বিশ্বের বিখ্যাত ৩টি স্পেশাল ফোর্স

জনপ্রিয় অ্যাকশন সিনেমা আর বিখ্যাত থ্রিলার অ্যাকশনধর্মী বইগুলো একটি বিষয় খুব বেশি দেখা যায়। সেটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতিতে স্পেশাল ফোর্সের ডিপ্লয়মেন্ট। সিনেমা আর মুভির বদৌলতে আমরা সোয়াট, স্টাইক ফোর্স হিসাবে বিভিন্ন স্পেশাল ফোর্স যেমন নেভি সিল, এসএসএস বা ডেল্টা ফোর্সের সাথে পরিচিত হয়েছি। তাদের মনোমুগ্ধকর অ্যাকশন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার অস্বাভাবিক দক্ষতা সেসব সিনেমা আর উপন্যাসে আমরা দেখতে পাই। হয়তো সেসব দেখে আমাদের মনে ধারণাই জন্মে যায় আমেরিকান নেভি সিল আর ব্রিটিশ এসএএস বিশ্বের সেরা স্পেশাল ফোর্স।

{ "slotId": "2452885053", "unitType": "in-article" }
Source: Ghost Recon

প্রায় প্রতিটি দেশের মিলিটারি ফোর্সের রয়েছে এলিট স্পেশাল ফোর্স। তারা বিভিন্ন নামে পরিচিত ঘটলেও কোন দেশের স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা অন্যদের থেকে কমে যায় না। শুধু মিডিয়ার সকল স্পেশাল ফোর্স নিয়ে মাতামাতি নেই তার আমাদের জানা হয় না। এছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে এইসব এলিট সোলজার নিয়ে গড়ে ওঠা সকল স্পেশাল ফোর্সের উদ্যেশ্য এক নয়।

তবে সাধারণত শত্রুপক্ষের সৈন্যদের সাবোটাজ এবং আক্রমণ করা, কাউন্টার টেরোরিজম, হোস্টেজ রেসকিউ আর বিভিন্ন এসল্ট মিশনে এইসব স্পেশাল ফোর্স নিযুক্ত থাকে। আর এরকম তিনটি স্পেশাল ফোর্স নিয়ে এই আর্টিকেলটি। তবে মনে রাখতে হবে বিশ্বে শুধু এরাই সেরা স্পেশাল ফোর্স নয়। এদের সমকক্ষ এরকম আরো পনেরটি স্পেশাল এলিট ফোর্সের নাম উল্লেখ করা যাবে। তাই অন্যদের দূর্বল আর কম দক্ষ ভাবাটা অর্থহীন এবং চরম বোকামি।

ন্যাশনাল জেন্ডারমেরি ইন্টারভেনশন গ্রুপ (জিআইজিএন)

বিশ্বের হাতগোনা কয়েকটি স্পেশাল ফোর্স ফ্রান্সের এই এলিট ফোর্সের সাথে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। সবথেকে এক্সট্রা অর্ডিনারি এলিট ফোর্স বলা হয়ে থাকে জিআইজিএনকে। এই ফোর্সে চারশো’র মতো যোদ্ধা রয়েছে যারা বিশেষত হোস্টেজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ট্রেইন। ফ্রান্সের এই স্পেশাল ফোর্সের প্রথম কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭২ সনের মিউনিখ অলিম্পিক্সে। সেখানের কারগারের কয়েদিদের সাথে গার্ডদের বড়সর লড়াই হয়েছিলো। মিউনিখের সেই বিদ্রোহী বেশ অনেকজন ল এনফোর্সমেন্ট অফিসারকে হোস্টেজ হিসাবে কয়েদিরা নেয়, পরবর্তীতে খুন করে।

{ "slotId": "", "unitType": "in-article", "pubId": "pub-6767816662210766" }
Source: Reddit

এই ঘটনার পরে, ভবিষ্যতের এ ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয় ন্যাশনাল জেন্ডারমেরি ইন্টারভেনশন গ্রুপ। পরবর্তী বছরে জিআইজিএনকে অফিসিয়ালি এলিট ফোর্সের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। জিবুতির স্কুলের ত্রিশজন শিক্ষার্থী উদ্ধার,বসনিয়ার যুদ্ধাপরাধী গ্রেফতার, সোমালিয়ার জলদস্যুদের সাথে লড়াই সহ আরো অনেকে মিশনে সফলতা অর্জন করে সেরাদের মধ্যে জিআইজিএন নাম লিখিয়ে নিয়েছে। এছাড়া মার্সাইলের ১৯৯৪ সনের ঘটা এয়ার ফ্রান্সের ৮৯৮৯ ফ্লাইটে টেরোরিস্ট এট্যাক থেকে যাত্রীদের উদ্ধার কাজও এই এলিট ফোর্স সফলতার সাথে শেষ করেছিলো।

স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি)

পাকিস্তানের এই স্পেশাল ফোর্স ব্লাক স্টর্ক হিসাবেও পরিচিত। এর মূল কারণ হচ্ছে এসএসজির কমান্ডোদের স্পেশাল হেডগিয়ার। যেটা বিশ্বের যেকোনো হেডগিয়ার হতে ভিন্ন। এসএসজি মূলত পাকিস্তান আর্মির একটি স্পেশাল অপারেশন ফোর্স। পাকিস্তানের এই স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপকে আমেরিকান আর্মির স্পেশাল ফোর্স এবং ব্রিটিশ স্পেশাল এয়ার সার্ভিসের সাথে তুলনা করা যায়। সম্পূর্ণ গিয়ারে অর্থাৎ পুরোপুরি আর্মড অবস্থায় ১২ ঘন্টায় ৩৬ মাইল এবং ৫০ মিনিটের ৫ মাইল অতিক্রম করার ট্রেনিং প্রাপ্ত এই এলিট ফোর্স।

Source: Black storks Pakistan

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান আর্মি এর সৃষ্টি করে। এই স্পেশাল ফোর্সের সদস্য সংখ্যা হাইলি ক্লাসিফাইড। এয়ারবর্ন ট্রেনিং, হ্যান্ড টু হ্যান্ড ফাইট এবং মরুভুমি, পাহাড়, জঙ্গল, সমুদ্রসহ বিভিন্ন পরিবেশে যুদ্ধ করার জন্য এদের নয় মাস ট্রেইন করা হয়েছে। তাদের ট্রেনিং এতটাই ভয়াবহ সে সেরাদের বেছে নেওয়ার পরও প্রতি চার জনের মধ্যে মাত্র একজন ট্রেনিং শেষ করতে পারে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় আমেরিকান স্পেশাল ফোর্সের পাশাপাশি এসএসজি যুদ্ধ করেছে। এছাড়া ১৯৮০ সনের সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানে মুজাহিদদের সাথে মিলিত ভাবে এসএসজি যুদ্ধ করেছিলো।

ভারতে এসএসজির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলো যে এরা কাশ্মীরে ভারতীয় বর্ডার গার্ডদের উপর একাধিক আক্রমণ চালিয়েছে। যদিও এর কোন প্রমান এখনো তারা দেখাতে পারেনি। বর্তমানে এই স্পেশাল ফোর্স নিজ দেশের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে ২০০৯ সালের লাহোরের পুলিশ একাডেমিতে সন্ত্রাসীর আক্রমণ বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া। এছাড়া একই বছরে পাকিস্তানি মিলিটারির সদর দপ্তরের সন্ত্রাসীদের আক্রমণের পর হোস্টেজ উদ্ধার সফলতার সাথে এএসজি সম্পাদন করেছিলো।

আলফা গ্রুপ

Source : Russia Beyond

বিশ্বের সেরাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অন্যতম এই রাশিয়ান স্পেশাল ফোর্স। তবে বিখ্যাত না বলে কুখ্যাত এদের সাথে ভালো মানায়। আলফা গ্রুপের শুরুটা হয়েছিলো মূলত সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের কেজিবির হাত ধরে। এই ফোর্স মূলত কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিলো সে ব্যাপারে রাশিয়া কখনো মুখ খোলেনি। তবে পুলিশের কাজ থেকে কোভার্ট অপারেশনসহ বিভিন্ন যুদ্ধের অসংখ্য মিশনে এদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তেমন কয়েকটি মিশনের মধ্যে একটি হচ্ছে কাবুলের রাস্ট্রপতি ভবনে আক্রমণ এবং ভবনের প্রতিটি মানুষকে হত্যা করা। এছাড়া ১৯৮৬ সালের আরেকটি ঘটনায় তাদের কার্যক্রম ছিলো চোখে পড়ার মতো।

৮৬ সনে বৈরুতে ৪ জন সোভিয়েত ডিপ্লোম্যাটকে অপহরণ করা হয়। তারা মস্কোর কাছে দাবি করে লেবাননের সিরিয়ান যোদ্ধাদের সাহায্য করতে। স্বাভাবিকভাবেই মস্কো তাদের দাবিতে না বলে দেয়। ফলে সন্ত্রাসীরা তাদের হুমকি জোরদার করতে একজন ডিপ্লোম্যাটকে হত্যা করে। এরপর সাথে সাথে এই ঘটনার নিয়ন্ত্রণের জন্য আলফা গ্রুপকে নামানো হয়। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন যে, সেই গ্রুপ সরাসরি আক্রমণ করে সকল সন্ত্রাসীকে হত্যা করে তারা ডিপ্লোম্যাটদের উদ্ধার করেছিলো? না তেমন ঘটেনি। কারণ অপহরণকারীদের অবস্থান ছিলো অজানা।

Source : eng.mil.ru

আলফা গ্রুপ টেরোরিস্ট গ্রুপের প্রতিটি সদস্যের পরিবারকে খুঁজে বের করে এবং তাদের তুলে নিয়ে যায়। এরপর অপহরণকারীদের নেতার পরিবারের একজন সদস্যকে টুকরো টুকরো করে কাটে। আর অপহরণকারীদের হুমকি দেয় যদি ডিপ্লোম্যাটদের না ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের পরিবারের প্রতিটি সদস্যের ভাগ্যে একই ঘটনা ঘটবে। তার কিছুক্ষণ পরই অপহরণকারীরা সোভিয়েত অ্যাম্বাসির সামনে তিনজন ডিপ্লোম্যাটদের ছেড়ে যায় এবং এই ঘটনার পর কখনোই রাশিয়ান অফিসিয়াল কোনো সদস্য অপহরণের ঘটনা ঘটেনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *