পড়াশোনা কিংবা চাকরি থেকে অব্যাহতির কারণে যখন কর্মজীবনে কিছুদিনের জন্য “বেকার” তকমা লাগে তখন ইন্টারভিউ বোর্ডে একটা প্রশ্ন আপনাকে শুনতেই হবে,
“কেন এই বিরতি?”
অনেক কারণেই আপনার জীবনে এমপ্লয়মেন্ট গ্যাপ তৈরি হতে পারে। শিক্ষা কিংবা কর্মজীবনে যদি কোনো গ্যাপ থাকে তবে আপনার ক্যারিয়ার প্রোফাইলে ঐ গ্যাপের রেকর্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি সঠিক ভাবে এই বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করা না যায়, তবে আপনার এবং আপনার ক্যারিয়ারের উপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই ইন্টারভিউ বোর্ডে যুক্তিযুক্ত ভাবে কারণ ব্যাখ্যা করা খুব দরকার। চলুন এই লেখাটি থেকে জেনে নেই কী কী উপায়ে এমপ্লয়মেন্ট গ্যাপ সম্পর্কে উত্তর করা যায় ইন্টারভিউ বোর্ডে।
১. ইতিবাচক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে উত্তর করুন
যখন বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করবেন তখন যেন আপনাকে আত্মবিশ্বাসী মনে হয় এবং আপনার মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই তার প্রকাশ ঘটে। কোনো নিয়োগকর্তা চান না এমন কাউকে নিয়োগ দিতে যার মনোভাব নেতিবাচক অথবা যে নিজের কাজ সম্পর্কে নিশ্চিত নয়।
কাজে কিংবা শিক্ষা জীবনে বিরতি থাকতেই পারে। তাই বলে এটি কি আপনার অযোগ্যটা প্রমান করে? নাকি আপনার প্রোফাইল খারাপ করে দিতে পারে? আপনি কি এটা নিয়ে লজ্জিত? আপনি কি দেশের কোনো ক্ষতি করেছেন?
অবশ্যই না! বিরতি থাকতেই পারে, তাই বলে লজ্জিত হবার কিছু নেই। তাহলে কেন নার্ভাস হবেন? কিংবা ভয় করবেন?
২. স্পষ্টভাবে ও সততার সাথে উত্তর করুন
আপনাকে হয়তো আগের চাকরি থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আর একবার ছাড়িয়ে দেওয়া হলে পরবর্তীতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ খুঁজে নেওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার হয়ে দাড়ায়।
মন্দার কারণে ছোট প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রায়ই লেঅফ হয়ে থাকে। আপনিও এর মধ্যে পরে যেতেই পারেন। এতে আপনার কোনো দোষ নেই। কিন্তু আপনি অবস্থার শিকার সেটি বলার চেয়ে স্পষ্ট করে কারণ ব্যাখ্যা করাই ভালো। যে কোন পরিস্থিতিতে যে আপনি মানিয়ে নিতে পারেন, এটা সেই গুনেরই প্রকাশ।
৩. পড়ালেখা অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ
চাকরি ছাড়ার ক্ষেত্রে পড়ালেখা বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে কাজ করে। কাজের চাপ আপনার পড়ালেখার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যদি কাজের চাপ বেশি থাকে তবে চাকরি ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। আত্মবিশ্বাসের সাথে পড়ালেখাকে আপনার এমপ্লয়মেন্ট গ্যাপের কারণ হিসেবে উল্লেখ করুন।
৪. পারিবারিক কারণ
পারিবারিক কারণেও অনেক সময় কর্মক্ষেত্রে বিরতি নিতে হতে পারে। দীর্ঘ ও জটিল কোনো রোগের কারণে হয়তো আপনি অল্প কিংবা দীর্ঘদিনের জন্য কাজে যোগ দিতে অক্ষম ছিলেন। কোনো ধরণের সংকোচ না করে স্পষ্ট করে জানান।
৫. অনেক কিছুই করেছেন ঐ সময়টাতে নিজেকে নতুন করে প্রস্তুত করার জন্য
কাজ থেকে বিরতি নিয়েছেন মানে এমন নয় যে এর মাঝে আপনি কিছুই করেননি। এই সময়টাতে আপনি অনেক কিছুই করে থাকতে পারেন যা পরবর্তী কাজের ক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। যেমন-
ফ্রিল্যান্সারের কাজ
বাড়িতে বসেই সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত না হয়ে আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে পারেন। সফটওয়্যার ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, কন্টেন্ট রাইটিং যে কোনো কিছুই হতে পারে। তাদের শুধু জানা দরকার আপনি এই সময়টা বাড়িতে অলস ভাবে বসে ছিলেন না বরং নিজেকে প্রস্তুত করেছেন নতুন কাজে যোগ দেওয়ার জন্য।
ডিগ্রি কিংবা সার্টিফিকেট কোর্সে অংশগ্রহণ
আপনি যদি কোনো সার্টিফিকেট কোর্স করে থাকেন তবে সেটা উল্লেখ করুন। সার্টিফিকেট দেখান প্রয়োজন বোধে।
নন প্রোফিট প্রতিষ্ঠানে সামাজিক উন্নয়নে অংশগ্রহণ
এ রকমও হতে পারে এ সময়টা মানসিক উন্নয়নের জন্য আপনি কোনো এনজিওতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন। পরিষ্কার করে এ সম্পর্কে ইন্টারভিউ বোর্ডে বলুন।
অস্থায়ীভাবে চুক্তিভিত্তিক কাজে যোগ দিয়েছেন
এ সময়টা চুক্তির ভিত্তিতে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে পারেন কোনো প্রতিষ্ঠানে। কাজ গুলো সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসের সাথে জানান।
উদ্যোক্তা হবার চেষ্টা করেছেন
এ সময়টাতে আপনি উদ্যোক্তা হয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাও করে থাকতে পারেন। যার কারণে আগের চাকরিটি ছেড়ে দিতে হয়েছে আপনাকে। আপনার ব্যবসা সম্পর্কে গর্বের সাথে জানান।
৬. বাচ্চা দেখাশোনা
মায়েদের জন্য খুব কঠিন নবজাত শিশুকে রেখে কাজে যাওয়া। কয়েক মাসের বিরতি এ ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য করতে পারে আবার আগের কর্মদক্ষতা ফিরে পেতে। কয়েক মাসের বিরতির পর নতুনভাবে আবার কাজে ফিরে যেতে পারেন নতুন উদ্যমে।
৭. ভ্রমণে আবিষ্কারের নেশায় কাটিয়েছেন
আপনি এমন একজন যে বেশিদিন একঘেয়ে জীবনে থাকতে পারেন না। আপনি ভালবাসেন আপনার চারপাশ আবিষ্কার করতে। আগের কাজটি ছেড়ে দিয়ে কিছুদিন বিরতি নিয়েছেন মনটাকে খাবার দেওয়ার জন্য। যদি এমনটাই হয় গুছিয়ে উপস্থাপন করুন ইন্টারভিউ বোর্ডে।
৮. যদি সম্পূর্ণ সময়টা কোনো কাজ না করেই কাটিয়ে থাকেন
এরকম হতে পারে পুরো সময়টা আপনি কিছুই না করে কিংবা চাকরি খুঁজে কাটিয়ে দিয়েছেন। চাকরি খুঁজতে দীর্ঘ সময় চলে যেতে পারে। এরকম হলে আপনাকে যা করতে হবে সেটা হলো ইতিবাচক হোন। সততার সাথে উত্তর করুন। খুব বেশি উৎকণ্ঠা দেখাবেন না চাকরীর ব্যাপারে। জীবনে সুযোগ আসতেই থাকবে।
৯. অস্থায়ীভাবে যে কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করার চেয়ে এই প্রতিষ্ঠানের মতো সুখ্যাতি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে দীর্ঘ দিনের জন্য যুক্ত হতে চেয়েছেন
বলতে পারেন আপনি বেতনের চেয়ে দীর্ঘদিনের সম্পর্কে যাবার ব্যাপারে বেশি আগ্রহী। এইজন্য আগের কাজটির পর আপনাকে অনেক দিনের বিরতি নিতে হয়েছে উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেতে।
১০. কাজ নিয়ে আপনি সন্তুষ্ট ছিলেন না
হয়তো আগের কাজটি আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কিংবা আপনার দক্ষতার সঠিক ব্যবহার করতে পারেনি আগের প্রতিষ্ঠান। যে কারণে আগের কাজে সম্পূর্ণভাবে নিজেকে ঢেলে দিতে পারেননি। এটাও একটা যুক্তিযুক্ত কারণ।
এমপ্লয়মেন্ট গ্যাপ অনেক কারণেই হতে পারে। তাই বলে লজ্জা পেয়ে আড়াল করার প্রয়োজন নেই। বিরতি অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে আপনার ক্যারিয়ারে। কিন্তু আপনার ইতিবাচক মনোভাব এবং আত্মবিশ্বাস যে কোন পরিস্থিতিতে আপনার জন্য ত্রাণকর্তা হিসেবে কাজ করবে।
Feature Image: bcgsearch.com