ইমেইল লেখার সময় যে আদব-কেতাগুলো অবশ্যই মনে রাখবেন

0
সংক্ষেপে এবং প্রাঞ্জল ভাষায় গুছিয়ে আপনার বক্তব্য লিখুন। photo: zagreb.info

ইন্টারনেট ব্যবহার করে যোগাযোগের বিভিন্ন নতুন নতুন মাধ্যম তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ম্যাসেঞ্জার, হোটসআপ, ইমো, ভাইভার, স্নাপচ্যাট ইত্যাদি এমন অসংখ্য সাইট ও অ্যাপসের কথা আমরা জানি। কিন্তু এই নতুন নতুন যত মাধ্যমই আসুক, ইমেইলের জায়গা কেউ দখল করতে পারেনি আর হয়তো পারবেও না।

কেননা ইমেইল কেবলমাত্র একটি যোগাযোগ মাধ্যম না, বরং বলা যায় সকল ধরনের যোগাযোগের ইন্টারনেট মাধ্যম। আর তাই ইমেইলের ব্যবহার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আরও সহজ করে বলা যায়, যাকে ইমো বা ম্যাসেঞ্জার নক করা যায়, তাকে ইমেইলও পাঠানো যায়। কিন্তু ইমেইলে যোগাযোগ করার সুযোগ থাকা সব মানুষকে ইমো বা ম্যাসেঞ্জারে নক করা যায় না, করলে তা কখনো কখনো শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়ে যায়।

যাকে ইমো বা ম্যাসেঞ্জার নক করা যায়, তাকে ইমেইলও পাঠানো যায়। কিন্তু ইমেইলে যোগাযোগ করার সুযোগ থাকা সব মানুষকে ইমো বা ম্যাসেঞ্জারে নক করা যায় না, করলে তা কখনো কখনো শিষ্টাচার বহির্ভূত হয়ে যায়; photo: aspire

তাই যোগাযোগের জন্য বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয় এই মাধ্যম ‘ইমেইল’ ব্যবহারে মেনে চলতে হয় কিছু শিষ্টাচার বা আদবকেতা। আমি ইতিপূর্বে ‘যেভাবে খুব সহজেই নির্ভুল ইমেইল লিখতে পারেন’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছি, যেখানে দেখিয়েছি ইমেইল লেখার নিয়ম কানুন ও ইমেইলের কিছু ফিচারের যথাযথ ব্যবহার। আজ জানাবো ইমেইল লেখার কিছু শিষ্টাচার বা আদবকেতা, যার ভুল প্রয়োগে প্রাপক খুশি হওয়ার বদলে আপনার উপর ক্ষেপে যেতে পারেন।

ফ্রম কলামে আপনার নাম সঠিক বানানে লিখুন। তাছাড়া আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের কোন ইমেল ব্যবহার করেন তবে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম সঠিকভাবে লিখুন; photo: text request

প্রেরক (From)

আপনার কাছে আসা কোনো ইমেইল ওপেন করে সর্বপ্রথম কোন অংশ দেখেন? নিশ্চয় প্রেরক কে! অন্যরাও কী তাই করে? হ্যাঁ, প্রায় সবাই! কোন ইমেইল পাওয়া মাত্র মানুষের অবচেতন মন আগে জানতে চায় কে ইমেইলটা পাঠিয়েছে। সুতরাং ইমেইলের ‘ফ্রম’ অংশটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাই ফ্রম কলামে আপনার নাম সঠিক বানানে লিখুন। তাছাড়া আপনি যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের কোনো ইমেইল ব্যবহার করেন তবে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম সঠিকভাবে লিখুন।

এক্ষেত্রে ফ্রম অংশটা বেশিরভাগ ইমেইল সাইটে আপনা থেকেই সিলেক্ট হয়ে যায়। তাই ইমেইল খোলার সময় কোনো ছদ্ম নাম ব্যবহার না করে নিজের সঠিক নাম লিখুন যা আপনার সকল ডকুমেন্টে ব্যবহার করে থাকেন।

সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০টি শব্দে লেখা যেতে পারে। তবে সাবজেক্ট লাইন অবশ্যই মেইলের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।

বিষয় (Subject)

এরপর ইমেইলের সাবজেক্ট লাইন বা বিষয়বস্তু লেখার পালা। বিষয় সবসময় সহজ ভাষায় সংক্ষিপ্ত ও অল্প কথায় লিখতে হয়। সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০টি শব্দে লেখা যেতে পারে। তবে সাবজেক্ট লাইন অবশ্যই মেইলের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে। মনে রাখতে হবে ইমেইল কোন গল্প, কবিতা বা প্রবন্ধ নয়। সুতরাং কোন কাব্যিক সৃজনশীল নাম দেওয়ার মত করে কোন ক্রমেই সাবজেক্ট লেখা যাবে না। সাবজেক্ট লাইন হবে কিওয়ার্ড টাইপের, যা সরাসরি ইমেইলের বিষয়বস্তুকে ইঙ্গিত করে। প্রাপক এক ঝলক দেখা মাত্রই যেন ইমেইলের বিষয়বস্তু বুঝতে পারেন।

সম্বোধন

সম্বোধন মেইলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেননা আমরা বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে জানি কোন মানুষকে সম্বোধনের মধ্যেই তার প্রতি আপনার শ্রদ্ধা, ভক্তি ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আর এই শ্রদ্ধা, ভক্তি, ভালোবাসার প্রকাশ নির্ধারণ করে দেয় তিনি আপনাকে কতটা পাত্তা দেবেন। ইমেইলের ক্ষেত্রেও তাই। যাকে ইমেইল পাঠাচ্ছেন তার সাথে আপনার পরিচয়, সম্পর্ক, তার পদ আর যে কাজে ইমেইল পাঠাচ্ছেন সেই কাজ বিবেচনা করে সম্বোধন নির্ধারণ করতে হবে। তবে সম্বোধনের পরই ‘হ্যালো, শুভেচ্ছা, সালাম’ সূচক কোন বাক্যও রাখতে হবে। তারপর বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করা যেতে পারে।

সংক্ষেপে এবং প্রাঞ্জল ভাষায় গুছিয়ে আপনার বক্তব্য লিখুন; photo: zagreb.info

পরিসর

ইমেইলের ব্যাপ্তি কতটা দীর্ঘ হবে এটি একটি বড় প্রশ্ন। সহজ কথায় বলা যায়, ইমেইল দেখেই প্রাপক যেন দুশ্চিন্তায় পড়ে না যায়, এত বড় ইমেইল কখন পড়বো! কোন ভাবেই প্রাপকের বিরক্তির কারণ হওয়া যাবে না। আপনার বক্তব্য বিস্তারিতভাবে লিখতে গিয়ে যদি প্রাপকের বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠেন তবে কার্যোদ্ধারের বিপরীতও হতে পারে।

মাথায় রাখা দরকার আপনি কোন দীর্ঘ ইমেইল পেলে কী করেন? নিশ্চয়ই সময় বাঁচাতে হালকাভাবে সম্পূর্ণ ইমেইলে চোখ বুলিয়ে মূল বিষয়বস্তু বা কিওয়ার্ড খোঁজার চেষ্টা করেন। অন্যরাও তাই করে। এতে বিস্তারিত জানানোর বদলে আপনার সম্পূর্ণ বক্তব্য তার কাছে অজানাই থেকে যাবে। সুতরাং যাকে মেইল পাঠাচ্ছেন তার সময়কে সমীহ করুন। আপনার মতো তারও সময়ের মূল্য আছে। তাই সংক্ষেপে এবং প্রাঞ্জল ভাষায় গুছিয়ে আপনার বক্তব্য লিখুন।

সৃজনশীল বক্তব্য

মেইলের আয়তন ছোট করতে হবে, এই পরামর্শ দেখার পর লেখার ব্যাপ্তি ছোট করতে গিয়ে আপনার মূল বক্তব্যই যেন বাদ না পড়ে যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। বাহুল্য বর্জন করে টু দ্য পয়েন্টে বক্তব্য লিখুন। লেখার ক্ষেত্রে সৃজনশীল হোন। তবে কোনভাবেই ইন্টারনেট থেকে কপি করে গতানুগতিক কথামালায় ইমেইলের বক্তব্য লিখবেন না; এটা আরও বেশি বিরক্তিকর। বিচক্ষণ মানুষ মাত্রই এটা বুঝতে পারে। আপনার ইমেইলের বক্তব্য একান্ত আপনার। নিজের ভাষায় লিখুন, তাতেই হবে।

ইমেইলের সব বক্তব্য লেখা শেষে নিচে শুভেচ্ছাসহ নিজের নাম, পরিচয়, ঠিকানা, ইমেইল অ্যাড্রেস ও ফোন নং উল্লেখ করুন। photo: marketing land

পরিচয় ও ঠিকানা

ইমেইলের সব বক্তব্য লেখা শেষ হলে এবার আসে ঠিকানা পরিচয় লেখার পালা। অনেকে ভাবেন ইমেইলের অ্যাড্রেস বারে তো ইমেইল ঠিকানা আছেই, সুতরাং বক্তব্যের শেষে আবার নতুন করে লেখার দরকার কী? এই ভাবনা ঠিক নয়। ইমেইলের সব বক্তব্য লেখা শেষে নিচে শুভেচ্ছাসহ নিজের নাম, পরিচয়, ঠিকানা, ইমেইল অ্যাড্রেস ও ফোন নং উল্লেখ করুন। কেননা এটা নিশ্চিত করা দরকার যে, ইমেইল পড়ার পর রিপ্লাই দেওয়া ছাড়াও প্রাপক যেন যে কোন মাধ্যমে খুব সহজে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *