জার্মানির বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাডমিশন লেটার হাতে পেয়েই ভেবে বসবেন না, আপনি জার্মানি চলে যাচ্ছেন। এখনো আপনার আসল কাজ বাকি রয়ে গেছে। কারণ আপনি যতই অ্যাডমিশন লেটার পান না কেন, জার্মান এমব্যাসি আপনাকে ভিসা না দিলে আপনি কখনোই যেতে পারবেন না। তাহলে চলুন আজ জেনে নেয়া যাক, জার্মান ভিসাপ্রাপ্তির নিয়মকানুন ও পদ্ধতি সম্পর্কে।
জার্মান ভিসা প্রাপ্তির জন্য কী কী করবেন?
প্রথম কাজ হচ্ছে ঢাকায় অবস্থিত জার্মান এমব্যাসির ওয়েবসাইট ভিজিট করা। সেখানে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদনের জন্য চেকলিস্ট দেয়া থাকে। মনে রাখবেন, ভিসার জন্য প্রথমে জার্মান ব্যাংকে নিজের নামে অ্যাকাউন্ট করে সেখানে ৮৮০ ইউরো (আনুমানিক আট লক্ষ টাকা) জমা দিতে হবে৷
জার্মান ব্যাংকে কীভাবে অ্যাকাউন্ট খুলবেন?
ব্লকড অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই সর্বশেষ নির্দেশনা জানার জন্য জার্মান এমব্যাসির ওয়েবসাইট চেক করে নেবেন।
এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ
অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য একটি এপ্লিকেশন ফর্ম পূরণ করতে হবে। সর্বশেষ আপডেটেড ফর্ম ডাউনলোড করুন এখান থেকে। ডয়েচে ব্যাংক কিছুদিন পরপরই এই ফর্মটিতে পরিবর্তন আনে। তাই আপনি অবশ্যই ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সবচেয়ে লেটেস্ট আপডেটেড ফাইলটি ডাউনলোড করে নেবেন।
এই ফাইলের প্রথম ৮ পেজে দেয়া সকল নির্দেশনা বা স্যাম্পল খুব ভালো মতো পড়ে নিবেন। এবং এরপর ৯ নম্বর পেজ থেকে ফর্মটি পূরণ করা শুরু করবেন। ফর্মে পেজ রয়েছে ৭ টি (পেজ ৯-১৫)। এই সাতটি পেজই ভালোমতো ফিলআপ করার পর প্রিন্ট করে এমব্যাসিতে জমা দিতে হবে।
ফর্মটি পূর্ণ করার সময় যে বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল রাখবেন,
- ফর্মটি ফিলআপ করবেন আপনার পাসপোর্টে দেয়া তথ্য অনুসারে।
- ফর্মে টাইটেলে (Title) কিছু লিখার দরকার নেই। এই ঘরটি মূলত যাদের ডক্টরেড (Dr.) বা অন্য কোন একাডেমিক টাইটেল রয়েছে তাদের জন্য।
- রেজিস্টারড এড্রেসের (Registered address) জায়গায় অবশ্যই আপনার পাসপোর্টে দেয়া স্থায়ী ঠিকানা লিখবেন। অন্য কোন ঠিকানা লিখলে ফর্ম বাতিল হয়ে যাবে। আপনি যদি বর্তমানে এই স্থায়ী ঠিকানায় নাও থাকেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ ব্যাংক আপনার এই ঠিকানায় কিছুই পাঠাবে না। এটি কেবলই একটি ফর্মালিটি।
- ফর্মে ‘ট্যাক্স আইডি অর ইকুভ্যালেন্ট পারসোনাল আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার ইন দিস কান্ট্রির’ (Tax ID number or equivalent personal identification number in this country) ঘরে আপনার পাসপোর্ট নম্বর অথবা ন্যাশনাল আইডির নম্বর দিতে হবে।
- অন ওপেনিং দ্যা অ্যাকাউন্ট, ফান্ডস অফ € _ _ _ _ _ _ _ (On opening the account, funds of € _ _ _ _ _ _ _ ) এই ঘরে লিখবেন ৮৮০০.০০ (8800.00) । তবে এই এমাউন্ট পরিবর্তন হতে পারে। পরিবর্তিত এমাউন্ট সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানতে জার্মান এমব্যাসির ওয়েবসাইটে এই পিডিএফ ফাইলটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। পরবর্তীতে এই পরিমাণ অর্থ আপনার ব্লকড অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করতে হবে।
- এরপর ‘অরিজিন অফ দেস ফান্ডসের’ (Origin of these funds) ঘরে আপনি আপনার ইনকাম সোর্স এর কথা উল্লেখ করতে পারেন অথবা ‘ফ্যামিলি মেম্বার’ (Family Member) লিখে দিতে পারেন। যদি নিজের ইনকাম সোর্স এর কথা বলেন, সেক্ষেত্রে আপনাকে নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আর যদি ফ্যামিলি মেম্বার এর কথা উল্লেখ করেন, তাহলে সেই ফ্যামিলি মেম্বারের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট পাঠাতে হবে ফর্মের সাথে।
- আই অ্যান্টিসিপেইট এন অ্যাডিশনাল অ্যানুয়াল ট্রান্সেকশন ভলিউম অফ € _ _ _ _ _ _ _ (I anticipate an additional annual transaction volume of € _ _ _ _ _ _ _ ) এই ঘরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি ভবিষ্যতে দেশ থেকে আরও ইউরো ট্রান্সফার করতে চান, তাহলে এই ঘরে সেই এমাউন্টটি (আনুমানিক) লিখবেন। আর যদি ভবিষ্যতে কোন ইউরো ট্রান্সফার করবার ইচ্ছা না থাকে, তাহলে এই ঘরে অবশ্যই শূন্য (0) লিখে দিবেন। এই ঘরটি যদি ফাঁকা রাখেন অথবা ফিল আপ না করেন, তাহলে কিন্তু আপনার এপ্লিকেশন ফর্ম বাতিল হয়ে যাবে।
- আপনি যদি টাকা আপনার নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে না পাঠান, অর্থাৎ অন্য কারো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাঠান তাহলে ‘দিস ফান্ডস উইল নট বি ট্রান্সফারড বাই মি। ইন্সটিড, দে উইল কাম ফ্রম’ (The funds will not be transferred by me. Instead, they will come from) এবং ‘মাই রিলেশনশিপ উইথ দিস পারসন ইজ অ্যাজ ফলোস’ (My relationship with this person is as follows) ঘর দুইটি সেই বাক্তির তথ্য দিয়ে পূরণ করে দিবেন। আর যদি টাকা নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠান, তাহলে এখানে আর কিছু লেখার দরকার নেই।
- চতুর্থ পেজের সেকশন সিক্সে আপনার ভার্সিটির নাম এবং লোকেশন (শহরের নাম) উল্লেখ করে দিতে হবে। আপনার হাতে যে ভার্সিটির অফার লেটার আছে, সেই ভার্সিটির তথ্য দেবেন এইখানে। তবে পরবর্তীতে (অ্যাকাউন্ট ওপেনের পর) আপনি যদি অন্য কোন ভার্সিটিতে পড়তে যেতে চান, তাহলেও কোন সমস্যা নেই। এই সম্পর্কে আপনার কোন দ্বিধা থাকলে আপনি লিংকের এফএকিউ (FAQ) সেকশনটা একবার পড়ে নিতে পারেন।
- খেয়াল করে দেখুন, পঞ্চম, ষষ্ঠ পেজে সেকশন টেন, ইলেভেন, টুয়েলভ এবং সপ্তম পেজে একটি করে মোট চারটি ক্রস চিহ্ন রয়েছে। এই চারটি জায়গায় আপনাকে হাতে সাইন করতে হবে। তবে আপনি এই চারটি সাইন আগেই করবেন না। বরং আপনি যখন এমব্যাসিতে এই এপ্লিকেশন ফর্ম জমা দিতে যাবেন তখন ভিসা অফিসারের সামনে এর চারটি জায়গায় সাইন করবেন। ভিসা অফিসার বলার আগেই যদি সাইন করে ফেলেন, তাহলে এমব্যাসি আপনার ফর্ম জমা নেবে না।
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পর কী করবেন?
ব্যাংকের আবেদন পত্র পূরণ করার পর আপনাকে জার্মান এম্বেসি ঢাকার নির্দিষ্ট করা কোনো ইন্সুরেন্স কোম্পানি থেকে ইন্সুরেন্স করিয়ে নিতে হবে৷ কোম্পানিভেদে তিন হাজার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে৷ এই লিংকে গেলে ইন্সুরেন্স কোম্পানির তালিকা পাবেন।
এবার চেকলিস্ট অনুযায়ী কাগজপত্র গুলো প্রস্তুত করে ওয়েবসাইট থেকে অনলাইনের মাধ্যমে এপয়েন্টমেন্ট এর ডেট নিয়ে নিন৷ এপয়েন্টমেন্ট নেবার জন্য এই এড্রেসে ক্লিক করুন। এই লিংকে গেলে চেকলিস্ট দেখতে পাবেন।
মূল কাগজপত্র একসেট সাথে নিয়ে ভিসার জন্য দুইসেট আবেদনপত্র পূরণ করে স্বাক্ষর করতে হবে৷ এছাড়া চেকলিস্ট অনুযায়ী সকল কাগজপত্র দুইসেট ফটোকপি করে সাজাতে হবে৷ সাথে নিতে হবে ছাব্বিশ হাজার মতো টাকা৷ যার মধ্যে ৬০ ইউরো (আনুমানিক সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা) ভিসা আবেদনের জন্য এবং নগদ বিশ হাজার টাকা আপনার সার্টিফিকেটগুলো ভেরিফিকেশনের জন্য৷
ভিসা ইন্টারভিউ
ভিসা ইন্টারভিউর দশ থেকে পনেরো মিনিট আপনার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ন সময়। প্রশ্নকর্তার সব প্রশ্নের উত্তর মার্জিত ভাবে দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করতে হবে, জার্মানিতে পড়াশোনা করাই আপনার একমাত্র উদ্দেশ্য। মনে রাখবেন, তিনি ইচ্ছা করলে তুচ্ছ কারণ দেখিয়ে আপনার ভিসা বাতিল করে দিতে পারেন৷
প্রশ্ন কর্তার সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ করে যদি সব কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকে এবং তিনিও আপনার ব্যাপারে সন্তুষ্ট হন, তখন তিনি আপনার মূল কাগজপত্র ফিরিয়ে দিয়ে মূল পাসপোর্ট ও ফটোকপি করা কাগজগুলো রেখে দেবেন। এরপর আপনার অপেক্ষার পালা। সবকিছু ঠিক থাকলে সর্বোচ্চ চল্লিশ দিনের মধ্যে আপনি জার্মানির ভিসা হাতে পেয়ে যাবেন৷
Very helpful article.
Thank you so much.