পিএইচডি গবেষণায় অন্যতম মূখ্য উপাদান হলো সুপারভাইজার। কারণ পিএইচডি গবেষণা করতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোনো না কোনো সুপারভাইজার বা উপদেষ্টার শরণাপন্ন হতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলেই একা একা আপনার পিএইচডি গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন না।
পিএইচডি গবেষণা ফলপ্রসূ হওয়ার ক্ষেত্রে একজন সুপারভাইজার কান্ডারীর ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণা করতে গিয়ে এমন অনেক জটিল বিষয় হাজির হয় যা আপনার কাছে কোনোভাবেই বোধগম্য নয়। আপনি এসব জটিলতাগুলোর সহজ সমাধান একজন দক্ষ ও যোগ্য সুপারভাইজারের কাছে থেকে খুব সহজেই পেয়ে যেতে পারেন। আবার সুপারভাইজার নির্বাচনে ভুল হলে পিএইচডি গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যাওয়া আপনার কাছে সহজ না হয়ে, বরং জটিল থেকে জটিলতর হয়ে উঠতে পারে। তাই সব দিক বিবেচনা করে পিএইচডি গবেষণার সুপারভাইজার নির্বাচন করতে হবে। কীভাবে আপনি সুপারভাইজার নির্বাচন করবেন, তা বুঝতে এ আর্টিকেলটি পড়ুন। আপনার পিএইসডি গবেষণার উপদেষ্টা খোঁজার ও চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ১০টি বিষয়ের প্রতি বিশেষ নজর রাখুন।
১. আপনার গবেষণার বিষয় নির্বাচন করুন
সর্বপ্রথম আপনাকে ঠিক করতে হবে কোন বিষয়ে আপনি গবেষণা করতে চান। গবেষণার টপিক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আপনাকে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। ঠিকমতো গবেষণার টপিক নির্ধারণ করতে না পারলে আপনার পিএইচডি গবেষণা করা সম্ভব হয়ে উঠবে না। গবেষণা টপিককে ভিত্তি করেই আপনাকে সুপারভাইজার খোঁজ করতে হবে। আপনার গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই নির্ধারণ করবে কেমন ধরনের সুপারভাইজার আপনার প্রয়োজন।
মনে করুন আপনি কোনো অঞ্চলের সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করতে চান। এজন্য আপনাকে নৃবিজ্ঞান বা সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অভিজ্ঞ প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। যদি গবেষণার বিষয়ই নির্ধারণ না হয়, তবে তো সুপারভাইজারদের সাথে কথা বলারই সুযোগ পাবেন না।
২. কেমন ধরনের সুপারভাইজার প্রত্যাশা করেন সে সম্পর্কে নিজেকে প্রশ্ন করুন
আপনার পিএইচডি গবেষণার উপদেষ্টা কেমন হলে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন বলে প্রত্যাশা করেন, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। আপনি যদি মনে করেন উপদেষ্টার থেকে যৎসামান্য সময় ও সাহায্য পেলেই গবেষণা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন। তাহলে আপনার গবেষণাক্ষেত্রে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করুন। এসব উপদেষ্টারা আপনাকে তেমন সময় দিতে পারবে না, কিন্তু আপনার চিন্তার পরিসর বৃদ্ধি করতে উদ্বুদ্ধ করবে। আপনি যদি মনে করেন, আপনার এমন সুপারভাইজার দরকার, যে আপনাকে বেশি বেশি সময় দেবে এবং আপনাকে হাতে কলমে শিখিয়ে দিতে হবে। তাহলে ব্যস্ত সুপারভাইজারদের খোঁজ না করে এমন উপদেষ্টা অনুসন্ধান করুন যাদের কর্মব্যস্ততা কম। আপনার চাহিদা বিবেচনা করে সুপারভাইজার অনুসন্ধান শুরু করে দিন।
৩. বিভিন্ন পিএইচডি সুপারভাইজারদের গবেষণাকর্ম সম্পর্কে জানুন
আপনাকে গবেষণা উপদেষ্টাদের জীবনবৃত্তান্ত ও গবেষণাকর্ম সম্পর্কে অবশ্যই ভালোভাবে জানতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটসহ বেশ কিছু ওয়েবসাইটে নামীদামী সব প্রফেসরদের গবেষণা ও প্রকাশনার তথ্য আছে।
আপনি অনলাইনের মাধ্যমে সহজেই বিভিন্ন প্রফেসরদের সম্পর্কে জানতে পারবেন। সুপারভাইজার হিসেবে নির্বাচন করতে হলে সুপারভাইজাররের গবেষণাকর্ম ও যোগ্যতা সম্পর্কে জানার বিকল্প কল্পনা করা যায় না।
৪. সম্ভাব্য সুপারভাইজারদের সাথে যোগাযোগ করুন
বিভিন্ন প্রফেসর ও উপদেষ্টাদের সম্পর্কে জেনে যাদের কে মনে হবে আপনার গবেষণা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ ও দক্ষ তাদেরকে আপনার সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়ার আগ্রহ জানিয়ে যোগাযোগ শুরু করে দিন। পছন্দমতো সুপারভাইজারের অধীনে পিএইচডি করা সবার পক্ষে সম্ভব হয় উঠে না।
কারণ কোনো সুপারভাইজারকে ঠিকমতো কনভিন্স করতে না পারলে সে কোনোভাবেই আপনার পিএইচডির উপদেষ্টা হতে রাজি হবে না। তাই আপনার যেসব প্রফেসরদের পছন্দ হয়েছে তাদের সাথে দ্রুত ও যথাযথভাবে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করুন।
৫. অন্যান্য পিএইচডি স্টুডেন্টদের সাথে পরামর্শ করুন
আপনি ব্যক্তিগত চিন্তা ও চেতনার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিমে পড়তে পারেন। অনেক সময় সিদ্ধান্তহীনতা থেকে হতাশার জন্ম দিতে পারে। এমতাবস্থায় আপনার উচিত হবে বিভিন্ন পিএইসডি স্টুডেন্টদের সাথে কথা বলা। এতে তাদের অভিজ্ঞতা ও পরামর্শগুলো জানতে পারবেন। যা সঠিক সুপারভাইজার নির্বাচনে আপনাকে দারুণভাবে সাহায্য করতে পারে।
৬. সম্ভাব্য সুপারভাইজারদের পরস্পরের বিভিন্ন যোগ্যতা ও বৈশিষ্ট্যগুলো মূল্যায়ন করুন
যেসব ব্যক্তিদের আপনি সুপারভাইজার হিসেবে পেতে মনস্থির করেছেন। তাদের পরস্পরের গবেষণাক্ষেত্র, প্রকাশনা, যোগ্যতা ও দক্ষতা ইত্যাদি বিষয়ে তুলনামূলক পর্যালোচনা করুন। এতে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে আপনার সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে।
৭. সম্ভাব্য সুপারভাইজারদের তালিকা সংক্ষিপ্ত করুন
বিভিন্ন মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করার মাধ্যমে সম্ভাব্য সুপারভাইজারের তালিকায় অল্প কয়েকজনকে রাখুন। কারণ সম্ভাব্য সুপারভাইজারের তালিকায় অনেকেই থাকলে একজন উপদেষ্টা নির্বাচন নিয়ে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বেন। তাই সম্ভাব্য সুপারভাইজারদের তালিকাকে সংক্ষেপ রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করুন।
৮. সম্ভাব্য সুপারভাইজারকে আপনার প্রত্যাশা সম্পর্কে অবহিত করুন
আপনি কোন বিষয়ে কীভাবে গবেষণা করতে চান। আপনার গবেষণার লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও যৌক্তিকতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে সুপারভাইজারকে অবহিত করুন।
গবেষণার উপদেষ্টার সামনে আপনি যদি আপনার পিএইসডি গবেষণার বিষয়কে যথাযথভাবে তুলে ধরতে না পারেন। তবে কোনোভাবেই সে আপনার পিএইচডি গবেষণার সুপারভাইজার হতে আগ্রহ দেখাবে না।
৯. সুপারভাইজারের সাথে ঘনিষ্ঠতা নির্মাণ করুন
গবেষণাক্ষেত্রে সুপারভাইজার ও স্টুডেন্টের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক বিদ্যমান থাকা জরুরী। আপনার ও আপনার সুপারভাইজারের মধ্যে যদি ভালো সম্পর্ক ও বোঝাপড়া সৃষ্টি না হয় তবে আপনার গবেষণাকর্ম চালিয়ে নিয়ে যাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়বে এবং আশানুরুপ ফলাফলও পাবেন না। তাই ইমেইলে বা সরাসরি গিয়ে সুপারভাইজাররের সাথে যোগাযোগ করার ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
১০. একাধিক বিকল্প সুপারভাইজার রাখুন
একজন স্টুডেন্ট ইচ্ছা করলেই নিজের পছন্দমত কাউকে সুপারভাইজার হিসেবে নির্বাচন করতে পারে না। সুপারভাইজার যদি সম্মতি দেয় তবেই কারো পক্ষে তার অধীনে গবেষণা করার সুযোগ মেলে, আর তিনি অনাগ্রহী হলে স্টুডেন্টর তাকে সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়ার উপায় থাকে না। তাই কোন সুপারভাইজার আপনার পিএইসডি গবেষণার উপদেষ্টা হওয়ার অনিচ্ছা পোষণ করলে, তাকে সুপারভাইজার হিসাবে পাওয়ার আপনার আর কোনো উপায় থাকবে না।
তাই চুড়ান্তভাবে সুপারভাইজার নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত বিকল্প একাধিক সুপারভাইজার পছন্দের তালিকায় রাখুন। এতে আপনি ঝুঁকিমুক্তও থাকবেন।
এ ১০টি বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে আপনি যদি পিএইচডি গবেষণার সুপারভাইজার খোঁজ করতে শুরু করেন। তবে আপনি অবশ্যই আপনার পছন্দমত, যোগ্য, দক্ষ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আপনার পিএইচডি গবেষণার সুপারভাইজার হিসেবে পেয়ে যাবেন।
Featured Image:Cc.gatech.edu