আপনার কি ঘর সাজাতে খুব ভালো লাগে? যেখানেই ঘুরতে যাওয়া হোক না কেন, ঘর সাজানোর জিনিস দেখতে পেলেই হাত যেন এগিয়ে যায়। তাহলে নিজের এই স্বভাবকেই বেছে নিন সারা জীবনের সম্পদ হিসাবে। মানে এটাই কিন্তু হতে পারে অসাধারণ ক্যারিয়ার। কারণ বর্তমানে একজন প্রফেশনাল ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের চাহিদা তুঙ্গে।
বর্তমান সময়ে গ্র্যজুয়েশন শেষ করতে সময় লাগে ৪ বছর। আবার অনেক সময় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজটের কারণে কোর্স শেষ করতে সময় লাগে ৬-৭ বছর। কিন্তু কর্মমুখী শিক্ষায় আপনি ১-২ বছরের একটি কোর্স করে গড়ে নিতে পারেন আপনার ভবিষ্যৎ। অন্যের অধীনে চাকরি না করেও গড়ে তুলতে পারেন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টদের মতো নিজস্ব সেবাধর্মী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এ ধরণের কর্মমুখী শিক্ষায় অধ্যয়নরত অবস্থায় আপনি আয় করতে পারবেন। এসব কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে বর্তমান সময়ে এগিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে সব কিছু। ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং একটি বহুমাত্রিক পেশা, যেখানে সৃজনশীলতা ও প্রযুক্তি একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো বাসা ও কর্মক্ষেত্রের সাজসজ্জাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা।
সুন্দর গোছানো একটি ঘর কে না ভালবাসে? ঘরকে রঙিন করতে কার না ভালো লাগে? রঙের ব্যবহার, আসবাবপত্র, কাপড় গৃহসজ্জার উপকরণের সামগ্রিকতাকে ব্যবহার করে ঘর, অফিস সুন্দর করাই হচ্ছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন
Interior শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ Intro থেকে, যার অর্থ ভেতর। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে Design শব্দটি, যার অর্থ নকশা। এ দুটি শব্দ একত্রিত করলে হয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন যার আভিধানিক অর্থ দাঁড়ায় অভ্যন্তরীণ নকশা বা অন্দর সজ্জা। অনেকেই চান অফিস বা বাসা সুসজ্জিত হোক। যাতে অফিস বা বাসার মধ্যে কোনও জায়গা যাতে নষ্ট না হয়। এ ডেকোরেটেশনকে বলা হয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন।
সাধারণত ইন্টেরিয়র ডিজাইন বলতে ঘর গোছানোকে বুঝে থাকি আমরা, বাস্তবে শুধু ঘর গোছানো নয় ইন্টেরিয়র ডিজাইন আরো ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার
প্রতিটি স্থানকে কাজে লাগিয়ে আসবাবপত্র, লাইট, গৃহসজ্জা সামগ্রীর যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বাড়ি, অফিস বা যে কোনও প্রতিষ্ঠানকে আরামদায়ক ও নান্দনিক ভাবে উপস্থাপন করাই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রধান উদ্দেশ্য। আর যিনি একাজ দক্ষতার সঙ্গে করে থাকেন তিনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার।
আগে আমাদের দেশে স্থপতিরাই সাধারণত কোনো ভবন নির্মাণের পাশাপাশি তার ইন্টেরিয়র ডিজাইন করতেন। কিন্তু বর্তমানে আর্কিটেকটিং ও ইন্টেরিয়র ডিজাইন পৃথকভাবে করা হচ্ছে।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং পেশায় আসতে চাইলে
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সটির খুবই চাহিদা। এইচএসসি পাস করে যে কেউ ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং কোর্সটি করতে পারেন। ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হওয়ার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনা করার মানসিকতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে থাকতে হবে সূক্ষ্ম পরিকল্পনা করার মানসিকতা। একজন সত্যিকারের পেশাদার ডিজাইনারকে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, বাসা বাড়ি, অফিস আদালত, খেলার ময়দান ইত্যাদি স্থানকে নিজের চিন্তা-কল্পনা, গবেষণা, সৃজনশীলতা ও আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আরো আকর্ষণীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে গেলে শুধু ডিজাইন এঁকে দেওয়াটাই যথেষ্ট নয়, বরং একজন ডিজাইনারকে তার নিজস্ব ডিজাইন ও প্ল্যানিং ছাড়াও একাজে জড়িত কাঠমিস্ত্রি, রঙ মিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিশিয়ান সবার কাজ ভালোভাবে দেখাশোনা করতে হয় শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
কোথায় শিখবেন
বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখানোর বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে বাংলাদেশ ইন্টেরিয়র ডিজাইন ডেভেলপমেন্ট (বিআইডিপি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইউ অ্যান্ড অ্যালায়েন্স বিভাগ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ইন্সটিটিউট অব ইনোভেটিভ ডিজাইনের নাম উল্লেখযোগ্য।
ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ে এক বছর ও ছয় মাস মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিভিন্ন বিষয়ে চার বছর মেয়াদি অনার্স কোর্স। এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট কোর্স চালু আছে। সাধারণত এসএসসির পর চার বছরের ডিপ্লোমা কোর্স এবং এইচএসসি ও অনার্স পাস করে এক বছর মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স করা যায়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানে দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা কোর্স চালু আছে।
বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠানে ইন্টেরিয়র ডিজাইনিংয়ের উপর বিএসসি কোর্স চালু হয়েছে, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত। এসব কোর্সে আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং, ফ্লোরিং, ফার্নিচার ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ল্যান্ডস্কেপ ডিজাইন, অটোক্যাড, এয়ারকন্ডিশনিং, ফলস সিলিং, কালার কম্বিনেশন ইত্যাদি বিষয় শেখানো হয়।
বাংলাদেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সম্ভাবনা
রিয়েল এস্টেট শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত গড়ে উঠছে হাজার হাজার ফ্ল্যাট এবং কমার্শিয়াল বিল্ডিং। গড়ে উঠছে দোকান পাঠ, রেষ্টুরেন্ট, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান, দেশি বিদেশি নানা ব্র্যান্ডের শো রুম ইত্যাদি। তাই সময়ের সাথে সাথে বাড়ছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনের গুরুত্ব ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানির কাজের চাহিদা।
প্রায় সব রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠানই এখন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার নিয়োগ দিচ্ছে। তাই এখন আমাদের দেশে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাই সার্থকভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোর্সটি শেষ করার পর সহজেই চাকরি পাওয়া যায়।
সাধারণত যেসব ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ রয়েছে সেগুলো হল দালান নির্মাণ, আবাস, প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন করপোরেট গ্রুপ, স্থাপত্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্রতিষ্ঠান, আসবাবপত্র নির্মাতা ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন নামীদামী হোটেল, বিজ্ঞাপন সংস্থাসহ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের স্থাপত্য বিভাগ।
ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন
বর্তমানে দেশে অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইন ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে অনেক চাকরির সুযোগও বাড়ছে। এর পাশাপাশি ইন্টেরিয়র ডিজাইন শেখার পর ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে। তবে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করার জন্য সৃজনশীলতার পাশাপাশি চাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার মানসিকতাও। আমাদের দেশের অনেক তরুণ-তরুণী আপওয়ার্ক (ওডেস্ক) কিংবা ফ্রিল্যান্সার ডটকমে অটো ক্যাড অথবা থ্রিডি স্টুডিও ম্যাক্সের সাহায্যে বিভিন্ন ইন্টেরিয়র আইডিয়া ডিজাইন করে আয় করছেন হাজার ডলার। বর্তমানে দেশে অনেক ইন্টেরিয়র ডিজাইন কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যারা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে যাচ্ছে।
আধুনিক স্থাপনার অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যবর্ধনে প্রধান ভূমিকা রাখছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা। একটি প্রতিষ্ঠানের অন্দরমহলের সাজসজ্জা বৃদ্ধিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা বুঝতে পারছে কর্তৃপক্ষ। সেজন্যই বেড়েছে ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের চাহিদা। তাই এক্ষেত্রে উন্নত ক্যারিয়ার গড়তে পারেন যে কেউই।
Featured Image: job-design.com