আমরা সাধারণত ক্যারিয়ার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র অর্থনীতির বিষয়টি বিবেচনা করি। যেসব চাকরি বা পেশায় রোজগার বেশি আমরা সেইসব চাকরি বা পেশাকে নিজের ক্যারিয়ার হিসেবে নির্বাচন করে থাকি। এক্ষেত্রে নিজের পছন্দ, ভালোলাগা-মন্দলাগা, পারিবারিক অবস্থান, ধর্মবিশ্বাস, সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক অবস্থা এবং সার্বিক পারিপার্শ্বিক সবকিছুকে গৌণ হিসেবে বিবেচনা করি। ফলে বেশিরভাগ মানুষ অধিক রোজগারের কোনো ক্যারিয়ার নির্বাচন করার পরও অসুখী থাকে, অস্বস্তিতে ভোগে, অথবা নিজের ক্যারিয়ার ঠিক রেখে অন্য ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো ঠিক রাখতে পারে না।
আবার কিছু মানুষ আছে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার কি হবে তা নির্ধারণ করতে পারে না আর সারা জীবন ধরে হাপিত্যেশ করে। তাহলে উপায় কী? কিভাবে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করা যায়? কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ক্যারিয়ার নির্বাচন করা উচিত?
আমি ইতিমধ্যে এই বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছি আজ দ্বিতীয় পর্বে সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচন করার জন্য আরো কয়েকটি পরামর্শ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি এই নিবন্ধটিও আপনার যথার্থ ক্যারিয়ার নির্বাচনে সহযোগিতা করবে।
নতুন কিছু চেষ্টা করুন
আপনার চারপাশে থাকা যেকোনো অল্পবয়সী শিশুকে জিজ্ঞেস করুন, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও? দেখবেন সে উত্তর দিবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, নয়তো ব্যাংকার! আমরা শিশুদের মাথায় এমন কিছু বিশেষ পেশা বা চাকরির ভাবনা ঢুকিয়ে দিই আর ভাবি এই শিশুটি বড় হয়ে নিশ্চয়ই প্রতিষ্ঠিত হবে! আপনার সাথেও হয়তো এমন হয়েছে। পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনরা আপনাকে এমন কিছু জনপ্রিয় এবং খুব পরিচিত পেশার কথাই শিশুকালে শুনিয়েছে।
আমাদের দেশের সিংহভাগ শিশুকেই ক্যারিয়ারের ব্যাপারে শিশুকালে এভাবে শেখানো হয়, আর এই কারণেই শিশুরা বড় হওয়ার পরও এই ছকের বাইরে কিছু চিন্তা করতে ভয় পায়। অথচ এই হাতে গোনা চার-পাঁচটি জনপ্রিয় পেশার বাইরে হাজার হাজার পেশা বা চাকরি আছে, যা করে প্রচুর টাকা, সম্মান এবং স্বাচ্ছন্দ্য লাভ করা যায়।
আপনাকে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনে এই গৎবাঁধা ভাবনার বাইরে বের হতে হবে। নতুন কিছু করার কথা ভাবতে হবে। যদি এভাবে চেষ্টা করেন, তাহলে দেখবেন এমন চমৎকার সব পেশা খুঁজে পাবেন যা আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও নিজের যোগ্যতার সাথে মিল রেখে আপনাকে অনেক বেশি সুখ-স্বাচ্ছন্দ এনে দিবে। সুতরাং নতুন কিছু চেষ্টা করুন।
খণ্ডকালীন চাকরি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন
আপনার হাতে যদি কিছুদিন সময় থাকে আর আপনি বাস্তবসম্মতভাবে নিজের সম্ভাব্য ক্যারিয়ার পরখ করে দেখতে চান, তবে পূর্ণকালীন চাকরির বদলে আপনার জন্য খণ্ডকালীন চাকরি বেশি শ্রেয়। হয়তো আপনি চান না, কিন্তু পরিবার বা খুব আপন কেউ চায় আপনি তাদের পছন্দনীয় কাজে যোগ দেন। শুরুতে এই ভাবনা আপনার বিরক্তির কারণ হতে পারে, কিন্তু আপনি চাইলে ওই সম্ভাব্য পেশাটি পরখ করে দেখতে পারেন। হয়তো কাজ শুরু করার পর আপনার পেশাটি ভালো লেগে যেতে পারে। তাহলে এটাই হতে পারে আপনার যথার্থ পেশা।
আবার আপনার নিজের হয়তো কোনো একটি পেশার ব্যাপারে দুর্বলতা আছে, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনি এই পেশায় যুক্ত হতে ভয় পাচ্ছেন। তাহলে আপনি অন্তত কয়েক মাস এই কাজটি করে দেখতে পারেন। হতে পারে কাজ শুরু করার পর আপনার ভয় দূর হয়ে গেছে। সুতরাং খণ্ডকালীন চাকরি আপনাকে নিজের সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনে সাহায্য করবে। আপনি যা করতে চাইছেন অথবা যা করতে বাধ্য হচ্ছেন সেই পথটি আপনার জন্য সঠিক না ভুল তা খুব সহজেই এভাবে অনুধাবন করতে পারবেন।
বিক্ষিপ্ততা দূর করতে একটি স্বচ্ছ ক্যারিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করুন
এমন অনেক মানুষ আছে যাদের একই সাথে অনেকগুলো কাজ ভালো লাগে এবং সবগুলো কাজই তাদের কাছে সমান গুরুত্বের মনে হয়। এক্ষেত্রে তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না কোন কাজটি তারা ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিবেন। আবার অনেকে আছে একটি কাজ ভালোবেসে করতে শুরু করার কিছুদিন পর অন্য একটি কাজের ব্যাপারে তার আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তখন পূর্বের কাজটি অপেক্ষাকৃত গৌণ হয়ে পড়ে!
যেমন, আপনি একজন লেখক হতে চান কিন্তু লেখালেখি এবং এডিটিং শুরু করার কয়েক বছর পর আপনার মনে হলো, না আপনি আসলে একজন ফুটবলার হতে চেয়েছিলেন! এমন ভাবনা নিজের ক্যারিয়ার, এমনকি জীবনের জন্য বিধ্বংসী।
জীবনের এই নানাবিধ ভাবনা, ভালোলাগা ও শখ কখনো কখনো আমাদের বিক্ষিপ্ত করে তুলতে পারে। এই বিক্ষিপ্ততা দূর করতে তাই একটি চমৎকার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের আবার দীর্ঘমেয়াদে চাকরি করার পরিকল্পনা থাকে না। কিছুদিন চাকরি করার পর জমানো টাকা দিয়ে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করার পরিকল্পনা থাকে অনেকের। এই পরিকল্পনাও মন্দ না। তবে তা হতে হবে সুনিশ্চিত এবং তার জন্য থাকতে হবে যথাযথ পূর্বপ্রস্তুতি।
সুতরাং যেভাবেই আপনার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা করে থাকেন না কেন, তা যথাযথভাবে লিখে ফেলুন এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যান। আপনি নিশ্চিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।
সম্মান এবং সামাজিক অবস্থান
আপনার পারিবারিক এবং সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে ক্যারিয়ার নির্ধারণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি এমন কোনো কাজে যোগ দিবেন না যে কাজের কথা আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীদের সাথে খুশিমনে বলতে পারেন না অথবা যে পেশার কারণে আপনার পরিবার আপনার প্রতি অখুশি থাকবে।
নিশ্চিত করুন যে, নতুন পেশায় যোগ দেওয়ার পর আপনার সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা এবং সম্মান একটু হলেও বেড়েছে।