। এভাবে ইমপ্যাথির কল্যাণে কোম্পানির ক্রমাগত প্রসার ঘটতে থাকে।
যা বিজ্ঞাপনের চাইতেও অনেক বেশি কার্যকর মাধ্যমে পরিণত হয়ে উঠতে পারে। ফলে বলা যেতেই পারে যে, ইমপ্যাথি বিজনেসের রেফারাল বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
৩. উৎপাদন ও আবিষ্কারকে ত্বরান্বিতকরণ
যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিকশ্রেণি কর্মীদের প্রতি ইমপ্যাথি চর্চা করে, তখন তা কর্মীদেরকে আরো বেশি কাজ করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে থাকে। এতে প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যায়। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের প্রতি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা বৃদ্ধি পায়। ফলে অধিক উৎপাদন ও নতুন নতুন মডেলের পণ্য আবিষ্কারকে ত্বরান্বিত করে।
কোনো প্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন ও নতুন নতুন মডেলর পণ্য আবিষ্কার বৃদ্ধি পেলে তা প্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যাপক সাফল্য বয়ে নিয়ে আসে। এভাবে ইমপ্যাথি পণ্যের অধিক উৎপাদন ও নতুন আবিষ্কারকের পথকে সরল ও সহজ করে তোলে।
৪. বৃহত্তর প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সুবিধা
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের সেরা অর্থ উপার্জনকারী কোম্পানিগুলো ইমপ্যাথি চর্চায়ও প্রথম সারিতে। কঠিন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে সে সব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোই টিকে থাকতে পারে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজকর্ম ও আচার আচরণে ইমপ্যাথি প্রকাশ পায়। অধিক পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে কাস্টমারদের আকৃষ্টকরণ ও পণ্য কেনাবেচাসহ সকল ক্ষেত্রে ইমপ্যাথি তার গুরুত্ব বহন করে থাকে।
কোনো কোম্পানির অভ্যন্তর ও বাহিরে ইমপ্যাথির চর্চা কমে গেলে সে কোম্পানি মার্কেটে ক্রমাগত গুরুত্ব হারিয়ে ফেলতে থাকে। বর্তমান চরম প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই ইমপ্যাথি চর্চার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেই হবে।
৫. পারস্পারিক সহযোগিতা সম্প্রসারন
কোনো কোম্পানির মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে যদি পরস্পর সহানুভূতি প্রকাশের অভ্যাস তৈরি হয়, তখন তা মালিক শ্রমিকদের মধ্যে পারস্পারিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করে থাকে এবং মালিক কর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে। কোনো কোম্পানির সফলতা অর্জনের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, মালিক ও কর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক বিরাজ করা। এই ঘনিষ্ঠ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সম্প্রসারন করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে ইমপ্যাথি। তাই ব্যবসা ক্ষেত্রে ইমপ্যাথি কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুমান করা যায়।
৬. গ্রাহকসেবা প্রদান
কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক সংখ্যা কতো পরিমাণ হবে, তা নির্ভর করে ঐ প্রতিষ্ঠান গ্রাহক সেবা প্রদর্শনে কতটুকু আন্তরিক তার উপরে।
যদি কোনো কোম্পানি যদি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে না পারে, তবে সে প্রতিষ্ঠান কখনো সফলতার মুখ দেখবে না। এ জন্য কোম্পানির সাফল্য আনতে ভালো মানের গ্রাহক সেবা দেওয়ার বিকল্প নেই। আর উন্নত গ্রাহক সেবা দিতে গেলে ইমপ্যাথি প্রকাশ করার প্রয়োজন হবেই।
৭. বিনিয়োগে আকৃষ্টকরণ
কোনো একজন উদ্যোক্তার পক্ষে অনেকসময়ই নিজস্ব মূলধন দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। তখন বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা পাওয়া আবশ্যকীয় হয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীদেরকে আপনার ব্যবসার প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে, তাদেরকে মুগ্ধ করতে হবে। তাদেরকে ইমপ্রেস করতে হলে আপনার অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে ইমপ্যাথি।
ইমপ্যাথি প্রদর্শনের মাধ্যমে মানুষকে খুব সহজেই ইমপ্রেসড করে ফেলা সম্ভব হয়। ফলে ইমপ্যাথিকে পুঁজি করে আপনি আপনার বিজনেসে বিনিয়োগ করার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হতে পারেন। বিনিয়োগ পেয়ে গেলে, তবে তা আপনার বিজনেসকে তড়িৎ বেগে উন্নয়ন ঘটাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
উপরের তথ্য ও আলোচনা থেকে এ কথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে, আর্টিকেলটিতে উল্লেখিত ৭টি কারণে ইমপ্যাথি ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
Featured Image: Lifehacker.com