আপনি কখনো বিরক্তিকর মানুষের সম্মুখীন হয়েছেন? নিশ্চয়ই হয়েছেন! আমার বিশ্বাস জীবনে কখনো না কখনো আমরা প্রত্যেকে কিছু বিরক্তিকর মানুষের সম্মুখীন হই। তবে যদি কদাচিৎ কোনো বিরক্তিকর মানুষের বিরক্ত সহ্য করতে হয় তবে তা গ্রহণযোগ্য। এক দুই বার কোনো বিরক্তিকর পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যেতেই পারে। কিন্তু বিরক্ত যদি আপনার কিছু না ছাড়ে! কোনো ব্যক্তি যদি আপনার চারপাশের পরিবেশ, জীবন এবং কাজ প্রতিনিয়ত বিরক্ত করে তোলে তাহলে কী করবেন?
হতে পারে আপনার ব্যবসায়িক অংশীদার, সহকর্মী, বন্ধু, এমনকি আপনার কোনো পরিবারের সদস্য বা আত্মীয় আপনার বিরক্তির কারণ। এক্ষেত্রে আমাদের কৌশলী হয়ে বিরক্তিকর ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। তার জন্য আগে শিখতে হবে বিরক্তিকর মানুষের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করতে হয়, কিভাবে এমন মানুষকে নিয়ন্ত্রণে রেখে সুখী স্বচ্ছন্দ জীবনযাপন করতে হয়।
১. এক্ষেত্রে নিজেকে বদলে ফেলুন
কোনো মানুষের সাথে মতের অমিল হলে এবং তাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হলে সব সময় মনে রাখবেন, অন্যকে পরিবর্তন করা নয় বরং পরিবর্তন আনতে হবে নিজের মধ্যে। আপনি অন্যদের আচরণ পরিবর্তন করার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। সম্ভবত প্রতিবারই আপনি ব্যর্থ হবেন।
সুতরাং যেকোনো ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এবং যেকোনো পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার সবচেয়ে চমৎকার উপায় হল বিষয়টি অন্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে প্রতিক্রিয়া দেখানো। এই পরিবর্তন সমগ্র পরিবেশ পাল্টে দিবে এবং সবকিছু আপনার নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করবে।
সুতরাং বিরক্তিকর মানুষের কোনো স্বভাব পরিবর্তনের চেষ্টা করা অমূলক। এর চেয়ে তার সাথে মানিয়ে চলার জন্য নিজের মধ্যে ছোট ছোট পরিবর্তন আনুন এবং কৌশলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
২. নিজের সীমানা নির্ধারণ করুন
আপনি কী সহ্য করতে পারবেন আর কী সহ্য করতে পারবেন না সে ব্যাপারে স্পষ্ট হোন। আরও স্পষ্ট করে বলা যায়, আপনার কী সহ্য করা উচিত এবং কী সহ্য করা উচিত নয় সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখুন। তারপর বিরক্তিকর মানুষের সাথে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। মনে রাখবেন আপনার একটি ব্যক্তিগত জীবন আছে এবং আপনার এই ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবেশ সুরক্ষিত রাখার সম্পূর্ণ অধিকার আপনার আছে।
নিজেকে প্রকাশ করার সীমা নির্ধারণ করার অর্থ জনে জনে ঘোষণা দিয়ে নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা নয়। বরং মনে মনে এই সীমানা নির্ধারণ আপনার কাছে স্পষ্ট করে তুলবে অন্যদের কেমন আচরণ আপনি কিভাবে গ্রহণ করবেন।
আপনি যদি তাৎক্ষণিক অন্যের আচরণের যথাযথ প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হন, তবে অবশ্যই আপনি বিরক্তিকর মানুষের দ্বারা আক্রান্ত হবেন। যেহেতু বিরক্তিকর মানুষেরা নিজেদের সীমানার ব্যাপারে সচেতন না। সুতরাং তাদের থেকে সর্বোচ্চটা আশা করা বোকামি। তার চেয়ে ব্যক্তিত্বের সীমানা নিজেই সুরক্ষিত রাখুন। না হলে বিরক্তিকর মানুষের আচরণে ক্রমশই আপনার স্বাধীনতার জগত সংকুচিত হয়ে আসবে এবং আপনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বেন।
৩. নিজের অবস্থান স্পষ্ট করুন
যদি আপনি কোনো ব্যক্তির দ্বারা ক্রমাগত বিরক্ত হতে থাকেন তবে তাকে আপনার অবস্থান স্পষ্ট করে জানান, যেন পরবর্তীতে আপনার সাথে যোগাযোগের ব্যাপারে তিনি সতর্ক থাকেন। এই ধরনের মানুষ নিজেদের অনধিকার চর্চার ব্যাপারে সচেতন থাকে না। সুতরাং তাকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে তার অধিকার চর্চার ক্ষেত্র বুঝিয়ে দিতে পিছপা হবেন না। বিনয়ের সাথে এই ব্যক্তিকে কিছু স্পষ্ট নির্দেশনা দিন।
যদি বিরক্তিকর ব্যক্তি আপনার থেকে প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সময় নিয়ে থাকে, তবে পরবর্তীবার তার সাথে সাক্ষাতের পূর্বে আপনার ব্যস্ততা এবং সময়ের স্বল্পতা স্পষ্ট করে তুলুন। এভাবে আপনি তাকে সচেতনতা পূর্বাভাস দিতে পারেন। এমনকি আপনি যদি ইমেইল, ফোন কল, অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো সাথে যোগাযোগ করে থাকেন তবুও তার কাছে এই বিষয়গুলো স্পষ্ট করে তুলুন।
মনে রাখবেন যেহেতু বিরক্তিকর মানুষেরা নিজেদের অনধিকারচর্চা ব্যাপারে সচেতন থাকে না, তাই তাকে সচেতন করে দেওয়া মোটেও দোষের কিছু নয়, বরং তাতে আপনার বিরক্তি কমবে।
৪. প্রয়োজনে দৃঢ় হোন
এরপরও যদি বিরক্তিকর ব্যক্তি তার চর্চার সীমানার ব্যাপারে সচেতন না হয় তবে তাকে সচেতন হতে বাধ্য করুন। প্রাথমিকভাবে তাকে কিছুটা ইঙ্গিত দিয়ে সচেতন করুন। তারপরও যদি সে আপনার ইঙ্গিত বুঝতে সমর্থ না হয়, তবে তাকে সরাসরি ডাকুন অথবা একটা ফোন কল করুন এবং তার এবং আপনার মধ্যকার সীমারেখা স্পষ্ট করে দিন।
নিজের সকল যোগাযোগের ব্যাপারে সচেতন থাকুন। এমনকি বিরক্তিকর ব্যক্তির সাথে কাজের প্রয়োজনে আপনার বারবার যোগাযোগ করতে হলেও সচেতনভাবে নিজের সীমানা মেনে চলুন। সার্বক্ষণিকভাবে নিজের অধিকারের সীমানা সংরক্ষিত রাখলে ক্রমশ এই বিরক্তি কমে আসবে এবং নিশ্চয়ই আপনার ভাল বোধ হবে। আবার প্রয়োজনে বিরক্তিকর ব্যক্তির সাথে সহজেই যোগাযোগ করুন।
মোটকথা আপনার সার্বিক আচরণ দিয়ে তার কাছে আপনার ব্যক্তিগত অধিকারের জায়গা স্পষ্ট করে তুলুন।
৫. উপেক্ষা করুন
ভদ্রভাবে এইসব প্রচেষ্টা চালানোর পরও যদি বিরক্তিকর মানুষকে থামালো না যায় তবে স্পষ্ট ভাবে তাকে উপেক্ষা করুন। কাউকে উপেক্ষা করা বা অবহেলা করা এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হতে পারে।
কারো আচরণে প্রতিক্রিয়া দেখালে সে একই ব্যবহার আবার করার কারণ খুঁজে পায়। কিন্তু আপনি যদি তার ক্রমাগত বিরক্তির কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখান তবে একসময় সে আর বিরক্ত করার কোনো কারণ খুঁজে পাবে না। আপনার এই নীরব আচরণ তার আচরণ এবং ইঙ্গিত সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে এবং হয়তো তার আত্মউপলব্ধি ঘটবে।
পৃথিবীর সব মানুষ ভালো হয় না, সব মানুষ মনের মতো হয় না। সুতরাং নিজেকেই নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে হবে। বিরক্তিকর মানুষকে শুরুতে হালকা ভাবে ইঙ্গিত দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তাতে কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত আপনাকে শক্ত হতে হবে।
যদি তার বিরক্তি অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছায় তাহলে অবশ্যই আইনের সহযোগিতা নিতে হবে। কোনোক্রমেই নিজের ব্যক্তিত্ব এবং অবস্থান হারানো যাবে না।