ইউটিউব যেমন ভিডিওর জন্য বিশাল প্ল্যাটফর্ম, তেমনি এখানে কনটেন্ট আইডিয়ারও অভাব নেই। অসংখ্য ব্যবহারকারী প্রতিদিন নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করছে, এবং সাফল্য বয়ে আনছে।
কিন্তু কিছু বিশেষ কনটেন্ট আইডিয়া আছে যেগুলো বিশ্বব্যাপী তুমুল জনপ্রিয়। আমি ইতিপূর্বে দুইটি নিবন্ধে ইউটিউবে সাফল্যের কৌশল এবং কনটেন্ট আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করেছি। আজকের নিবন্ধে জানাবো আরো কিছু অভিনব ইউটিউব কনটেন্ট আইডিয়া।
সুতরাং আপনি যদি ইউটিউবার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে এই নিবন্ধে উল্লেখিত আইডিয়াগুলো থেকে পছন্দমত কোনো একটি বিষয় বেছে নিতে পারেন।
১. বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই
বিভিন্ন পণ্যের বাজার সম্ভাব্যতা বিষয়ক ভিডিও ইউটিউবে তুমুল জনপ্রিয়। আপনি যদি বাজার গবেষণা করতে জানেন, তবে শীঘ্রই আপনি ইউটিউব প্লাটফর্মে নিজের শক্ত জায়গা তৈরি করে নিতে পারবেন।
বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য আপনাকে পছন্দের কোনো কোম্পানির সাথে শুরুতে চুক্তিবদ্ধ হতে হবে। তারপর তাদের পণ্য নিয়ে সাধারন মানুষের মতামত জানতে হবে। এই পণ্যটির ভাল দিক, মন্দ দিক, সাধারণ মানুষ এ পণ্য ব্যবহার করে খুশি কিনা, অথবা এই পণ্যের মান উন্নয়নে সাধারণ মানুষের কোনো মতামত আছে কিনা, এইসব তথ্য আপনি ইউটিউবে তুলে ধরবেন।
তাছাড়া পণ্যটি যদি আপনার নিজের হয় তাহলে তো কথাই নেই! একই সাথে পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, এবং ইউটিউবিং হবে। আপনি পণ্য বিক্রি করে যেমন অর্থ রোজগার করতে পারবেন, তেমনি একই সাথে ইউটিউব থেকেও রোজগার করতে সক্ষম হবেন।
২. তথ্যচিত্র নির্মাণ
এখন থেকে মাত্র কয়েক বছর পূর্বে স্বাধীন তথ্যচিত্র নির্মাতারা তাদের নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজে পেতেন না। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে যদি কোনো টেলিভিশনকে রাজি করাতে পারেন তবেই তাদের তথ্যচিত্র জনসম্মুখে আসতো। অথবা কোনো এনজিওর মাধ্যমে মানুষের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এখন ক্ষেত্রটা অনেক বিস্তৃত হয়েছে। ইন্টারনেটের কল্যাণে সবকিছু অনেক সহজ হয়ে গেছে।
আপনি চাইলে ইউটিউবের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যচিত্র তৈরি করতে পারেন। ইউটিউবের জন্য নির্মিত তথ্যচিত্র আর কোনো সম্পাদকের টেবিলে আটকে থাকবে না। এখানে স্বাধীন মত নিজের সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখে কাজ করার সুযোগ আছে। আপনি যত ভালো কাজ করতে পারবেন, আপনার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশি হবে।
যেকোনো বিষয় নিয়ে তথ্যবহুল তথ্যচিত্র ইউটিউবে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বব্যাপী একটা বিশেষ শ্রেণীর দর্শক আপনি পাবেন, যাদের চোখে আপনি একজন গবেষক হিসেবে আবির্ভূত হবেন। সুতরাং তথ্যচিত্র নির্মাণ করলে আপনি মনিটাইজেশন থেকে শুধু আয় করবেন না, সাথে সাথে একজন সম্মানিত মানুষ হয়ে উঠবেন।
৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং
যারা অনলাইনের অলিগলিতে রোজগারের আশায় ঘুরাঘুরি করেন তারা এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্বন্ধে নিশ্চয়ই জানেন। এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের একটা বিশাল জগৎ আছে ইন্টারনেটে। এফিলিয়েট মার্কেটিং অর্থ কমিশনের বিনিময়ে পণ্য বিক্রি করা। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার কোম্পানি তাদের পণ্য বিক্রির জন্য এফিলিয়েট মার্কেটারদের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এমনকি অ্যামাজন, ইবে অথবা আলিবাবার মত কোম্পানি এফিলিয়েট মার্কেটারদের উপর ভরসা করেন। সুতরাং আপনি চাইলে কোনো বড় কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে ইউটিউব ব্যবহার করে এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে রোজগার করতে পারেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য সুনির্দিষ্ট পণ্য নিয়ে আপনি ভিডিও তৈরি করুন। সেই পণ্যটির রিভিউ দিন। পণ্যটি সম্বন্ধে বিস্তারিত পর্যালোচনা করুন। পণ্যটি কিভাবে ব্যবহার করা যায়, কী কী সুবিধা অসুবিধা আছে, কেমন মূল্য, কোথায় পাওয়া যাবে ইত্যাদি সব তথ্য আপনি টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে প্রকাশ করুন।
সাথে অবশ্যই কোম্পানির কাছ থেকে পাওয়া এফিলিয়েট লিঙ্ক ভিডিও সাথে যুক্ত করতে ভুলবেন না। ইউটিউবের মাধ্যমে আপনার সরবরাহ করা লিংক ব্যবহার করে অনলাইন থেকে যতবার পণ্যটি বিক্রি হবে ততবার আপনি মূল কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন পাবেন। সুতরাং আপনার যদি এফিলেট মার্কেটিংয়র ইচ্ছে থাকে, তবে আজই ইউটিউবে যুক্ত হোন এবং নিজের কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার গড়ে তুলুন।
৪. স্পন্সরশিপ
ইউটিউব থেকে আয় করার সবচেয়ে স্মার্ট আইডিয়া গুলোর একটি হলো বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সরশীপ গ্রহণ করা। কোম্পানিগুলো তাদের প্রতিষ্ঠান এবং পণ্যের প্রচারের জন্য বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলকে সরাসরি স্পন্সর করে থাকে।
আপনিও চাইলে বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সরশীপ গ্রহণ করে ভিডিও তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভিডিও মনিটাইজ করে রোজগার তো হবেই, উপরন্তু স্পন্সরশিপ থেকে পাওয়া সম্পূর্ণ অর্থ আপনার বাড়তি রোজগার হিসেবে গণ্য হবে।
তবে স্পন্সরশীপ পাওয়ার জন্য ভিডিও তৈরীর সময় আপনাকে কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে। যেমন কোম্পানিগুলো আপনাকে স্পন্সর করবে তাদের পণ্যের প্রচারের জন্য এবং অবশ্যই কোম্পানি চাইবে আপনার ইউটিউব প্রচারের মাধ্যমে যেন তাদের পণ্যে ইতিবাচক সাড়া পড়ে। সুতরাং আপনি যদি কোনো বিতর্কিত বিষয়ে ভিডিও তৈরি করেন তবে নিশ্চয়ই তার জন্য কোনো কোম্পানির স্পন্সরশিপ পাবেন না। অর্থাৎ স্ন্সপরশীপ পেতে হলে আপনার চ্যানেলকে সম্পূর্ণ ইতিবাচক কনটেন্ট দিয়ে সাজাতে হবে।
ইউটিউবের পক্ষ থেকে স্পন্সরশীপের অনুমতি পেতে হলে আপনার চ্যানেলে অবশ্যই ন্যূনতম ৭ হাজার সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। ইউটিউবের পক্ষ থেকে স্পন্সরশীপের অনুমতি পেলে আপনি স্পন্সরশীপের জন্য সম্ভাব্য বিভিন্ন কোম্পানির সাথে সরাসরি অথবা ইমেইলে যোগাযোগ করতে পারেন। ব্যক্তিগত চুক্তির মাধ্যমে, অথবা অনলাইন মাধ্যমে যে কোনো কোম্পানি আপনার চ্যানেলকে স্পন্সর করতে পারে।
ইউটিউবের লক্ষ লক্ষ কনটেন্ট আইডিয়া থেকে জনপ্রিয় কয়েকটি আইডিয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আমার বিশ্বাস আপনাদের ইউটিউব যাত্রায় এই কনটেন্ট আইডিয়াগুলো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তবে কনটেন্ট আইডিয়া যত অভিনব হোক না কেন, ইউটিউবে সাফল্য পেতে আপনাকে ধৈর্য ধারণ করতেই হবে। সুতরাং যেকোন অভিনব কনটেন্ট আইডিয়া নিয়ে নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলে ধৈর্য ধরে ক্রমাগত ভিডিও আপলোড করে যান, সাফল্য আসবেই।