পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে, যারা অন্যের অধীনে কাজ করতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। কিন্তু অধিকাংশ চাকরির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতে হয়। তাহলে যারা অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতে পছন্দ করে না, তাদের জন্য কী তাহলে কাজ নেই? অবশ্যই এসব ব্যক্তিদের জন্য সফল ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। আপনিও যদি এমন একটি নমনীয় কর্মজীবনের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে আপনি নিজের স্বাধীন মতো কাজ করতে পারবেন।
Source: reed.co.uk
আপনার কাজের জন্য অন্যের কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে না। তাহলে আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে, বিভিন্ন ধরনের স্ব-নিযুক্ত কিংবা স্বনির্ভরমূলক চাকরিগুলো। আত্মনির্ভরশীলমূলক সেরা ৫টি চাকরি সম্পর্কে জানতে, এই আর্টিকেলটি পড়ুন। আমি এই আর্টিকেলটিতে এমন পাঁচটি চাকরি সম্পর্কে আলোচনা করবো, যেগুলোতে অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতে হয় না। বরং নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করা যায়।
১. ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক
কীভাবে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়াম চর্চা করলে, একজন মানুষ তার স্বাস্থ্য উন্নতি ও রক্ষা করতে পারে কিংবা ফিটনেস ধরে রাখতে পারবে। একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক সাধারণত সে সম্পর্কে মানুষদের দিকনির্দেশনা ও সাহায্য করে থাকে। ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকেরা মূলত ক্লায়েন্টের বাসায়, ব্যায়ামাগার কিংবা এই ধরনের কোনো স্থানে কাজ করে থাকে। আপনি যদি ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তবে আপনাকে অবশ্যই একটি সম্মানজনক ডিগ্রি অর্জন করতে হবে; যা শিক্ষানবিশ প্রোগ্রাম কিংবা স্বাধীন কোর্সের মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে।
Source: due.com
এছাড়াও এইড সার্টিফিকেট অর্জন করা জরুরী। অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে ভালোবাসেন এমন ব্যক্তিদের জন্য, এই পেশাটি অত্যন্ত আনন্দময় ও ফলপ্রসূ হতে পারে। ব্যক্তিগত প্রশিক্ষকদের আয় সাধারণত তাদের অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। একজন ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক প্রতি ঘন্টায় প্রায় ২০ পাউন্ড থেকে ৪০ পাউন্ড পর্যন্ত আয় করতে সক্ষম হয়, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা।
২. ফ্রিল্যান্সার
বর্তমান সময়ে ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং একটি জনপ্রিয় পেশা। যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করে, তারা অনেকেই এই ফ্রিল্যান্সিং জগতে ক্যারিয়ার গড়ার প্রতি মনোনিবেশ করেছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ রয়েছে। যেমন: ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি, ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট, কনটেন্ট রাইটিং, ব্লগিং ইত্যাদি।
Source: socialmediaweek.org
এই ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তি তার নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, বিভিন্ন পেশা থেকে নিজের পছন্দমতো পেশাটিকে সহজেই বেছে নিতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য অফিসে যাওয়ারও প্রয়োজন হয় না; ঘরে বসেই এই কাজগুলো খুব সহজে করা যায়। এতে ব্যক্তি স্বাধীনতার আরো বেশি চর্চা করা সম্ভব হয়। ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, অবশ্যই যেকোনো একটি কাজের উপরে ভালো দক্ষতা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন জরুরী বিষয় নয়; কাজে দক্ষ হলেই আপনি আপনার ক্যারিয়ারকে সাফল্যমন্ডিতভাবে গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
Source: trustradius.com
ফ্রিল্যান্সারদের আয় মূলত কাজের ধরন, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও যোগ্যতার উপরে নির্ভর করে। তবে সাধারণত একজন ফ্রিল্যান্সার বছরে গড়ে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড আয় করতে সক্ষম হয়, যা বাংলাদেশের মুদ্রা হিসেবে প্রায় ৩১ লাখ টাকা। যারা অফিসে গিয়ে কাজ করতে মোটেও পছন্দ করে না, তাদের জন্য ক্যারিয়ার গড়ার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হতে পারে ফ্রিল্যান্সিং।
৩. অভ্যন্তরীণ নকশাকার
বাসা, ঘর, অফিস কিংবা অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের সাজসজ্জা, লুকিং বা চেহারার নকশা ও পরিকল্পনা কীরূপ হবে, মূলত তা তত্ত্বাবধান করে থাকে অভ্যন্তরীণ নকশাকারেরা। এছাড়াও বাজেট প্রণয়ন, ধারণা উদ্ভাবন, ব্যবসায়িক গবেষণা এবং প্রকল্প শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ তত্ত্বাবধান করার মতো কাজগুলোও করে থাকে। সৃজনশীলতা, ব্যবসায়িক দক্ষতা, বিচার-বিবেচনা করার সক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা ইত্যাদি গুণাবলি একজন অভ্যন্তরীণ ডিজাইনারের মধ্যে থাকা আবশ্যক।
Source: techdonut.co.uk
আপনার যদি এসব যোগ্যতা ও দক্ষতাগুলো থাকে, তবে অভ্যন্তরীণ ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। এই পেশাকে ক্যারিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে, মোটামুটি ভালো অংকের অর্থ আয় করতে সক্ষম হবেন।
৪. কেশবিন্যাসকারী
একজন কেশবিন্যাসকারী সাধারণত তার গ্রাহকদের চুল কাটা, পরিস্কার ও স্টাইলের কাজ করে থাকে। নিজস্ব একটি দোকান ভাড়া করে কিংবা ক্রয় করে, সেখানে সেলুন স্থাপন করে, খুব সহজেই কেশবিন্যাসকারী হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করা যায়। কেশবিন্যাসকারী হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে, শিক্ষাগত যোগ্যতার তেমন প্রয়োজন হয় না। তবে বিভিন্ন ধরনের শৈলী ও সৃজনশীলতা প্রদর্শনের গুণাবলি থাকা জরুরী। আর চুল কাটা ও ডিজাইন করার বিষয়ে তো পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতেই হবে। পূর্ণকালীন, খন্ডকালীন কিংবা শিক্ষানবিশ হিসেবে হেয়ার ড্রেসিংয়ের উপরে প্রশিক্ষণ ও কোর্স করা যায়।
Source: rush.co.uk
আপনি এসব কোর্স করে কিংবা প্রশিক্ষণ নিয়ে খুব সহজেই হেয়ার-ড্রেসার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। স্থানভেদে এদের আয়ের পার্থক্য হয়ে থাকে। উচ্চ পর্যায়ের কেশবিন্যাসকারীরা সাধারণত প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ২০ পাউন্ড থেকে প্রায় ১০০ পাউন্ড পর্যন্ত চার্জ গ্রহণ করে থাকে, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় প্রায় ২ হাজার টাকা থেকে প্রায় ১১ হাজার টাকা। আপনার নিকটস্থ বাজারেই একটি সেলুন খুলে, খুব সহজেই স্বাধীনভাবে কর্মজীবন শুরু করতে পারেন।
৫. শিক্ষক
শিক্ষকতাকে একটি মহান পেশা হিসেবে বিবেচনা করা হয। যারা অন্যদেরকে শিক্ষা দিতে পছন্দ করে, তাদের জন্য খুবই উপযুক্ত একটি পেশা হচ্ছে শিক্ষকতা। আপনি ইচ্ছা করলে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান খুলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দিতে পারেন কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের বাসায় গিয়েও তাদের শিক্ষা দিতে পারেন। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বজায় রেখে কাজ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে। এই পেশায় শুধুমাত্র অর্থই উপার্জন হয় না, বরং প্রচুর সম্মানও পাওয়া যায়। শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে হলে অবশ্যই উচ্চতর পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এছাড়াও সৃজনশীলতা, অন্যকে অনুপ্রেরণা দেওয়ার সক্ষমতা, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা, ভালো যোগাযোগের দক্ষতা ইত্যাদি গুণাবলিগুলো থাকা খুবই জরুরী।
Source: usatoday.com
আপনার যদি সব যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকে এবং অন্যকে শিক্ষা দিতে ভালোবাসেন, তবে টিউটর হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার করে বছরে প্রায় ১২ হাজার পাউন্ড থেকে শুরু করে প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড পর্যন্ত আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের মুদ্রার হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১২ লাখ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় ৩১ লাখ টাকা।
আপনি যদি ব্যক্তি স্বাধীনতা চর্চায় অধিক পছন্দ করেন এবং অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ না করেন। তবে এই ৫টি পেশা থেকে যেকোনো একটিকে, আপনার ক্যারিয়ার গড়ার হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন।
Featured Image:Nypost.com