মোবাইল ফোন বস্তুটি এখন আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। মোবাইল ছাড়া এখন আমরা আমাদের দিনটিই শুরু করতে পারি না। বর্তমান যুগে মোবাইল আমাদের জীবন ব্যবস্থাকে যেমন সহজ করেছে ঠিক তেমনি মোবাইলের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবনে যেকোন কিছুর উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা পিছিয়ে দিতে পারে অনেক ক্ষেত্রেই। অনেকে প্রায়ই ভাবেন মোবাইল ফোনই তাদের পড়াশুনা কিংবা কোন কাজের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কিন্তু নিজের অজান্তেই নির্ভরশীলতা কমাতে পারছেন না অনেক ক্ষেত্রেই। সমস্যাগুলো জানলে সমাধানের পথ খোঁজা হবে সহজ। জেনে নিতে পারেন মোবাইল ফোনের উপর আসক্তির কিছু লক্ষণ।
১. সময় দেখার একটু পর ভুলে যাওয়া
ইদানীং সময় দেখার জন্য ঘড়ির চেয়ে মোবাইলের ব্যবহারই বেশি করা হয়। মোবাইলের লক খুলে সময় দেখার সাথে সাথে একটু পরই মোবাইল আনলক করে আবার সময় দেখার অভ্যাস অনেকেরই আছে। তাদের বার বার মোবাইল দেখাটা এমনই অভ্যাসে পরিণত হয়েছে যে সঠিকভাবে তথ্যটি সংগ্রহ করার থেকে মোবাইলের দিকে মনোযোগী হয়ে পড়াটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২. গুরুত্বপূর্ণ কাজে অবহেলা
আপনি হয়তো মিটিং এর জন্য বসে আছেন। মিটিং শুরুর পূর্বে সহকর্মীদের সাথে কথা না বলে সেসব ই-মেইল চেক করছেন বা সেসব মেসেজ দেখছেন যেগুলো আপনি এড়িয়ে গিয়েছেন। এই অভ্যাসটি প্রমাণ আপনি আত্নবিশ্বাসী নন নিজেকে নিয়ে। এ সময় সহকর্মীদের সাথে আলাপ আলোচনা আপনার জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধুমাত্র নিরাপদ অবস্থান তৈরির জন্য আপনি অকারণে আপনার মোবাইল ফোনটির দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছেন।
৩. মোবাইল ফোনটি চোখের সামনেই রাখা
অনেকেই একটু সময়ের জন্যও ফোনটিকে নিজের থেকে দূরে সরান না। রাতের খাবারের খেতে বসেছেন আর পরিবারের সবার সাথে সময় না দিয়ে মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত আছেন- এই ব্যাপারটি প্রমাণ করে আপনি মোবাইলের প্রতি কতটা আসক্ত হয়ে পড়েছেন। আর এ ধরণের অভ্যাসগুলো সম্পর্কের মাঝে দূরত্ব নিয়ে আসে। তাই নিজের সাথে যদি এই অভ্যাসটির মিল খুঁজে পান বদলে ফেলুন জলদি।
৪. সময়ের খেয়াল না রাখা
আমরা অনেক সময়ই মোবাইলটি হাতে নিই ছোট একটি তথ্য দেখার জন্য কিন্তু নিজেদের অজান্তেই হয়তো আধঘণ্টা সময় কাটিয়ে দিচ্ছি যেখানে তথ্যটি জানতে হয়তো আমাদের এক মিনিট সময় লাগতো। আর এই অভ্যাসটি পরিত্যাগ করতে মোবাইল মনিটরে টাইম লিমিট অপশনটি সেট করতে পারেন এছাড়া যাবতীয় সকল এপসের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখতে পারেন।
৫. সবসময় চার্জার বহন করা
মোবাইলের ব্যাটারিকে দোষারোপ করবেন না যদি না দিনের অর্ধেক সময় মোবাইলের পেছনে ব্যয় করেন। অনেকেই যেখানেই যান মোবাইলের চার্জার সাথে নিয়ে যান আর দোষারোপ করছেন মোবাইলে চার্জ থাকছে না। দিনের বেশি সময় মোবাইলের পেছনে ব্যয় করলে চার্জ না থাকাটাই স্বাভাবিক। আর মোবাইলের চার্জ সেভ করতে হলে মোবাইলের মনিটরটি বেশিরভাগ সময় ব্ল্যাক মুডে রাখার চেষ্টা করবেন।
৬. লো ব্যাটারি সিগনাল হতাশার কারণ
আপনার মোবাইলের চার্জ ২০ শতাংশ হয়ে যাওয়া মানে আপনার বিশাল কোন ক্ষতি হয়ে যায়নি বা আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের আর যোগাযোগ করতে পারবেন না এরকম ধারণা করা ঠিক নয়। অনেকেই আছেন যাদের মোবাইলের চার্জ কমে গেলে খুব বেশি হতাশ হয়ে পড়েন। এরুপ হতাশা থেকে বের হয়ে আসুন। অথবা শুধুমাত্র মোবাইলের চার্জ কমে যাওয়ার জন্য উত্তেজিত হওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে আনার চেষ্টা করুন।
৭. বার বার নোটিফিকেশন চেক করা
না আপনার মোবাইলটি ভাইব্রেট করেনি তবুও আপনি আবার চেক করলেন যে, কোন নোটিফিকেশন এসেছে কিনা বা কোন মেসেজ আপনি এড়িয়ে গেলেন কিনা। অকারণে বার বার মোবাইলের দিকে মনোযোগী হওয়ার প্রবণতা মোবাইলের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির ফলাফল।
৮. গাড়ি চালানোর সময় বিভ্রান্তিতে পড়া
গাড়ি চালানোর সময় কখনোই উচিত নয় মোবাইলের দিকে মনোযোগী হওয়া। লাল সিগনালের সময় যদি আপনি ৫ সেকেন্ডের জন্যও মোবাইলের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকেন, যেকোন দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ যখন আপনি মোবাইলের দিকে মনোনিবেশ করেছেন তখন পুনরায় গাড়ি চালানোর প্রতি পূর্ণমনোযোগ দিতে সময় লাগবে কিছুক্ষণ। আর আপনার বিভ্রান্তিতে থাকা এই অল্প সময়ই আপনার জীবনের জন্য হতে পারে ঝুঁকিপূর্ণ।
৯. সামাজিক মাধ্যমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া
পরিবারের সাথে কোথাও ঘুরতে গিয়েছেন বা কোথাও খেতে গিয়েছেন অবশ্যই সেই মুহুর্তগুলোকে বন্দি করে রাখবেন। কিন্তু সেই মুহুর্তগুলো বন্দি করে রাখার উদ্দেশ্য যদি হয় শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য তাহলে পরিবারের সময়ের চেয়ে আপনি সামাজিক মাধ্যমকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। পরিবারকে সময় দিন তাদের সাথে হাসুন, কথা বলুন। শুধুমাত্র সামাজিক মাধ্যমে উপস্থাপনের জন্য এত সুন্দর সময়গুলোকে নষ্ট করবেন না।
১০. দিনের প্রথম এবং শেষ দেখা
দিনের শুরু এবং শেষ দেখার বিষয়টি যদি আপনার মোবাইল হয়ে থাকে নিঃসন্দেহে আপনি মোবাইলের প্রতি প্রচন্ড আসক্ত। অনেকেই আছেন ঘুম থেকে উঠেই মোবাইলটি হাতে নেন আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত মোবাইলের পেছনে সময় ব্যয় করেন।
১১. মোবাইল ফোনটি সবসময় হাতে
রাস্তায় চলাচল কিংবা কোথাও যাওয়ার সময় মোবাইল ফোনটি যদি আপনার পকেটে বা ব্যাগে না থেকে সবসময় হাতে থাকে মোবাইল ফোন বস্তুটি একটি ব্যাধিতে পরিণত হবার দিন কিন্ত তাহলে দূরে নয়। আর তাই যথাসম্ভব মোবাইল সবসময় ব্যাগে বা পকেটে রাখার চেষ্টা করুন।
১২. প্রতিটি রিমাইন্ডার মোবাইলে সেট করা
সারাদিনের প্রতিটি কাজ কিন্তু আমরা কিন্তু ডায়েরিতে বা ছোট একটি চিরকুটে লিখে বের হতে পারি। কিন্তু আপনি যদি আপনার সকল কাজের সূচীর জন্য মোবাইলে এর্লাম সেট করলে মোবাইলের প্রতি অত্যাধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন।
১৩. কথোপকথন চলাকালীন সময়ে বার বার মোবাইল দেখা
অনেকেই কথোপকথন চলাকালীন সময়ে মোবাইলের প্রতি ঝুঁকে থাকার প্রবণতা খুব বেশি। এই অভ্যাসটি প্রমাণ করে আপনি একজন ভালো শ্রোতা নন। আর এই অভ্যাসটি ব্যক্তিগত সম্পর্কে খারাপভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
১৪. বাথরুমে মোবাইল ব্যবহার
ব্রাশ করা থেকে শুরু করে হাতমুখ ধোয়া সবসময় মোবাইলটি যদি আপনি আপনার সাথে বহন করেন। এই অভ্যাসটি নিঃসন্দেহে মোবাইলের প্রতি প্রবল আকর্ষণের লক্ষণ।
১৫. পরিহিত জামাকাপড় মোবাইল অনু্যায়ী
দোকানে গিয়ে পছন্দের প্যান্টটি কেনার সময় বারবার দেখে নিচ্ছেন প্যান্টের পকেটে মোবাইলটি রাখার উপযোগী কিনা। আপনি আপনার পছন্দের চেয়ে মোবাইলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন মনের অজান্তেই। এই অভ্যাসগুলো কিন্তু সচেতনতা থেকে নয় মোবাইলের প্রতি আকর্ষণের জন্যই হয়ে থাকে।
১৬. আপনি যদি এখন এই আর্টিকেলটি পড়েন
অবশ্যই যেকোন বড় আর্টিকেল পড়ার জন্য বড় মনিটরের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আর এই বড় আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনি আপনার মোবাইলের সাহায্য নিচ্ছেন তার মানে প্রচন্ড ধৈর্য সহকারে আপনি মোবাইলে স্ক্রল করে যাচ্ছেন।
মোবাইলের প্রতি প্রবল আকর্ষণ কমিয়ে আমাদের উচিত বাস্তব জীবনের সম্পর্কগুলোর প্রতি বেশি সময় দেয়া। মোবাইল ফোনের সদ্ব্যবহার আমাদের জীবনকে আরো সহজ করে তুলছে তবে অতিরিক্ত আকর্ষণ হতে পারে নানান ক্ষতির কারণ।