আইটি খাতের অনেক বড় একটি শাখা হচ্ছে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং। এই খাতের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের কম্পিউটার ইক্যুইপমেন্টের (সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার) ডেভেলপমেন্ট, গবেষণা, ডিজাইন, ইন্সটলেশন এবং টেস্টিংয়ের মতো অনেক ধরণের বিষয় রয়েছে। এছাড়াও কম্পিউটারের প্রসেসিং ইউনিট, ইন্টারফেস ডিভাইস, সার্ভার এবং নেটওয়ার্ক সুইচের সাথে সম্পৃক্ত কাজগুলোও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মধ্যে পড়ে। একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট মূলত এসব নিয়েই কাজ করে থাকেন। চলুন দেখে আসি, কীভাবে একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বেন।
Source: today.uic.edu
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট কী কী কাজ করে থাকেন?
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট মূলত কম্পিউটারের বিভিন্ন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের ডিজাইন, ইন্সটলেশন, ডেভেলপমেন্ট এবং রিসার্চের কাজ করে থাকেন। চলুন জেনে নেয়া যাক একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের কাজগুলো,
১. বিভিন্ন ধরণের নিত্য নতুন সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট করা।
২. বিভিন্ন সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের আপগ্রেড করা।
৩. বিভিন্ন সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যারের ইমপ্লিমেন্টেশন স্পিড, পারফর্ম্যান্স ও ফাংশনালিটি বৃদ্ধি করা।
৪. বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের মধ্যে আপগ্রেডেড সফটওয়্যার ইন্সটল করা ও এর ফাংশনালিটি টেস্ট করা।
৫. বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার ট্রাবলশ্যুট করা ও কম্প্যাটিবিলিটি টেস্ট করা।
৬. বিভিন্ন কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার নিয়ে গবেষণা করা।
৭. প্রসেসর, সার্ভার ও বিভিন্ন ধরণের নেটওয়ার্ক সুইচ ও সার্কিটের পরীক্ষা করা ও পারফর্ম্যান্স বৃদ্ধি করা।
৮. বিভিন্ন অর্গানাইজেশনের জন্য সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার অ্যাসেট তৈরি করা।
৯. বিভিন্ন কোম্পানির সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট সহায়তা করা।
১০. বিভিন্ন কোম্পানির আইটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের দেখাশোনা করা।
১১. বিভিন্ন ধরণের রোটেশনাল মিডিয়া ও সলিড স্টোরেজ ডিভাইসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা।
১২. সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের ফরেনসিক অ্যানালাইসিস করা।
১৩. বিভিন্ন ধরণের ইলেক্ট্রনিক সার্কিট ও অ্যাসেম্বলির টেস্টিং ও মেইনটেনেন্স করা।
১৪. টেকনিক্যাল এক্সপ্লোয়েশনে দলগতভাবে কাজ করা।
Source: phys.org
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের ক্যারিয়ার কেমন হতে পারে?
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার পূর্বে আপনি, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, ডিজিটাল মার্কেটার, নেটওয়ার্ক ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার, প্রোগ্রামার অথবা হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের চাকরি দ্বারা ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। উপরোক্ত পদগুলো থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করে ফটোনিক্স ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার অ্যানালিস্ট, ডেটা সায়েন্টিস্ট, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটর, সিনিয়র কম্পিউটার প্রোগ্রামার অথবা কম্পিউটার সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট অথবা কম্পিউটার হার্ডওয়্যার টেস্টার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
Source: fiverr.com
এছাড়াও আপনার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে মবিলিটি হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, সিস্টেমস অ্যাপ্লিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার আর্কিটেকচার, মাইক্রোচিপ আর্কিটেকচার, সেমিকন্ডাক্টর আর্কিটেকচারের মতো কিছু পেশার দক্ষতা ও যোগ্যতা থাকলে, কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হওয়াটা অনেক সহজ হয়ে যাবে আপনার জন্য।
Source: sciencenews.org
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে, আপনাকে যে সকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হবে তা হচ্ছে,
১. টেকনিক্যাল ও নন-টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
২. অ্যানালিটিক্যাল দক্ষতা থাকতে হবে।
৩. বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
৪. আইটির উপর বেশ ভালো দক্ষতা থাকতে হবে।
৫. মাইক্রোসফট অফিসসহ অন্যান্য অফিস অ্যাপ্লিকেশনের উপর যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হবে।
৬. বিভিন্ন ধরণের হার্ডওয়্যার ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের উপর দক্ষ হতে হবে।
৭. কম্পিউটার ও আইটি ইথিকসের উপর পারদর্শী হতে হবে।
৮. সূক্ষ থেকে সূক্ষতর বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে।
৯. সৃজনশীল চিন্তাভাবনা করার দক্ষতা থাকতে হবে।
১০. নিত্যনতুন টেকনোলজির সাথে আপডেটেড থাকতে হবে।
১১. অসাধারণ স্ট্র্যাটেজিক ও প্ল্যানিং করার দক্ষতা থাকতে হবে।
১২. ইলেক্ট্রনিক সার্কিট অ্যানালাইসিস, ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক্স ইক্যুইপমেন্টের উপর দক্ষ হতে হবে।
১৩. কম্পিউটারের উচ্চ ও নিম্ন লেভেলের প্রোগ্রামিং ভাষায় যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হবে।
১৪. বিভিন্ন ডিভাইসের জন্য মাইক্রোপ্রসেসর ও অন্যান্য মাইক্রোচিপ ইক্যুইপমেন্ট তৈরি করার দক্ষতা থাকতে হবে।
১৫. যেকোনো প্রোগ্রামিং ভাষার সাথে সম্পৃক্ত অ্যালগরিদম ও ফ্লো চার্ট সম্পর্কে জানতে হবে।
১৬. কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের এম্বেডেড সিস্টেমস সম্পর্কে অভিজ্ঞ হতে হবে।
Source: vu.edu.au
উপরের দক্ষতাগুলো ছাড়াও, একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের কিছু সাধারণ দক্ষতা থাকা উচিৎ। সেগুলো হচ্ছে,
১. জটিল বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করার দক্ষতা থাকতে হবে।
২. বিভিন্ন সমস্যায় দ্রুত সমাধান বের করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
৩. যেকোনো বিষয়ে আস্থা রাখার মতো মন মানসিকতা থাকতে হবে।
৪. বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় খাপ খাওয়ানোর দক্ষতা থাকতে হবে।
৫. অসাধারণ যোগাযোগ দক্ষতা থাকতে হবে।
৬. যেকোনো বিষয়ে বিচক্ষণতার সাথে নেগোসিয়েশন করার দক্ষতা থাকতে হবে।
৭. অসাধারণ ইন্টারপার্সোনাল দক্ষতার অধিকারী হতে হবে।
Source: bostonglobe.com
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে?
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার পূর্বে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, আইটি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট, কম্পিউটার সায়েন্স, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, প্রোগ্রামিং অথবা ওয়েব ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইনের উপর কমপক্ষে দুই থেকে চার বছরের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করা যায়। তারপর, হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও ডিজাইনের কোর্স করলেই একজন প্রফেশনাল কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া যায়।
Source: cslbehring.ch
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের কী ধরণের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে?
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করার পূর্বে, আপনাকে কম্পিউটার সায়েন্স, ম্যানেজমেন্ট, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এন্ড ডিজাইন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, প্রোগ্রামিং এবং মার্কেটিংসহ বিভিন্ন খাতের ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের উপর কমপক্ষে ১ থেকে ৩ বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
Source: interestingengineering.com
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের বেতন কেমন হতে পারে?
যদি আপনি একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাহলে আপনার বাৎসরিক বেতন এন্ট্রি লেভেল ও সিনিয়র লেভেলে ভিন্ন ভিন্ন হবে। এন্ট্রি লেভেলের একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের বাৎসরিক বেতন হয় সর্বনিম্ন ৩০ লক্ষ টাকা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। সিনিয়র লেভেলের একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্টের বাৎসরিক বেতন হয় সর্বনিম্ন ৫০ লক্ষ টাকা থেকে থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত।
Source: edscoop.com
এছাড়াও, কম্পিউটার ও আইটি খাতের অন্যান্য পদে বেতন স্কেলে তারতম্য দেখা যায়। যেমন: একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামারের বাৎসরিক বেতন ২০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়। আবার, একজন ডিজিটাল মার্কেটারের বাৎসরিক বেতন ১৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। একইভাবে, একজন নেটওয়ার্ক অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের বাৎসরিক বেতন ১৫ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আবার, একজন ফরেনসিক অ্যানালিস্টের বাৎসরিক বেতন সর্বনিম্ন ১০ লক্ষ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
Source: cs.st-andrews.ac.uk
একজন কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়াটা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে, যদি আপনি ম্যানেজমেন্ট, আইটি, প্রোগ্রামিং অথবা হ্যাকিংয়ের উপর বেশ কিছু সার্টিফিকেট অর্জন করতে পারেন।
Featured Image: medium.com