সৌন্দর্যচর্চার জন্য বহু নারী অনেক দৌড় ঝাঁপ করেন। আজ এই পার্লারে তো কাল ঐ পার্লারে চলতে থাকে উঁকিঝুঁকি। আবার কখনো নানান কসমেটিকস ও বিদেশি নাইট ক্রিমের পিছু ছুটে ছুটে ক্লান্ত হন অনেকেই। আর দৌড় ঝাঁপ নয়। এইবার সৌন্দর্য চর্চা হবে ঘরে বসে স্বল্প ব্যয়ে। ভাবছেন কীভাবে? মধুর জাদুকরী ছোঁয়ায় আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্যা। বহুকাল ধরে মধু সৌন্দর্যচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। শুধু জানার ঘাটতি কিংবা গুরুত্ব না দেয়ার কারণে আপনি হয়তো পিছিয়ে আছেন মধুর আশীর্বাদ থেকে।
মধুতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও নানা পুষ্টি উপাদান। এতে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফেট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, গ্লুকোজ সহ আরো অনেক উপাদান রয়েছে। ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে, বলিরেখা কমাতে, ত্বকের কোমলীয়তা বৃদ্ধিতে, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে মধুর বিকল্প খুব কম আছে বলা যায়। ত্বক ও চুলের যত্নে মধু দারুণ কাজ করে। আসুন জেনে নিই সৌন্দর্যচর্চায় মধুর জাদুকরী ব্যবহার সম্পর্কে।
ব্রণ দূর করে
মধু ব্রণ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এক কাপ চা চামচ মধুতে হাফ চা চামচ সিনামন মিশিয়ে তৈরি করা মিশ্রণ ব্রণে লাগান। মিশ্রণটি ব্রণে লাগানোর পূর্বে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। মিশ্রণটি হাত দিয়ে না লাগিয়ে কটন বাড অথবা তুলা দিয়ে লাগাতে পারেন। বিশ থেকে পঁচিশ মিনিট পর ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ দূর করার পাশাপাশি মুখের অতিরিক্ত লাল ভাবও দূর করে মধু।
ত্বকের নমনীয়তায়
প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে মধু। এটি বাতাস থেকে জলীয়কণা ত্বকের ভেতরে টেনে নেয় যা ত্বকের গভীরে নমনীয়তা ধরে রাখতে সাহায্য করে। অধিক সময় ত্বকের নমনীয়তা ধরে রাখতে কাজ করে মধু। শুষ্ক ত্বকে নিয়মিত এক টেবিল চামচ পরিমাণ মধু লাগিয়ে পনেরো থেকে বিশ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। এই দাওয়ায় নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক হবে কোমল ও নমনীয়।
লোমকূপে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করতে
মধুতে থাকা এনজাইম ত্বক ও লোমকূপের গভীরে জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে। মধুতে বিদ্যমান বিভিন্ন উপাদান, জোজোবা, নারকেল তেল ত্বককে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষা করে। ২ টেবিল চামচ জোজোবা বা নারকেল তেলের সাথে ১ টেবিল চামচ মধু ভালভাবে মিশিয়ে মুখে ব্যবহার করলে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। তবে চোখের চারপাশের ত্বক বাদ দিয়ে মিশ্রণটি লাগাতে হবে।
ত্বক পরিষ্কার করতে
মধুতে এনজাইম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে বলে ত্বক পরিষ্কার, স্বাস্থ্যজ্বল ও মসৃণ থাকে। এছাড়া ত্বককে গভীরভাবে পরিষ্কার করতে বেকিং সোডাও সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ বেকিং সোডার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে শরীরে বা মুখে মিশ্রণটি দিয়ে মালিশ করে কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে বোঝা যাবে ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার হয়েছে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে
এক টেবিল চামচ মধুর সাথে এক চা চামচ টকদই মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে তাতে পরিমাণ মতো লেবুর রস মিশিয়ে মুখে, ঘাড়ে ও গলায় ব্যবহার করতে পারেন। এ মিশ্রণটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কার্যকরী। এলার্জির সমস্যা থাকলে লেবুর রস ব্যবহার না করা ভালো।
ত্বকের কালো দাগ দূর করতে
মধু ত্বকের কালো দাগ দূর করে। নানা কারণে ত্বকে কালো দাগ হতে পারে যা সার্বিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। মধুর ব্যবহারে কালো দাগ দূর হয় কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান যা ত্বকের কালো দাগ দূর করে এবং টিস্যুর পুনর্গঠনে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ মধুর সাথে এক টেবিল চামচ নারকেল বা জলপাইয়ের তেল মিশিয়ে নিতে হবে। ত্বকের দাগ, ক্ষতচিহ্নে এ মিশ্রণটি দিয়ে কয়েক মিনিট ম্যাসেজ করতে হবে। তারপর একটি গরম তোয়ালে চেপে ধরে রাখতে হবে ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
রোদে পোড়া ভাব কমাতে
মধু রোদে পোড়া ভাব কমায়। মধু এবং ঘৃতকুমারী (Aloevera) দুটোই রোদে পোড়া ভাব কমাতে সাহায্য করে কারণ এ দুটোতেই আছে অ্যান্টিইনফ্ল্যামটরি উপাদান। মধুর সঙ্গে ঘৃতকুমারী মিশিয়ে রোদে পোড়া স্থানে লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে মধু
শুষ্ক ও রুক্ষ ঠোঁটে মধুর ব্যবহারে খুব সহজেই তা ঠিক হয়ে যায়। প্রতিদিন হাতে একটু মধু নিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। দশ থেকে পনেরো মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। খুব অস্বস্তি বোধ না হলে ধোয়ার দরকার নেই। নিয়মিত ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। এছাড়া মধু লিপবাম হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এক চামচ আমন্ড তেলের সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে ফাঁটা ও রুক্ষ ঠোঁটে ব্যবহার করুন। এই মিশ্রণটি ঠোঁটের সতেজতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
মধু যেন চুলেরও কন্ডিশনার
মধুর গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম অনুজ্জ্বল চুলকে উজ্জ্বল করে। পাশাপাশি নারকেল তেল চামড়ার বাইরের স্তরে পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। এক টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে রুক্ষ চুলে ভালোমতো মালিশ করতে হবে। বিশ মিনিট পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই মিশ্রণটি চুলের কন্ডিশনার হিসেবে ভালো কাজ করবে।
স্বাস্থ্যজ্বল চুলের জন্য মধু
মধু আপনার চুলকে রাখবে স্বাস্থ্যজ্বল ও নমনীয়। চুল পরিষ্কার করতে নিঃসন্দেহে শ্যাম্পু খুব গুরুত্বপূর্ণ। পছন্দের যেকোনো শ্যাম্পুর সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে খানিক্ষণ লাগিয়ে রেখে তা ধুয়ে ফেলতে পারেন। এতে আপনার চুল হবে সুন্দর ও প্রাণবন্ত।
চুল রং করতে মধু
বর্তমান যুগে চুলে রং করা যেন ফ্যাশনের নতুন অনুষঙ্গ। মধু প্রাকৃতিকভাবে চুলকে রঙ্গিন করবে। প্রাকৃতিকভাবে চুলে রঙ করতে চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী মধু ও টক দই নিন। মধু ও টক দইয়ের মিশ্রণটি চুলের যেখানটায় রঙ করতে চান সেখানে লাগিয়ে রাখুন। দুই ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। পর পর চার দিন লাগান এই মিশ্রণ।