মার্ক জাকারবার্গ নামটি শুনলেই শিহরণ জাগে। মানুষটিকে কাছে থেকে জানবার শখ হয়। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে তার প্রতিষ্ঠিত সামজিক মাধ্যম ফেইসবুক ৪৩৩.২৫ বিলিয়ন মার্কেট ক্যাপ অর্জন করেছে। এটি অবিশ্বাস্যকর কিছুই নয় যে, ফেসবুকের CEO র সারাদিনে অনেক কাজই করতে হয়। তবুও জাকারবার্গ নিজেই বলেছেন এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি ব্যায়াম, ভ্রমণ এবং পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য সময় বের করেন।তিনি এমন এক ব্যক্তিত্ব যার প্রতিদিন কেমন ভাবে কাটান তা নিয়ে আমাদের আগ্রহের নেই কোনো পরিসীমা। সাফল্যের চরম শিখরে আরোহণকারী এই ব্যক্তিটি তার নিত্যনৈমিত্তিক সময়গুলো কিভাবে কাটান তা জেনে নিতে পারেন।
১. যেকোনো সফলতার পেছনে প্রার্থনা একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। প্রতিটি কাজকে আরো বেশি সাহসিকতা নিয়ে শুরু করবার মনোবল জোগাতে প্রার্থনার চেয়ে ভালো মাধ্যম আর হতে পারে না। প্রতিরাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মার্ক তার প্রথাগত Jewish প্রার্থনা Mi Shebeirach করে ঘুমান। প্রতিটি সফলতার জন্য সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য প্রকাশে তিনি পিছপা হন না।
২. সফলতা বা ব্যস্ততা যেন প্রিয়জনের সাথে দূরত্বের কারণ না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কোন কাজ বা ভ্রমণ যা-ই থাকুক মার্ক তার স্ত্রী ডক্টর প্রিসচিলা চ্যান এবং তার তার মেয়ে ম্যাক্সের সাথে সময় কাটান। ২০১৫ সালে মার্ক ফেসবুক থেকে ২ মাসের বিরতিতে ছিলেন; যখন তিনি প্রথম কন্যা সন্তানের বাবা হন। এছাড়া ২০১৭ আবারো দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের বাবা হন।
৩. কিছুদিন আগে জাকারবার্গ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেছেন এবং সেই সাথে ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনার কথাও বলেছেন। এছাড়া তার সেলেব্রিটি বন্ধু ভিন ডিজেলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহ অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্বদের সাক্ষাৎ করেছেন।
৪. প্রতিটি কাজের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা জরুরী। জাকারবার্গের কাজের রুটিন তার বিভিন্ন পরিকল্পনার সাথে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
৫. প্রতিটি নতুন কাজ আপনার মনকে আরো বেশি উন্মুক্ত হতে সাহায্য করে। অবসরের সময়গুলো ভালো কোন শিক্ষার পেছনে ব্যয় করা উচিত। যখন মার্ক জাকারবার্গ অবসরে থাকেন তিনি তার মনকে উন্মুক্ত করার পেছনে এবং নতুন কিছু শেখার পেছনে সময় ব্যয় করেন। তিনি মান্দারিন চাইনিজ ভাষা শেখার চেষ্টা করছেন। এছাড়াও তিনি বই পড়তে ভালোবাসেন এবং অবসরে বইয়ের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। ২০১৫ সালে তিনি নিজেই নিজের কাছে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন প্রতি দুই সপ্তাহে তিনি নতুন একটি বই পড়বেন।
৬. জাকারবার্গের প্রতিটি কাজের পেছনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের উন্নয়নের একটি মহৎ উদ্দেশ্য থাকে। একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে, জাকারবার্গ ১২ সদস্যের একটি দল গঠন করেছেন তার জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের জন্য। যারা নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন ফেসবুক থেকে আপত্তিকর পোস্ট এবং কমেন্ট ডিলিট করে।
৭. কাজের সময়ে কাজ এবং ভাবনার সময় শুধুই ভাবার জন্য সময় ব্যয় করা উচিত। জাকারবার্গ সপ্তাহে ৬০ থেকে ৭০ ঘন্টা ফেসবুকের জন্য কাজ করেন কিন্তু প্রতিনিয়ত তিনি ফেসবুককে আরো বেশি উন্নত করার কথা ভাবেন। CNN কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকারবার্গ বলেন, বেশিরভাগ সময় আমি আমার ভাবনাগুলো ব্যয় করি কিভাবে পুরো পৃথিবীটাকে যুক্ত করা যাবে এবং কিভাবে আমাদের সমাজের জন্য আরো কিছু করা যাবে কিন্তু এই ভাবনাগুলো কখনোই কাজের সময় বা মিটিং চলাকালীন সময়ে ব্যয় করি না, কাজের সময় শুধু কাজগুলোকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি।
৮. ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক হিসেবে শুধু পোশাক কোনো মাধ্যম হতে পারে না। জাকারবার্গ প্রায় প্রতিদিনই একই পোশাক পরিধান করেন। তিনি সবসময় জিন্স, স্নিকার এবং ধূসর বর্ণের টিশার্ট পরেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সমাজের উন্নয়নের পরিচায়ক হিসেবে এই পোশাকটি তার নিজস্ব পরিচয়ের বহন করে।
৯. কী খাবো, কী জামা কাপড় পরবো এইসব ছোট খাটো ভাবনায় কখনোই সময় অপচয় করা উচিত নয়। সফল ব্যক্তিত্বদের একটি বিশ্বাসের জায়গা হলো ভাবনার মতো মূল্যবান বিষয়গুলো বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যয় করা উচিত। ব্যায়ামের পর জাকারবার্গ সকালের নাস্তার জন্য কী খাবেন এই ভাবনায় সময় ব্যয় করেন না। ছোট খাটো সিদ্ধান্তের পেছনে তিনি সময় ব্যয় করতে পছন্দ করেন না।
১০. পোষা প্রাণীর সাথে কাটানো সময় হতে পারে নিঃসন্দেহে আপনার মনের আনন্দ জোগানোর মাধ্যম। এছাড়া ব্যস্ত সময়গুলোতে এমন কিছু ভালোলাগার জায়গা জীবনে থাকা উচিত যেগুলোর সংস্পর্শে আসলে আপনার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে। জাকারবার্গ একটি হাংগেরিয়ান সিপ ডগ পালেন। মাঝে মধ্যেই তিনি তার পোষা কুকুরকে নিয়ে বের হতে পছন্দ করেন। Tech CEO এর মতে, জুকারবার্গের পোষা প্রাণীর সাথে কাটানো সময়টুকু তার হাসিখুশি থাকার একটি অন্যতম কারণ।
১১. ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়ামের জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করা উচিত। কর্মদক্ষতাগুলোকে ভালোভাবে কাজের লাগানোর জন্য ব্যায়াম হতে পারে একটি কার্যকরী দিক। জাকারবার্গ সকালের কাজের রুটিনটা ঠিক করেই ব্যায়ামের জন্য বের হয়ে পড়েন। তিনি সাধারণত সপ্তাহে ৩ দিন ব্যায়ামের জন্য বের হয়ে থাকেন।
১২. যেকোনো সামাজিক মাধ্যমে প্রয়োজনের অধিক সময় কাটানো উচিত নয়। সকালে উঠেই সামাজিক মাধ্যমগুলোতে প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে নিতে পারেন। সকালে ৮ টায় ঘুম থেকে উঠেই ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা জুকারবার্গ তার ফেসবুক, মেসেঞ্জার এবং হোয়াটস এপে সময় কাটান কিছুক্ষণ। ফেসবুকের একটি লাইভে তিনি এ ব্যাপারে Jerry Seinfeld কে বলেছেন। মার্ক জাকারবার্গ তার জীবনে সফলতার পেছনে নিয়মতান্ত্রিক জীবনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।