জীবনে অন্তত একবার কাউকে ইমেইল করেনি, এমন শিক্ষত মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, অন্তত এই নিবন্ধ যারা পড়ছেন তাদের মধ্যে তো বটেই। নতুন চাকরি খুঁজতে, কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ সহ হাজারও কাজে রোজ লক্ষ লক্ষ ইমেইল চালাচালি হয় বিশ্বব্যাপী। কিন্তু আমরা কতজন ইমেল লেখার সঠিক নিয়ম জানি? না, এটি নেহাত আদবকেতার বিষয় নয়। একটি ভুল ফর্মেটের ইমেইল আপনার কোম্পানির গোপনীয়তা ধ্বংস করে দিতে পারে মুহূর্তেই। সাফল্যের বদলে নেমে আসতে পারে বড় ধরণের বিপর্যয়।
চলুন দেখে নিই এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা ইমেইল লেখার আগে অবশ্যই জানা জরুরী।
To (প্রতি)
নতুন কোনো ইমেইল কম্পোস করতে গেলে সবার শুরুতে আসে To শব্দটি। To এর বাংলা অর্থ প্রতি। অর্থাৎ ইমেইল সুনির্দিষ্ট যে ব্যক্তিকে পাঠানো হচ্ছে শুধু মাত্র তার ইমেইল অ্যাড্রেস লিখতে হবে এই বক্সে। এক্ষেত্রে যদি প্রাপক একের অধিক ব্যক্তি হয়, সেক্ষেত্রে তাদের প্রত্যেকের ইমেইল অ্যাড্রেস এখানে লেখা যাবে। তবে ব্যাপারটা যদি এমন হয় যে, ইমেইল পাঠাতে হবে সুনির্দিষ্ট একজনকে এবং এই ইমেইল পাঠানোর খবর আরও পরিচিত কয়েকজনকে জানিয়ে রাখতে হবে, সেক্ষেত্রে To তে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট যে বা যাদের প্রতি ইমেইল পাঠানো হচ্ছে তাদের অ্যাড্রেস লিখতে হবে। আর বাকিদের অ্যাড্রেস লিখতে হবে CC তে।
Carbon Copy (CC)
CC অর্থ হল কার্বন কপি (Carbon Copy)। কাউকে পাঠানো ইমেইলের কপি যদি একই সাথে অন্য কাউকে পাঠাতে হয় সেক্ষেত্রে CC ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ CC তে যাদের ইমমেইল অ্যাড্রেস দেওয়া হবে তারা প্রত্যেকে একই ইমেইল পাবেন এবং অন্য কাকে কাকে CC অর্থাৎ কার্বন কপি দেওয়া হয়েছে সেটাও দেখতে পাবেন। এই ইমেইলে থাকা প্রত্যেক ব্যক্তির অ্যাড্রেস প্রত্যেক ব্যাক্তি দেখতে পাবেন। সুতরাং শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে CC ব্যবহার করা নিরাপদ, যেখানে পরস্পর পরস্পরের ইমেইল অ্যাড্রেস জানলে কোন সমস্যা নেই।
Blind Carbon Copy (BCC)
BCC অর্থ হলো ব্লাইন্ড কার্বন কপি (Blind Carbon Copy)। BCC তে দেওয়া ইমেইল অ্যাড্রেসের প্রত্যেকে একই ইমেইল পাবেন কিন্তু তার সাথে আর যাকে কার্বন কপি পাঠানো হয়েছে তা দেখতে পাবেন না। একটি উদাহরণ দিয়ে স্পষ্ট করি:
ধরুন, আপনার ২০০ জন কর্পোরেট ক্লায়েন্ট আছে। আপনি সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাতে চান। কিন্তু এই কর্পোরেট ক্লায়েন্টদের মধ্যে পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যবসায়ী আছে, যারা প্রত্যেকে আবার আলাদা ভাবে আপনার বড় ক্লায়েন্ট। এমনকি হতে পারে আপনার এই ২০০ জন ক্লায়েন্টের মধ্যে কেউ কেউ মনে মনে সরাসরি আপনারই প্রতিদ্বন্দ্বী! ব্যবসায়িক কারণে আপনি সবার সাথে সুসম্পর্ক রাখতে চান, আবার কার কার সাথে আপনার যোগাযোগ আছে তা কাউকে জানাতে চান না। এক্ষেত্রে শুভেচ্ছা ইমেইল BCC তে পাঠাতে হবে। প্রত্যেকেই শুভেচ্ছা পাবেন, কিন্তু তার সাথে আর কে কে পেয়েছেন তা দেখতে পাবেন না।
Subject (বিষয়)
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ৩৩ শতাংশ ইমেইল লেখা হয় Subject উল্লেখ ছাড়া। Subject এর বাংলা অর্থ বিষয় অর্থাৎ ইমেইলের বিষয়বস্তু কি তা এই বক্সে লিখতে হয়। অনেকের কাছে মনে হতে পারে Subject লেখা এতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু জানলে অবাক হবেন, অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে পাঠানো আপনার কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল শুধু Subject না লেখার কারণে খুলেই দেখা হয় না। কোনো ইমেইল পাওয়া মাত্র প্রাপকের অবচেতন মন মুহূতেই ইমেইলের বিষয়বস্তু জানতে চায়। তখন যদি সে কোনো সাবজেক্ট না পায় তাহলে অবচেতনভাবেই কিছুটা বিরক্ত হয়ে ওঠে।
মনে রাখা দরকার, ইমেইল কোন গল্প-কবিতা নয় যে কেবল সম্পূর্ণ পড়ার পরই তার মর্ম উদ্ধার করা যাবে। সুতরাং Subject অবশ্যই লিখতে হবে। সর্বোচ্চ ৭-৮টি শব্দের মধ্যে যথাযথ এবং আকর্ষণীয় Subject লাইন লিখুন যেন প্রাপক পাওয়া মাত্র আপনার ইমেইলের গুরুত্ব বুঝতে পারে।
Reply and Reply All (প্রত্যুত্তর)
এতক্ষণ আলোচনা করলাম ইমেইল পাঠানোর সময় লক্ষণীয় কিছু বিষয় নিয়ে। এবার বলবো ইমেইল পাওয়ার পর করতে হয় এমন কিছু বিষয় সম্পর্কে। Reply আর Reply All এর তফাত আমরা অনেকে বুঝি না।
ধরুন, একটি ইমেইল থ্রেডে অসংখ্য ইমেইল আদান প্রদান হয়েছে। কেউ আপনাকে সহ আরও ১০ জনকে CC করে একই ইমেইল পাঠিয়েছে। ইমেইল পাওয়ার পর আপনি শুধু প্রদানকারীকে উত্তর দিবেন। এক্ষেত্রে শুধু Reply ব্যবহার করতে হবে। যদি Reply All ব্যবহার করা হয়, তাহলে এই ইমেইলে যুক্ত থাকা সবাই Reply পাবে, যার হয়তো কোন প্রয়োজন নেই। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় Reply পেয়ে অনেকে বিরক্ত হতে পারেন। সুতরাং, Reply দেওয়ার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন।
Forward (ফরওয়ার্ড)
ইমেইল ফরওয়ার্ড করতে গিয়ে আমরা সবেচেয়ে বেশি ভুলি করি। সর্বশেষ কোন ইমেইল ফরওয়ার্ড করতে গিয়ে Forward ক্লিক করার পর এই ইমেইল থ্রেডে থাকা সব বক্তব্য ফরওয়ার্ড বডিতে চলে আসে। তখন সম্পাদনা করে শুধু প্রয়োজনীয়টুকু রেখে বাকিটা বাদ দিতে হয়। শুধুমাত্র ফরওয়ার্ড করলে হয় না। ফরওয়ার্ড বডিতে নতুন করে কেন ফরওয়ার্ড করা হচ্ছে তা লেখা উচিত। নতুন লেখা বডির ঠিক উপরের বাক্যে প্রয়োজন হলে Subject লিখে দিলে প্রাপকের পক্ষে ইমেইলটি মূল্যায়ন করা আরও সহজ হয়।
ইমেইল লেখা নিয়ে অসংখ্য আদবকেতা আছে। আমরা না জেনেই ভুলে ভরা ইমেইল পাঠিয়ে বসে থাকি আর অপেক্ষা করি উত্তরের। কিন্তু উত্তর আর আসে না। সুতরাং আগে শেখা জরুরী। ইমেইল লেখার এই সহজ সাধারণ বিষয়গুলো নতুন অনেকের জন্য উপকারী হবে বলে আমার বিশ্বাস।