পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় অর্থ উপার্জন এখন অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। চাকরির বাজার চড়া, ব্যবসায় প্রয়োজন অনেক বেশি দক্ষতা। এমন অবস্থায় হঠাৎ কারো অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়তে হয়। জিনিসপত্র বন্ধক রেখে অথবা ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে প্রয়োজন মেটাতে হয়। স্বভাবতই যা মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন আরো বেশি কঠিন করে তোলে।
কিন্তু জিনিসপত্র বন্ধক রাখা বা কারো কাছ থেকে ঋণ নেওয়া ছাড়াও হঠাৎ করে বিশেষ অর্থ উপার্জনের অনেক পথ খোলা আছে। শুধু উপায়গুলো আমাদের জানতে হবে। আপনার বাড়িতে ব্যবহৃত এমন অনেক জিনিস আছে যা যেকোনো মুহূর্তে বেচে দেওয়া যায়। কেননা এই জিনিসগুলো শুধু বাড়ির শোভাবর্ধন ছাড়া বিশেষ কোনো কাজে আসে না। আবার এমন কিছু আইডিয়া আছে যা প্রয়োগ করে বাড়িতে বসেও অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করা যায়। আমি ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি নিবন্ধ এমন কিছু কাজ বা বিষয় সম্বন্ধে আলোচনা করব যা বিক্রি করে আপনি খুব সহজেই অতিরিক্ত অর্থ রোজগার করতে পারবেন।
১. পুরনো জিনিসপত্র
পুরনো যে সব জিনিসপত্র আপনি ব্যবহার করছেন না তা বিক্রি করে দিয়ে কেন কিছু অতিরিক্ত অর্থ উপার্জন করবেন না? বাড়িতে ব্যবহৃত অনেক পুরনো জিনিসপত্র এবং পোশাক থাকে যা বর্তমান সময়ে কোনো কাজে আসে না। অযথাই এইসব জিনিসপত্র বাড়ির বিভিন্ন ষ্টোরেজ দখল করে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়ির দরকারি অনেক ষ্টোরেজ দখল করা, আর কদাচিৎ সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়া এইসব পুরনো জিনিসের বিশেষ কোনো মূল্য নেই। আবার একই সাথে এসব পুরনো জিনিসপত্র পারিবারিক কোনো বিশেষ ঐতিহ্য বহন করে না। কেননা নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস পারিবারিক ঐতিহ্যের অংশ হয় না।
কাজেই এমন ষ্টোরেজ দখল করা পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলে যেমন বাড়িতে পর্যাপ্ত জায়গা তৈরি হয়, একই সাথে কিছু রোজগারও হয়। সুতরাং আপনার বাড়িতে পুরনো জিনিসপত্র এবং কাপড় থাকলে তা আজই বিক্রি করে দিন। এর মাধ্যমে বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করুন এবং কিছু বাড়তি অর্থ উপার্জন করুন।
২. কার ও বিলবোর্ড বিজ্ঞাপন
আপনার কি ব্যক্তিগত গাড়ি আছে? আপনি নিশ্চয়ই নিজের প্রয়োজনে এই গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন? এই গাড়ি থেকে বাড়তি কোনো উপার্জন আপনার হয় না।
কিন্তু আপনি চাইলে আপনার গাড়িটি একটি বিজ্ঞাপন বিলবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনাকে কোনো কোম্পানির কথামত গাড়ি চালাতে হবে না। শুধু কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপনে গাড়িটি মোড়ক করতে হবে। আপনার গাড়ি বিজ্ঞাপনে মোড়ক করালে আপনি নির্দিষ্ট হারে উক্ত কোম্পানীর কাছ থেকে বিজ্ঞাপন বিল পাবেন, যা নিঃসন্দেহে আপনার বাড়তি অর্থ উপার্জনের উপায় হতে পারে।
এছাড়া আপনার বাড়ির ছাদে একটি বিরাট বিলবোর্ড বসাতে পারেন। অবশ্য এর জন্য আপনার বাড়ির অবস্থান বিজ্ঞাপন উপযুক্ত হতে হবে। যদি আপনার বাড়ির ছাদে স্থাপিত বিলবোর্ডটি পর্যাপ্ত মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় তবে নিঃসন্দেহে আপনি এই বিলবোর্ডের জন্য কাঙ্ক্ষিত কোম্পানি পেয়ে যাবেন, যারা তাদের প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন করতে আপনার বাড়ির বিলবোর্ডটি ব্যবহার করবে।
এ থেকে আপনি নির্দিষ্ট হারে মাসিক সম্মানী পাবেন। এই বিলবোর্ড বসানোর কারণে আপনার বাড়ির কোনো ক্ষতি হবে না, কিন্তু বাড়তি টাকা রোজগারের সংস্থান হবে। সুতরাং আপনার বাড়ি যদি বিজ্ঞাপনের জন্য কোম্পানিগুলোকে আকৃষ্ট করার মত লোকেশনে হয় তবে আজই বাড়ির ছাদে একটি বিলবোর্ড বসান আর বাড়তি অর্থ রোজগার করুন।
৩. অতিরিক্ত ঘর ভাড়া দেওয়া
আপনার যদি কয়েক তলা বিশিষ্ট বিশাল বড় একটা বাড়ি থেকে আর সবগুলো ফ্ল্যাট আলাদা আলাদা থাকে তবে সেসব ফ্লাট ভাড়া দিয়ে নিশ্চয়ই আপনি অনেক টাকা রোজগার করেন! এ ব্যাপারে বিশেষ কোনো পরামর্শের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি এমন হয় আপনার একটি মাত্র ফ্ল্যাট। তাহলে কি এই ফ্ল্যাটের মধ্যেই দ্বিতীয় কোনো ভাড়াটিয়া আনা সম্ভব? নিজের পরিবারের লোকের নিরাপত্তা এবং সুন্দর পরিবেশের স্বার্থে সাধারণত নিজের বসবাস করা ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া ওঠানো বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
কিন্তু যদি আপনার ফ্ল্যাটে অতিরিক্ত ঘর থাকে যা ভাড়া দেওয়ার উপযুক্ত, তবে আপনি চেষ্টা করে দেখতে পারেন। বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ভাড়াটিয়া পেলে আপনার অতিরিক্ত ঘরটি তার কাছে ভাড়া দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ রোজগার করতে পারবেন। এতে একই সাথে দুটি কাজ হবে। সাধারণত ঢাকা শহরে ছোট পরিবারের জন্য এক রুমের ফ্লাট পাওয়া দুঃসাধ্য। তাই আপনার এই উদ্যোগ ভাড়া নেওয়া পরিবারের জন্য যেমন কল্যাণকর, তেমনি আপনার জন্য বাড়তি রোজগারের উপায়।
তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ভাড়াটিয়ার বিস্তারিত তথ্য; জাতীয় পরিচয় পত্র, কর্মস্থলের ঠিকানা, কর্ম পরিচয় পত্র, স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি বিষয়ে খোঁজখবর নিন এবং তা সংরক্ষন করুন।
৪. সঙ্গ দেওয়া
আপনি কি জানেন, অন্যকে সঙ্গ দিয়ে অর্থ রোজগার করা যায়? উন্নত বিশ্বে এখন এটি সর্বজনবিদিত একটি পেশা। আপনি যদি শিশুদের পছন্দ করেন, তাহলে কর্মজীবী ব্যস্ত বাবা-মায়ের সন্তানকে সময় দিয়ে অর্থ রোজগার করতে পারেন। একইভাবে আপনি বয়স্ক মানুষের সাথে গল্প করে অর্থ রোজগার করতে পারেন। কেননা উন্নত বিশ্বে মানুষ এত ব্যস্ত যে বয়স্ক মানুষের অবসর কাটানোর জন্য তার পাশে আপনজনরা থাকার সুযোগ পান না।
আপনি আপনজনের মতো তার পাশে থেকে তাকে সহযোগিতা করে, তাকে সঙ্গ দিয়ে অর্থ রোজগার করতে পারেন। যদিও বাংলাদেশে এই সম্পর্কিত সেবা এখনো প্রসার লাভ করেনি। তবে কিছু কিছু ডে-কেয়ার সেন্টার ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে অন্যকে সঙ্গ দেওয়া পেশা হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ তৈরি হবে। আপনি চাইলে এভাবেও অর্থ রোজগার করতে পারেন।