উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর আপনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রকৌশলী হবেন। এই চিন্তা থেকে কোন একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনা শেষ পর্যায়ে এসে আপনার মনে হলো, আপনি আসলে সারা জীবন এই ক্ষেত্রে কাজ করতে চান না। অথবা প্রথম জীবনে ওই সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। অল্পদিনের মধ্যেই আপনি ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং নিজেকে একজন ব্যাংকার হিসেবে দেখার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন। অথবা যে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন দীর্ঘদিন সেই ক্ষেত্রে চাকরি করার পর আপনার মনে হলো, আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন। এখন পেশা পরিবর্তন করতে চান।
আমার বিশ্বাস, অসংখ্য মানুষের মধ্যে এমন চিন্তা কাজ করে। মন থেকে আগ্রহ না থাকলেও নানা বাস্তবতা এবং শঙ্কার কারণে বর্তমান ক্ষেত্রের চাকরি ছেড়ে সম্পূর্ণ নতুন কোনো ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে ভয় পান। এর ফলে যেমন মানসিক চাপ বাড়ে, তেমনি কর্মক্ষেত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
আজকের নিবন্ধে আমরা এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করব। অভিজ্ঞতাহীন সম্পূর্ণ নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে হলে কেমন প্রস্তুতি নিতে হবে, কীভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে, তা নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পরিবর্তনকে আলিঙ্গন করা
মানুষের জীবন বন্ধুর পথে এগিয়ে চলে। সব সময় জীবন পরিকল্পিত থাকে না। আপনি যে শহরে বসবাস করেন এবং যেখান থেকে নিজের যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণ করেছেন, হঠাৎ অতি প্রয়োজনীয় কোন পারিবারিক সিদ্ধান্তে আপনাকে সেই শহর ত্যাগ করতে হতে পারে। পিএইচডি করার স্বপ্ন বাদ দিতে হতে পারে। স্বপ্নের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে। হঠাৎ জীবনে এমন কোনো পরিবর্তন আসতে পারে যার জন্য আপনি কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলেন না। এই পরিবর্তনের ফলে আপনার কর্মজীবনও আমূল পাল্টে যেতে পারে।
সাধারনত এমন অবস্থায় আমরা বিচলিত হয়ে পড়ি। নতুন স্থান এবং চাকরির সম্ভাব্যতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় ব্রাহ্মণ আচরণ করলে চলবে না। আপনাকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে মিশে যেতে হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য সব রকম পরিবর্তনের মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। ক্যারিয়ার পরিবর্তন বা সম্পূর্ণ অচেনা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের জন্য মানসিক প্রস্তুতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সবসময়ই যেকোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতির জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।
স্থানান্তর বা পরিবর্তন যোগ্য দক্ষতা নির্ধারণ
নিঃসন্দেহে আপনার জীবনবৃত্তান্তের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আপনার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। আপনি চাইলেই এই শিক্ষা অস্বীকার করতে পারবেন না, অথবা বিশ্ববিদ্যালয় এক বিষয়ে কোর্স করে অন্য বিষয়ের কথা সিভিতে লিখতে পারবেন না। সাধারনত চাকরি প্রত্যাশীদের নিজ ক্ষেত্রে শিক্ষা তার সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু আপনার বাস্তবতা ভিন্ন। আপনি যেহেতু নতুন চাকরি ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে চান যা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়, তাই আপনাকে আপনার একাডেমিক দক্ষতার বাইরের মানুষকে বোঝাতে হবে যে, এই শিক্ষার বদৌলতেই আপনি নতুন ক্ষেত্রের জন্যও প্রস্তুত।
যদিও কাজটি এত সহজ নয়, তবুও মনে রাখবেন শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা যেমন আপনার বায়োডাটার অলংকার, তেমনি অভিজ্ঞতা এবং সৃজনশীলতা বায়োডাটার কভার লেটারের অলংকার। এই একটি নীতি সামনে রেখে আপনি সবকিছু বদলে ফেলতে পারেন।
স্নাতক পর্যায়ের দক্ষতা
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মাধ্যমিক বিদ্যালেয়ের মতো শ্রেণি কক্ষে গিয়ে শুধু শিক্ষকদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন না, তারা নিজ ক্ষেত্রে গবেষণাও করেন। নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্যই একাধিকবার বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিজ ক্ষেত্র নিয়ে বক্তৃতা দেওয়ার এবং উপস্থাপন করার সুযোগ তৈরি হয়, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিনিধিত্ব করার দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
এবং যুক্তি-তর্ক, বিশ্লেষণ এবং উপস্থাপন ক্ষমতা শাণিত করে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজ ক্ষেত্রের বাইরে যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি দপ্তরে একজন জনসংযোগ কর্মকর্তার সার্বিক দক্ষতা সৃষ্টি হয়। এখান থেকে শিক্ষার্থীরা যে বিশেষ দক্ষতাগুলো অর্জন করে, তা নিম্নরূপ।
বিশেষ দক্ষতা
ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করা, গবেষণা করা, ব্র্যান্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলা।
টিউশনি এবং খণ্ডকালীন শিক্ষকতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অসংখ্য শিক্ষার্থী টিউশনি এবং খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করে থাকে। টিউশনি করতে গিয়ে তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বয়স এবং শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শেখানোর দায়িত্ব নেয়। তারা যেমন শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়ায়, তেমনি কিশোর এবং তরুণদেরও পাড়ায়। বিভিন্ন বয়স এবং শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পড়াতে গিয়ে তারা শ্রোতার ধরন বুঝে কথা বলতে শেখে এবং স্বল্প জ্ঞানী থেকে শুরু করে বিচক্ষণদেরও বোঝানোর সক্ষমতা অর্জন করে। এই কাজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা যে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করে তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
বিশেষ দক্ষতা
বিভিন্ন বয়সী মানুষ পরিচালনা করা, ভিন্ন ভিন্ন শৈলির শিক্ষা নিয়ে কাজ করা, সাধারণের মধ্যে নতুন ধারণা সৃষ্টি করা, অপরিচিত দর্শকের সামনে কোন বিষয়ে উপস্থাপন করা।
সুনির্দিষ্ট বায়োডাটা
মানুষের জীবন নানা শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। কিন্তু সব শিক্ষা এবং অভিজ্ঞতা সুনির্দিষ্ট কোন চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগেনা। তাই বিশেষ কোন ক্ষেত্রে চাকরির জন্য বিশেষ কিছু দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হয়। সুতরাং আপনি যখন নতুন কোনো ক্ষেত্রে চাকরির জন্য বায়োডাটা প্রস্তুত করবেন তখন সুনির্দিষ্ট সেই ক্ষেত্রের জন্য উপযুক্ত এবং দরকারি তথ্যগুলো বায়োডাটায় বিশেষভাবে উল্লেখ করুন। বায়োডাটা এমনভাবে তৈরি করুন যেন আপনার তথ্য উপস্থাপনশৈলীর গুনে নতুন চাকরির জন্য নিয়োগকর্তারা আপনাকেই সবচেয়ে যোগ্য মনে করেন।
বায়োডাটা এবং কভার লেটারে সঙ্গতিপূর্ণ বিশেষ দক্ষতা
আপনার স্থানান্তরযোগ্য অর্থাৎ ভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করতে পারার দক্ষতা বায়োডাটা এবং কভার লেটারে যথাযথভাবে উল্লেখ করুন।
তবে লক্ষ্য রাখুন অবশ্যই সব তথ্য যেন সংগতিপূর্ণ হয়। অনেক আবেদনকারী শুধু কভার লেটারটি বিশেষ দক্ষতায় পরিপূর্ণ করে তোলেন, যার সাথে মূল বায়োডাটা সঙ্গতিপূর্ণ থাকে না। সুতরাং কভার লেটার লেখার সময় বায়োডাটার সাথে সংগতিপূর্ণ করে তুলুন।
Feature photo: network blog