পাঠক কাকে বলে? যারা বই পড়ে তাদেরকেই পাঠক বা রিডার বলা হয়। কিন্তু সবাইকে ভাল পাঠক? নিশ্চয়ই না! ভাল পাঠক এবং শুধুই পাঠকদের মধ্যে বেশ কিছু তফাত রয়েছে। অনেকে বই পড়াটাকে উপভোগ করে মনের প্রশান্তি এবং জ্ঞান আহরণের জন্য। বই পড়া এমনই এক গুণ যা মানুষের শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে। কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে আপনি কিংবা আপনার সন্তানও একজন ভাল পাঠক হয়ে উঠতে পারেন। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেই সব পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে।
সহজ থেকে শুরু
খটোমটো কোনো বই না নিয়ে শুরুতে সহজপাঠ্য কোনো বই দিয়েই পড়া শুরু করা উচিত। শুরুতেই কঠিন বই পড়া শুরু করলে পড়ার আগ্রহটাই চলে যায়, যদি না আমরা সেই বিষয়টি বুঝতে পারি। এক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানা যেতে পারে। যেমন-
- বইয়ের প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা দ্রুত পড়ে যেতে হবে। এই কয়েক পৃষ্ঠা পড়েও যদি আমরা লেখকের মনোভাব না বুঝতে পারি। তার মানে আমরা বইটি উপভোগ করছি না।
- আমরা যদি শুরুতেই কোনো গবেষণার বই বা সায়েন্টিফিক বই পড়ার জন্য নির্বাচন করি, তাহলে এর আগে সেই বিষয়গুলোর বেসিক জিনিস জেনে নিতে হবে। যেমন মহাকাশ সম্পর্কে কিছু পড়তে চাইলে এর আগে সৌরজগৎ নিয়ে কিছু জেনে রাখা প্রয়োজন।
- পাঁচ আঙ্গুলের নিয়ম অনুসরণ করুন। একটি বই নিজ এবং প্রথম দুই-তিন পৃষ্ঠা পড়া শুরু করুন। যেসব শব্দের উচ্চারণ বা অর্থ জানবেন না সেগুলোর উপর একটা একটা করে আঙ্গুল দিয়ে রাখুন। যদি ৫টি বা এর বেশি আঙ্গুল রেখে দেন। তার মানে বইটি আপনার জন্য একটু কঠিন।
শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি
বই পড়া হবে খুবই সহজ এবং উপভোগ্য যদি আপনার শব্দভাণ্ডার বেশ সমৃদ্ধ থাকে। তাই যত বেশি পারবেন নিত্যনতুন শব্দ শিখে রাখবেন। আপনি হয়তো বইয়ের একটি লাইনের কোনো শব্দের অর্থ বুঝতে পারছে না। পুরো বাক্যটি পড়ে শব্দটির অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। আর তা না হলে ডিকশনারিতে চোখ বুলিয়ে অর্থ খুঁজুন। শুধু অর্থ বুঝলেই হবে না,বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ!
নিয়মিত বই পড়ুন
প্রত্যেকদিন বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। দিনের এক ভাগ শুধুই বই পড়ার জন্য আলাদা করে রাখুন। হতে পারে সেটা ১৫-৩০ মিনিট। তবে জোর করে কখনোই পড়ার চেষ্টা করবেন না। এতে পড়ার প্রতি একঘেয়েমি চলে আসবে। বাসে বা ট্রেনে বসে বসে সময় নষ্ট না করে দুই পাতা বই পড়ে ফেলুন না! এতে বই পড়াও হবে, সময়টাকে কাজে লাগানোও হবে। যদি একা একা সময় কাটান তাহলে জোরে জোরে বই পড়ুন। এতে নিজের রিডিং দক্ষতাও যাচাই করা যাবে সেই সাথে উচ্চারণও। আর যখন যে বই পড়বেন, সেই বইয়ের কাহিনী চোখের সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করুন। এতে আপনার কল্পনাশক্তি বাড়বে এবং বইয়ের কাহিনীও মনে থাকবে।
নিজের পছন্দমত বই পড়ুন
ধরুন আপনার সামনে দুইটি বই রাখা হলো। একটি আপনার পছন্দের বিষয়ে এবং অপরটি আপনার পছন্দের বিষয়ে নয়। আপনি অবশ্যই সেই বইটি নিবেন যেটি আপনার পছন্দের সাথে খাপ খায়। অন্যটা আপনি ছুঁয়েও দেখবেন না। তাই এমন বই খুঁজুন যা কিনা আপনার শখ, ক্যারিয়ার এবং আগ্রহের সাথে যায়। একজন নতুন পাঠক হিসেবে শুরুতেই প্রবন্ধ বা উপন্যাসের বই না নিয়ে কমিক বুক, গ্রাফিক নভেল বা ছোট গল্প নিন। এগুলো আপনার পড়া সহজ করে দিবে।
উপযুক্ত পরিবেশ তৈরী করুন
এমন একটি জায়গা খুঁজুন যেখানে কেউ আপনাকে বিরক্ত করবে না। সেই জায়গায় অবশ্যই কোনো টেলিভিশন বা রেডিও সেট থাকবে না অর্থাৎ ঘর হবে সম্পূর্ণ কোলাহলমুক্ত। লক্ষ্য রাখবেন ঘরে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো থাকে এবং বই সবসময় চোখ থেকে ১৫ ইঞ্চি দূরে ধরে রাখবেন। যেখানে বই পড়বেন সেই জায়গাটি যাতে আরামদায়ক হয় সেটিও খেয়াল রাখা জরুরি।
শেয়ারিং থেকেই কেয়ারিং
বিদ্যা অর্জন করে শুধু নিজের মধ্যে রাখলেই হবে না, তা অন্যকেও জানানোর সুযোগ করে দিতে হবে। তাই বন্ধুদের মধ্যে ছোট ছোট দল গঠন করে বই আদান-প্রদানের মানসিকতা গড়ে তুলুন। এছাড়া কোন সময়ে কোন বইটি পড়ছেন এটা নিয়ে একটা রিভিউ লিখে ফেলুন না কোনো ব্লগিং সাইটে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বলতে পারেন কোনো বই সম্পর্কে আপনার মন্তব্য। এতে আপনার আরো ১০ জন বন্ধু বইটি সম্পর্কে জানতে পারবে।
পারিবারিকভাবে বই পড়া
আপনার যদি বই পড়ার অভ্যাস থাকে তাহলে চেষ্টা করুন সেই অভ্যাসটা আপনার পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে। যার যার রুমে তাদের বয়স অনুযায়ী বই সাজিয়ে রাখুন। যাতে সবাই তাদের বয়স উপযোগী বই পড়তে পারে। আর আপনার সন্তান যদি আপনার কাছে বারবার একই বই পড়ার অনুরোধ করে তাহলে তাকে মানা করবেন না। কারণ একই বই বারবার পড়ার মাধ্যমে বইটি সম্পর্কে তার একটি স্পষ্ট ধারণা গড়ে উঠবে এবং প্রত্যেকটি শব্দের মানেও সে বুঝতে পারবে।
ঘুরে ঘুরে বই পড়ুন
বই নিয়ে শুধু বাসায় বসে থাকলেই হবে না। আশেপাশে কোথায় কোথায় বই পাওয়া যায় সেই জন্য চোখকান খোলা রাখতে হবে। লাইব্রেরি এমন এক জায়গা যেখানে আপনি সব বিষয়ের বই পাবেন। আর বইয়ের সাগরে হারিয়ে গেলে কোনো ভয় নেই! আলোকদিশারী হিসেবে লাইব্রেরিয়ান আছেন তো! এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে ছোট-খাটো দোকানগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যাবে ভালোমানের সেকেন্ড হ্যান্ড বই বেশ কম দামে পাওয়া যাবে। তবে কেনার আগে বইয়ের পাতা ভালোভাবে দেখে নিতে ভুলবেন না।