আপনাকে বিপদে ফেলে, দুঃখ দিয়ে যে আনন্দ পায় সে নিশ্চয়ই আপনার শত্রু, এবং এমন শত্রুকে চিহ্নিত করার পর স্বাভাবিকভাবে আপনি তাকে ঘৃণা করেন। কিন্তু প্রশ্ন হল শত্রু কেন জন্ম নেয়? নিশ্চয়ই আপনার সাথে কোনো মতবিরোধ বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে। এই মতবিরোধ বা স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকে শত্রু এমন কিছু কাজ করে যা আপনার মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভুল বা খারাপ বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
শত্রুর সাথে আপনার যুদ্ধ যুদ্ধ বিরোধী আমলে না নিয়ে তার আচরণের অন্তরালে থাকা সত্যটি অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করার পর আপনি নিশ্চয়ই হেসে দিবেন। কেননা তখন তাকে আর শত্রু বলে মনে হবে না। মনে হবে সে আপনার পরম বন্ধু। সকল শত্রুতা ভুলে তাকে প্রশংসা করতে মন চাইবে। এই নিবন্ধ আমি এমন কিছু বিষয় আলোচনা করব যা জানার পর আপনি শত্রুকে ভালোবাসতে শুরু করবেন।
১. রাগ নিয়ন্ত্রণের বাস্তবসম্মত শিক্ষা
আসলে আপনার শত্রু আপনার রাগ নির্ণয় এবং নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম বন্ধু। কেননা আপনার শত্রু তার আচরণ দিয়ে আপনাকে রাগান্বিত করে। এখান থেকেই আপনি রাগ প্রশমনের শিক্ষা নিতে পারেন। আপনার শত্রু আপনাকে রাগাতে আপনার সম্বন্ধে বিস্তারিত খোঁজ রাখে এবং সে সুকৌশলে আপনাকে রাগিয়ে তোলে।
এ অবস্থায় আপনি খুব সহজেই পরিমাপ করতে পারবেন কোন বিষয়ে এবং কেন আপনি সবচেয়ে বেশি রাগান্বিত হন। আপনার রাগের কারণ নিশ্চিত ভাবে জানার পর আপনি খুব সহজেই তা প্রশমনের চেষ্টা করতে পারবেন। পক্ষান্তরে আপনার বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন বা পরিবারের কেউ যাদের সাথে আপনার ভালোবাসার সম্পর্ক, তারা কেউ আপনাকে এতটা রাগাতে পারবে না। আর তাই আপনজনের মাধ্যমে নিজের রাগের পরিমাণ নির্ধারণ ও প্রশমন করা সম্ভব নয়।
শত্রু আপনার রাগ প্রশমনের জন্য একজন থেরাপিস্টের মতো কাজ করে। এমন একজন মানুষ সত্যিই আপনার জীবনে প্রয়োজন, কিন্তু সচেতনভাবে তার সঙ্গ আপনি চান না। শত্রুতার কারণে আপনি তাকে ঘৃণা করতে পারেন, কিন্তু মনে রাখবেন ঘৃণা করা এই মানুষটিই আপনার রাগ প্রশমনের পথ দেখিয়ে দেয়।
২. সুস্থ প্রতিযোগিতার সুযোগ
আপনি হয়তো জানেন না আপনার শত্রু প্রতিহিংসার মধ্য দিয়ে আপনাকে প্রতিযোগিতা প্রবণ করে তোলে। সে আপনার সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আপনার প্রতিযোগিতা প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। যে কারণে আপনি শত্রুর উপর জিদ করে বিজয়ী হওয়ার জন্য প্রাণপণে কাজ করে যান।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন অনুপ্রেরণার অপর নাম জিদ। যখনই আপনি কোনো বিষয়ে জিদ করবেন বা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠবেন তখন সে বিষয়ে আপনার মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুপ্রেরণা কাজ করবে। এ অবস্থায় আপনি অনেক দুঃসাধ্য কাজও সহজেই করে ফেলতে পারেন। কেননা আপনার মন থেকে তখন সকল প্রকার ভয় বা শঙ্কা দূর হয়ে যায়।
তাছাড়া এর মাধ্যমে আপনি আরো অনুধাবন করতে পারবেন রাগান্বিত হয়ে প্রতিযোগিতা প্রবন হলে আপনার মধ্যে কী কী নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পায়। এর মাধ্যমে নিজের নৈতিক অবস্থান আরও বেশি সুসংহত করতে সক্ষম হবেন। সুতরাং এক্ষেত্রেও শত্রু আপনার মধ্যে কর্মস্পৃহা এবং প্রেরণা বাড়িয়ে দিয়ে আপনার উপকারই করে। কাজেই আবারও প্রমাণ হলো শত্রু সবসময় ক্ষতিই করে না, সমানভাবে উপকারও করে।
৩. ইতিবাচক হতে সাহায্য করে
নেতিবাচক আচরণের মধ্য দিয়ে শত্রু আপনাকে আরো বেশি ইতিবাচক হতে সহায়তা করে। শত্রু তার স্বভাবসুলভ আচরণ দিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আপনার জীবনের নেতিবাচক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসে। যেখান থেকে আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারবেন আরো বেশি ইতিবাচক হতে কোন বিষয়ের উপর আপনার বেশি মনোযোগ দিতে হবে, আর কোন বিষয়গুলো জীবন থেকে বাদ দিতে হবে।
অনেক সময় আমরা জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কী তা উপলব্ধি করতে ভুল করি। শত্রুতার বশবর্তী হয়ে জীবনের ফোকাস হারিয়ে ফেলি। কখনো কখনো শত্রু তা আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরে। শত্রুতা করতে গিয়ে তারা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা জীবনের কক্ষপথ থেকে কতটা সরে গেছি। যা আবার আমাদের জীবনের আসল ছন্দ ফিরে পেতে সাহায্য করে।
সুতরাং শত্রুর শত্রুতাই বিচলিত হবেন না। বরং আপনাকে ঘিরে তার সব কথা এবং কাজ পর্যবেক্ষণ করুন এবং তার নিরিক্ষে নিজের ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য আরো বাড়িয়ে তুলুন।
৪. ভালবাসতে শেখায়
ক্রমাগত শত্রুতা এমনকি আপনার মধ্যে ভালবাসার জন্ম দিতে পারে। শত্রুর আচরণ আপনাদের পরস্পরের মধ্যকার সম্পর্ক ইতিবাচক করতে উৎসাহিত করতে পারে। কেননা ভালোবাসা এবং ঘৃণা আসলে মুদ্রার এপিট ওপিট। ভালোবাসা এবং ঘৃণা এই দুই বিপরীত আবেগ একই সাথে মানুষের মধ্যে কাজ করে।
তবে মনে রাখতে হবে, জীবনে শত্রু থাকবেই। এর সমান্তরালে আপনি অনেক মানুষ পাবেন যারা আপনাকে ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষদের আপনি প্রশংসা করেন আর শত্রুদের ঘৃণা করেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অন্তত একবার এর বিপরীত আচরণ করে দেখুন। শত্রুকে একবার প্রশংসা করে দেখুন কী ফলাফল হয়!
অনেক সময় শত্রু আপনার প্রশংসার প্রতীক্ষায় থাকে। কেননা শত্রুতাও একসময় ক্লান্তিতে রূপ নেয়। তখন সুযোগ পেলেই শত্রু বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই সব সময় শত্রুর আচরণের প্রতিক্রিয়া শত্রুতা দিয়ে নয়, কখনো কখনো বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেখানো উচিত। তাতে শত্রু বন্ধু হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে।
শত্রুতা যত বেশিই হোক তা চিরকাল স্থায়ী হয় না। তাই শত্রুর তাৎক্ষণিক আচরণ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজের চারিত্র সংশোধন করুন আর অপেক্ষা করুন কোনো শুভক্ষণের। শুভক্ষণ চলে এলে শত্রু আপনা থেকে বন্ধু হয়ে যাবে।