নেতিবাচক মানুষের সাথে যেভাবে মিশবেন

আপনার কি কোনো নেতিবাচক মানসিকতার বন্ধু বা সহকর্মী আছে? যদি থাকে তাহলে আপনি নিশ্চয়ই জানেন নেতিবাচক মানুষেরা কখনোই খুব বেশি মেশার উপযুক্ত হয় না। নেতিবাচক মানসিকতার মানুষেরা সবসময়ই যেকোনো কথোপকথন ভন্ডুল করে দিতে ওস্তাদ। আপনি কি বলছেন সেটা আসল কথা নয়, আপনার বলা যে কোনো কথা বা বিষয়কেই তারা নেতিবাচক দিকে নিয়ে যায়। কোনো কোনো নেতিবাচক মানুষ এতটাই প্রভাববিস্তারী হয় যে তার চারপাশের পরিবেশকে নেতিবাচক করে তোলে।

photo: ergodotisi

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন আমি অসংখ্য নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের সাথে মোকাবেলা করেছি। আমার স্কুল নেতিবাচক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকে পরিপূর্ণ ছিল। কেননা আমার স্কুলটা দেশের কোনো সেরা স্কুল ছিল না। সেই কারণে সেখানে পড়া শিক্ষার্থী, এমনকি শিক্ষা দেওয়া শিক্ষকরাও এই স্কুলে থাকার ব্যাপারে মোটেও সন্তুষ্ট ছিল না।

এমন অসংখ্য নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের মধ্যে এসে আমি প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে আমি এই নেতিবাচক মানসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে শিখি। অসংখ্য নেতিবাচক কর্মকাণ্ড এবং ধ্যান ধারণার মধ্যে আমি নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছি এবং সচেতন ভাবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি।

এমনকি এখনো আমি প্রতিনিয়ত চারপাশে অসংখ্য নেতিবাচক মানসিকতার মানুষকে মোকাবেলা করি। সচেতনভাবে এই সব মানুষকে খুশি রেখে চলতে পারলে তবেই সাফল্য আসে। আমার বিশ্বাস চেষ্টা করলে আপনারাও পারবেন। আমি এই নিবন্ধে এমন কয়েকটি কৌশল নিয়ে আলোচনা করব যার চর্চা করলে খুব সহজেই আপনি যে কোনো নেতিবাচক মানুষের সাথে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন।

যুক্তি তর্কে জড়াবেন না

নেতিবাচক মানুষের সাথে লেনদেন করার বা যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাদের সাথে কোনো প্রকার যুক্তি তর্কে না জড়ানো। কেননা নেতিবাচক মানসিকতার মানুষেরা তাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে খুবই কট্টরপন্থী হয়ে থাকে। কখনোই আপনার যুক্তিপূর্ণ বা ন্যায্য কথার কারণে তার মত পরিবর্তন করে না। এমনকি তারা নিজের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অবস্থানের পক্ষে সবসময় দশ বারোটি আলাদা আলাদা কারণ বা ব্যাখ্যা প্রস্তুত রাখে।

photo: lifehack

যে কারণে আপনার বক্তব্য যতই যুক্তিপূর্ণ হোক শেষ পর্যন্ত আপনাকে তার কাছে হার মানতে হবে। সুতরাং কখনো এমন কঠোর ধ্যান-ধারণার মানুষের সাথে যুক্তি তর্কে জড়াবেন না। তাদের বক্তব্যের পর নতুন করে আর কিছু যোগ করতে যাবেন না।

সমাধান নয়, সহমর্মী হোন

আপনি কখনো কোনো ব্যাপারে প্রচন্ড রকম বিরক্ত হয়ে উঠেছেন? অথবা হতাশ হয়ে পড়েছেন? এমন অবস্থায় যদি কেউ আপনাকে শান্ত হওয়ার পরামর্শ দেয়, আপনার দুঃখের ভাগিদার হয়, তাহলে আপনার কেমন লাগে? ওই ব্যক্তির পরামর্শ অনুযায়ী আপনার খুব স্বস্তি বোধ হয়, নাকি পুনরায় কর্মস্পৃহা ফিরে আসে?

photo: missionself

আসলে নেতিবাচক মানসিকতার মানুষেরা যারা কোনো বিষয়ে খুব বেশি হতাশ অথবা নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে তারা পরামর্শ বা সমাধানের চেয়ে আপনার সহমর্মিতায় বেশি খুশি হয়। সুতরাং নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের সমস্যাই তাদের সহমর্মী হোন। কখনো তাদের পরামর্শ দেওয়ার বা সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা এই চেষ্টা করলেই তারা আপনার বিরুদ্ধাচরণ করবে, এবং স্বভাবতই তাতে যুক্তিতর্কের সৃষ্টি হবে। তাদের সমস্যার সমাধান তারা নিজেরাই একসময় বের করবে। কেননা সব সমস্যার সমাধান মানুষের নিজের মধ্যেই থাকে।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন

কিছু নেতিবাচক মানসিকতার মানুষ সব সময় কারো সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করে। তাদের ব্যর্থতায় অন্যের সাহায্য না পাওয়াকে দায়ী করে। বস্তুত তারা নিজেদের জীবন এবং কর্মের ব্যাপারে সচেতন না। আবার নেতিবাচক মানসিকতার কারণে নিজের সমস্যায় অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা থাকে তাদের মধ্যে। তারা অন্যের সাহায্য পেতে অনুরোধ করার বদলে দাবি নিয়ে অভিযোগ করে।

photo: theodysseyonline

সুতরাং এমন সহকর্মী বা বন্ধুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন পরামর্শ নয়, শুধু সাহায্য। তাদের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ অবস্থায় প্রশ্ন করুন, আপনি কি ঠিক আছেন? আমি আপনাকে কোনো সাহায্য করতে পারি? এ জাতীয় কিছু ছোট ছোট সাহায্য তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবে।

নেতিবাচক মন্তব্য এড়িয়ে চলুন

নেতিবাচক মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখার আরেকটি চমৎকার উপায় হলো তার নেতিবাচক মন্তব্য এড়িয়ে চলা। যেহেতু সবসময়ই তার মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা বিরাজ করে, তাই সবকিছুতেই তার না-সূচক মন্তব্য থাকতে পারে। তার পক্ষ থেকে আপনার কাছে অপছন্দনীয় বক্তব্য আসতে পারে। এইসব মন্তব্য আপনি হালকাভাবে গ্রহণ করুন।

photo: somnowell marketing

কোনো একটি বিষয় নিয়ে যদি সে ক্রমাগত নেতিবাচকভাবে মন্তব্য করতে থাকে, তবে আপনি ছোট্ট করে জবাব দিন, ‘আমি জানি’, ‘আমি দেখেছি’ অথবা ‘ঠিক আছে, ব্যাপার না’ -এই ধরনের ছোট উত্তর দিয়ে এই মন্তব্য এড়িয়ে চলুন। তবে এমন নেতিবাচক মানুষ যখন কোনো ইতিবাচক কথা বলে তখন তাকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বাহবা দিন এবং তার সাথে আরও একটু ইতিবাচকভাবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। এতে তার মধ্যে নেতিবাচক প্রবণতা কমে আসবে এবং ইতিবাচকতার বৃদ্ধি ঘটবে।

একা আলোচনা করবেন না

আপনি একা যদি কোনো নেতিবাচক মানুষের সাথে কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তাহলে তার যাবতীয় নেতিবাচক ধ্যান-ধারণা সোজা আপনার দিকে বর্ষিত হবে, এবং আপনি যত ইতিবাচক কথাই বলেন না কেন তার নেতিবাচক উত্তরে আপনি জর্জরিত হবেন।

photo: empowering parents

তাছাড়া সত্যিই অনেক নেতিবাচক বক্তব্যের কোনো যথার্থ উত্তর আপনার কাছে থাকবে না। কেননা নেতিবাচক বক্তব্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুক্তিহীন হয়ে থাকে। সুতরাং একটা যুক্তিহীন বিষয়কে যুক্তি দিয়ে বোঝানো সত্যিই বড় দুঃসাধ্য। তাই নেতিবাচক মানুষের সাথে আলাপকালে কখনো একা বসবেন না। আপনার সাথে আরো দু একজন ইতিবাচক মানসিকতার মানুষ রাখুন। কখনও নেতিবাচক মানুষকে সরাসরি দোষারোপ করবেন না। তার ভাবনায় সহমর্মী হয়ে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করুন।

পৃথিবীতে কোনো কিছুই ধ্রুব না। সুতরাং কোনো বক্তব্যই চিরস্থায়ী নয়। এই ছোট্ট বিষয়টি আমলে নিলে যে কোনো নেতিবাচক মানসিকতার মানুষকেই খুব সহজে মেনে নেওয়া সম্ভব। সুতরাং নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলা নয়, বরং কৌশলে তাদের মানিয়ে চলুন।

মোস্তাফিজুর রহমান: তরুণ কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট এবং সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা যশোরে। পৈতৃক নিবাস যশোরের সদর থানার খোজারহাট গ্রামে। বাবা-মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান সবার বড়। লেখাপড়া করেছেন যশোরের খোজারহাট মাধ্যামিক বিদ্যালয়, ছাতিয়ানতলা চুড়ামনকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ডা: আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ এবং ঢাকার ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করলেও আত্মনিয়োগ করেছেন সাহিত্য সাধনা এবং সাংবাদিকতায়। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তীব্র অনুরাগী মোস্তাফিজুর রহমান স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখি করেন। বাংলাদেশ ও কলকাতার সাহিত্য পত্রিকা, দৈনিক এবং ম্যাগাজিনে লিখে থাকেন। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে দৈনিক পত্রিকায় কলাম লেখেন নিয়মিত। ২০০৯ সাল থেকে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, একটি অনলাইন পত্রিকা সম্পাদনাসহ কাজ করেছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। সাম্প্রতিককালে তারুণ্য, শিল্প-সাহিত্য, চলচ্চিত্র এবং ট্রেন্ডিং বিষয় নিয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউবে আলোচনা করেন। ইউটিউব সহ সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মোস্তাফিজুর রহমানকে @MustafizAuthor ইউজারে খুঁজে পাওয়া যাবে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘দ্বন্দ ও পথের খেলা’ প্রকাশিত হয়। _____________________________________________________________________________________________________________________________________________________________ find him everywhere @MustafizAuthor | email: mustafizauthor@gmail.com