মানুষ যত বড় হতে থাকে তত তার পরিচিতির গন্ডি বাড়তে থাকে। চলতি পথে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বন্ধুর বাড়ির পার্টিতে, কাজের প্রয়োজনে অফিসে প্রতিনিয়তই আমাদের নতুন নতুন মানুষের সাথে পরিচয় হয়। কিন্তু রোজ পরিচিত হওয়া অসংখ্য নতুন মানুষের সবাই কি আপনার হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারে? অথবা আপনি কি জায়গা করে নিতে পারেন সবার হৃদয়ে? প্রথম পরিচয়েই কারো হৃদয়ে জায়গা করে নিতে হলে আপনাকে নিশ্চয় আম জনতার চেয়ে আলাদা হতে হবে।
এমন কিছু মোক্ষম আচরণ আছে যার চর্চা করলে প্রথম পরিচয়েই কারো মনে দাগ কাটতে সক্ষম হবেন। জীবনসঙ্গী নির্বাচন অথবা ক্যারিয়ার উন্নতি যে ক্ষেত্রই হোক না কেন, প্রথম পরিচয়ের গুরুত্ব অনেক। প্রথম পরিচয় দিয়েই তার সাথে আপনার পরবর্তী সম্পর্কের গতি প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। চলুন আরও বিশদভাবে জানি কি কি করলে প্রথম পরিচয়েই কারো হৃদয় হরণ করা যায়।
০১. অকৃত্রিম আচরণ
নতুন কোনো মানুষের সাথে পরিচয় হলে অনেকের মধ্যে নিজেকে কৃত্রিমভাবে উপস্থাপনের একটি প্রবণতা কাজ করে। নিজের যা নেই বা নিজে যা নয়, এমন বিষয়ও নিজের বলে জাহির করেন। নিজেকে বড় করে তুলতে মরিয়া হয়ে পড়েন। তারা ভাবেন নিজের সম্বন্ধে বাড়িয়ে বললে সদ্য পরিচিত হওয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে। কিন্তু আদতে তা নয়। বাস্তবতা হল, এমন আচরণ যে কৃত্রিম তা খুব সহজেই মানুষ বুঝতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ ভাবার বদলে সদ্য পরিচিত হওয়া লোকটি আপনার প্রতি মনে মনে বিরক্ত হয়ে ওঠেন আর হয়তো আজকের সাক্ষাতটা শেষ হলে তিনি দ্বিতীয়বার আবার সাক্ষাতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
সুতরাং এমন কৃত্রিম আচরণ নয়, বরং অকৃত্রিম হয়ে উঠুন। নিজের সমন্ধে সত্য তথ্য দিন তবে সুন্দরভাবে। এতে সদ্য পরিচিত হওয়া ব্যক্তির কাছে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
০২. সহজ এবং বৈশ্বিক উপস্থাপন
প্রথম পরিচয়ে কারো সাথে কোন গুরুগম্ভীর ও বিতর্কিত বিষয়ে আলাপ করবেন না। কেননা সদ্য পরিচিত হওয়া ব্যক্তির দর্শন আপনি জানেন না। তিনি কোন মতাদর্শের মানুষ তা প্রথম পরিচয়ে জিজ্ঞাসা করা যায় না। কাজেই নিজের জ্ঞান গরিমা জাহির করতে গিয়ে দ্বিমত হতে পারে এমন বিষয়ে আলাপ জমালে হিতে বিপরীতও হতে পারে। কোনক্রমে আপনি যদি তার বিপরীত মতাদর্শের কেউ হয়ে থাকেন তবে আপনাকে তিনি এড়িয়ে চলবেন। কাজেই অপেক্ষাকৃত সহজ ও সর্বজনগ্রাহ্য বিষয়ে আলাপ করুন। বৈশ্বিক বিবেচনায় লক্ষ মানুষের স্বার্থ জড়িত এমন বিষয়ে আলাপ করুন। কথা এগোনোর সাথে সাথে আপনার সমন্ধে তার একটা উন্নত ধারণা তৈরি হবে।
০৩. আপত্তিকর প্রশ্ন
আমরা প্রায় ভুলে যাই আপত্তিকর বা বিব্রতকর প্রশ্ন কোনটা! যেমন তরুণ বা তরুণী হলে হরহামেশাই জিজ্ঞাসা করে বসি, আপনার বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড আছে? সিনেমা নাটকে প্রথম পরিচয়ে এসব প্রশ্ন করতে দেখালেও বাস্তবে কিন্তু সম্পূর্ণ উল্টো। প্রথম পরিচয়ে কেউ এমন প্রশ্ন করলে একমাত্র ব্যক্তিত্বহীন কেউ ছাড়া প্রায় প্রত্যেকেই বিব্রত হয়। আর যদি কেউ পরিস্থিতি সামলে হাসি মুখে এমন বিব্রতকর প্রশ্নের উত্তর দেয়, তবে জেনে রাখুন সেই উত্তর মিথ্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ। আবার প্রথম পরিচয়ে আলাপের এক পর্যায়ে কারো সেলারি বা বয়স জানতে চাওয়া আরও বেশি বিব্রতকর। অথবা তিনি যে পেশায় আছেন তার চেয়ে উচ্চ বেতনের কোন চাকরিতে কেন যাননি এমন প্রশ্নও বিব্রতকর। এছাড়া একান্ত ব্যাক্তিগত প্রসঙ্গগুলোও প্রথম পরিচয়ে এড়িয়ে চলা উত্তম। সুতরাং প্রথম পরিচয়ে কখনো আপত্তিকর বা বিব্রতকর কোন প্রশ্ন নয়, বরং এমন প্রশ্ন করুন যাতে তিনি আলাপ এগিয়ে নিতে উৎসহ পান।
০৪. মোক্ষম সাত সেকেন্ড
এক গবেষণায় দেখা গেছে কোন ব্যক্তি আপনাকে কেমন ভাবে গ্রহণ করবে তা প্রথম দর্শনের সাত সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক করে ফেলে অর্থাৎ তিনি আপনাকে পছন্দ করবে কিনা বা কতটা পছন্দ করবে তা নির্ধারিত হয় মাত্র সাত সেকেন্ডে। সুতরাং প্রথম সাত সেকেন্ড সাত বছরের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। নিজের অঙ্গভঙ্গি, অভিব্যক্তি ও কন্ঠস্বরের যথার্থ ব্যবহার করুন এই সাত সেকেন্ডে। আকর্ষণীয় বাচনভঙ্গীতে কথা বলুন চোখে চোখ রেখে আর হরণ করুন সদ্য পরিচিত হওয়া মানুষটার হৃদয়।
০৫. হাসি
প্রতিকূল পরিস্থিতি অনুকুলে আনতে মোক্ষম অস্ত্র ‘হাসি’। আর যখন তা প্রথম পরিচয়ের ব্যাপার হয় তখন তো হাসিই ভরসা। একটি চমৎকার স্মিত হাসি হাজার কথার চেয়েও মধুর। তাই কথা বলার সময় একটা অকৃত্রিম হাসি চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলুন। মানুষ অনুকরণপ্রিয়। তাই আপনার হাসি মুখ সামনের মানুষটির মুখেও হাসি ফুটিয়ে তুলবে যা আলাপ করে তুলবে আরও প্রাণবন্ত।
০৬. সম্পূর্ণ মনোযোগ
নতুন কারো সাথে কথা বলার সময় তার দিকে সম্পূর্ণ মনোযোগ দিন। এরপর কি চমকলাগা কথা বলে তাকে অবাক করে দিবেন তা না ভেবে বরং তার কথা সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আর আপনার পরবর্তী কথা সে অনুযায়ী নির্ধারণ করুন। তার স্বাধীন কথায় বাধ সাধবেন না। আলাপচারিতা প্রাণবন্ত করে তুলুন। নিজের কথা বলার জন্য ব্যাকুল হবেন না, বরং তার কথায় দেওয়া গুরুত্ব তার কাছে আপনাকে অধিক গ্রহণযোগ্য করে তুলবে।
পরিশেষে বলবো, যোগাযোগের এই অসামান্য দক্ষতা সবার থাকে না। দৈনন্দিন চর্চা দ্বারা নিজেকে রোজ শাণিত করে নিতে হয় আর সবসময় সামনের মানুষকে গুরুত্ব দিতে হয়। তবেই গড়ে ওঠে চমৎকার সম্পর্ক।