নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আর ক্যারিয়ার বাছাই করা সহজ বিষয় নয়। তবে অসংখ্য ক্যারিয়ারের মধ্যে নিজের পছন্দসই ক্যারিয়ার খুঁজে দেখা বোকামির আওতায় পড়ে না। আপনি যদি ক্রিয়েটিভ হয়ে থাকেন আর সাথে থাকে টেকনিক্যাল এবং কম্পিউটারের উপর দক্ষতা, তাহলে হয়তো প্রথমেই ভেবে দেখবেন গ্রাফিক্স ডিজাইনিংএ ক্যারিয়ারের কথা। কারন এই পেশা যেমন আপনার নিজের কল্পনা বিস্তৃত করবে, তেমনি সফল করবে জীবনকে; যদি থাকে আপনার দক্ষতা।
তবে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সেক্টরটি ছোট কোনো কর্মক্ষেত্র নয়। এই পেশায় আপনাকে বিভিন্ন ধরনের কাজের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যেটা অন্যান্য ক্যারিয়ার থেকে বেশ ভিন্ন বটে। অন্যসব ক্যারিয়ারের সম্পর্কিত টেকনিক্যাল কাজগুলো আপনাকে সুনির্দিষ্ট একটি বিষয়ের সাথে আটকে দেয়, সেখানে গ্রাফিক্স ডিজাইনিং সব ধরনের কাজের ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হয়ে থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ের তেমনি আটটি পেশার কথা যেগুলোতে আপনি গড়ে তুলতে পারেন আপনার ক্যারিয়ার।
১. ক্রিয়েটিভ সার্ভিস ম্যানেজার
ক্রিয়েটিভ সার্ভিস ম্যানেজারের কাজ তার অধীনে থাকা কর্মচারীদের উপর ভিত্তি করে। তবে একজন ক্রিয়েটিভ সার্ভিস ম্যানেজার সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট এবং গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে থাকেন। এই কাজের জন্য প্রয়োজন হয় বেশ অনেক বছরের অভিজ্ঞতা। যেগুলো অর্জন করা হয় একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে।
এছাড়া নিত্যনতুন বিভিন্ন প্রজেক্টের নির্দশনা ছাড়াও অধীনস্থ টিম মেম্বারদের সঠিক পথ প্রর্দশনের পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রজেক্টের কাজ শেষ করা থেকে বাজেট নিয়ন্ত্রণ করাও একজন ক্রিয়েটিভ সার্ভিস ম্যানেজারের কাজ। তবে নিজের হাতে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ ডিজাইনিংয়ের কাজ করার পাশাপাশি সে বিষয়ে নিজের ভালো দক্ষতা না থাকলে এই পদে কাজ করা অসম্ভব বটে!
২.ই-মেইল মার্কেটিং ডিজাইনার
ই-মেইলের সাহায্যে অর্গানাইজেশনের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ এবং ক্রেতাদের কাছে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়ার কাজে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় গ্রাফিক্সের জন্য প্রয়োজন হয় ই-মেইল মার্কেটিং ম্যানেজারের। একজন ই-মেইল মার্কেটিং ডিজাইনার কাজ করে অন্যান্য ডিজাইনারদের সাথে মিলিত ভাবে। যেমন ইউজার ইন্টারফেস স্পেশালিস্ট, রাইটারদের সাথে মিলিত ভাবে কাজ করে ই-মেইল মার্কেটিং ডিজাইনার। এছাড়া মার্কেটিং ম্যানেজারের সহায়তা নিয়ে কোম্পানির ব্রান্ডিং এবং স্ট্যান্ডার্ড মানা সহ প্রয়োজনীয় স্ট্রাটেজি অনুসরণ করে থাকে।
একজন ই-মেইল মার্কেটিং ডিজাইনারের ডিজাইনিংয়ের প্রিন্সিপাল ভালোভাবে বোঝা ছাড়াও পণ্য সম্পর্কিত প্রচুর পরিমানে অভিজ্ঞতার দরকার রয়েছে। এছাড়া এইচটিএমএল, সিএসএস আর কোডিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৩. আর্ট ডিরেক্টর
গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে অন্যতম একটি ক্যারিয়ার হচ্ছে আর্ট ডিরেক্টর। সাধারণত গ্রাফিক্স বিষয়ক সবকিছুর দায়িত্ব থাকে আর্ট ডিরেক্টরের। যিনি প্রজেক্টের স্ট্রাটেজি, ক্যাম্পেইন, ব্রান্ডিং, ক্রিয়েটিভ গ্রাফিক্সের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কিনা, তা লক্ষ্য রাখেন। মূলত প্রজেক্টের চাহিদা অনুসারে ক্রিয়েটিভ কাজগুলো সম্পন্ন হচ্ছে, এটা নিশ্চিত রাখার পাশাপাশি মডেলদের পোশাকের প্রোমোশনাল বিষয়টিও তার কাজের অন্তভুর্ক্ত।
আর্ট ডিরেক্টর ক্লায়েন্ট এবং অভ্যন্তরীণ ম্যানেজমেন্ট টিমের সাথে কাজ করেন। সেই সাথে ব্রান্ডিং, নির্ধারিত ভোক্তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন।
৪. ইনফরমেশন আর্কিটেক্ট
সাধারণত ক্লায়েন্টের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য গ্রহণ করে পণ্যের বিক্রয়ের জন্য সুপরিকল্পিত স্ট্রাটেজি অবলম্বন এবং ওয়েবসাইটের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও ডিজাইন করে থাকেন। ওয়েবসাইটের জন্য নির্ধারণ ভোক্তা বাছাইয়ের পাশাপাশি সেই অনুসারে ডিজাইন, তথ্য সরবরাহ এবং সহজে পণ্য খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি একজন ইনফরমেশন আর্কিটেক্টের কাজের অংশ।
রিয়েলএস্টেটের আর্কিটেক্টর মতো একজন ইনফরমেশন আর্কিটেক্ট বাজারের বিভিন্ন পণ্যে এবং ওয়েবসাইটে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় ওয়েব ম্যাপিং করে থাকেন। এছাড়া সহজে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ও বিভিন্ন প্রটোটাইপ তৈরি করাও তাদের কাজের অন্তর্ভুক্ত।
৫. মোবাইল ডিজাইনার
নিত্যনতুন মোবাইল কোম্পানির উদ্ভবের সাথে সাথে চাহিদা বেড়েছে মোবাইল ডিজাইনারের। যাদের কাজ মূলত মোবাইল এবং ট্যাবলেট জাতীয় পণ্যের উপর। মোবাইলের বডি, স্ক্রিন, কিবোর্ডের ডিজাইনসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স কাজ একজন মোবাইল ডিজাইনার করে থাকেন। এই কর্মক্ষেত্রের জন্য ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স ডিজাইনিংয়ে ভালো দক্ষতার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের প্লাটফর্মের উপর কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা দুটোই থাকা জরুরি। এছাড়া বিভিন্ন প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজের উপর দক্ষতা থাকতে হবে।
৬. মোশন ডিজাইনার
টেলিভিশন, সিনেমা অথবা মুভিতে দেখা ভার্চুয়াল বিষয়গুলো নিয়ে হচ্ছে মোশন ডিজাইনারের কাজ। আকর্ষণীয় এনিমেশন থেকে শুরু করে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন তৈরির গ্রাফিক্সের কাজগুলো করে থাকে মোশন ডিজাইনার। এছাড়া বিভিন্ন ফ্লাশ এনিমেশন থেকে শুরু করো এভাটার সিনেমার মতো গ্রাফিক্স বিষয়ক কাজগুলোও মোশন ডিজাইনারের কর্মের অন্তভূর্ক্ত।
দ্বিমাত্রিক এবং ত্রিমাত্রিক গ্রাফিক্স ডিজাইনিং ছাড়াও এনিমেশনের উপর ভালো দক্ষতা থাকা প্রয়োজন একজন মোশন ডিজাইনারের।
৭. ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনার
ক্রেতাদের চাহিদার উপর গবেষণা আর ব্যবহারের উপর প্রয়োজনীয় এনালাইসিস করে সে অনুসারে পণ্য উৎপাদনের বিষয়টি দেখে থাকেন ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনার। মূলত এই পদের ব্যক্তি উৎপাদনকারী চাহিদা অনুসারে কাঙ্খিত ক্রেতাদের উদ্দেশ্যে সাইটম্যাপ, ওয়্যারফ্রেম এবং অন্যান্য টুলসের ব্যবহার করে সন্দেহাতীত প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টির করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের স্পেশালিস্ট একই উদ্দেশ্যে ডিজাইনারের সাথে মিলিত ভাবে পণ্যের প্রোটোটাইপ এবং গুনগুন মান নিশ্চিত করে থাকেন।
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ডিজাইনারের গ্রাফিক্স ডিজাইনের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার পাশাপাশি ওয়েব টেকনোলজির উপর ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৮. ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনার
বিভিন্ন ধরনের এপ্লিকেশনের ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনিংয়ের পাশাপাশি ব্যবহারকারী ও তথ্যের মধ্যে ব্যাক টু ব্যাক কানেকশন এবং প্রসেসিং দেখে থাকে একজন ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইনার। এছাড়া প্রয়োজনীয় কোডিং যোগ করা ছাড়াও ব্যবহারকারীর চাহিদা ও এপ্লিকেশনের মান ধরে রাখাও এই কাজের অন্তর্ভুক্ত।
ওয়েবসাইট এবং এপ্লিকেশনের বিভিন্ন ধরনের ডেভলপমেন্টের পাশাপাশি এজেক্স, সিএসএস, এইচটিএমএল আর জাভাস্ক্রিপ্টের উপর দক্ষতা এই ক্যারিয়ারের জন্য দরকারী।