ক্যারিয়ার বিষয়ে কথা বলতে হলে শুরুতেই আলোচনা হয় কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা উচিত, কীভাবে সহযোগীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে হয়, কীভাবে ম্যানেজার থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের কথা মেনে চলতে হয়। এই সব বিষয় কাজে যোগদানের পর আসলেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই সাথে একজন নতুন কর্মী যিনি সবেমাত্র শিক্ষাজীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছেন তার আরও অনেক বিষয় জানার থাকে। যেমন, অফিসিয়াল মিটিং এ কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হবে, কীভাবে নিজের উপস্থাপন করা বিষয়গুলো সকলকে বুঝানো যাবে। এগুলোর জন্য সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে নিজে একজন ভালো বক্তা হওয়া। আপনি যখন সুন্দর করে কথা বলতে পারবেন তখনই আপনার উপস্থাপিত বিষয় সকলের নজর কাড়বে।
কিন্তু কীভাবে হবেন একজন ভালো বক্তা? এজন্য রইলো কিছু টিপস:
লক্ষ করুন অভিজ্ঞদের
সুন্দর করে কথা বলাকে বলা হয়ে এক ধরনের আর্ট। এই বিষয়টি অনেকের মাঝে শুরু থেকেই থাকে, আবার কাউকে বা রপ্ত করতে হয়। যেকোনো চাকুরিতেই আপনি যোগদান করুন না কেন, আপনার কথা বলার ভঙ্গি, যে কোনো বিষয় সুন্দর করে উপস্থাপন এবং যে বিষয়টি নিয়ে আপনি আলোচনা করছেন তাতে গোছানো যুক্তির উপস্থিতি- সব কিছুই প্রকাশ করবে আপনি কাজের জন্য কতটা উপযুক্ত। আর এ জন্য একজন ভালো বক্তা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
image source: elearningindustry.com
ভালো বক্তা হতে গেলে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে এই বিষয়ে যারা অভিজ্ঞ তাদের কিছু ভিডিও দেখা। ইন্টারনেট এখন সার্বজনীন। যেকোনো বিষয়েই স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায় এখান থেকে। আজ থেকে দশ বছর আগে হয়ত বিষয়টা কিছুটা কঠিন ছিল, কিন্তু বর্তমানে এটি খুব সহজ।
পরিষ্কার ধারণা
যে বিষয়টি নিয়ে আপনি বক্তব্য উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন শুরুতেই সেটি নিয়ে খুব ভালোভাবে রিসার্চ করুন। উপস্থাপনের কোনো বিষয় যেন ছুটে না যায়। এক কথায় খুব পরিষ্কার ধারণা রাখুন বক্তব্যের জন্য। মিটিং এ গিয়ে কোনো জরুরি বিষয় যেন আলোচনা থেকে বাদ না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখুন।
নোট টুকে নিন
কোথাও বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য আপনি নিশ্চয়ই পুরো একটা স্ক্রিপ্ট লিখে নিয়ে যাবেন না! আর সেটা শোভনীয়ও নয়। তাই যে বিষয়ে কথা বলবেন সেই টপিকগুলো পয়েন্ট আকারে লিখে নিন। শুধুমাত্র সেই বিষয়টির তথ্য উপাত্তগুলো নোটবুকে টুকে নিন। এরপর সেই বিষয়গুলো নিয়ে দৃঢ়তার সাথে আলোচনা করুন।
image source: pixabay
নিজে নিজে প্র্যাকটিস করা
ভালো বক্তার অন্যতম প্রধান একটি কাজ হচ্ছে নিজে নিজে প্র্যাকটিস করা। পরবর্তী দিন কোন বিষয়টি নিয়ে মিটিং এ আলোচনা হবে সেটি যদি জানা থাকে তবে আগের রাতেই নিজ ঘরে বসে বিষয়গুলো ঝালাই করে নেওয়া ভালো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
কম সংখ্যক শ্রোতার সামনে প্র্যাকটিস করা
যে কোনো বিষয়ই শুরুতে অল্প থেকেই করা ভালো। যখনই আপনি বক্তব্য দেয়ার কথা ভাবছেন তখন সেটি শুরু করুন অল্প মানুষদের দিয়েই। তারা হতে পারে আপনার বন্ধু, কলিগ অথবা পরিবারের সদস্য। কথা বলা শেষ করে তাদের কাছে জানতে চান। বক্তব্য শেষে তারা যে পরামর্শ দেবেন সেটি আপনার পরবর্তী প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করতে পারেন। শ্রোতা কম হলে সেখানে ভুলভ্রান্তিগুলো সহজে ধরা যায়, সেইসাথে কথায় কোনো আড়ষ্টতা থাকলে সেটিও কেটে যায়। নিজের আত্মবিশ্বাস তৈরির জন্য এটি বেশ জরুরি।
জেনে নিন উপস্থিত ব্যক্তি সম্পর্কে
ধরুন আপনি আপনার অফিসের কাজে অন্য আরেকটি অফিসে গিয়েছেন মিটিং এর জন্য। কিন্তু সেই মিটিং এ কোন কোন ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন, কাদের সাথে আপনাকে মূল আলোচনা করতে হবে সে বিষয়ে আপনার কোনো ধারণা নেই। এমন হলে বক্তব্য দেবার সময় আপনার মাঝে আড়ষ্টতার পাশাপাশি ভয়ও কাজ করতে পারে। তাই আগে জেনে নিন আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কাদের সাথে আপনাকে কথা বলতে হবে। কারা উপস্থিত থাকবেন সে বিষয়ে পূর্ব ধারণা থাকলে আলোচনার বিষয়গুলো বেশ সহজ হয়ে যায়।
image source: VideoHive
পোশাকে পরিচয়
অফিসে সচরাচর ফরমাল পোশাকের বিষয়টিই মেনে চলা হয়। তাই যে কোনো মিটিং এ এই বিষয়টির দিকে লক্ষ রাখুন। পোশাক কিন্তু আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। খুব বেশি রঙচঙে পোশাক কখনোই নির্বাচন করা উচিত নয় মিটিং এর সময়।
image source: shutterstock
ভয়কে দূরে রাখুন
বক্তব্য দেয়ার সময় বেশিরভাগ ব্যক্তিই বেশ ভয় পেয়ে যান। এতে মিটিং এ যা আসলে বলা প্রয়োজন সেটি সঠিকভাবে বলা হয়ে ওঠে না। তাই সবার আগে এই ভয়কে রাখতে হবে দূরে। কথা বলতে হবে দৃঢ়তা আর আত্মবিশ্বাসের সাথে। আলোচনায় হয়ত উঠে আসতে পারে নতুন কোনো বিষয় আর সেটি সম্পর্কে ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার স্বচ্ছ ধারণা হয়ত নাও থাকতে পারে। এমন হলে, সেখানে উপস্থিত সবাইকে বিষয়টি সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে।
শ্রোতা যেন বিরক্ত না হন
কথা বিষয়টি আসলে এমন যে সেটি শুনে একজন শ্রোতা খুব খুশি হতে পারেন, আবার হতে পারেন বিরক্ত। এজন্য বক্তাকে কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শ্রোতা বিরক্ত না হন। আর মিটিং এ কখনোই খুব বেশি কথা বলা উচিৎ নয়। যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু নিয়েই আলোচনা করা উচিৎ। নইলে সেখানে উপস্থিত সকলের মাঝে বাড়তে পারে বিরক্তি। আপনাকে বুঝে নিতে হবে আপনি যেই বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন, যে বক্তব্যগুলো সবার সামনে তুলে ধরছেন সেগুলো মোটেও অপ্রয়োজনীয় নয়।
কথার মাঝে বিরতি
অনেকের ধারণা কথা বলা শুরু করার পর মাঝে বিরতি নেওয়া ঠিক নয়। এতে শ্রোতাদের মাঝে নেতিবাচক ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু এ বিষয়টি একদম ঠিক নয়। আপনি যখন বক্তব্য দিচ্ছেন তখন আপনি জানেন আপনি কী বলছেন। সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণাটা জরুরি বেশি। কথার মাঝে এজন্য আপনি বিরতি নিতেই পারেন। আর কয়েক সেকেন্ড বা মিনিটখানেকের বিরতি আপনাকে পুনরায় বক্তব্যে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সহায়তা করবে।
image source: VideoHive
বক্তব্যের শেষে
বক্তব্য দেয়া শেষে ‘আমার এতটুকুই বলার ছিল’ এই ধরনের কথা না বলে পুরো বক্তব্যের একটা সারমর্ম তুলে ধরুন। এবং বিষয়টি সম্পর্কে আপনার নিজস্ব মত সবাইকে জানিয়ে বক্তব্যের ইতি টানুন।
Feature image: shutterstock