ধনী হওয়ার কোনো জাদুকরী ফর্মুলা নেই। ধনী হতে হলে বিদ্যমান রোজগারের মধ্য থেকেই হতে হবে। তবে আপনি যদি রোজগারের তুলনায় কম খরচ করতে পারেন, তবে স্বাভাবিকভাবেই আপনি সঞ্চয় করতে সক্ষম হবেন। আর এই সঞ্চয় করা অর্থ যদি কোনো খাতে বিনিয়োগ করেন, তবে ধীরে ধীরে আপনি একদিন ধনী হতে পারবেন।
তবে তার জন্য সবার আগে আয়-ব্যয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করতে হবে। আপনি একই সাথে সঞ্চয় লক্ষ্য অর্জন করতে চান, আবার সুখী সুন্দর জীবন যাপন করতে চান। স্বল্প আয়ে এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটানো কখনো কখনো দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
তাই বলে কি স্বল্পআয়ের সংসারে কাঙ্খিত সঞ্চয় নিশ্চিত করার কোনো উপায় নেই? নিশ্চয়ই আছে। আজকের নিবন্ধে এমন দুটি বাজেট পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব, যা অনুসরণ করলে স্বল্প আয়ের সংসারেও কাঙ্ক্ষিত সঞ্চয় নিশ্চিত করা সম্ভব।
নতুন ধরনের বাজেট
সব মানুষেরই আয়-ব্যয়ের বাজেট থাকে। কারোটা লিখিত, কারোটা অলিখিত। তাছাড়া ভালো অর্থ ব্যবস্থার জন্য বিভিন্ন ধরনের বাজেট পদ্ধতি প্রচলিত আছে, এবং সব পদ্ধতির পক্ষে, বিপক্ষে নানান রকম যুক্তি আছে। তাই নিজের আয় এবং আয়ের উৎস বিবেচনা করে আপনাকেই একটি স্মার্ট বাজেট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত যে বাজেট পদ্ধতি আপনি এতদিন অনুসরণ করছেন তা যদি যথেষ্ট সঞ্চয় বান্ধব না হয়, তবে এখনই তা পরিবর্তন করুন, এবং নতুন একটি স্মার্ট বাজেট পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
আমরা দুটি ভিন্ন ভিন্ন বাজেট পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব যা, স্বল্প পুঁজির মানুষের জন্য খুবই প্রযোজ্য। সুতরাং এই ভিন্ন ভিন্ন দুটি বাজেট পদ্ধতি থেকে আপনার পছন্দের বাজেট পদ্ধতি অনুসরণ করে কাঙ্ক্ষিত সঞ্চয় নিশ্চিত করতে পারেন।
১. শূন্য সারাংশ বাজেট
শুরুতেই যে বাজেট পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করতে চাই, তার নাম শূন্য সারাংশ বা শূণ্য সারসংক্ষেপ বাজেট। এই বাজেট পদ্ধতি সঞ্চয়ের জন্য খুবই কার্যকর। কেননা যথাযথভাবে অনুসরণ করলে এই পদ্ধতি আপনাকে রোজগারের সকল অর্থ নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করতে বা খরচ করতে বাধ্য করে। এই বাজেট পদ্ধতি ফলপ্রসূ হওয়ার আরো একটি কারণ আপনার রোজগার করা অর্থে ভিন্ন ভিন্ন বাজেট তৈরি করতে সহযোগিতা করে। এই বাজেটের মোদ্দা কথা হলো, আপনি যত টাকা রোজগার করবেন তা সম্পূর্ণভাবে ভিন্ন ভিন্ন খাত বা বাজেটে খরচ করতে হবে।
সুতরাং আপনি যদি মাস শেষে আড্ডা অথবা বিনোদনের জন্য কিছু অর্থ খরচ করতে চান, তবে তার জন্য বিবিধ বা আড্ডা খরচ নামে আলাদা খাত তৈরি করে মাসের শুরুতেই টাকার অংক নির্দিষ্ট করতে হবে। যখনই আপনি বিবিধ খরচের জন্য নির্দিষ্ট অর্থ আলাদা করে বাকি টাকা অন্যান্য খাতে খরচ করে ফেলবেন, তখন চাইলেও মাসের খরচ বাড়াতে পারবেন না। একইভাবে আপনার অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করা অর্থ নষ্ট হবে না।
২. আনুপাতিক বাজেট
এবার যে বাজেট পদ্ধতি সম্বন্ধে বলতে চলেছি তার নাম আনুপাতিক বাজেট। এই বাজেট পদ্ধতিকে অনেকে ৫০-৩০-২০ বাজেটও বলে থাকে। এই বাজেট পদ্ধতিতে আপনার আয় করা অর্থ আনুপাতিক হারে খরচ করতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনার আয়ের ৫০ শতাংশ অর্থ জরুরী কাজে ব্যয় করতে হবে, অর্থাৎ যে সব খরচ কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয় সেই সব খাতে ব্যয় করতে হবে। এরপর ৩০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় খরচে, এবং অবশিষ্ট ২০ শতাংশ অর্থ সঞ্চয় করতে হবে।
এই পদ্ধতি আপনাকে বাড়তি খরচ থেকে নিষ্কৃতি দিবে, অর্থাৎ হাতে টাকা থাকার কারণে আমরা যেসব অপ্রয়োজনীয় খরচ করি তা পুরোপুরি বন্ধ হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে নিশ্চিত ভাবেই আপনি আয়ের ২০ শতাংশ অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম হবেন।
জীবনধারা পরিবর্তন
স্মার্ট বাজেট পদ্ধতি অনুসরণ করার পরও আপনি যদি অর্থ সঞ্চয় করতে ব্যর্থ হন, তবে বুঝতে হবে আপনার বাজেট যথাযথ হয়নি, অথবা গৌণ প্রয়োজনীয়তা মেটাতে বাজেটে বেশি বরাদ্দ রেখেছে। যেমন আপনি যদি আয়ের সাথে সামঞ্জস্য না রেখে আড্ডা এবং বিনোদনের জন্য অধিক অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা করে থাকেন, তবে নিশ্চিত ভাবেই আপনি অর্থ সঞ্চয় করতে ব্যর্থ হবেন।
অনেক সময় আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ এত বেশি হয় যে কোনো বাজেট পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব হয় না! এমন অবস্থার সৃষ্টি হলে বুঝতে হবে, আপনার জীবনের বাজেট ঠিক নেই! অর্থাৎ হয় আপনি নিজের সাধ্যের চেয়ে বেশি বিলাসী জীবন যাপন করছেন, অথবা আপনি অধিক অর্থ রোজগারে অলসতা করছেন।
যেমন উপরে উল্লেখিত আনুপাতিক বাজেট পদ্ধতিতে যদি আপনার আয় করা অর্থের ৫০ শতাংশে প্রয়োজনীয় সকল খরচ মেটানো সম্ভব না হয়, তবে বুঝতে হবে অবশ্যই আপনার জীবন ধারা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কিন্তু যদি কোনো ভাবেই এই জীবনধারা পরিবর্তন করে খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই আপনাকে রোজগার বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আপনি অধিক বেতনের নতুন চাকরি অনুসন্ধান করতে পারেন, অথবা দ্বিতীয় কোনো ব্যবসার সূত্রপাত করতে পারেন।
মনে রাখবেন, জীবন একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধে কোনো প্রতিপক্ষ নেই। সব সময় যুদ্ধ করতে হয় নিজের সাথে। আর যথাযথ বাজেট হচ্ছে জীবন যুদ্ধের আদর্শ হাতিয়ার। সুতরাং নিজের আয়-ব্যয়ের সমতা বিধান করতে যথাযথ বাজেট তৈরি করুন। যদি বাজেট তৈরি করতে ব্যর্থ হন, তবে জীবনধারা পরিবর্তন করুন, এবং যে কোনো মূল্যে আয় করা অর্থের একটি নির্দিষ্ট অংশ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করুন। তাহলেই আপনার জীবন সুখ এবং স্বাচ্ছন্দে ভরে উঠবে।