চাকরি ক্ষেত্রে যে শব্দটি সবচেয়ে বেশি শোনা যায় তা হলো অভিজ্ঞতা। চাকরিদাতারা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থী খোঁজেন আর নতুনরা হতাশায় ভুগে কোথা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এই কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর হচ্ছে ইন্টার্নশিপ।
ইন্টার্নশিপ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে অথবা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ শেখা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাজ করা। ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে যেমন আপনার দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা অর্জন হয় সেইসাথে অনেকসময় স্বল্পকালীন আয়ের ব্যবস্থা হয় এবং অনেক সময় বিভিন্ন কোম্পানি ইন্টার্নদের মধ্য থেকে পূর্ণকালীন চাকরিতে নিয়োগ দিয়ে থাকে।
চাকরি পাওয়া থেকে ইন্টার্নশিপ পাওয়া কিছুটা সহজ, তবে সবসময় না। এটা নির্ভর করে আপনি কোন ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ করতে চান। যেমন ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ পাওয়া সহজ। ব্যাংকগুলোতে ৪ মাস পরে পরে ২-৩ জন করে, কোনো কোনো ব্যাংকে আরো বেশি ইন্টার্ন নিয়োগ দিয়ে থাকে।
তবে ইন্টার্নশিপ করার আগে আমাদের কিছু জিনিস খেয়াল রাখা উচিত-
- ইন্টার্নশিপের মুখ্য উদ্দ্যেশ্য অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করা, শুধুমাত্র চাকরি পাওয়া না। নিত্যনতুন কাজ শেখা, ভবিষ্যতে চাকরি করতে গেলে আপনার যেসব যোগ্যতা লাগবে সেগুলো অর্জন করার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- অনেক কোম্পানি ইন্টার্নদের পারিশ্রমিক দেয় না। কিন্তু এখানে পারিশ্রমিক মূল বিষয় না। পারিশ্রমিক না পেলেও আপনি যে অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন তা পারিশ্রমিক থেকে অনেক মূল্যবান। এছাড়া আপনি যদি আপনার কাজের মাধ্যমে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে হতে পারে কোম্পানি আপনাকে ইন্টার্নশীপের মেয়াদ শেষ হবার পর সরাসরি চাকরিতে নিয়োগ ও দিয়ে দিতে পারে।
- আপনি যদি ২-৩টা ইন্টার্নশিপ করতে পারেন তাহলে বুঝতে পারবেন আপনি কোন ধরণের কাজ করতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করেন এবং সেই কাজকে ভবিষ্যতে আপনি পেশা হিসেবে নিতে পারবেন।
এখন কিভাবে ইন্টার্নশিপ পাওয়া যাবে এই সম্পর্কিত কিছু বিষয় আলোচনা করবো।
অপেক্ষা না করা
আমরা অনেকেই চিন্তা করি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তারপর ইন্টার্নশিপ করবো। কিন্তু এখন অনেক কোম্পানি ছাত্রাবস্থায় ইন্টার্নশিপের সুযোগ দিয়ে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগানো উচিত। যত আগে থেকে ইন্টার্নশিপ শুরু করতে পারবেন তা আপনার জন্য ভাল। সামনে আপনার আরো ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাবেন। যদি আপনি ২-৩টি ইন্টার্নশিপ করতে পারেন তাহলে আপনার ক্যারিয়ারে উন্নতি করার সুযোগ আরো বৃদ্ধি পাবে।
সোশ্যাল মিডিয়া
খেয়াল রাখুন, আপনি যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকেন। আপনার যোগ্যতা, দক্ষতা যাতে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিফলিত হয়। আপনি যদি কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন, হোক তা কলেজ বা ইউনির্ভাসিটির ছোট কোনো অনুষ্ঠান, বিয়ের অনুষ্ঠান অথবা আপনি যদি কোনো সমাজসেবামূলক কাজ, লেখালেখির সাথে জড়িত থাকেন তাহলে আপনার সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার করুন। এসব কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রকাশ পায় যে, আপনি কাজ করতে আগ্রহী, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত ও দলগত কাজে পারর্দশী। হয়তো বা আপনার ভবিষ্যত নিয়োগকর্তা আপনার সোশ্যাল মিডিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টে আছেন।
নেটওয়ার্কিং
নেটওয়ার্কিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের চাকরি হয় ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুপারিশের মাধ্যমে। আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে চান সেসব কোম্পানির বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সেমিনার ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করুন। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে পরিচিত হবার চেষ্টা করুন। হতে পারে, এভাবে কোনো একসময় আপনি তাদের সহকর্মী হয়ে যেতে পারেন।
পরিচিত মানুষ খুঁজে বের করা
আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করতে চান সেসব কোম্পানির তালিকা তৈরী করুন। আপনার পরিচিত কেউ যদি এসব কোম্পানিতে চাকরি করে থাকেন তাহলে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করুন। তাদেরকে বুঝিয়ে বলুন আপনার দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে এবং আপনি কেন এই কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী।
ইন্টার্নশিপ পেতে হলে আপনাকে চেষ্টা করে যেতে হবে। কোম্পানিগুলোর খবরা-খবর রাখতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় উপস্থিত থাকতে হবে। যেমন তাদের সেমিনার, ওর্য়াকশপ ইত্যাদিতে অংশগ্রহণ করা। হতে পারে হঠাৎ করে সঠিক সুযোগটি পেয়ে যেতে পারেন।
Featured Image: kbic.com