স্বাধীনভাবে ইতিবাচক কনটেন্ট তৈরি করে তা ইউটিউবে আপলোড করলেই সাফল্য আসে না। কখনো কখনো সফল ইউটিউবাররাও বিতর্কিত মন্তব্য বা আলাপচারিতার কারণে হতাশ হয়ে পড়েন। সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেও কেউ কেউ আশা হারিয়ে ফেলেন। আত্মসম্মানবোধের কারণে ইউটিউব ছেড়ে পালিয়ে যান।
আবার অনেকে ভালো কনটেন্ট তৈরি করতে জানলেও জানেন না, কীভাবে দর্শক-শ্রোতার সাথে চমৎকার যোগাযোগ স্থাপন করতে হয়। আজকের নিবন্ধে ইউটিউবের কমেন্ট বক্স নিয়ে আলোচনা করব। এছাড়া জানবো, কীভাবে নেতিবাচক সমালোচনার ঊর্ধ্বে উঠে ইতিবাচক থাকতে হয়।
১. মন্তব্যের জবাব দেওয়া
আপনার ভিডিওতে দর্শক ও শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখতে সকল মন্তব্যের জবাব দেওয়ার চেষ্টা করুন। অনেক ইউটিউবার মনে করে, আমি একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ,আমি কেন সাধারন ইউটিউব দর্শকের মন্তব্যের জবাব দেবো? আপনার মধ্যে যদি এই ধ্যানধারণা থেকে থাকে, তবে আজই তা ত্যাগ করুন। মনে রাখবেন সাধারণ দর্শক-শ্রোতারা আপনার কনটেন্টের প্রাণ। আপনাকে জনপ্রিয় এবং প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পারে এই সাধারণ দর্শকরাই।
সুতরাং আপনি যখন ভিডিওতে একাধিক ব্যক্তির মন্তব্য পেতে শুরু করবেন, তখন চেষ্টা করুন সব মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখাতে। প্রত্যেকটি মন্তব্যের জবাব দিন। তাদের কোনো প্রশ্ন থাকলে তার যথাযথ উত্তর দিন। ব্যবহারকারীর মতামতকে সাধুবাদ জানান এবং সম্ভব হলে তার মতামতের সাথে আরো দু’একটি কথা জুড়ে দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করুন।
ভিডিওর মন্তব্যে আলাপচারিতা ও আপনার প্রতিক্রিয়া দর্শকদের মনে আস্থা সৃষ্টি করে। এর ফলে তারা আপনার পরবর্তী ভিডিও দেখার জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। সুতরাং দর্শকদের আপনার ভিডিওর প্রতি আকৃষ্ট করতে সকল মন্তব্যের জবাব দেওয়ার অথবা প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করুন। যদি মন্তব্যের সংখ্যা বেশি হয়, তবে অন্তত লাইক বা লাভ দেয়ার মাধ্যমে তাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করুন।
২. দর্শকদের পরামর্শ বাস্তবায়ন
আপনার ইউটিউব ভিডিওতে যে অসংখ্য মন্তব্য পড়বে, তার মধ্যে কিছু বিশেষ পরামর্শ থাকবে। যে পরামর্শগুলো আপনার বিভিন্ন দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। যেসব দর্শক আপনার ভিডিওর বিভিন্ন দুর্বল দিক তুলে ধরে তা সংশোধন করার জন্য এবং সার্বিক উন্নতিতে পরামর্শ দিয়ে থাকে, তারা নিশ্চয়ই আপনাকে অন্যদের চেয়ে বেশি ভালোবাসে।
সুতরাং তাদের ভালোবাসার গুরুত্ব উপলব্ধি করুন, এবং এ সকল পরামর্শ গুলো যথাযথভাবে কাজে লাগান। আপনার ভিডিওর কী কী দুর্বল দিক আছে অথবা ভুল আছে, তা জানার জন্য বিশেষ গবেষণার প্রয়োজন নেই। শুধু ভিডিওর নিচে মন্তব্যগুলো পড়লেই আপনার কাছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
তবে আপনি যদি দর্শকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে রাজি না থাকেন, তবুও তাদের মতামতে প্রতিক্রিয়া দেখানোর চেষ্টা করুন। সুন্দর পরামর্শের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাতেও ভুলবেন না।
৩. অন্যদের ভিডিওতে মন্তব্য করা
ইউটিউব আপনার কাছে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হলেও, ভুলে যাবেন না এটি একটি সামাজিক মাধ্যমও বটে। সুতরাং এখানে যতটা সম্ভব, সামাজিক হওয়ার চেষ্টা করুন। অন্যান্য ইউটিউবে ভিডিওর নিচে মন্তব্য করুন। অন্য ব্যবহারকারীরা যেভাবে আপনার ভিডিওতে সংযুক্ত থাকে, তেমনি আপনিও অন্যান্যদের ভিডিওর নিচে মন্তব্য করে যোগাযোগ বজায় রাখুন। যেভাবে অন্যরা আপনাকে পরামর্শ দেয়, আপনিও অন্যদের পরামর্শ দেয়ার চেষ্টা করুন।
এতে অল্প সময়ে ইউটিউবে আপনি কিছু বন্ধু পেয়ে যাবেন, যারা বিভিন্ন ভাবে আপনাকে সহযোগিতা করবে। তাছাড়া অন্যের ভিডিওতে মন্তব্য করলে নিজের চ্যানেলের এসইও অনেক সহজ হয়। যেমন অন্যান্য জনপ্রিয় ইউটিউবারদের ভিডিওর নিচে আপনার মন্তব্য দেখলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা সেখান থেকে আপনাকে চিনবে। মন্তব্য ভালো লাগলো আপনার কনটেন্টের ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এখান থেকে আপনি কিছু দর্শক শ্রোতা ও সাবস্ক্রাইবার পেয়ে যাবেন।
তবে লক্ষ্য রাখুন, আপনার মন্তব্য যেন অন্যকে ব্যথিত না করে, অথবা কারো মানহানি না ঘটায়। একই সাথে মনে রাখবেন, একই মন্তব্য একাধিক ইউটিউব ভিডিওর নিচে পেস্ট করার চেষ্টা করবেন না। এতে ইউটিউবের অ্যালগরিদম আপনার মন্তব্যকে স্প্যাম হিসেবে গণ্য করবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক যুক্ত করা
প্রতিটি ইউটিউব ভিডিওর বিবরণ বক্সে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক সংযুক্ত করুন। যেমন, ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি। ইউটিউব ছাড়াও আপনি অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকার কারণে সামগ্রিকভাবে যে কমিউনিটি তৈরি করেছেন, আপনার ইউটিউব দর্শকরাও সেই কমিউনিটির অংশ হতে পারবে। এতে আপনার প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।
তাছাড়া কিছু অনুরাগী দর্শক আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক দিলে সেখান থেকে তারা সহজেই আপনার ব্যক্তিগত জীবন এবং অন্যান্য তথ্য জানতে পারবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লিংক শেয়ার করার কারণে ইউটিউব ছাড়াও আপনি অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন। কেননা আপনার ইউটিউব সাবস্ক্রাইবারদের সিংহভাগ ফেসবুক, টুইটার, এবং ইনস্টাগ্রামে আপনাকে অনুসরণ করা শুরু করবে।
৫. মন্তব্য পড়ে হতাশ না হওয়া
আপনি সারাদিন যতোই ইতিবাচক থাকুন না কেন, আপনার সাথে দৈনন্দিন জীবনে নেতিবাচক অনেক ঘটনা ঘটে যায়। অনেক কিছুর উপর আপনার কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাছাড়া পৃথিবীর সব মানুষ ইতিবাচক চিন্তা করেন না। যদি তাই হতো, তবে পুলিশ বাহিনী এবং বিচার-আদালতের প্রয়োজন হতো না। তেমনি ইউটিউবেও আপনি যত ভালো কনটেন্ট প্রকাশ করুন না কেন, আপনাকে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে সমালোচনা করা বা কটু কথা শোনানোর কিছু মানুষ ঠিকই জোগাড় হয়ে যাবে।
আপনার ভিডিওর ভালো বিষয়কে কেউ কেউ নেতিবাচকভাবে ব্যাখ্যা করবে। আপনাকে তারা ইচ্ছামত গালমন্দও করবে। এই সকল মন্তব্য ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহণ করে দুঃখ পাবেন না।
ইউটিউব ভিডিও তৈরি করার সময় বিতর্কিত ও স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। দেশের বিদ্যমান আইন সম্পূর্ণভাবে মেনে চলুন। এরপরও যদি নেতিবাচক মন্তব্য আসে, তবে মিষ্টি ব্যবহার দিয়ে তাকে লজ্জা দিন। কোনোভাবেই কোনো ব্যবহারকারীর মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে বিতর্কে জড়াবেন না। আপনার জ্ঞান, বিবেচনাবোধ এবং মন্তব্যকারীর জ্ঞান ও বিবেচনাবোধ কখনোই সমান হবে না। সুতরাং সকল বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর বিষয় এড়িয়ে যান, বিতর্কিত মন্তব্য থেকে দূরে থাকুন।
ফিচারড ইমেজঃ: wired