বাসায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো নিঃসন্দেহে একটি বড় দায়িত্ব। তবে এই কাজের মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায় যা অন্য কোন পার্ট-টাইম কাজ থেকে করা যায় না। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দেওয়াটা একজন শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়লেও বিষয় বহির্ভূত অনেক গুরুত্বপূর্ণ কৌশল, পদ্ধতি, ধারণা রয়েছে যা ছাত্র ছাত্রীদের শেখানোর মাধ্যমে তাদের জ্ঞানের পরিধির বিস্তার ঘটানো যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষা দিলেই ভালো শিক্ষক হওয়া যায় না। ভালো শিক্ষক হতে হলে শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করার জন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। স্বতন্ত্রভাবে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদের ভেতর চেতনাশক্তির উদ্ভব ঘটার সাথে সাথে চিন্তাশক্তিরও বিকাশ ঘটতে পারে।
আসুন জেনে নিই ভালো গৃহশিক্ষক হতে হলে যে কাজগুলো করা প্রয়োজন তা সম্পর্কে।
শিক্ষার্থীদের চাহিদা বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখা
তারা ইতিমধ্যে যা জানে তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন
যখন আপনি প্রথম তাদের সাথে দেখা করতে যাবেন অথবা প্রথম পড়াতে যাবেন তখন নিজে কিছু না বলে তারা ইতিমধ্যে যা জানে তা সম্পর্কে শুনুন। আপনি তাদের জিজ্ঞেস করুন তারা কোন কাজে দক্ষ বা কোন বিষয়ে দক্ষ কিংবা কোন বিষয় পড়তে তাদের বেশি ভালো লাগে। ঐ বিষয় সম্পর্কে তাকে খোলাখুলি বক্তব্য পেশ করার সুযোগ দিন। এতে আপনার শিক্ষার্থীরা নিজেদের গ্রহণযোগ্য মনে করবে এবং তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে।
জিজ্ঞাসা করুন তাদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে
শিক্ষার্থী নিজে ভালো করে জানে তার দুর্বলতার জায়গাগুলো সম্পর্কে। সে জানে পরীক্ষায় কোন কুইজের উত্তর সে দিতে পারেনি এবং ক্লাসের কোন লেকচার সে বুঝতে পারেনি। যেগুলো সে বুঝতে পারেনি সেগুলো ভালো করে ব্যাখা দিয়ে বুঝিয়ে দিন। প্রয়োজনে উদাহরণের সাহায্য নিতে পারেন।
লক্ষ্য নির্ধারণে একসঙ্গে কাজ করুন
নির্দিষ্ট সময়কে কেন্দ্র করে কিছু মুখ্য ও গৌণ উদ্দেশ্য নির্ধারণ করুন। উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষার্থী অঙ্কে দুর্বল হলে এক মাসে হয়ত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারবে না। তাহলে ৩ মাসের কর্মসূচী গ্রহণ করুন। ৩ মাস পর নিশ্চয়ই সে দুর্বলতা কাটিয়ে অগ্রগতির দিকে যাবে। গৌণ উদ্দেশ্যগুলো সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য এবং মুখ্য উদ্দেশ্যগুলো অপেক্ষাকৃত অধিক সময়ের জন্য গ্রহণ করতে হবে। মুখ্য ও গৌণ উদ্দেশ্যগুলো শিক্ষার্থী চাইলে একটি কাগজে লিপিবদ্ধ করে রাখতে পারে।
শিক্ষার্থীদের উন্নতিকে চিহ্নিত করুন
শিক্ষার্থী ক্লাসে এবং কুইজে কেমন করছে, আগের চেয়ে ফলাফলের উন্নয়ন হয়েছে কিনা তার একটি তালিকা তৈরি করুন। এই তালিকায় যে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে তা হলো
- কুইজ এবং টেস্ট গ্রেডস
- শ্রেণির সামগ্রিক ফলাফল
- দুজন একত্রিত হয়ে যে গোল সেট করা হয়েছে তার সম্পাদিত কাজ
- ছাত্র ছাত্রীদের প্রচেষ্টার উপর আপনার মূল্যায়ন
- ছাত্রদের পাঠ বোঝার ক্ষমতা, গ্রহণ করার ক্ষমতা সম্পর্কে আপনার অভিমত
- তাদের ভালো ফলাফল, সফলতার জন্য খুব প্রশংসা করুন। অনেক প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও যদি কোন ছাত্র বা ছাত্রী কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে না পারে তাহলে এই তালিকা তাকে হতাশা থেকে দূরে রাখবে।
গত অধ্যায়ে যা পড়ানো হয়েছে তা নিয়ে খানিক আলোচনা
নতুন অধ্যায়ে যাওয়ার আগে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে পূর্বে পড়ানো অধ্যায় বা পাঠ শিক্ষার্থী আয়ত্ত্ব করতে পেরেছে কিনা। তাকে একটি বা দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসার মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন সে ঐ অধ্যায় বা পাঠ বুঝেছে নাকি বোঝেনি। যদি পূর্বের পাঠে তার দুর্বলতা থেকে যায় তাহলে আপনি সংক্ষেপে আবার বুঝিয়ে দিন।
শ্রেণী থেকে দেয়া বাড়ির কাজে সহযোগিতা করুন
শিক্ষার্থী যদি আপনাকে জানায় শ্রেণি থেকে প্রোজেক্ট, এসাইনমেন্ট, হাতের লেখা দিয়েছে আপনি তাকে ঐ কাজে সহযোগিতা করুন। প্রতিটি প্রোজেক্টের কাজকে সহজভাবে করা যাবে দুজন মিলে করলে। সম্পূর্ণ প্রজেক্টের কাজ আপনি করে দিবেন না। আপনি শুধু দিক নির্দেশনা দিবেন। শিক্ষার্থী নিজেই কাজগুলো করবে।
সফলতার জন্য সুযোগ প্রদান
আপনি যদি আপনার লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যান, প্রতিটি পাঠ সঠিকভাবে পড়ানো শেষ করেন তাহলে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আপনার উচ্চাশা থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিক্ষার্থী যদি আপনার প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো ফলাফল না করে তাহলে তাকে আবারও সুযোগ দিন। প্রয়োজন হলে কঠিন অধ্যায়, অংক, টপিকসমূহ বার বার অনুশীলন করার সুযোগ দিন।
প্রয়োজন বিরতির
পড়ানোর মাঝে আপনার ছাত্র বা ছাত্রীকে পাঁচ মিনিটের বিরতি দিন। একটানা পড়াশোনা মাথায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাই বিরতির প্রয়োজন। পাঁচ মিনিটের বিরতি তাকে সতেজ হতে সাহায্য করবে এবং মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
শিক্ষার্থী যেভাবে বোঝে আপনি সেই পদ্ধতি অনুসরণ করুন
সকল শিক্ষার্থী এক পদ্ধতিতে বোঝে না কারণ সবার বোঝার ক্ষমতা এক নয়। কিছু ছাত্রছাত্রী খুব তাড়াতাড়ি বোঝে, আবার কেউ কেউ বোঝে না। যারা বোঝে না তাদের জন্য ভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করুন। কোনো শিক্ষার্থী যদি চিত্র আঁকার মাধ্যমে বোঝে তাহলে তাই করুন, ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে বুঝলে তার মাধ্যমেই বোঝান।
সুসম্পর্ক স্থাপন
শিক্ষার্থীর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলুন
আপনার কাজ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা দান করা। শিক্ষা দান করার পাশাপাশি আপনি তার সাথে সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন। আপনাদের মাঝে সুন্দর সম্পর্ক থাকলে আপনি তাকে ভালো ফলাফলের জন্য অনুপ্রেরণা দিতে পারবেন। মাঝে মাঝে নিজের ব্যর্থতা এবং তা কাটিয়ে উঠার বর্ণনা দিন যেন তা থেকে শিক্ষার্থী কিছু শিখতে পারে।
শুধু শিক্ষক নয় তার পাশে পথ প্রদর্শক হয়ে থাকুন
বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং গৃহ শিক্ষকের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষকের অনেক ছাত্রছাত্রীকে সামলাতে হয়। গৃহশিক্ষক শুধু একজনের দায়িত্ব নেন। গৃহশিক্ষক ছাত্রছাত্রীর পথ প্রদর্শক হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারেন।
অভিভাবকদের সাথে আলোচনা
অভিভাবকদের সহযোগিতা ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না। শিক্ষার্থী কেমন পড়াশোনা করছে, পাঠে মনোযোগী কিনা ইত্যাদি সম্পর্কে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করুন। অভিভাবক দ্রুত সমাধান দিতে পারবেন।